ফিলিস্তিনিদের জাতীয়তাবাদী মুক্তি সংগ্রাম শেষতক জঙ্গি জিহাদী চেহারায় রূপ নিয়েছে। আরাফাতের পিএলও জাতীয়তাবাদী মুক্তিসংগ্রাম থেকে এখন সেটা হামাসের মত সুন্নী জিহাদী আন্দোলনে রূপ নিয়েছে। যে কোন মুসলিম সাম্প্রদায়ের জাতীয়তাবাদী সংগ্রামেরই এই বিপদটা থাকে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ যদি ৯ মাস না হয়ে ৯ বছর পর্যন্ত দীর্ঘ হতো তাহলে মুজিবনগর সরকারের প্রতিদ্বন্দ্বী আরেকটি গ্রুপ দাঁড়িয়ে যেতো যারা পাকিস্তান থেকে মুক্ত হয়ে ইসলামী খেলাফত প্রতিষ্ঠার কথা বলত। সেরকম কিছুর আঁচ কিন্তু আমরা ইতিহাসের আনাচে কানাচেতে পাই। মেজর জলিলদের মত মুক্তিযোদ্ধাদের কথা মাথায় রাখলে কি আমার আশংকা মিথ্যে মনে হবে?
সবাই রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে আশ্রয় দেয়াটাকে এমনভাবে বারবার সামনে আনছেন যেন এই সমস্যার এটাই একমাত্র সমাধান। যখনই রোহিঙ্গারা বার্মিজদের তাড়া খেয়ে বক্সবাজার সীমান্তে জড়ো হচ্ছে তখনই আমাদের রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে মাথাব্যথা শুরু হয়। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ১ কোটি শরণার্থী ভারতের পশ্চিমবঙ্গে আশ্রয় নিয়েছিলো। সেসময় পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালী মুসলমানদের শিক্ষিত মধ্যবিত্তের মধ্যে একটা সাংস্কৃতিক উন্মেষ ঘটেছিলো। তাছাড়া শরণার্থীদের ৯৫ ভাগই ছিলো ধর্মে হিন্দু। পশ্চিমবঙ্গে কখনোই তাই পূর্ব পাকিস্তানের শরণার্থীদের আশ্রয় দিয়ে নিজেদের নিরাপত্তার কথা ভাবতে হয়নি। রোহিঙ্গারা পুরোপুরি শিক্ষাদীক্ষায় শুন্য। তাদের মধ্যে কোন রকম প্রগতিশীল শিক্ষিত সমাজ গড়ে উঠেনি। তাই মাদক ব্যবসা থেকে জঙ্গি জিহাদীতে নিমজ্জিত এই জাতিগোষ্ঠি বাংলাদেশের অবকাঠামো এবং অর্থনৈতিক সমস্যার পাশাপাশি স্থানীয় সমাজে একটা দুষিত ধর্মীয় সন্ত্রাসবাদের অনুপ্রবেশের আশংকাটা অমূলক নয়। তাদেরকে বাংলাদেশের ইসলামপন্থি গ্রুপগুলোর কাজে লাগানোর ইতিহাস তো নতুন নয়। তাই বলে বর্বর বার্মিজ বাহিনীর তাড়া খেয়ে বিপদগ্রস্ত নারী শিশু বৃদ্ধ রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশ আশ্রয় দিবে না এটা পৃথিবীর কোন যুক্তিতেই ধোপে টিকবে না।
তাহলে এর সমাধান কি? কোন সমাধানই নেই। যারা বলছেন রোহিঙ্গাদের স্বাধীনতা আন্দোলন করা উচিত তারা বাংলাদেশের বিপদটা বুঝতে পারছেন না। পার্বত্য চট্টগ্রামের পাশে একটা মধ্যযুগীয় ইসলামী চিন্তা চেতনার রাষ্ট্র ঐ এলাকার জন্য বড় বিপদ হয়ে দাঁড়াবে। বাংলাদেশের সীমান্ত এলাকার ইসলামপন্থি গ্রুপগুলো যেমন ভারতের ভেতর ইসলামী জিহাদী উত্থানের জন্য ভয়ের কারণ হয়ে উঠেছে। বাংলাদেশের বিপদটা এখানেই। রোহিঙ্গাদের সশস্ত্র সংগঠন আরসা’র প্রধান আতাউল্লাহ জুনুনির জন্ম পাকিস্তানের শরণার্থী শিবিরে। সেখান থেকে তিনি পরবর্তীকালে সৌদি আরবে চলে যান। তিনি একজন মসজিদের ইমাম। বুঝাই যাচ্ছে আরসা আসলে ওহাবী ইসলামী মতবাদে বিশ্বাসী একটা সশস্ত্র সংগঠন। বৃটিশ ভারতে হাজি শরীয়তুল্লাহ এবং তিতুমীরও ইংরেজদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছিলো। আমাদের ইতিহাসবিদরা তাদেরকে স্বাধীনতা সংগ্রামী বলে দাবী করেছেন। তাদের সংগ্রামের মূল কথা ছিলো, ইংরেজদের তাড়িয়ে তারা ফের মুসলমানদের হারানো সাম্রাজ্য নিজেদের হাতে তুলে নিবেন। হাজী শরীয়তুল্লাহ এবং তার ফরায়েজী আন্দোলন সম্পর্কে ব্রিটিশ লেখক জেমস টেইলর জানিয়েছেন, কুরআনকে অক্ষরে অক্ষরে পালন করাই ছিলো ফরায়েজী আন্দোলনের উদ্দেশ্য…। রোহিঙ্গাদের আতাউল্লাহ জুনুনিও সন্দেহ নেই আরেকজন হাজী শরীয়তুল্লাহই হবেন। শিক্ষাহীন একটা জাতির মুক্তি সংগ্রাম এভাবেই একটা মধ্যযুগীয় সন্তাসবাদে নষ্ট হয়ে যায়।