সনাতনি সমাজে সর্ব প্রথম ‘কাল মেঘের’ ঘনঘটা শুরু হলো ৭১২ সালে।

“হিন্দু রাজাদের স্বাধীনতা রক্ষার সংগ্রাম”– জিহাদ ও ভারতীয় সমাজ
দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ— ‘জেহাদ এবং ভারতবর্ষ’ –লেখক ডা;মৃনাল কান্তি দেবনাথ

আলেকজান্ডারের ভারত আক্রমন ছিলো বৈশাখী ঝড়ের মতো। সেই আক্রমন ভারতীয় জনজীবনে বা সামাজিক এবং ধর্মীয় জীবনে কোন সুদুর প্রসারী  প্রভাব ফেলেনি। সনাতনি হিন্দু সমাজ সামান্য কিছু সময়ের মধ্যেই সেই অভিঘাত থেকে দাঁড়িয়ে উঠে পুনরায় নিজ ছন্দে ফিরে গিয়েছিলো। পরবর্তী হিন্দু রাজারা (মৌর্য এবং গুপ্ত সম্রাটেরা) সমস্ত ভারতকে , ভারতীয় জনজীবনকে, সনাতনী বৈদিক সমাজ কে এক সুত্রে মালার মতো গেথে রেখেছিলেন। সেই বৈদিক সমাজ, কোনো রকম কলুষতার দ্বারা প্রভাবিত, পরিবর্তিত বা বিষাক্ত হয়ে ওঠেনি। বৈদিক জীবন এবং সমাজ ছিলো স্বয়ং সম্পুর্ন। জ্ঞান বিজ্ঞান, ধর্মীয় জীবন, চিকিৎষা-স্বাস্থ্য, শিক্ষা, রাজনৈতিক কার্যকলাপ, অর্থনৈতিক ব্যবস্থা, এর কোনো কিছুর জন্য সনাতনি হিন্দুকে পরমুখাপেক্ষী হতে হয় নি বা বাইরের কোনো সমাজ বা সংষ্কৃতি থেকে ধার করতে হয়নি। সনাতনি বৈদিক সমাজ বিদেশী দের শিখিয়েছে, দিয়েছে; নেয়নি কিছু। কারন বিদেশীদের থেকে নেবার বা  শেখার কিছুই ছিলো না। ‘সনাতনী / বৈদিক সভ্যতার রেনেশাঁস এইভাবে চলেছিলো প্রায় এক হাজার বছর। ৩২৭ খ্রীষ্ট পুর্বাব্দ (আলেকজান্ডারের ভারত আক্রমন) থেকে ৭১২ খ্রীষ্টাব্দ ( মুহাম্মদ বিন কাসিমের সিন্ধু বিজয়, ‘রাজা দাহির’অবধি ) ভারতীয় হিন্দুদের জ্ঞান  বিজ্ঞানের জয় জয় কার। আর্য ভট্ট, বারাহ মিহির, চরক – শশ্রুত, কৌটিল্য, বাৎসায়ন—কতো নাম লিখবো????

সনাতনি সমাজে সর্ব প্রথম ‘কাল মেঘের’ ঘনঘটা শুরু হলো ৭১২ সালে। শুরু হলো “অসভ্য, দস্যু শক্তি, ‘আরবী বর্বরতা”র তান্ডবী ঝড়ের শুরু, ঘুর্নি ঝড়, সেই সংগে অবিরাম দাপুটে বর্ষাপাত।   অমানবিক, অমানুষিক, ‘ধর্মের খোলষে মোড়া’ এক ঔপনিবেশিক বিষধর কাল সাপ, আরবের রুক্ষ মরুভুমির বেদুইন দস্যু দের উন্মত্ত রিরংসা, ভারতীয় জন জীবনে ছিলো অভাবিতপুর্ব, অজানিত এবং কল্পনাতীত। অশালীন,মানুষের আদিম প্রবৃত্তির প্রতিভু, রক্তপিপাসু মনোবৃত্তি দিয়ে তৈরী, সেই বর্বর শক্তি বিষ ছড়াতে ছড়াতে, সাধারন মানুষের গলার নলী কাটা রক্তে হাত রাঙ্গিয়ে, একে একে ধংস করলো প্রাচীন মেসোপটেমিয়া (ইরাক), ইরান। শেষে এসে উপস্থিত হলো আর এক প্রাচীন সভ্যতা এবং সংষ্কৃতির পীঠস্থান, সনাতনি হিন্দু জাতির মাতৃভুমি ভারতবর্ষের দোড় গোড়ায়, আফগানিস্তানে। সেই কালসাপের ঝরানো বিষের প্লাবনে ধুয়ে মুছে প্রায় সাফ হয়ে গেলো, সারা মধ্য এশিয়ার প্রাচীন জন জাতিগোষ্টির জীবন যাত্রা, নিজস্ব বাস্তু ভিটে, নিজস্ব ধর্ম এবং সংষ্কৃতি। সেই বিষাক্ত প্লাবনের ঢেউ আছড়ে পড়লো ভারতবর্ষে, সমস্ত ভারতীয় জন জীবন, ভারতীয় কৃষ্টি, সংষ্কৃতি ধ্বংস হতে শুরু হলো । তৈরী হতে শুরু হলো এক উন্নত সভ্যতাকে নিম্ন মুখী করে ধীরে ধীরে গ্রাস করার প্রক্রিয়া, যা আজো চলছে।। 

সাধারন বন্যার জল  সরে যায়,  পড়ে থাকে পলিমাটি। সেই পলিমাটিতে শষ্য ভালো হয়, পুনরায় জেগে ওঠে সমাজ জীবন। কিন্তু সুনামীর জলে ভেসে আসে সমুদ্রের তলায় পড়ে থাকে পচা গলা কাদা মাটি। সেই মাটিতে কোনো ফসল হয় না। গাছ পালা মরে যায়। (দেখে আসুন আন্দামানে, নারকেল গাছ থেকে শুরু করে সমস্ত জমি চাষ বাসের অযোগ্য হয়ে আছে সেই ২০০৪ সাল থেকে)। সেই থেকে শুরু ‘সনাতনী বৈদিক সভ্যতার ধীর গতির মৃত্যু।