সংবাদ মাধ্যমের শিরোনাম দেখে না হেসে পারিনি। রোহিঙ্গা জঙ্গিদের হাতে বার্মার হিন্দুরা হত্যা ধর্ষণ লুটপাটের শিকার হয়েছে। যেহেতু আকাম করেছে তাই সচেতন কৌশলে ‘মুসলিম’ শব্দটি সরিয়ে ফেলেছে। এমনিতে ‘নির্যাতিত রোহিঙ্গা মুসলমান’ লিখতে লিখতে এরা ক্লান্ত হলেও প্রতিবেশী হিন্দুদের উপর হামলাকারী বার্মার রোহিঙ্গাদের পরিচয় এখন কেবলিই ‘রোহিঙ্গা’। বক্সবাজারের শরণার্থী শিবিরের মধ্যেই একজন হিন্দু শরণার্থীকে হত্যা করেছে অপর রোহিঙ্গা মুসলিম শরণার্থী। পালিয়ে আসা বার্মার হিন্দুরা গণমাধ্যমের কাছে দাবী করেছে তাদের হামলাকারীরা রোহিঙ্গা ছিলো…।
সম্প্রতি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বিদেশের এক সুধী সমাবেশে আক্ষেপ করে বলেছেন, কেন শুধু মুসলমানরাই শরণার্থী হয়…। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী তার সাংবিধানিক পরিচয়কে ছাপিয়ে বিগত বছরগুলোতে একজন মুসলিম নারী হিসেবে দেশ ও জাতির কাছে প্রতিনিয়ত পরিস্ফুটিত হচ্ছেন। এটি অবশ্য তেমন বিসাদৃশ্য কিছু নয়। যে দেশকে খাৎনা দিয়ে মুসলমান বানানো হয় তার প্রধানমন্ত্রী এরকম মানানসই হলেই বরং মানায়। যাই হোক, মুসলমানরাই কেন শরণার্থী হয়- এই আলোচনায় যাবার আগে একটা প্রশ্ন করি। আচ্ছা অবিভক্ত ভারতবর্ষে হিন্দুদের পর সর্ববৃহৎ জনগোষ্ঠির ধর্ম যদি ইসলাম না হয়ে খ্রিস্টান বা ইহুদী হতো, কিংবা বৌদ্ধ- তাহলে কি দেশভাগের কোন প্রয়োজন বা উপলক্ষ্য ঘটত? না বুঝেই আমাকে গালাগালি করার আগে একবার ভেবে বলুন। মুসলমানদের ‘মুসলিম উম্মাহ’ ‘মুসলিম জাতি’ ‘ইসলামী রাষ্ট্র’ ‘ইমাম মাহদির খিলাফত’ আল্লার রাস্তায় জিহাদ’ ইত্যাদি ধর্মীয় বিশ্বাসগুলো প্রতি দশজন মুসলিমের মধ্যে দুইজন যদি নিজেদের মধ্যে লালন করে আর এ্ই দু্ই জনের একজন যদি এগুলো প্রক্টিকিলি ব্যবহার করতে ইচ্ছুক হয় তাহলেই মুসলিম কমিউনিটি পৃথিবী অনেক জাতি ও সম্প্রদায়ের মধ্যে বাস করেও নিজেরা বিচ্ছিন্ন দ্বীপ হয়ে থাকবে। দ্বীপ হয়ে থাকলেও ক্ষতি ছিলো না। সেই দ্বীপ থেকে তারপর জিহাদের সৈনিক বের হতে থাকে। ইউরোপ আমেরিকাতে পৃথিবীর রঙবেরঙের ধর্ম জাতির মানুষ বাস করে। সংস্কৃতিক নিঃসঙ্গতা থেকে বর্ণবাদী আচরণ কমবেশি নন ইউরোপীয়ানদের ভোগ করতে হলেও কেবল মাত্র মুসলমানরাই ট্রাক লরি নিয়ে মানুষজনের উপর হামলে পড়ে। নিজ দেশে জিহাদীদের তাড়া খেয়ে সেক্যুলার ব্যক্তি স্বাধীনতার দেশে গিয়ে নিজেদের জন্য শরীয়া আইন চাওয়ার মত অসুস্থতা একমাত্র মুসলিম ছাড়া দ্বিতীয়টি কে আছে?
ইরাক, সিরিয়া, মিশর, তিউনিশিয়া, আফগানিস্থান সহ বর্তমান কালের শরণার্থীদের দেশ হিসেবে ব্যাপকভাবে পরিচয় দেশগুলোর চিত্রটা দেখেন। এসব দেশে মুসলিমদের রাজনৈতিক বিশ্বাসের কারণেই অমুসলিমরা টিকতে পারেনি। এতেও স্বাদ মিটেনি। মডারেট মুসলমানদের প্রত্যক্ষ সমর্থনে এবং কমিউনিস্ট মুসলমানদের আক্কেলহীনতার সুযোগ নিয়ে এই দেশগুলোর ফান্ডামেন্টালিস্ট মুসলিম পার্টিগুলো হয় ক্ষমতায় এসেছে নয়ত রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল করে নিয়েছে। এরপর নানামুখি গ্রুপের মধ্যে সৃষ্ট গ্রহযুদ্ধে লক্ষ লক্ষ মানুষ দেশ ছেড়ে শরণার্থী হয়েছে সারা পৃথিবীতে। আমি একদম নির্দ্বিধায় বলতে পারি আরাকানকে রোহিঙ্গাদের দিয়ে দিলেও সেখানে রোহিঙ্গা হিন্দুদের কোন ঠাই হবে না। বেশি দূর তো যাবার দরকার নেই ইতিহাসের নজির দেখতে- বাংলাদেশ থেকে ধর্মীয় সংখ্যালঘু এবং জাতিগত সংখ্যালঘুদের দেশান্তরিত হবার গ্রাফটা দেখলেই সেটা স্পষ্ট হয়।
কেন মুসলমানরাই খালি শরণার্থী হয়- এর জন্য সাম্রাজ্যবাদীদের দোষ দিয়ে, ইহুদীনাসারাদের দোষ দিয়ে নিজেদের স্বভাব দোষ দূর করা যাবে না। আর স্বভাব দোষ না গেলে অন্যরা তো সুযোগ নিবেই। ইসলাম প্রথমে অমুসলিমদের শরণার্থী বানায়। তারপর খোদ মুসলমানরাই তার শিকারে পরিণত হয়। এটাই শরণার্থী হবার ধর্মীয় কারণ। বাকীটা বিশ্ব রাজনীতি, সম্পদ আর ক্ষমতার বিষয়।