“আধ্যাত্মিক জিন” –আধ্যাত্মিকতা এবং বংশ গতি ।
ডাঃ মৃনাল কান্তি দেবনাথ
আজ থেকে প্রায় ১৫০ বছর আগে চার্লস ডারউইন যখন তার বিখ্যাত প্রতিপাদ্য বংশ গতি নিয়ে লিখেছিলেন তখন তিনি প্রানীর শারীরিক সাম্য বৈসাম্যের ওপরেই বেশী জোর দিয়েছিলেন। নিজে একজন ধর্ম যাজক হয়েও তিনি এই প্রশ্নের উত্তর খোজার চেষ্টা করেন নি যে, “ মানুষ কেনো ঈশ্বর, সৃষ্টি কর্তা ইত্যদি নিয়ে ভাবে বা সেই দিকে আকর্ষিত হয়। ‘জিন’ নিয়ে বিজ্ঞানী রা প্রচুর পরীক্ষা নিরীক্ষা করে অনেক জ্ঞান লাভ করেছেন। নানা রোগ, শরীর এবং চেহারা নিয়ে জ্ঞান লাভ হয়েছে প্রচুর। কিন্তু মানুষের চিন্তা ভাবনা,ধ্যান ধারনা এবং বিশ্বাস নিয়ে খুব বেশী গবেষনা হয়েছে বলে আমাত জানা নেই।
দেখা যায় একই পরিবারে, একই পিতা মাতার সন্তানদের মধ্যে ভাবনা চিন্তা, ঈশ্বর বিশ্বাস ইত্যাদির বিস্তর ফারাক। গুরুবাদ নিয়ে আমার নিজস্ব ভাবনা চিন্তা আছে এবং আমি অনেক লিখেছি। সারা পৃথিবীময় গুরুদেব দের ছড়া ছড়ি, বিশেষ করে ‘এক ব্যাক্তি, এক মত, এক পুস্তক’ নিয়ে যে সব ধর্ম সৃষ্টি হয়েছে। হিন্দু ধর্মের মধ্যেও ঘুগুর বাসা অনেক আগেই বেধেছে। সেটা হয়েছে সনাতনি শিক্ষায় অশিক্ষিত হিন্দুদের জন্য ( কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়া হলেই সনাতনি শিক্ষা হয় না—- যাদব পুর, JNU তার প্রকৃষ্ট উদাহরন)। আমার ধারনা মতে, এই সব গুরুদের মধ্যে প্রায় ৯৫% এর, গুরু হওয়ার হবার কোনো যোগ্যতাই নেই। এদের মধ্যে আবার বেশ একটি শ্রেনী সাদা কথায় সমাজ বিরোধী, জেলে থাকার যোগ্য।
তাই বলে কি আধ্যাত্মিকতা, ঈশ্বর বা সৃষ্টি এবং সৃষ্টি কর্তা কিছু নেই???? অবশ্যই আছে। ‘অন্ধ বিশ্বাসী’ আর ‘জ্ঞানী বিশ্বাসী’ দুই বিপরীত মেরুর মানুষ। ভারতের সনাতন ঋষিরা ছিলেন ‘জ্ঞান তপস্বী এবং জ্ঞানী বিশ্বাসী’। বর্তমান সমাজের বেশীর ভাগ মানুষ “অজ্ঞান-অন্ধ বিশ্বাসী”।
তাহলে ৯৫% আর ৫% এর মধ্যে এই তফাত কেনো। এই নিয়ে আমি প্রচুর ভেবেছি। আমার নিজের দাদা সারা জীবনে কোনোদিন ঈশ্বর চিন্তা করেছেন বলে আমার মনে হয় না। আর আমি, বিশেষ কিছু না জনলেও, সারা দিন ‘ঈশ্বর চিন্তা,ঈশ্বরের কাজ’ এই নিয়ে এই বয়ষেও ভেবে মরছি কেনো? আমার ঠাকুরমা, অশিক্ষিত ছিলেন কিন্তু ছিলেন মহীয়ষী,নিয়মিত রামায়ন-মহাভারত পাঠ করতেন এবং সেই কথা বলতেন। আমার বাবাও বেশ ভালো সৎ মানুষ এবং ‘ঈশ্বর বিশ্বাসী এবং ঈশ্বর তত্ব অনুসন্ধিৎসু ছিলেন”। মা বিশ্বাসী ছিলেন কিন্তু তার ছিলো ”অন্ধ বিশ্বাস,কোনো দিন ঈশ্বর তত্ব নিয়ে এক বিন্দু পড়া লেখা করেন নি। শারিরীক অনেক মিল আমার আর আমার দাদার মধ্যে আছে, কিন্তু চিন্তা ভাবনায়, বিশ্বাসে এবং কর্ম প্রচেষ্টায় আমরা দুই বিপরীত মেরুতে বসে আছি। আমাদের তফাৎ ভাবনা চিন্তায় এবং বিশ্বাসে।
আমার মনে হয়, চেহারা এবং অসুখ বিসুখে যে বংশ গতি এবং ‘জিন গত’ ব্যাপার আছে ,ঠিক তেমনি আছে ভাবনা চিন্তায় এবং বিশ্বাসে। শুধু মাত্র লেখাপড়া এমনকি ধর্মীয় পরিবেশে বড়ো হয়ে ওঠা মানুজনদেরও মধ্যেও (আমি অনেক মিশন, মঠের মঠাধীশ কেও দেখেছি, তাদের মধ্যে আধ্যাত্মিকতার বিশেষ অভাব। লোভ এমনকি লালষাকেও তারা জয় করতে পারেন নি।)
সুতরাং, একই পিতা মাতা থাকলেই, পরিবারের শিক্ষা থাকলেই, ধর্মীয় বিদ্যায়তনে অনেক বছর কাটালেও, মঠ ,মিশনে সারা জীবন কাটালেও আধ্যাত্মিক বা ঈশ্বর বিশ্বাসী হবে এটার কোনো প্রমান নেই। “আধ্যাত্মিক জিন” টাও একটু থাকা দরকার।। যার যেমন’জিন’ সে শুধুমাত্র শরীর নয়, রোগ ব্যাধি নয়, ভাবনা চিন্তা এবং বিশ্বাসেও ঠিক তেমনি। আর আমরা তো সেই কাজই করি যা বিশ্বাস করি। তাই না ??????
এই বিষয়ে সম্প্রতি একটি লেখা পেলাম। এই প্রতিপাদ্যে আমার এই ভাবনাটাকেই স্বীকার করা হয়েছে।সেটার কিছু মুল্যবান অংশ তুলে দিলাম।
“Most people can accept diseases or height and even weight being genetically heritable to some extent, but when it comes to our personal beliefs we tend to be more skeptical. For many, the idea that there is a genetic component to our faith–or lack of it–is a stretch too far and damages the concept of self-determination that we hold so dear.
Nevertheless science has shown us clearly that one level of belief in God and overall spirituality is shaped not only by a mix of family environment and upbringing–which is not surprising–but also by our genes. Twin studies conducted around the world in the U.S., the Netherlands and Australia as well as ours in the U.K. show a 40 to 50 percent genetic component to belief in God.
What is striking is that these findings of a genetic basis for belief are consistent even across countries like the U.S. and the U.K., with their huge differences in beliefs and church attendance. For example, in the latest surveys in the U.S., when asked, 61 percent of white Americans say they firmly (ie. without any doubt) believe in God, compared with only 17 percent of firm believers in similar populations in the U.K.–greater than a threefold difference. The opposite scenario of non-belief is also true–only a tiny 3 percent of the U.S. population report being firmly atheist compared with 18 percent in the U.K. As well as belief, participation follows separate trends in the two countries. Some form of weekly church attendance is now nearly three times higher in the U.S. than the U.K.” by Tim Spector.