আচ্ছা, আপনাদের ধনঞ্জয়ের কথা মনে পড়ে? .. ধনঞ্জয় চট্টোপাধ্যায় …??

আজ ১৪ই আগস্ট …

একটি বিশেষ দিন। … না, মশাই আমার বলার বক্তব্য এই নয় যে, আজ পাকিস্থানের জন্মদিন .., বা আজ ১৫ই আগস্টের … অর্থাৎ আমাদের স্বাধীনতা (মতান্তরে ঐস্লামিক অধীনতা) দিবসের ঠিক আগের দিন … ।।

আচ্ছা, আপনাদের ধনঞ্জয়ের কথা মনে পড়ে? .. ধনঞ্জয় চট্টোপাধ্যায় …??

২০০৪-এর স্বাধীনতা দিবসে কলকাতা-সহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রকাশিত একাধিক প্রভাতী  সংবাদপত্রের প্রথম পৃষ্ঠায় শীর্ষ-সংবাদটি ছিল অভিন্ন৷ মহানগরের অষ্টাদশী এক ছাত্রী হেতাল পারেখকে খুন ও ধর্ষণে অভিযুক্ত ধনঞ্জয় চট্টোপাধ্যায়ের ফাঁসি হয়েছিল তার আগের দিন ভোরে৷ এই দণ্ডাদেশ ঘিরে বিতর্ক চলেছে অবশ্য তারও বেশ কিছু দিন আগে থেকেই৷ ১৯৯০-এর ৫ মার্চ পদ্মপুকুর এলাকার এক অ্যাপার্টমেন্টের তিন তলার ফ্ল্যাট থেকে উদ্ধার হয়েছিল ২১টি গুরুতর আঘাতের চিহ্ন-সহ হেতালের রক্তাক্ত লাশ৷ ঘটনার পরের কয়েক দিন জুড়েও মিডিয়ায় চলেছিল তুমুল চর্চা৷ দু’মাস পর, ১২ মে বাঁকুড়ার কুলুডিহি গ্রামের বাড়ি থেকে অভিযুক্ত ধনঞ্জয়ের গ্রেপ্তারি ফের তরঙ্গ তুলেছিল৷ তার পর সময়ের সঙ্গেই থিতিয়ে গিয়েছিল চর্চা-আলোচনা৷ চোদ্দো বছর পর ধনঞ্জয়ের ফাঁসির দিন ঘোষণা হতেই বিতর্ক পৌঁছয় অন্য মাত্রায়৷ মৃত্যুদণ্ডের বৈধতা নিয়ে জন-পরিসরে যুক্তি, পাল্টা যুক্তির অভূতপূর্ব বিস্ফোরণের সাক্ষী হয়েছিল এই দেশ৷ সুপ্রিম কোর্ট এবং রাষ্ট্রপতি-রাজ্যপালের কাছে ক্ষমাভিক্ষার শেষ চেষ্টায় ফাঁসির দিন এক দফা পিছিয়েও যায়৷ শেষ পর্যন্ত অবশ্য নিম্ন আদালতের মৃত্যুদণ্ডের আদেশই বহাল থাকে৷

অবশেষে … ২০০৪-এর ১৪ অগস্ট কাকভোরে আলিপুর জেলে ফাঁসি হয়ে যায় বছর চল্লিশের ধনঞ্জয়ের৷

সে রাতে এই মহানগরীর অনেকেই দু চোখের পাতা এক করতে পারেন নি,  …. আমার কিশোর মনও সেদিন…. না জানি কোন এক অজানা শোকে ভীষণ ভারাক্রান্ত হয়ে পড়েছিল। কত মানুষ কেঁদেছিলেন, .. আলিপুর সেন্ট্রাল জেলের সামনে… বেশ কিছু কিশোর কিশোরী মোমবাতি জ্বালিয়ে বিমর্ষ রাত্রি যাপন করেছিলেন … । না …তবুও  কিছুতেই কিছু হয় নি।

সেই .. ফাঁসুড়ে নাটা মল্লিক … !! – জনসমক্ষে তার হিরো হয়ে ওঠার কাহিনী….. ।

কি … এবার কিছু মনে পড়ছে??

ফাঁসির আগে তৎকালীন কারাকর্তার কাছে ধনঞ্জয় চট্টোপাধ্যায়ের শেষ আর্জি ছিল, ‘আপনি বড় অফিসার৷ দেখবেন, যে কোনও অভিযোগের তদন্ত যেন ঠিকঠাক হয়৷’
ধনঞ্জয় স্বল্পশিক্ষিত৷ এক দশক আগে তিনি যে কথাটা বলেছিলেন, আজ অনেকটা সেই সুরেই বলছেন ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিসটিক্যাল ইনস্টিটিউটের (আইএসআই) ফলিত রাশিবিজ্ঞান বিভাগের এক দল অধ্যাপক৷ মামলার কাগজপত্র খুঁটিয়ে দেখে, সাক্ষীদের বয়ান এবং কলকাতা পুলিশের তরফে বিচার-পর্বে পেশ করা মেটিরিয়াল এভিডেন্স বিশ্লেষণ করে অধ্যাপক দেবাশিস সেনগুন্ত, প্রবাল চৌধুরীরা দেখিয়েছেন, ধনঞ্জয়কে দোষী সাব্যস্ত করার মতো সংশয়াতীত কোনও প্রমাণই হাজির করা যায়নি আদালতে৷ বরং হেতাল পারেখ হত্যার পিছনে ‘অনার কিলিং’-এর ইঙ্গিতই দিচ্ছে তাঁদের গবেষণা।

আপনাদের নিশ্চয়ই মনে আছে, এই ফাঁসির ব্যাপারে সবচেয়ে বেশি তদ্বির করেছিলেন, তৎকালীন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী শ্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য্য এবং তার স্ত্রী কমরেড মীরা ভট্টাচার্য্য ও তাদের কন্যা .. সুচেতনা।
অর্থাৎ পুরো ভট্টাচার্য্য পরিবার আলিমুদ্দিন স্ট্রীট সহ সমগ্র রাজশক্তিকে নিয়ে পথে নেমে এসেছিলেন .. এক সহায়সম্বল হীন দরিদ্র হিন্দুকে ফাঁসিতে লটকাবার বাসনায়।
তাদের সে প্রচেষ্টা ব্যার্থ হয়নি… । ধনঞ্জয়ের ফাঁসি হয়েছিল।
দেশবিরোধী কি কোন কাজ করেছিল সে? যদি কোন অপরাধ সে করে থাকে, (?) তা হল একটি জঘন্য ধর্ষণ কান্ড ঘটিয়েছিল সে। তাহলে… ধানতলা কাণ্ডে মুসলমান জেহাদিদের দ্বারা প্রথমে ধর্ষিতা ও পরে নৃশংস ভাবে নিহত হওয়া অনিতা দেওয়ান সহ তিন তিনজন হিন্দু মহিলা মেডিক্যাল অফিসার সহ তাদের হিন্দু ড্রাইভারের  সেই পৈশাচিক হত্যার ঘটনার সাফাই দেওয়া জ্যোতি বাবুর কথাতেই তো বলা যায় .. “এ রকম ঘটনা তো কতই ঘটে”। সেক্ষেত্রে অপরাধীরা মুসলমান হওয়ায় তাদের ছাড় মেলে..। অথচ গরীব বলে টাকা না থাকার কারণে প্রয়োজনীয় উকিল নিয়োগ করে কেস লড়তে না পারা … হিন্দু ধনঞ্জয়ের গলায় ফাঁসির দড়ি লাগাতে এদের এক মুহুর্তও দেরি হয় না!
যাই হোক.. এ তো গেল তখনকার কথা। এই বার … আসি আসল প্রশ্নে….
এ হেন বামেরা সাম্প্রতিক ফাঁসি হওয়া ইয়াকুব মেমনের ক্ষেত্রে কি অবস্থান নিল? …
সিপিএমের ডেঁপো নেতা সীতারাম ইয়েচুরি তো ইয়াকুবের ফাঁসির বিরোধিতায় সরব হয়ে স্পষ্ট বলেছেন যে, সে প্রহসনের বিচার প্রক্রিয়ার বলি হল।
অর্থাৎ একটি ধর্ষণ ও হত্যা কান্ডে অভিযুক্ত ধনঞ্জয়কে  দোষী সব্যস্ত করে ফাঁসিতে ঝোলানো যায়, কিন্তু ইয়াকুব তো প্রায় তিনশত মানুষের জঘন্যতম হত্যাকারীদের মধ্যে একজন। তার জন্য ইয়েচুরি-বৃন্দা সহ অপরাপর বামপন্থীদের এত দৌত্য কেন? … ইয়াকুব মুসলমান বলে?
মরীচ ঝাঁপির মানুষগুলোকে হিন্দু বলে মারতে তোমাদের হাত কাঁপে নি, আর দেশদ্রোহী ‘মেমন’ মুসলমান বলে দরদ উথলে উঠছে??
এখন… 
কোথায় গেলেন … কমরেড বুদ্ধ দেব?
কোথায় গেলেন … কমরেড মীরা দেবী?
কোথায় গেলেন … কমরেড সুচেতনা?

আপনাদের লজ্জা করেনা …? – সেদিন কত টাকা খেয়েছিলেন পারেখ পরিবারের কাছ থেকে? আর আজই বা কত পেট্রোডলার পকেটস্থ করেছেন? 

আর এভাবেই ইয়াকুব মেমনের ফাঁসির ঘটনাটিতে আপনারা (এই তথাকথিত ধর্মনিরপেক্ষতার ঠিকাদার, বামপন্থীরা) কি দেশ বিরোধী …তথা সভ্যতা বিরোধী নির্লজ্জ মুসলিম তোষণের ক্ষেত্রে আরও একবার অক্সিজেন যোগালেন না?

ছিঃ … আপনাদের ধিক্কার জানানোর মত কোন ভাষা আছে কি???