মহানায়ক উত্তম কুমার

মহানায়ক উত্তম কুমার
———————————-
         ।দ্বিতীয় পর্ব।
উত্তম কুমার ১৯৫০ খ্রিষ্টাব্দের ১ জুন  গৌরী দেবীকে প্রেম করে বিয়ে করেন। এই বছরেই তিনি পিএম প্রোডাকশনে খণ্ডকালীন ৪০০ রুপি মাসিক বেতনে অভিনেতার চাকরি গ্রহণ করেন।

১৯৫১ খ্রিষ্টাব্দের ৭ সেপ্টেম্বর তাঁর পুত্র গৌতম চট্টোপাধ্যায়ের জন্ম হয়। ১৯৫২ খ্রিষ্টাব্দে উত্তম কুমার অভিনীত ‘বসু পরিবার’ সিনেমা মুক্তি পায়। উত্তম ততদিনে ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে নাম লেখালেও পরিচিতি লাভ করতে সক্ষম হননি। তাঁর ভাগ্য খুলে দেয় ‘বসু পরিবার’ সিনেমাটি। সিনেমাটি ব্যবসা সফল হওয়ার পাশাপাশি, দর্শক-সমালোচক-মিডিয়া মুখরিত হয় উত্তম কুমারের প্রশংসায়। প্রচুর কাজের প্রস্তাব আসতে থাকে এবং শেষ পর্যন্ত চাকরি ছেড়ে দিয়ে তিনি পুরোদস্তুর অভিনেতা বনে যান।
উল্লেখ করা প্রয়োজন, চাকরি ছেড়ে বাংলা চলচ্চিত্রশিল্পে নিজের ভাগ্য গড়তে চাইলে গৌরী দেবীর দাদা উত্তম কুমারকে গাড়ি চালানো শিখতে বলেছিলেন। কারণ, তিনি একরকম নিশ্চিত ছিলেন যে, উত্তমের তারকা হওয়ার স্বপ্ন কোনোদিন পূরণ হবে না। স্বপ্নভঙ্গ ঘটলে কিছু একটা করে তিনি যাতে স্ত্রীকে খাওয়াতে-পরাতে পারেন, সে উদ্দেশ্যেই উত্তমকে গাড়ি চালানো শিখতে বলেছিলেন তাঁর সম্বন্ধী।
অভিনয় জীবনের শুরুর দিকে উত্তম কুমার অভিনীত ছবিগুলো একের পর এক ফ্লপ করতে থাকে। এ জন্য অনেকে তাঁর নাম দেন ‘ফ্লপ মাস্টার জেনারেল’। কোনো ছবির পোস্টারেই ঠাঁই পেত না উত্তম কুমারের নাম। পাঁচ বছর কঠোর সংগ্রামের পর শেষ পর্যন্ত তাঁর অভিনীত ‘সাড়ে চুয়াত্তর’ সিনেমাটি ব্যবসা-সফল হয়। ১৯৫৩ খ্রিষ্টাব্দে মুক্তি পাওয়া ওই ছবিটিতে উত্তম কুমারের সঙ্গে জুটি বেঁধেছিলেন কিংবদন্তী নায়িকা ‘সুচিত্রা সেন’। ‘অগ্নিপরীক্ষা’ ছবিটি মুক্তির পর প্রমাণিত হলো – বাংলা সিনেমার অপ্রতিদ্বন্দ্বী জুটি ‘উত্তম-সুচিত্রা’। পরবর্তীতে উত্তম-সুচিত্রা জুটি বাংলা ছবির সমস্ত রেকর্ড ভঙ্গ করে।
তারকা খ্যাতি পাওয়ার পর স্ত্রী গৌরী দেবীকে গাড়ি কিনে দেন উত্তম কুমার। তখন গৌরী দেবীর সেই দাদা বলেছিলেন, গাড়ির চেয়ে বাড়ি উপহার দিলেই ভালো হতো। পরবর্তী সময়ে একে একে সাফল্যের সিঁড়ি ডিঙিয়ে খ্যাতির চূড়া স্পর্শ করেন একসময়ের ‘ফ্লপ মাস্টার জেনারেল’- উত্তম কুমার। অসাধারণ অভিনয়-নৈপুণ্য দিয়ে অবিস্মরণীয় মহাতারকা হিসেবে বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসে স্থায়ী আসন-এ অধিষ্ঠিত হয়েছেন ‘মহানায়ক উত্তম কুমার’।
অভিনয় পাগল উত্তম কুমার চলচ্চিত্রের সঙ্গে সঙ্গে সমান তালে মঞ্চেও কাজ করে যান। ১৯৫৩ খ্রিষ্টাব্দে তিনি স্টার থিয়েটারে একনাগাড়ে ‘শ্যামলী’ নাটকের ৪৮৬টি প্রদর্শনীতে অভিনয় করেন।  ১৯৫৬ খ্রিষ্টাব্দে তিনি প্রথম প্লেব্যাক করেন ‘নবজন্ম’ ছবিতে। ১৯৫৬ সালে উত্তম কুমার অভিনেতা থেকে প্রযোজক হয়ে ‘হারানো সুর’ চলচ্চিত্রটি উপহার দেন। রাষ্ট্রপতি ‘সার্টিফিকেট অব মেরিট’ সম্মান পায় ছবিটি। বেশ কয়েকটি চলচ্চিত্র তিনি পরিচালনাও করেছেন। গুটিকয়েক হিন্দি ছবিতেও কাজ করেছেন তিনি। 
চলচ্চিত্রে অভিনয়ের সূত্রে উত্তম কুমারের সাথে সুপ্রিয়া দেবীর ঘনিষ্টতা শুরু হয়। সুপ্রিয়া দেবী ও সুচিত্রা সেনের সাথে গভীর সম্পর্কের কারণে তাঁর দাম্পত্য জীবনে সঙ্কটের সৃষ্টি হয়। ১৯৬২ খ্রিষ্টাব্দে উত্তম কুমারের সঙ্গে গৌরী দেবীর বিবাহ-বিচ্ছেদ ঘটে। ততদিনে সুপ্রিয়া দেবীর সঙ্গে উত্তম কুমারের সম্পর্কের বিষয়টি মিডিয়ার ফ্রন্ট লাইনে চলে আসে। সুপ্রিয়া দেবী দাবী করেন, ১৯৬২ খ্রিষ্টাব্দের ২ ডিসেম্বর উত্তম কুমারের সঙ্গে তিনি বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন। এরপর আমৃত্যু তিনি সুপ্রিয়াদেবীর সাথে কাটান; তবুও এই বিবাহ নিয়ে বিতর্ক আছে। অনেকের মতে ওই জুটি লিভ-টুগেদার করতেন। 
১৯৬৬ খ্রিষ্টাব্দে মুক্তি পায় উত্তম কুমার পরিচালিত সিনেমা ‘শুধু একটি বছর’।  ওই বছরেই মুক্তি প্রাপ্ত ‘কাল তুমি আলেয়া’ সিনেমায় তিনি সঙ্গীত পরিচালনা করেন।
অস্কার পুরস্কার সহ অগনিত আন্তর্জাতিক সম্মানে ভূষিত বিশ্ববরেণ্য চলচ্চিত্র পরিচালক সত্যজিৎ রায়ের ‘নায়ক’ ও ‘চিড়িয়াখানা’ ছায়াছবিতে অভিনয়ের জন্য উত্তম কুমার শ্রেষ্ঠ অভিনেতার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন। এছাড়া ‘অ্যান্টনি ফিরিঙ্গি’ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্যও তিনি জাতীয় পুরস্কার পান। উত্তম কুমার নিউইয়র্ক, বার্লিন প্রভৃতি চলচ্চিত্র উৎসবে বিশেষ  আমন্ত্রিত অতিথির সম্মান অর্জন করেছিলেন।
সম্পাদনা
কৃত্তিবাস ওঝা ও অবন্তিকা
প্রথম পর্বের লিঙ্ক : -https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=1179163739086224&id=100009778263804
(ক্রমশ)