আকবর দ্যা গ্রেট (প্রকৃত ইতিহাস) : [ত্রয়োদশ পর্ব]
(শেয়ার অবশ্যই করবেন)
পূর্বের পর…
আকবর যাদের শত্রু বলে সন্দেহ করতেন, তাদের করুণ পরিণতিঃ
… আকবরের একজন কর্মচারী ছিল যার একমাত্র কাজ ছিল আকবর যাদের অপছন্দ করবে তাদের বিষ খাইয়ে হত্যা করা। কোন কোন ইতিবাদবিদেরা বলেন আকবরেরও ঐ একই পরিণতি হয়েছিল, জাহাঙ্গীর তাকে বিষ খাইয়ে মেরেছিল।
…আকবর তার জীবদ্দশায় তার বিশ্বস্ত এবং কম বিশ্বস্ত অনেককে হত্যা করেছে শুধু মাত্র সন্দেহের বশে। তারপর তাদের পরিবারের ওপর নামিয়ে এনেছে চরম নির্যাতন। এর তালিকায় আছে মুঘল সাম্রাজ্যের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা- বৈরাম খান, খান জেমাল, আসাফ খান, শাহ মনসুর, মানসিংহ, কামরানের পুত্র, মাখদুম মুল্ক, শেখ আবদুর নবী, ফারহগুন্দি, মইজুল মুল্ক, এবং আরও অনেকে যারা তার সন্দেহের মধ্যে ছিল।
…এই তালিকা ঐতিহাসিক ভিনসেন্ট স্মিথের বই থেকে পাওয়া যায়।
…আকবর, খান জেমালকে হত্যা করে তার স্ত্রীকে তার হারেমে যৌনদাসী বানাবার জন্য বন্দী করে এবং পরে সে গুজব রটিয়ে দেয় যে জেমালের স্ত্রী আত্মহত্যা করতে গিয়েছিল তখন সে তাকে রক্ষা করে হারেমে স্থান দেয়।
…চরম অকৃতজ্ঞ আকবর তার মাতাস্বরূপ বৈরাম খাঁর স্ত্রীকেও নিজের যৌনদাসী বানিয়েছিল। ১৫৬১ সালে আকবর বৈরাম খাঁ কে হজে পাঠিয়ে পথেই তাকে গুপ্ত ঘাতক দিয়ে হত্যা করে। তারপর তার স্ত্রী “সালিমা সুলতানা বেগম”কে হারেমে বন্দি করে কিছুদিন লাগাতার ধর্ষণ করে। কিন্তু তৈমুর লং এর বংশধর ‘মহম্মদ মির্জা’র মত আমীরের মেয়েকে হারেমে বেশিদিন রাখলে সমালোচনার সম্মুখীন হতে পারেন ভেবে নিকাহ করতে বাধ্য হন।
…আকবরের নবরত্নের এক রত্ন মানসিংহ একটি শক্তিশালী মুসলিম জেহাদি নৌবাহিনী তৈরি করতে চেয়েছিলেন শ্রীলঙ্কা আক্রমণ করার জন্যে। কিন্তু প্রস্তুতি পর্ব চলাকালীন মানসিংহ স্বপ্নে রাজা রামচন্দের আদেশ পান রামসেতু অতিক্রম না করার জন্যে। আকবরকে এই কথা জানালে আকবর ক্রুদ্ধ হয়ে গুপ্ত ঘাতক দ্বারা মানসিংহকে জবাই করে হত্যা করেন।
দানশীল আকবরঃ
…আকবরের শাসনামলে মৃত ব্যাক্তির সমস্ত সম্পত্তি বাদশা দ্বারা বাজেয়াপ্ত করা হত এবং এই সম্পত্তির উপর তার পরিবারের কোন অধিকার থাকত না। পরবর্তীতে হয়তো লোক দেখানো দয়া দেখিয়ে সেই পরিবারকে সাহায্য করার জন্য সামান্য কিছু সহায়তা দেয়া হত।
…এমনকি তার মায়ের মৃত্যুর এক বছর আগেই আকবর নিজেই এই পৃথিবীতে তার মায়ের বোঝা কমিয়ে দিয়েছিল তার সমস্ত সম্পত্তি গ্রাস করে। যদিও তার মায়ের ইচ্ছে ছিল তার সমস্ত সম্পত্তি পরিবারের সবার মাঝে সুষম ভাবে বণ্টন করা হবে।
আকবর ও তার নবরত্নঃ
…বিক্রমাদিত্যের বিখ্যাত গল্পের মত আকবরের রাজদরবারের নবরত্ন সম্পর্কিত সকল গল্পই ছিল মিথ্যা ও বানোয়াট। আসল কথা হচ্ছে আকবর তার মন্ত্রী পরিষদের সকল মন্ত্রী ও সভাসদগণদের খুবই বোকা মনে করত। আকবর একসময় বলেছিল, “সে আল্লাহ্কে ধন্যবাদ জানায় এই কারনে যে তার রাজদরবারে কোন যোগ্য লোক পাননি অথবা সেখানে এমন কেউই ছিল না যে মনে করত বাদশা যা কিছু করেন তা সভাসদগণের মেধা দিয়ে করেন, তার নিজের বুদ্ধি দিয়ে নয়।”
(১) টোডরমল:- টোডরমল ছিল আকবরের অর্থমন্ত্রী। শের শাহ সূরীর দরবারে সামান্য হিসাব রক্ষক হিসেবে তিনি তার জীবন শুরু করেন। আসলে তিনি হিন্দু হয়েও ছিলেন আকবরের সকল নোংরামির সঙ্গী। আকবরের নেক নজরের জন্য টোডরমল নৃশংসভাবে কর আদায় করত। কিন্তু টোডরমল যে দেব দেবীদের পূজা করত আকবর সেগুলো ধ্বংস করে দেয়। এতে টোডরমল মনে দারুণ আঘাত পায় এবং অর্থমন্ত্রীর পদ ছেড়ে দিয়ে বেনারসে চলে যায়!
(চলবে)
( – Writankar Das – )