বাংলাদেশে হিন্দুরা কেমন আছেন? ( ১ম পর্ব)
বাংলাদেশে সংখ্যালঘুরা কেমন আছেন তা নিয়ে নানা গবেষনা হয়েছে বা হচ্ছে। হিউমেন রাইটস সহ বিভিন্ন সংস্থা্র পর্যবেক্ষণে সেসব প্রকাশিতও হয়ছে বিভিন্ন সময়ে। আমি বিভিন্ন সূত্র থেকে সংগৃহীত তথ্যাদি এখানে তুলে ধরলাম। কোনটিই আমার নিজের বক্তব্য নয়। প্রদত্ত তথ্যগুলো পাঠককে নিজে যাচাই করে দেখতে হবে এবং কোনক্রমেই এসব তথ্য আমার দেয়া ্মতামত বলে গন্য করা যাবেনা।
১।“আজ হতে ৩০ বছর পর বাংলাদেশে কোন হিন্দুই আর অবশিষ্ট থাকবেনা। গত ৪৯ বছর ধরে দেশত্যাগের হার সেরকমই ইঙ্গিত দিচ্ছে। ধর্মীয় সহিংসতা ও বৈষম্যের জন্য ১৯৬৪ থেকে ২০১৩ সালের মধ্যে প্রায় ১ কোটি ১৩ লাখ হিন্দু দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়েছে। গড়ে দৈনিক ৬১২ জন করে বছরে মোট ২৩০,৬১২ গড়ে দেশত্যাগ করেছে হিন্দুরা। স্বাধীনতার পূর্বে দেশত্যাগের হার ছিল প্রতিদিন ৭০৫ জন, ৭১ – ৮১ সাল পর্যন্ত দৈনিক ৫১২ জন এবং ৮১ – ৯১ সাল পর্যন্ত দৈনিক দেশত্যাগ করেছে ৪৩৮ জন। ৯১ – ২০০১ সালের মধ্যে দেশত্যাগের হার আবার বেড়ে হয় দৈনিক ৭৬৭ জন এবং ২০০১ – ২০১৩ সালে সর্বোচ্চ বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়ায় দৈনিক ৭৭৪ জনে”। এই বীভৎস বাস্তবতা উঠে এসেছে অধ্যাপক ও অর্থনীতিবিদ আবুল বারাকাতের গবেষণায়। (তথ্যঃ ঢাকা ট্রিবিউন)
অধ্যাপক বারাকাত এই মর্মান্তিক বাস্তবতার প্রধানতম কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন পাকিস্তান ও বাংলাদেশ উভয় রাষ্ট্র দ্বারা হিন্দুদের বিরুদ্ধে পরিচালিত অর্থনৈতিক সন্ত্রাস; ১৯৬৫ সালে পাকিস্তান কর্তৃক প্রণীত “শত্রু সম্পত্তি আইন” ও পরবর্তীতে বাংলাদেশ কর্তৃক “অর্পিত সম্পত্তি আইন” নামে তা বহাল রাখা। যা আক্ষরিক অর্থেই বাংলাদেশী হিন্দুদের অর্থনৈতিক মেরুদণ্ড ভেঙ্গে তাঁদের ক্ষমতায়নের পথকে সম্পূর্ণভাবে রুদ্ধ করে দিয়েছে। কেবলমাত্র এই কালো আইনের অধীনেই হিন্দুরা অন্তত ২.৬ মিলিয়ন একর সম্পত্তি হারিয়েছে, হয় দেশত্যাগে বাধ্য হয়ে কিংবা দেশের ভেতরেই বাস্তুচ্যুত হয়ে। (তথ্যঃ বিডি নিউজ)
২।থাকলে ভোট পাই, না থাকলে জমি পাই !!!-জাতিসংঘের সেমিনারে ডঃ মিজানুর রহমান।
গত ১৮ই মার্চ ২০১৪ , জাতিসংঘের অফিস জেনেভাতে । উক্ত সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন ডঃ চার্লস গ্রেভস্-সেক্রেটারি জেনারেল অব ইন্টারফেইথ ইন্টারন্যাশনাল, প্রধান অতিথী বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ডঃ মিজানুর রহমান, বিশেষ বক্তা ছিলেন বিশ্ব নারী অধিকার সংস্থার সেক্রেটারি ডঃ আতওয়াল ইন্দিরা বিশ্বাস রাও, এবং বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বি.এন.পির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক মোহিদুর রহমান ।প্রধান অতিথীর বক্তব্যে ডঃ মিজানুর রহমান বলেন, বাংলাদেশে একদিকে মৌলবাদী রাজনৈতিক দল, সংখ্যালঘু হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রীষ্টান সম্প্রদায়ের উপর জুলুম ও নির্যাতন করেছে পক্ষান্তরে বাংলাদেশ সরকার তা প্রতিরোধে ব্যর্থ হয়েছে । আবার বর্তমান সরকারী দলের পৃষ্টপোষকতায় সংখ্যালঘুদের নির্যাতন করে অন্যের উপর দায় চাপানোর চেষ্টা করা হয়েছে ।
৩।অনেকের জন্য নির্বাচন উৎসবমুখর। কিন্তু বাংলাদেশের হিন্দু সম্প্রদায়ের জন্য নির্বাচন উৎসবের নয়, আতঙ্কের। অতীতেও নির্বাচনের পর তারা সহিংসতার শিকার হয়েছে।- শাহরিয়ার কবির।
৪। সংখ্যালঘু-ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর জন্য পৃথক মন্ত্রণালয় চাই: সুলতানা কামাল সুলতানা কামাল বলেন, বাংলাদেশে গড়ে প্রতিদিন কোথাও না কোথাও ৩ থেকে ৫টি সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঘটনা ঘটে। গত বছরই কেবল ১ হাজার ৪টি সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। তিনি বলেন, গত ৩ বছরে হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান সংখ্যালঘুদের ওপর নানাভাবে হামলা হয়েছে। হত্যা থেকে শুরু করে ধর্ষণ, বাড়ি-ঘরে হামলা, অগ্নিসংযোগ, মন্দির-গির্জা-উপাসনালয় ঘিরে ফেলা, হুমকি দেয়া, এমনকি দেশ ছাড়তে বাধ্য করা হয়।
৫। ২০১৫ সালের তুলনায় ২০১৬ শনে সংখ্যালঘু নির্যাতন বেড়েছে সাড়ে পাঁচ গুণ । এর মধ্যে হত্যার শিকার হয়েছেন ৭১ জন।– রানা দাসগুপ্ত। ( প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ)
৬।মানবাধিকার কর্মী এবং আইন ও সালিশ কেন্দ্রের সাবেক নির্বাহী পরিচালক নূর খান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘বাংলাদেশে বরাবরই সংখ্যালঘু নির্যাতনের ঘটনা ঘটছে৷ আর এখন মূলত রাজনৈতিক অস্থির অবস্থা এবং নীতিহীন রাজনীতি এর জন্য দায়ী৷ বাংলাদেশ যতই তার অসাম্প্রদায়িক চরিত্র থেকে সরে যাচ্ছে, ততই ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা-নির্যাতন বাড়ছে৷”
‘‘শাসক দলের পরিচিতি বা সমর্থন ছাড়া সংখ্যালঘু নির্যাতনের ঘটনা ঘটিয়ে পার পাওয়ার সুযোগ নেই বললেই চলে৷ তাই এই ধরনের অপরাধ যারা করে, তারা সব সময়ই রাজনৈতিক দলের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে থাকতে চায়৷ যেহেতু এই মূহূর্তে বাংলাদেশে শাসক দলের বাইরে অন্যান্য রাজনৈতিক শক্তির তেমন কোনো অবস্থান নেই বললেই চলে, এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশে সরকারি দল বা সরকারি দলের মধ্যে ঢুকে দুষ্কৃতকারীরা বা ওই দলের নেতা-কর্মীরা এ ধরনের ঘটনা
তিনি বলেন, ‘‘আমরা এ পর্যন্ত যেসব সংখ্যালঘু নির্যাতেনের ঘটনা দেখেছি, তার টার্গেট হলো তাঁদের স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ দখল ও নারী৷ আর আমাদের দেশের যে-কোনো সরকারেরই প্রশাসনিক লোকজন এই সব নির্যাতন-নীপিড়নের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সব সময়ই উদাসীন৷ এর একটা কারণ হয়তো ঘটনাগুলাতে অনেক সময়ই শাসক দলের সঙ্গে যুক্ত বা তাদের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে বেড়ে ওঠা লোকজনই এসব ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকে৷ সিরাজগঞ্জ ও ফরিদপুরের ঘটনা যদি দেখি, তাহলে দেখবো, তারা ক্ষমতা কেন্দ্রের ঘনিষ্ঠ৷ আমাদের পর্যবেক্ষণ হলো, অধিকাংশ ঘটনায়ই যারা ক্ষমতার কেন্দ্রে আছেন, তাদের আশপাশের লোকজনই এইসব ঘটনায় জড়িত৷ সেটা জেলা বা উপজেলা যেখানেই হোক না কেন৷” (*মে ২১, ২০১৯)
৭।এম এম খালেকুজ্জামান, আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট। তার লেখা নিবন্ধ -“সংখ্যালঘু: ‘হারিয়ে যাওয়া মানুষ’ এ লিখেছেন “কর্মকর্তারা এদের বলছেন, ‘মিসিং পপুলেশন’ বা ‘হারিয়ে যাওয়া মানুষ’।অকারণে গ্রামেগঞ্জে, প্রত্যন্ত অঞ্চলে হিন্দুদের উপর, তাদের ধর্মস্থানের উপর, ব্যবসা ও বাসস্থানে আক্রমণ চালানো হয়েছে। ভিটেমাটি ছাড়া করা হয়েছে। গুজব সৃষ্টির মাধ্যমে হিন্দুদের আতংকিত করা হয়েছে। দেশের অনেক স্থানে সংখ্যালঘুদের বাড়িঘর ও উপাসনালয়ে হামলা হয়েছে। পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে দোকানপাট, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার হয় আদালতে; অথচ প্রাণ দিতে হয় সংখ্যালঘুদের। প্রধান দুটি রাজনৈতিক দল দাবি করে, বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ, এখানে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা নেই। তবে সত্য হচ্ছে দাঙ্গা-যুদ্ধ হয় সমানে সমানে, কিন্তু লঘুদের কি সেই সামর্থ আছে গুরুদের সঙ্গে লড়ার? প্রভাব-প্রতিপত্তিতে কমজোরি সংখ্যালঘুরা এখন টিকে থাকার সংগ্রামে ব্যস্ত
৮।বাংলাদেশে সরকারি আদমশুমারি অনুযায়ী হিন্দু জনসংখ্যা প্রতি বছরই কমছে। বাংলাদেশে ধর্মীয় বৈষম্য এবং নির্যাতনের মুখে এদের বেশিরভাগই ভারতে চলে যাচ্ছেন বলে বলা হচ্ছে। হিন্দুদের দেশ ছাড়ার কারণ খুঁজতে গিয়েছিলেন বিবিসির আবুল কালাম আজাদ:
৯।এক জরিপে জানা গেছে, প্রতিবছর বাংলাদেশ থেকে প্রায় চার লাখ হিন্দু অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে বাড়িঘর ছেড়ে অন্যত্র পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত, নেপাল, ভুটানসহ বিভিন্ন দেশগুলোতে চলে যাচ্ছে। যারা যাচ্ছে তারা আর কোনোদিন ফিরে আসছে না এদেশে। যার ফলে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি বিনষ্ট হচ্ছে, ঠিক যেমনটা আজ মিয়ানমারের বিরুদ্ধে পুরো বিশ্ব প্রতিবাদী।(ইত্তেফাক কলামঃ হিমেল আহ্মেদ। ১৯ নভেম্বর, ১৯১৭)
১০।A QUIET CASE OF ETHNIC CLEANSING: SAVING THE BANGLADESHI HINDUS: Richard L. Benkin, Ph.D.Bangladesh’s Hindu population is dying. That is not opinion; it is a fact..State University of New York, using demographic and other methods, calculates that well over 49 million of them are missing (Dastidar, 2008).(1) every one of Bangladesh’s remaining 13-15,000,000 Hindus at risk. Yet, while these numbers dwarf those of the worst cases of genocide and ethnic cleansing (e.g., Nazi Holocaust, Rwanda, Bosnia, Darfur), no major human rights organization, international body, or individual nation has highlighted this quiet case of ethnic cleansing or even raised it as a matter for investigation. The Bangladeshi Government denied that any such thing even happened, but sources of the reports were highly credible, which prompted our own two-month investigation that confirmed something terrible did occur.
১১।The Hindu as Other: State, Law, and Land Relations in Contemporary Bangladesh by Shelley Feldman: As much as 75 percent of religious minority property confiscated and justified under the VPA (Choudhury 2009). Not only did the Pakistani state claim rights to Hindu land for government and public use prior to Independence, but the most concentrated appropriations, often taken illegally, occurred immediately following independence during the first AL and BNP governments (1972–1975; 1976–1980) (Choudhury 2009). These expropriations were followed by a period of unregulated land grabs during continued military rule (1980–1990) and, again, under the democratically elected formations of the Bangladesh National Party (1991–1996; 2006–2008) and the Awami League (1996–2000; 2009–2013; 2014–). Despite these appropriations, aspirations for Hindu recognition, under Sheik Hasina and the AL, and fear of Hindu hostility under Khaleda Zia and the BNP, characterize the experiences of Hindu citizens. The fear of retribution by Hindu property owners, and the class and regional dispersion of the Hindu population have contributed to limited resistance but also to a sense that survival may sometimes depend on hiding one’s sense of self