বুলেট ট্রেন কার স্বার্থে? সব মোদীর চক্রান্ত! ট্রেনের ড্রাইভারেরা বুলেট ট্রেন চালাতে অস্বীকার করুন…
————————————————
কম্পিউটারকে বাধা দেওয়া যে ভুল হয়েছিল, পরবর্তীকালে বামপন্থী নেতারাই তা স্বীকার করেছেন। কম্পিউটার ক্লার্ক কমিয়েছে, কিন্তু কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার আর মেকানিকের উদ্ভব ঘটিয়েছে। অর্থাৎ কম্পিউটার একদিক থেকে যেমন কর্ম সংস্থান কমিয়েছে, অন্যদিক থেকে আবার বাড়িয়েছে। সেই সংগে বেড়েছে একিউরেসি, এফিসিয়েন্সি। এই কারণে ব্যাঙ্কের লাইন বা ট্রেনের টিকিটের লাইনে আগের মতন ভিড় হয় না। আপনি বলছেন ঘরের ছেলেরা কাজ পাচ্ছে না। কেন পাচ্ছে না? কল-কারখানা তো সব বন্ধ হয়ে গেছে। কাজ হবে কোত্থেকে? আমাদের যা প্রয়োজন তা নয়ডা বা গুজরাট বা চীনে তৈরী হয়। আর আমরা তা কিনি। আমাদের নিজেদের চাহিদা আমরা নিজেরা পূরণ করতে পারি না কেন? কেন বাঙালি যখন ব্যবসা করতে যায় তা অচিরেই চিট ফাণ্ড হয়ে ওঠে? সবাই সরকারী চাকরি পাবে না। কোনও দেশেই তা হয় না। পড়াশুনা শেখা কি শুধু চাকরী করার জন্যে? ব্যবসা করতে গেলেও শিক্ষা লাগে। কিন্তু বাণিজ্যে আমাদের মন নেই। পুঁজিপতিকে দেখে আমরা ঘৃণা করি বা হিংসা করি। আবার পুঁজিপতি যখন বাংলায় শিল্প গড়তে এগিয়ে আসে না, তখন বলি আমাদের শিক্ষিত ছেলেরা চাকরি পাচ্ছে না! একই অঙ্গে এত রূপ! বুলেট ট্রেনও এমনি এমনি চলবে না, তার জন্যেও অনেক মানুষের কর্মসংস্হান হবে। আপনাদের উচিত ছিল পশ্চিমবঙ্গের জন্যেও বুলেট ট্রেন চালুর দাবি করা।
আমি একজন রেলড্রাইভার। রেলের আধুনিকীকরণের প্রয়োজন আছে তা আমিও হাড়ে হাড়ে বুঝি। কিন্তু আধুনিকীকরণের জন্যে টাকা চাই। রেলের টিকিটে ৪৩% ভর্তুকি দেওয়া হয়। অর্থাৎ ঘাটার ব্যবসা। তা সত্ত্বেও রেলের আধুনিকীকরণ হচ্ছে। ধীরে ধীরে হলেও হচ্ছে। বুলেট ট্রেনও রেলের আধুনিকীকরণের একটা অংশ। অন্ন-বস্ত্র-বাসস্থানের জোগান দিতে হলে প্রগতিরই হাত ধরতে হবে। আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়াতে হবে। তাতে সাময়িক ভাবে কিছু মানুষের চাকরি যাবে। কিন্তু অগ্রগতিকে ঠেকানো যাবে না। মোটর গাড়ির যখন আবির্ভাব হয়, তখন ইউরোপে ঘোড়ার গাড়িওয়ালারা কর্মচ্যুত হয়। যখন ইংল্যাণ্ডে রেলের পত্তন হয় তখন সেখান রেলের বিরুদ্ধে আন্দোলন কম হয়নি। অভিযোগ করা হয়েছিল, রেলের উদ্ভট শব্দে মাঠের গরুগুলো চমকে উঠবে, ফলে তাদের দুধ দেওয়া বন্ধ হয়ে যাবে, ফলে ডেয়ারীশিল্পের ক্ষতি হবে। কিন্তু তা সত্ত্বেও রেল অপরিহার্য হয়ে গেছে। কোচোয়ানেরা গেছে, মোটর ড্রাইভারেরা এসেছে। রেল আসার ফলে পল্কিবাহকদের চাকরি গেছে, কিন্তু রেল নিজেই কর্মসংস্হানের একটা বৃহৎ সংস্থা হয়ে উঠেছে। শুধু আবেগ দিয়ে দেশ চলে না। যদি প্রয়োজন হয় তবে, অমানবিক-কঠিন সিদ্ধান্তও নিতে হয়। শুধু বর্তমান নয়, ভবিষ্যৎটাও ভাবতে হয়, নইলে বারবার ভুল স্বীকারের নিজের রেকর্ড নিজেকেই ভাঙতে হয়। যেমন– “নন্দীগ্রামে গুলি চালানো ভুল হয়েছিল– মাফ করে দিন।” “প্রাইমারী থেকে ইংরাজী তুলে দেওয়া ভুল হয়েছিল– মাফ করে দিন।” ইত্যাদি ইত্যাদি…
————————————————
প্রবীর মজুমদার,
১৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৭
(দেওয়াল:প্রবীর মজুমদার।)