হিন্দুরা আজ পল্টা জবাব দিতে শুরু করেছে যা ফলে মানবতার আজ মুখ খুলছে।

মোবাইল চুরির অভিযোগে ছোট একটা বাচ্চাকে কিছুদিন আগে বাংলাদেশে পিটিয়ে মেরে ফেলেছিলো। ঘটনাটা সবাইকে স্পর্শ করেছিলো। অমানবিক ভিডিওটি দেখে মানুষ শিউরে উঠেছিলো। ভারতে একটা যুবককে পিটিয়ে মেরে ফেলা হয়েছে। সেও নাকি মোটর সাইকেল চোর ছিলো। কিন্তু যখন চোরের ধর্ম পরিচয় জানা গেলো সে মুসলিম, তখন তাকে ‘জয় শ্রীরাম’ বলার জন্য চাপ দেয়া হয়। বাংলাদেশে একজন সাধারণ চোরকে যখন পাড়া মহল্লায় আটক করা হয় তাকে যে পরিমাণ অমানবিক অত্যাচার করা হয় যে কোন মানবিক বোধ সম্পন্ন মানুষ সহ্য করতে পারবে না। বাস্তবতা হচ্ছে এরকম চোর পিটানিকে সমালোচনা করার মত তখন খুব একটা লোক পাওয়া যায় না। তবে এই অমানবিক আমজনতাই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এরকম ভিডিও দেখে তাদের ক্ষোভ জানাতে থাকে। এ এক অদ্ভূত জাতি! যাই হোক, গোটা উপমহাদেশে চোর পিটানোকে অধিকার মনে করা হয়। সেই চোর যদি হয় শত্রু পক্ষের কেউ তাহলে সুদে আসলে সব জিদ মিটানো যায়। পশ্চিমপাড়া আর পূর্বপাড়ার লোকদের মধ্যে দা-কুমড়া সম্পর্ক- এখন যদি পশ্চিমপাড়ায় পূর্বপাড়ার কেউ চুরি করতে গিয়ে ধরা খায় তাহলে দুটো জিনিস একসঙ্গে যায়, আমাদের স্বাভাবিক পৈশ্বাচিক চোর পিটানি অধিকার ও পূর্বপাড়ার প্রতি ক্রোধ। ভারতে মুসলিম ঘৃণা ঐ হতভাগ্য চোরটির উপর দিয়ে গিয়েছে। যদি সে হিন্দু হত তাহলে এটি হতো সাধারণ এক মোটর সাইকেল চোরের পিটানি খেয়ে মারা যাবার মত অতি সাধারণ ঘটনা। এরকম ঘটনা ভারতের নামি কাগজে স্থান পেতো না। এইসব অঞ্চলে একটা সাপ ধরে তাকে পিটিয়ে মেরে রাস্তায় ফেলে রাখা হয় যাতে গাড়ির চাকায় সাপের দেহটা থেতলে পিষ্ট হতে থাকে। এটা দেখার জন্য অনেক মানুষ ঘন্টার পর ঘন্টা বসে থাকে। সাপও এইসব অঞ্চলের মানুষদের জানি শত্রু। যেমন হিন্দু মুসলমানের, মুসলমান হিন্দুর…।

বাংলাদেশের যে কিশোরটিকে মোবাইল চুরির অভিযোগে পিটিয়ে মেরে ফেলা হয়েছিলো তার পরিচয়টি যদি জানা যেতো সে হিন্দু, তাহলে ঘটনাটা মনে হয় আর সাধারণ আমজনতার মানবিক বিবেচনা পেতো না। হিন্দুদের উপর এদেশে অত্যাচার হয় এরকম বক্তব্য প্রতিষ্ঠা হতে পারে ভেবে এরকম ঘটনাকে সাধারণ আমজনতা লঘু করে দেখতে চায়। তখন হয়ত বলা হতো, এখানে হিন্দু-মুসলমান কিন্তু বড় কথা নয়, একটা বাচ্চাছেলেকে এভাবে পিটিয়ে মারাটা ঠিক হয়নি, এর মধ্যে ধর্মকে টেনে এনে ঘটনাকে অন্যভাবে নেয়াটা ঠিক হচ্ছে না…। এই সুশীল লোকজনই কিন্তু বুক চাপড়ে এখন শেয়ার করছে, ভারতে এক মুসলিম যুবককে পিটিয়ে মেরে ফেলা হয়েছে জয় শ্রীরাম বলার জন্য…।

…আমি বলতে চাইছি, ভারতে যুবকটিকে যারা পিটিয়ে মেরেছে তারা তার মুসলিম পরিচয়টি পাবার পর মোটরসাইকেল চুরির অপরাধের সঙ্গে তার মুসলিম হবার ‘অপরাধ’ যোগ করে দুইগুণ বেশি পিটুনি দিয়েছে। একইভাবে যেসব আরবী নামের লোকজন এই নিউজ শেয়ার করছে মানবিকতার প্রশ্ন তুলে তারা সবাই নিজেরা মুসলিম বলেই তাদের মানবিকতায় লেগেছে। বাংলাদেশে যারা হিন্দু নিপীড়নকে অস্বীকার করে তারা সকলেই মোবাইল চুরি করা কিশোরকে নিয়ে চোখের পানি নাকের পানি এক করেছিলো ভিডিও দেখে। কিন্তু তার ধর্মীয় পরিচয় ভিন্ন হলে তারাই ঘটনাকে নানাভাবে হাউড করতে চাইত। এই উপমহাদেশের মানুষ সাংঘাতিকভাবে সাম্প্রদায়িক। উপমহাদেশের ইতিহাস সাম্প্রদায়িকতার ইতিহাস। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় হিন্দুদের ধরে ধরে কলমা পড়ানো হতো। তাদেরকে দিয়ে আল্লাহো আকবর জোরে চিৎকার করে বলানো হতো। ভারতের হিন্দুত্ববাদীরা মুসলিমদের ঠিক সেরকম করেই জয়শ্রীরাম বলানোর অত্যাচার করছে। দুটি ধর্ম সম্প্রদাযের জন্যই আমার একদলা ঘৃণা! ছি:!

Scroll to Top