শুভাষিশ হিন্দু হলেও… একদম ইয়ে… মানে খুব ভাল আর কি…।

এক কবির নাম শুভাষিশ। তার কবিতা প্রথম আলোতে ছাপা হয়। বন্ধুদের ‘এই দশকের শ্রেষ্ঠ কবিদের কবিতা’ সংকলনেও তার কবিতা স্থান পায়। কবি জীবনের শুরু থেকে সে শাহবাগে কবি বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা মারত। দেশ জাতি বিশ্ব নিয়ে আলাপ হতো। কবি বন্ধুদের সবাই ইন্ডিয়ার উপর বেজায় ক্ষ্যাপা। ইন্ডিয়া বলতে অবশ্য কবি-সাহিত্যিকরা কেবল কোলকাতাকেই মনে করে। তো সেই কোলকাতা কোন বালের কবিতাই লেখতে পারে না। মুসলমানদের উত্থানে কোলকাতার হিন্দু কবিরা হিংসায় জ্বলে মরছে। এমনই একটা ভাব। কবি শুভাষিশ হিন্দু বলে ভারতের পক্ষে- এমন সন্দেহ যাতে না হয় তাই শুভাষিশ সর্বদা তটস্থ থাকত। বন্ধুদের সঙ্গে এসব ইস্যুতে সে-ই তাই সব থেকে উচ্চকন্ঠ থাকত। শাহবাগের চায়ের দোকানে চা খেতে খেতে সে বন্ধুদের সঙ্গে কষে ঝারতে থাকত, কোলকাতার দাদাবাবুদের সাহিত্যের মোড়লগিগিরে মানতে পারে নাই বইল্লাই এইখানে সাহিত্যের আলাদা কন্ঠস্বর খাড়া হইছে। ৪৭ সালে দেশভাগ এই দাদাগিরি থিকা চিরতরে আমাগোরে মুক্তি দিছে…।

বন্ধুরা খুশি হয় খুব। শুভাষিশ হিন্দু হলেও ইন্ডিয়ারে দুই চক্ষে দেখতে পারে না। শুভাষিশ তার সম্পর্কে বন্ধুদের এই প্রশংসা আড়ালে অনেকবার শুনেছে। যেমন তারা পাড়ার লোক আড়ালে তার সম্পর্কে বলে ‘শুভাষিশ বাবু হিন্দু হলেও মানুষ খারাপ না’। দুটো কথা শুভাষিশ এখন আর আলাদা করতে পারে না। আস্তে আস্তে সে অভ্যস্থ হয়ে গেছে। সত্যি সত্যিই এখন সে ‘মুসিলম বাংলার’ পক্ষে। শুভাষিশ তার বন্ধুদের মত ফরহাদ মজহারকে পীর মানে। হেফাজতের উত্থানকে সমাজের নিচুতলার শ্রেণী নিপীড়িত শ্রেণীর উত্থান আর শাহবাগের সেক্যুলার ব্লগারদের উত্থানকে পুজিবাদের সুবিধাভোগী মধ্যবিত্তের চিৎকার বলে মনে করে। শুভাষিশ তার দীর্ঘকালের সাহিত্য সাধণাকালে নিজেকে সব সময়ই হিন্দু পরিচয়ে যেন কোনভাবে ভারতপ্রীতি প্রকাশিত না হয়ে পড়ে সেই প্রচেষ্টা আপ্রাণ করেছে। নিজেকে সেক্যুলার প্রমাণ করতে সে হেফাজত ইসলামের উত্থানকে সমর্থন করেছে। ফরহাদ মজহারের মুসলিম সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র ও সমাজচিন্তাকে নিজের মধ্যে লালন করে বন্ধুদের কাছে নিরপেক্ষ থাকেছে। দেশে লাগাতার সাম্প্রদায়িক হামলার সময় সে নিশ্চুপ থেকেছে। যখন তার কবি বন্ধুরা এই সাম্প্রদায়িক হামলার পিছনে ভারতে মুসলিম বিদ্বেষ বেড়ে যাওয়াকে দায়ী করে তখন সেও ভারতের হিন্দুত্ববাদীদের জন্য বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িক সমস্যা কারণ বলে ফেইসবুকে পোস্ট দেয়। তার বন্ধুদের মত সেও শামসুর রাহমানকে বড় কবি মানে না কারণ তিনি অসাম্প্রদায়িক কবিতা লিখতেন। তার বন্ধুদের মত সেও কবি ফরুখ আহমদ, গোলাম মোস্তফা, কায়কোবাদকে নবরূপে বাংলাদেশে বিকাশের পক্ষপাতি। ৪৭ সালের পূর্ব পাকিস্তান কায়েমের পূর্বক্ষণের মুসলিম চেতনার জাগরণই শুভাষিশের বন্ধুদের বর্তমান সাহিত্যিক আন্দোলন। সে এই আন্দোলনে পৈতৃক হিন্দু পরিচয়ে যোগ দিয়ে আন্দোলনটাকে ‘অসাম্প্রদায়িক’ রূপদানে বড় ভূমিকা রাখায় তার বন্ধুরা বেজায় খুশি…। শুভাষিশ হিন্দু হলেও… একদম ইয়ে… মানে খুব ভাল আর কি…।