“বৈদিক ভারতবর্ষ – যা হারিয়ে গেছে”

“বৈদিক ভারতবর্ষ – যা হারিয়ে গেছে”
ডাঃ মৃনাল কান্তি দেবনাথ
(এক)—পুষ্কলাবতী

পেশোয়ারের নাম অনেকেই শুনেছেন। অঞ্চল টা আজ পাকিস্তান নামে একটি রাষ্ট্রে যা এক সময় ভারতবর্ষের মধ্যেই ছিলো। এই পেশোয়ারের বৈদিক নাম “পুরুষ পুর”। কেনো এই নাম তা বলা মুশকিল। তবে যে অঞ্চলে পুরুষপুর অবস্থিত, তার কাছেই আর একটি দেশ ছিলো, নাম ‘অস্থিনয়না’। এই দেশটি ছিলো নারী শাসিত। এই অস্তিনয়না রাজ্য বীর বিক্রমে আলেকজান্ডারের সঙ্গে যুদ্ধ করে, যদিও পরাজিত হয়। হয়তো বা এই নারী শাসিত রাজ্যের পাশাপাশি থাকার জন্য পুরুষপুর নাম হয়, কারন এই অঞ্চল ছিলো পুরুষ শাসিত।

পুরুষপুরের প্রাচীন নাম “পুষ্কলাবতী”। রামায়নের উত্তরাখন্ডে পুষ্কলাবতীর নাম আছে। শ্রী রামচন্দ্রের ভাই ভরতের দুই ছেলে। বড়োজনের নাম “তক্ষক”, ছোট ছেলের নাম ‘পুষ্কল’। তক্ষকের রাজধানী ‘তক্ষশীলা’। তক্ষশীলা পরবর্তি কালে গান্ধার রাজ্যের রাজধানী ছিলো। পুষ্কল, সোয়াট অঞ্চলে যে রাজ্য স্থাপন করেন তার রাজধানী পুষ্কলাবতী। পুষ্কলাবতী কাবুল নদীর (kuva) পশ্চিমে। কাবুল নদীর পুর্বে তক্ষশীলা।

এই পুষ্কলাবতী, নাম পরিবর্তিত হয়ে হয় ‘পুরুষপুর’, সেই থেকে ইংরেজ আমলে “পেশোয়ার”। এক সময় অখন্ড ভারতের একটি শহর, আজ পাকিস্তানের “পাকতুন খোয়া” অঞ্চলের প্রধান শহর।

বৈদিক যুগের, হিন্দু সভ্যতার এক পীঠস্থান, উত্তরা পথের এক প্রধান বানিজ্য শহর ‘পুষ্কলাবতী’ আজ আর ভারতীয় হিন্দুদের নেই।

পুষ্কলাবতী বা পুরুষপুর অঞ্চল আলেকজান্ডার ভারত ছেড়ে চলে যাওয়ার পর, সম্রাট চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য সেলুকাসের থেকে স্বাধীন করে নিজ রাজ্য ভুক্ত করেন। এর পর এই অঞ্চল “কুষান রাজ্যের’ অংশ হয়। কুষান রাজা কনিষ্ক বৌদ্ধ ধর্ম গ্রহন করে এখানে এক সুউচ্চ বৌদ্ধ স্তুপা তৈরী করেন যা সেই সময় পৃথিবীর সবচেয়ে উচু কাঠ নির্মিত সৌধ ছিলো। (বর্তমান পৃথিবীর সবচেয়ে উছু কাঠের সৌধ ব্রটিশ গায়ানার রাজধানী জর্জটাউনের রোমান ক্যাথলিক চার্চ।) সেই সৌধের ধংসাবশেষের পাশে কনিষ্কের সময়ের “বুদ্ধের স্মারক রাখার পাত্র” পাওয়া যায়। কিন্তু মুসলমানদের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য সেই স্মারক পাঠিয়ে দেওয়া হয় বার্মায়। সেই স্মারক এখোনো রাখা আছে বার্মায়। আর পাত্র টি রাখা আছে পেশোয়ার যাদুঘরে।