বাংলাদেশে ঠিক কি পরিমাণ হিন্দু মন্দিরে বিগত কয়েক বছর ধরে হামলা চালানো হয়েছে তার কোন সঠিক পরিসংখ্যান সরকারীভাবে যে নেই তা বলাই বাহুল্য। কারণ এ ধরণের সাম্প্রদায়িক হামলা লাগাতার তখনই চলা সম্ভব যখন রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা থাকে। আজ পর্যন্ত বাংলাদেশে মন্দির গির্জা পেগোডায় হামলাকারীর কোন বিচার হয়নি। উল্টো প্রশাসন থেকে তাদের বাঁচানোর সব রকম চেষ্টাই করা হয়েছে।
যারা মন্দির, গির্জা, পেগোডায় হামলা চালায় তারা সবাই ধর্মে বিশ্বাসী মানুষ। রমজান মাসের প্রথম দিনেই দিনাজপুরে পাঁচশো বছরের পুরোনো শিব মন্দিরকে হামলা করে প্রায় ধ্বংস করে ফেলা হয়েছে। তাই প্রশ্ন তুলছেন কিছু বিশ্বাসী মানুষই- এদের কি আল্লাহর ভয় নেই?
ইসলাম ধর্ম মতে কেবল মাত্র যে ধর্মের নবীদের উপর কিতাব নাযিল হয়েছে তাদেরই ধর্ম পালনের অধিকার আছে। বাকীদের ধর্মগুলো পালন তো দূরে থাক কঠোর হস্তে দমন করতে হবে। সুরা তাওবার ২৯ নম্বর আয়াতে এ কারণেই কেবল মাত্র ইহুদী-খ্রিস্টানদের জিজিয়া কর দিয়ে মুসলমানদের বশ্যতা স্বীকার করে বাঁচার অধিকার দেয়া হয়েছে। একই সঙ্গে ইসলাম গ্রহণ না করার জন্য তাদের সঙ্গে লড়াই চালিয়ে যাবার কথা বলা হয়েছে। আরব কুরাইশদের কিন্তু এই সুযোগটা দেয়া হয়নি। তাদের জন্য ইসলাম গ্রহণ করাই ছিল একমাত্র শর্ত। এসব থেকেই ইসলামী শরীয়ত ঠিক করে আহলে কিতাবীরা ছাড়া আর কারোর ধর্মের অধিকার নেই। অষ্টম শতাব্দিতে মুসলমানরা যখন সিন্ধু জয় করে নিয়েছিল তখন তাই বড় প্রশ্ন দেখা দিলো হিন্দুদের বাঁচিয়ে রাখা হবে কিনা? নাকি জিজিয়া কর নিয়ে তাদের নতমস্তকে বাস করতে দেয়া হবে? সব বিবেচনা করে জিজিয়া করেই জয় হয়েছিল।
গজনির সুলতান মাহমুদ সোমনাথ মন্দির কেবল লুটই করেননি সেটিকে ধ্বংস করেছিলেন। তার সফর সঙ্গী ছিল বড় বড় আলেম-মাশায়েখ। তারা কেউ ফতোয়া দেননি সুলতানের এসব শরীয়ত বিরোধী কাজ। বখতিয়ার খিলজিও নদীয়া আক্রমন করে বৌদ্ধ বিহার, পেগোডা ধ্বংস করেছিল, বৌদ্ধ ভিক্ষুদের হত্যা করেছিল। এইসব কাজ করতে কোন ইসলামী বাধা থাকলে বখতিয়ার করতে পারতেন না। মুঘল শাসক থেকে শুরু করে ভারতবর্ষে সুলতান, নবাবের শাসনে হিন্দু মন্দির, বৌদ্ধ বিহার ধ্বংস করার ইতিহাসে এমন কোন ধর্মীয় ব্যক্তির সন্ধান পাওয়া যায়নি যিনি মুসলিম শাসকদের এইসব কাজের সমালোচনা করেছিলেন।
দিল্লীর কুতুব মিনারে একটি থাম আবিস্কৃত হয় যা আজো রেয়ে গেছে যেখানে হিন্দু মন্দিরের পিলার হিসেবে সনাক্ত করা গেছে খোদিত চিহৃ দেখে। আফগান তালেবানদের বৌদ্ধ মূর্তি ভাঙ্গা বা আইএসের প্রাচীন স্থাপত্য ধ্বংস নিছক তাদের পাগলামী নয়। ইসলাম আরব পৌত্তলিক ধর্মের দেব-দেবীর মূর্তি, মন্দিরকে গির্জার মত মেনে নেয়নি। হযরত উমার জেরুজালেমে গির্জাকে মেনে নিলেও তার খেলাফতে কোন পৌত্তলিক মন্দিরকে সহ্য করেননি। কারণ একটাই, কুরআনের সুরা তাওবার ২৯ নম্বর আয়াত।
উমার জেরুজালেমের একটা চির অশান্তির বিজ বুনেছিলেন। তিনি সেখানে একটি মসজিদ নির্মাণ করেন। নবী মুহাম্মদ মিরাজের রাতে এই জেরুজালেমে নামাজ পড়েছিলেন দাবী করাতে উমার জেরুজালেম দখল করার পর সেখানে একটি মসজিদ নির্মাণ করেন। এটিই বর্তমানের বাইতুল মোকাদ্দেস। মন্দিরের জায়গা মসজিদ নির্মাণ কিংবা গির্জার জায়গায় মসজিদ নির্মাণের এটি বোধহয় সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করে…।
জেরুজালেমে মসজিদ নির্মাণ অপরের ধর্মীয় সীমানায় যেচে বিবাদ লাগানোর নামান্তর। এটি কোনভাবেই যৌক্তিক হতে পারে না। মনে করুন ভারতের একজন শিব অনুসারী তার ভক্তদের কাছে দাবী করলেন তিনি স্বপ্ন যোগে মুসলমানদের প্রধান তীর্থ কাবাঘরে শিব পুজা করেছেন। তারপর ভক্তরা তার সেই দাবীর প্রতি সন্মান দেখাতে কাবাঘরের কাছে একটা শিব মন্দির নির্মাণ করেন। বিষয়টা কেমন হবে? জেরুজালেমের প্রতি মুসলমানদের দাবী এরকমই গায়ে মানে না আপনি মোড়ল! সেখানে মসিজদ নির্মাণ সেরকমই গায়ের জোরের প্রদর্শন। আজকে যদি ইহুদীরা নতুন করে দাবী করে ইব্রাহিম যদি সত্যিই কাবাঘর নির্মাণ করে থাকে তাহলে আমাদেরও ভাগ আছে কাবাঘরের- তখন কি হবে?