“হিন্দু ঐক্য” = কাঁঠালের আমসত্ব

“হিন্দু ঐক্য” = কাঁঠালের আমসত্ব
ডাঃ মৃনাল কান্তি দেবনাথ

‘হিন্দুত্ব’, ‘হিন্দু ঐক্য’ এই সব কথা ইদানীং বেশ শোনা যাচ্ছে। হিন্দুদের জাগরিত করার জন্য মঞ্চ ও আছে। “জাতীয়তাবাদী হিন্দু দল” এর ( বি বি সি র ভাষায় Hindu Nationalist Party) রাজনৈতিক কর্ম কান্ড চলছে। কিন্তু সারা পৃথিবীতে হিন্দুরা যেখানে সব থেকে বেশী সংখ্যায় বাস করে, সেখানে হিন্দুরা এক হতে পারছে না। কেনো ??? কেনো একটি দেশে, যেখানে হাজার বছরের কিছু আগে একশো ভাগ ই হিন্দু নামধারী কিছু মানুষ বাস করতো, আজ সেখানে তারা কমে এসে (সংখ্যায় নয়, শতাংশে) ৭৫% দাড়িয়েছে। এই ৭৫ ভাগ হিন্দুরা আবার শতধা বিভক্ত।

বর্তমান পৃথিবীতে আর যতো ধর্ম আছে বা এক সময় ছিলো, তাদের এক গুরু, এক বই, এক মত। সেই জন্যই তাদের উপাসনা পদ্ধতিও এক। তারা একটি বই পড়ে এবং নিয়মিতই পড়ে। না পড়লে তারা পাপ (গুনাহ) করে বলে বলা আছে। ধর্ম ভীরু তারা, তাই নিজ ধর্মের নির্দেশ কে অন্যথা করার সাহস দেখায় না। এদের মধ্যে কিছু ভাগাভাগি অবশ্যই আছে কিন্তু আসলে তারা এক। বিপদে আপদে এক সংগে রুখে দাঁড়ায়। নিজেদের মধ্যে এক ভ্রাতৃত্ব বোধ তৈরী করে। সপ্তাহে একদিন অতি অবশ্যই এক জায়গায় মিলিত হয় ধর্মীয় কথা শোনার জন্য। ধর্মীয় আচার আচরন পালন করে এক সঙ্গে। এদের সব কিছুই এক একতার মধ্যে বাধা ধরা নিয়মে চলে। তার অন্যথা হলে ধর্মীয় নেতারাই শাস্তি দেয়।

হিন্দুদের মধ্যে এক সময় ছিলো। সে সব চুকে বুকে গেছে। পড়ে আছে কি ?? ৯৫ % হিন্দু নিজ ধর্ম গ্রন্থ ছুয়েও দেখে না। খুব কম হিন্দু আছে যারা নিত্য দিন ধর্মীয় সাধনা করে। আচার অনুষ্ঠানের নামে কুআচার এবং কু সংষ্কার টা আকড়ে ধরে চলে। পাড়ায় পাড়ায়, অসংখ্য মন্দির আছে, আশ্রম আছে। আশ্রমে গুরু বাবারা আছেন। সেই আশ্রমে থাকেন কিছু সেবাইত রা, যারা ভক্তদের কোনো সেবা করে না। নিজেরা সেবা করেন, গুরু দেবকে সেবা করান , দুপুরে নাক ডেকে দিবা নিদ্রা দেন,না হলে মাথা ধরে।

এক এক গুরুর এক এক আশ্রম। এক আশ্রমের গুরু অন্যদের সম্বন্ধে উদাসীন। বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে শেখানো হয় অন্যদের থেকে শত হাত দূরে থাকতে। এদের মধ্যে অনেক গুরু নিজেকেই “ঈশ্বর” বলে ঘোষনা করেন। শ্রী কৃষ্ণ কে পুরুষোত্তম বলা হয় তো এদের কাউকে কাউকে বলা হয় ‘পুরুষোত্তমম’, অথচ ঘুরিয়ে ফিরিয়ে সেই শ্রী কৃষ্ণের বলা কথাই বলেন, গীতার শ্লোক আওড়ান । শ্রী কৃষ্ণ ভজন বা বৈষ্ণব পদাবলীর সুরে এবং কথায় সামান্য পরিবর্তন করে এরা  ভক্তদের কাছ থেকে বিপুল অর্থ জোগাড়ের নানা ফন্দি তৈরী করেন যা “চিটফান্ড” গুলোর প্রতিষ্ঠাতা ধান্দা বাজেরাও পারে না।

সনাতনি দর্শনের “বহুত্বের মধ্যে একত্ব” বলতে কি বোঝায় তা এরা জানেন না বা জানলেও চেপে যান। এরা বহুত্ব পছন্দ করেন , একত্ব এদের না পছন্দ। কারন তাহলে নিজেদের সাম্রাজ্য চলে যাবে।

এরা ‘যত মত ততো পথ’ কথাটাকে ভুল বোঝান। পথ অনেক হলে সবাই এক পথে চলবে না।নানা পথে চলে যাবে। বিপদ বুঝলে যে যার মতো বাগানে লুকাবে।অন্যদের কথা ভুলে যাবে, আর নিজ নিজ গুরুকে স্মরন করবে (ঈশ্বরকে নয়),এরা তাই চান। এরা নিজেদের পরিচালিত বিদ্যালয় সমুহে নিজদের কতৃত্ব বজায় রাখতে নিজেদের ‘হিন্দু নই’, ‘ধর্মীয় সংখ্যলঘু’ তকমা নেবার জন্য আদালতের দরজায় ঘুরবেন। অনেকের আশ্রমে নানা পুজার সময় ব্রাহ্মন না হলে ফল কাটতে দেওয়া হয় না।

অনেকের আবার সিল্কের বা মখমলের আভুষন, বসার গদি রাজ রাজ রাজড়াকেও হার মানবে। পানের থেকে চুন খসলে সেবাইতদের গালাগালি করবেন। ঘি দেওয়া আহার করে প্রত্যেকের বিশাল বপু এবং মেদ সম্বলিত মধ্যদেশ। শুনি, বিলাসিতার আরো নানা ব্যাবস্থা আছে। এরা ত্যাগী তো ননই, অদম্য ভোগীকেও হার মানান। ভোগ বিলাসের এই ব্যাবস্থা পাকা করতে নিজ নিজ সম্প্রদায়ের শিষ্য সামন্তকে ধরে রাখার সব রকম ব্যাবস্থা আছে। সাধারন গরীব মানুষ এদের ধারে কাছে যেতে পারে না। প্রনামী কম হলে দূর থেকে হাত তুলবেন, বেশী হলে পিঠে হাত দিয়ে চাপড়ে দেবেন।

এরা হিন্দুদের এক হতে বলেন না। জাত পাত,  ছ্যুত অছ্যুত মার্গ সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঢুকিয়ে দিয়ে হিন্দু (সনাতনি) দের শতধা বিভক্ত করে না রাখলে এদের চলে না। আদিবাসীদের ঘৃনা করে তাদের পুজা মন্ডপে যেতে দেওয়া হয় না। গাড়ি না পাঠালে শিষ্য (যজমান) বাড়ি যাবেন না।

এদের কিসসা বেশী বললে নিন্দা, ধমক খেয়ে আমার রাতের ঘুম চলে যাবে । তাই আর লিখলাম না। (এতেই এখন দেখি কি পরিমান নিন্দা শুনি)।শুধু এই বলি—- “ এই সম্প্রদায় ভিত্তিক গুরুদেবরাই হিন্দু ঐক্য কোনোদিন চায় নি আর হতেও দেবে না। হাজারো রাজনৈতিক দলের নেতাদের মতো হাজারো ধর্মীয় নেতা, আর সেই সংগে হাজারো মত এবং পথ।

হিন্দুরা কি করে এক হবে?????????