অভিজিৎ রায় : ‘জানার কোনো শেষ নাই, জানার ইচ্ছে বৃথা তাই’ !
————————————————————————-
আজ অভিজিৎদার জন্মদিন । এ বিষয়ে লিখতে আর ভালো লাগেনা, ঘেন্না ধরে গেছে । তবু কিছু উত্তর না পাওয়া প্রশ্ন মাথায় ঘুরতে থাকে, তাই লেখাটা লিখতে বসলাম । পাঠক, আমরা জানি শতকরা ৯০% মুসলমানের দেশে কট্টরপন্থীরা যে তার মৃত্যু চাইবে এটাই স্বাভাবিক, সাথে হত্যায় যদি নিরব সমর্থন মডারেটদের থাকে তাহলে তো অভিজিৎ রায় হত্যা একটা সফল পরিকল্পিত অভিযান হবেই হবে, কিন্তু অভিজিৎদার জন্মভূমি বাংলাদেশের শাসক প্রশাসনের কাছে আমার প্রথম প্রশ্ন :
➤ একজন লেখকের আপত্তিকর লেখা খুঁজে বের করে তার খুনকে জাস্টিফাই করা যায় ?
আমার দ্বিতীয় প্রশ্ন :
➤ বাংলাদেশের পুলিশ প্রশাসন একবার বলে তারা অভিজিৎ হত্যা ‘ক্লু-লেস’, একবার বলে, খুনিরা বিদেশে পালিয়েছে, তারপর মে মাসে জঙ্গির ছবি প্রকাশ করে পুরষ্কার ঘোষণা করে ! সরকার পুলিশ বাহিনী পরিচালনা করেন এবং উপরের মহলের নির্দেশ ছাড়া ক্রসফায়ার ঘটে না, তাই যদি বলি সরকারও দেশের ধর্মনিরপেক্ষ, নাস্তিক ব্লগার লেখক, প্রকাশক, সমকামী, ভিন্ন ধর্মালম্বীদের হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত, খুব কি বাড়িয়ে বলা হবে ?
আমার তৃতীয় প্রশ্ন :
➤ বাংলাদেশের সংবাদ মাধ্যমে প্রচারিত তথ্য অনুযায়ী ১২৫ টি ইসলামিক মৌলবাদী সংগঠন আছে এবং যারা নানা ধরণের সাম্প্রদায়িক জঙ্গি তৎপরতার সাথে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ ভাবে জড়িত। ব্লগার হত্যা সন্দেহে জড়িতদের সকলেই কোন না কোন ইসলামিক জঙ্গি সংগঠনের সদস্য। সরকার হত্যাকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে বরং সেকুলার ব্লগারদের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে। ব্লাস্ফেমি আইন করে সেকুলার ব্লগারদের লেখালিখে বন্ধ করে দিয়েছে। তাদের গ্রেফতার করেছে কিংবা নানা ভাবে ভয় ভীতি দেখিয়ে দেশ ছাড়তে বাধ্য করেছে। কিন্তু কেন ?
আমার চতুর্থ প্রশ্ন :
➤ মৌলবাদের বন্ধুত্ব গ্রহণ করে সরকারের কি লাভ ?—–উত্তর খুঁজতে তলিয়ে দেখতে হবে| বাংলাদেশের আইন শৃঙ্খলা পরিস্তিতি নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থাগুলোর মধ্যে সব চেয়ে ক্ষমতাধর বাহিনীটির নাম বাংলাদেশ সেনাবাহিনী । প্রতিরক্ষা বাহিনীর জন্য বছরে ২ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার খরচ করা হয়| দেশে কোন ধরনের আন্দোলন সংগঠিত হলে এই বাহিনী সেই আন্দোলন কে রোধ করতে মাঠে নামে । এবং তারা তাদের ক্ষমতা প্রয়োগ করে প্রতিবাদের মুখ বন্ধ করে দেয় । ১৯৯৬ সালে বাংলাদেশে আদিবাসী নেত্রী কল্পনা চাকমা কে তারা প্রকাশ্যে অপহরণ করে | পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম তার এক সাক্ষাৎকারে উল্লেখ করে যে, ব্লগার হত্যায় একজন প্রাক্তন সেনা কর্মকর্তা জড়িত ।
একজন সেনা কর্মকর্তা জড়িত অথচ গোয়েন্দা বিভাগ এই বিষয়ে কিছুই জানে না, সেটা কিভাবে সম্ভব ?
আমার পঞ্চম প্রশ্ন :
➤ অভিজিৎদার হত্যা, শাহবাগ থানা থেকে ২০০ গজ দূরত্বে হয়েছিল । ঘটনাস্থলের কাছেই ছিল পুলিশের নিরাপত্তা টহল দল। গ্রন্থমেলার ফটক ঘিরে আরও কয়েক স্থানে ছিল পুলিশের অবস্থান। বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় পুলিশের নিয়মিত টহল দলের অবস্থানও ছিল আশপাশের সড়কে । ঘটনাস্থলের ৫০ গজ দূরেই কি দায়িত্ব পালন করছিল পুলিশ ?
আমার ষষ্ঠ প্রশ্ন :
➤ অভিজিৎদের হত্যার দায় স্বীকার করেছিল আনসার বাংলা -৭, হ্যা, একদম হঠাৎই গজিয়ে ওঠা ৭ নম্বর। এর আগে বা পরে কত নম্বররা বাকি মুক্তমনা নাস্তিকদের খুনের দায় স্বীকার করেছে, আপনারাই ভালো বলতে পারবেন, কেননা আজকের পাঠক পড়ে ও অনেক বেশি সজাগ । যাকগে, এ হেন আনসার বাংলা -৭ কিভাবে দায় স্বীকার করলো ? তারা টুইটার বার্তাতে এটা জানিয়েছিল । সরাসরি “আমরা করেছি” এমন বলেনি, বলেছিল “করা হয়েছে”। মানলাম এটাকে দায় স্বীকার ধরে নেওয়া যায় । একটি সন্ত্রাসী সংগঠন হত্যা করার পরে টুইটারে দুই রকমের বার্তা পাঠাতে পারে ? ‘ এক – “করা হয়েছে”; দুই – “আমরা করেছি বা দায় স্বীকার করছি”। দুই রকমের কেন ? কারন, প্রথমটা (করা হয়েছে) টুইটারে দেওয়া হয় নিজেদের সংগঠনের সদস্যদের কাছে সংবাদটি পৌছানোর জন্য । দ্বিতীয়টা (দায় স্বীকার করছি) সাধারনত দেওয়া হয় সরকার, মিডিয়া, পুলিশ এদের জন্য। যাতে সবাই জানে খুন তারাই করেছে। এমন যে হতেই হবে, বা এমনটা যে নিয়ম তা নয়, তবে অফিসিয়ালি দায়ভার স্বীকার করার টুইটার বার্তা সাধারনত অন্যরকম থাকে । এই টুইটার বার্তাটা ছিল নিজেদের সদস্যের কাছে দেওয়া বার্তার মতন । সব থেকে হাস্যকর বার্তাটা লাইক করেছিল মাত্র ৭ মাত্র জন আর রিটুইট (শেয়ার) করেছিল মাত্র ৫ জন(তথ্যে ভুল থাকলে ধরিয়ে দেবেন প্লিস )। পাঠক, তাহলে ওই সংগঠনের সদস্য কতজন ?
প্রশ্নগুলো কি কেবলই প্রশ্নই থেকে যাবে , না কি প্রশ্নের উত্তর জানা থাকলেও না জানার ভান করে অভিজিৎদার জন্মভূমির শাসক প্রশাসন চির বধির হয়ে থাকবে…………………….. ?