আগ্রহবশত মাঝে মাঝে "কলম" পড়তাম। বিশুদ্ধ ইসলামি কাগজ।

(সকল তথ্য আনন্দবাজার পত্রিকা থেকে নেওয়া। ভ্রান্তি থাকলে তার দায় পত্রিকার।)
    বেশ কিছু বছর আগের কথা।
    মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার সরকারি গ্রন্থাগারে কি কি পত্রিকা রাখতে হবে তার একটি তালিকা তৈরী করে। তাই নিয়ে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ ওঠে। যেসব সংবাদপত্র গোষ্ঠী সেই তালিকায় স্থান পায়নি, তারা শোরগোল শুরু করে। যাই হোক, সরকারি সেই তালিকায় একটি স্বল্প পরিচিত নাম ছিল – “কলম”।
   আগ্রহবশত মাঝে মাঝে “কলম” পড়তাম। বিশুদ্ধ ইসলামি কাগজ। লেখার বিষয় – ইসলামের ভালো দিক, বাকিদের দুর্বলতা, ইসলামের প্রসার, রাজ্য সরকারের প্রশংসা। আস্তে আস্তে জানতে পারি যে “কলম” পত্রিকার সর্বেসর্বা নাকি জনৈক আহমেদ হাসান ইমরান। পরে দেখলাম তিনি রাজ্যসভায় তৃণমূলের সাংসদও হয়ে গেলেন। “কলম” আরো প্রসারিত হল। প্রায় সব জায়গায় দেখি খবরের কাগজের স্টলে জ্বলজ্বল করছে। গ্রামাঞ্চলে এর জনপ্রিয়তা সাংঘাতিক।
   এবার আনন্দবাজার থেকে কিছু অংশ তুলে দিলাম। নিচে লিঙ্কও দিয়েছি।

    তৃণমূল সাংসদ #আহমেদ_হাসান_ইমরানের সঙ্গে একাধিক #মৌলবাদী সংগঠনের যোগাযোগ নিয়ে রিপোর্ট দিয়েছে ঢাকার ভারতীয় দূতাবাসও। দূতাবাস থেকে পাঠানো ওই রিপোর্টে ভারতে নিষিদ্ধ মৌলবাদী সংগঠন, স্টুডেন্টস ইসলামিক মুভমেন্ট অব ইন্ডিয়া বা সিমি-র সঙ্গেও ইমরানের যোগসূত্রের কথা বলা হয়েছে।

● ইমরান রাজ্যসভার সাংসদ নির্বাচিত হওয়ার ঠিক পরেই বাংলাদেশে ভারতীয় হাইকমিশনার পঙ্কজ সারন নয়াদিল্লিকে একটি ‘ডশিয়ার’ পাঠান। সেখানে বাংলাদেশের মাটিতে সক্রিয় ভারত-বিরোধী গোষ্ঠীগুলির সঙ্গে ইমরানের যোগাযোগের কথা ছিল।
●  বিদেশ ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক রাজ্য সরকারকে সতর্ক করেছে বলে নবান্ন সূত্রে জানা গিয়েছে।
● এ প্রসঙ্গে নবান্নের এক কর্তা বলেন, “বিষয়টি আমাদের নজরে রয়েছে। ঢাকা দূতাবাস এবং কেন্দ্রীয় সরকার এ নিয়ে বিস্তারিত জানিয়েছে। সরকারের শীর্ষ মহলও এ নিয়ে অবহিত।”

বৃহস্পতিবার কলকাতায় বিজেপির অন্যতম জাতীয় সম্পাদক সিদ্ধার্থনাথ সিংহও দাবি করেছেন, তৃণমূল সাংসদের মৌলবাদী যোগাযোগ নিয়ে বেশ কয়েকটি কেন্দ্রীয় এজেন্সি পৃথক ভাবে তদন্ত করছে। ফলে শুধুমাত্র সারদা কেলেঙ্কারি নয়, রাজ্যসভার ওই সাংসদের দেশ-বিরোধী কাজও এ বার তদন্তের আওতায় চলে এসেছে। কেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এমন এক ব্যক্তিকে রাজ্যসভায় পাঠালেন, তদন্তকারীরা তাও খতিয়ে দেখছেন বলে বিজেপি নেতার দাবি।

কে এই ইমরান?

●  ১৯৭০-’৭১ সালে বাংলাদেশের শ্রীহট্ট অঞ্চল থেকে ভারতে আসেন তৃণমূল সাংসদ।
● প্রথম দিকে তিনি অসমের ধুবুরি এলাকায় থাকতেন।
● পরে জলপাইগুড়ির ধূপগুড়িতে চলে আসেন।
● ১৯৭৫-’৭৬ সালে ইমরান এ রাজ্যে ওয়েস্ট বেঙ্গল মুসলিম স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন নামে একটি সংগঠন তৈরি করেন। দ্রুত সেই সংগঠন বিস্তার লাভ করে।
●  ১৯৭৭ সালের ২৪ এপ্রিল দেশের বিভিন্ন মুসলিম সংগঠনগুলিকে নিয়ে আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি সম্মেলন হয়। সেই সম্মেলনেই জন্ম হয় স্টুডেন্টস ইসলামিক মুভমেন্ট অব ইন্ডিয়া (সিমি)-র। আহমেদ হাসান ইমরান সেই সম্মেলন থেকে সিমি-র পশ্চিমবঙ্গ শাখার সভাপতি নির্বাচিত হন। পরবর্তী তিন বছর তিনি সিমির সভাপতি পদে বহাল ছিলেন। তার পরেও সিমি নিষিদ্ধ হওয়া ইস্তক পশ্চিমবঙ্গে ইমরানই সিমির প্রধান।

● কলকাতার পার্ক সার্কাস এলাকার ১৯ দরগা রোডের দু’কামরার ঘরে সিমির প্রথম অফিস শুরু করেন ইমরান। সেখান থেকেই ১৯৮১ সালে সিমি-র মাসিক মুখপত্র ‘কলম’ পত্রিকা প্রকাশ শুরু হয়। ১৯৯৪ সাল পর্যন্ত পত্রিকাটির মাসিক সংস্করণ এই ঠিকানা থেকেই ধারাবাহিক ভাবে প্রকাশিত হয়ে এসেছে।
● এই সময়ের সিমি-র সংগঠন সারা রাজ্যে ছড়িয়ে দিয়েছিলেন ইমরান। ফলে ইসলামি দুনিয়ায় তাঁর গুরুত্বও বাড়তে থাকে।
● সিমির পাশাপাশি জেড্ডার ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট ব্যাঙ্ক-এর পূর্বাঞ্চলের অন্যতম কর্তা হিসাবে নিযুক্ত হন তিনি। এই ব্যাঙ্কের ম্যানেজিং ডিরেক্টর হলেন ঢাকার মামুল আল আজম। মামুল বাংলাদেশের মৌলবাদী সংগঠন জামাত-ই-ইসলামির প্রতিষ্ঠাতা গোলাম আজমের ছেলে।
● ইমরান ইসলামিক ব্যাঙ্কের বোর্ডে যাওয়ার পরই ১৯৯৪ সাল থেকে ‘কলম’ পত্রিকা প্রতি সপ্তাহে প্রকাশিত হতে শুরু করে। ১৯৯৮ সালে তা দৈনিক পত্রিকায় পরিণত হয়। এই সময়েই সিমি এবং ‘কলম’ পত্রিকার অফিস পার্ক সার্কাস থেকে ৪৫ ইলিয়ট রোডে উঠে আসে।
● ইমরান বাংলাদেশে জামাত অনুসারী সংবাদপত্র ‘নয়া দিগন্ত’র ভারত-প্রতিনিধি হিসেবেও কাজ করতেন। নিয়মিত সেই কাগজে তাঁর লেখা প্রকাশিত হয়েছে।
● বাংলাদেশে শেখ হাসিনার জমানায় যে সব মৌলবাদী নেতার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া শুরু হয়, এমন অনেকের সঙ্গে ইমরানের প্রত্যক্ষ যোগাযোগ ছিল। এঁদের মধ্যে গোলাম আজম, মতিউর রহমান নিজামি, দিলওয়ার হোসেন সাইদি, আল মুজাহিদ, মীর কাশেম আলি, আব্দুর কাদের মোল্লা প্রমূখ। হাসিনা সরকার এঁদের সকলকেই যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে আন্তর্জাতিক আদালতে বিচারের কাঠগড়ায় তুলেছেন। মৌলবাদী এই নেতারা বাংলাদেশে ধারাবাহিক ভাবে ভারত বিরোধী কার্যকলাপ চালান বলেও ঢাকার হাইকমিশন নয়াদিল্লিকে জানিয়েছে।
● ইমরানের সঙ্গে বহু ইসলামি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিল। সেই সব সংস্থার কাজকর্ম সম্পর্কেও নানা তথ্য জানা গিয়েছে। যেমন, উত্তর ২৪ পরগনার পেট্রাপোল এলাকার আব্দুল মতিন এবং ইটিন্ডা-পানিপুরা এলাকার শওকত আলির মতো কিছু ব্যক্তির নাম ভারতীয় নিরাপত্তা এজেন্সিগুলি পেয়েছে, যাঁদের সঙ্গে ইমরানের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিল। সীমান্তের এই ব্যক্তিরা কেন তৃণমূল সাংসদের এত ঘনিষ্ঠ, তা নিয়েও তদন্ত করছে বিভিন্ন কেন্দ্রীয় সংস্থা।

Link…….