আমি যদি কোন উপজাতির ঘরে জন্ম নিতাম, আমিও একজন উগ্রপন্থী হতাম।

“আমি যদি কোন উপজাতির ঘরে জন্ম নিতাম, আমিও একজন উগ্রপন্থী হতাম”।

মনে আছে তো কার মন্তব্য ছিল এটা? এই মন্তব্য ছিল প্রয়াত জননেতা প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী কমরেড নৃপেন চক্রবর্তীর। সেটা কি কোন উস্কানি মূলক বক্তব্য ছিল? না, ছিল না। কারণ তখন জনজাতিদের ক্ষোভকে কাজে লাগানোর দরকার ছিল। কিন্তু আপনি যদি এখন দীর্ঘ পঁয়ত্রিশ বছরের বাম অপশাসনে জনজাতি আদিবাসীদের দুরবস্থা তুলে ধরতে চান, আপনি নির্ঘাত একজন উস্কানি দাতা !

ত্রিপুরায় কম্যুনিস্টদের মূল ভিত্তিই তো গড়ে উঠেছিল পাহাড়ের জনজাতিদের মধ্যে প্রভাব বিস্তার করেই, বাঙালিরা ছিল না পাশে।  এরপর সি পি এম এর জনজাতি সংগঠন ‘উপজাতি গণমুক্তি পরিষদ’ এর মাধ্যমে এডিসি, ইনার লাইন পারমিটের দাবি। সবটাই কিন্তু বাঙালির বিরুদ্ধে জনজাতি সেন্টিমেন্টে সুড়সুড়ি দিয়ে । এরপর জনজাতিদের মাধ্যমে অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠে সিপিএম এর কাছে ফুরিয়ে গেছে এখন এদের প্রয়োজন।

  কিন্তু এখন? এখন ধরা পড়ে গেছে সব জারিজুরি, খসে গেছে মেকী জনজাতি দরদের মুখোশ । হাতে গোনা কিছু  জনজাতি নেতা আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়ে গেলেও মূল অংশের জীবন যাত্রা ধাবিত হয়েছে অন্ধকার থেকে অন্ধকারতর দিকে। জনজাতি নতুন প্রজন্ম মুখ ঘুরিয়ে ফিরিয়ে নিয়েছে সিপিএম থেকে, ভিত নড়বড়ে হয়ে গেছে গণমুক্তি পরিষদের। তাই এখন শুরু হয়েছে তিপ্রাল্যান্ডের মত মৃত ইস্যুকে জাগিয়ে তুলে বাঙালি সেন্টিমেন্টে সুড়সুড়ি দেওয়া, শুরু হয়ে গেছে জাতি জনজাতির মধ্যে বিভাজনের রাজনীতি। এভাবেই এরা রাজনীতির স্বার্থে সব সময় শুধু বিভেদের রাজনীতি করে গেছে, যাচ্ছে এবং যাবেও। এটাই এদের মূল নীতি।

   প্রাক্তন বৈরী নেতা খগেন্দ্র জমাতিয়া বন্দুক ছেড়ে মূল স্রোতে ফিরে এসে বাম মন্ত্রী সভার গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হতে পারেন, দীর্ঘ বাম অপশাসন আর বঞ্চনার হতাশা থেকে একসময় আলাদা রাজ্য তিপ্রাল্যান্ডের দাবিতে আন্দোলন  করা IPFT কেন বিজেপির সঙ্গে হাত মিলিয়ে জাতি জনজাতি মিলে  নতুন ত্রিপুরা গড়ার স্বপ্ন নতুন করে দেখতে পারবে না ? অপরাধটা কোথায়?

অথচ সমতলে বাঙালি অধ্যুষিত এলাকায় এরা মূল ইস্যু করছে ‘তিপ্রাল্যান্ড’ কে। ভয় দেখানো হচ্ছে রাজ্য ভাগের, পলে পলে মনে করিয়ে দেওয়া হচ্ছে অতীতের জাতি দাঙ্গার কথা । আবার এই মানিক সরকাররাই পাহাড়ে গিয়ে জনজাতিদের উস্কে দিতে বলছে বাঙালি আগ্রাসনে ত্রিপুরার জনজাতি কৃষ্টি সংস্কৃতি বিপন্ন। দু’মুখো সাপ ! এরা নাকি সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী, অথচ সাম্প্রদায়িক সুড়সুড়ি দিতে এরা উস্তাদ। মুসলিম মহল্লাতে গিয়ে এরা বলছে মুসলিম হয়ে যারা বিজেপি করছে, তারা নাকি মুসলিম সমাজের কুলাঙ্গার!

এভাবেই এরা সাপ হয়ে দংশন করছে, আবার এই এরাই ওঝা হয়ে ঝাড়ছে। গৃহস্থকে বলছে সজাগ থাক, চোরকে বলছে চুরি কর।

বাস্তবটা অস্বীকার করার উপায় নেই , প্রতিবেশী দেশের ধর্মীয় সন্ত্রাসবাদের শিকার হয়ে সব ফেলে এপাড়ে চলে আসা বাঙালিরাই এরাজ্যে সংখ্যাগুরু , জনজাতিরা হয়ে গেছে সংখ্যালঘু । কিন্তু এই শরণার্থীদের পাশাপাশি যে প্রতিবেশী দেশ থেকে আরবী নামের অবৈধ অনুপ্রবেশকারীরাও প্রচুর সংখ্যায় এরাজ্যে উঠে এসেছে – এদের ব্যাপারে মানিক বাবুর বক্তব্য কি? কারা ভোট ব্যাংকের স্বার্থে এই অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের রেশন কার্ড, ভোটার কার্ড পাইয়ে দিয়ে আমাদের আবার উদ্বাস্তু হওয়ার রাস্তা প্রশস্ত করছে?

অনেক জনজাতি ভাইকেই বলতে শুনছি বামপন্থীরা জনজাতি বিদ্বেষী । কথাটা পুরো ঠিক নয় । এদের চুড়ান্ত উদ্বাস্তু বাঙালি বিরোধী মানসিকতার রূপও আমরা দেখেছি মরিচঝাঁপিতে। বামপন্থীরা আসলে মানব বিরোধী, মানবিকতা বিরোধী । এদের ইতিহাসের আগাগোড়া সবটাই মানবতা বিরোধী ইতিহাস। পাহাড়ি বাঙালি হিন্দু মুসলিম – কমিউনিস্টরা কখনো কোন মানুষের বন্ধু হতে পারে না, কমিউনিস্টরা শুধু কমিউনিস্টদের বন্ধু হয়। যখন যাকে দরকার, ব্যবহার করে শুধু । এদেশে এরা পরিষ্কার ইসলাম পন্থী, কিন্তু কমিউনিস্ট দেশ গুলোতে এরাই মুসলিমদের পিষে রেখে দিয়েছে।

তাই এখানেও একজন সুহার্তো চাই। সবার স্বার্থে, মানুষের স্বার্থে কমিউনিস্ট মুক্ত ভারত চাই ।