তবে ড. শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জীর জীবনের সবচেয়ে বড় অবদান, যা অকৃতজ্ঞ বাঙলীরা অবহেলায় ফেলে রেখেছে সেটা হল – পশ্চিমবঙ্গকে পাকিস্থানের কবল থেকে বাঁচিয়ে আনা। ড. মুখার্জী না থাকলে পশ্চিমবঙ্গের অস্তিত্বই থাকত না।
মুসলীম লীগ ও কংগ্রেসী নেতারা গদির লোভে যখন দেশ ভাগ করতে ব্যস্ত তখন শ্যামাপ্রসাদ দেশভাগের বিরোধিতা করেন। দুই বাংলা মিলে মুসলিম বেশি ছিল তাই দেশ ভাগ হলে কংগ্রেস নেতাদের দিল্লীর মসনদে বসা সহজ হবে। বাঙালী হিন্দুরা ভবিষ্যতে মুসলিমদের হাতে যে মার খাবে তা জেনে ও চুপ ছিল, শুধু গদির লোভের আশায়।
মুসলিম লীগ আলাদা পাকিস্থান রাষ্ট্র গড়ার জন্য তীব্র আন্দোলন শুরু করে, শুরু করে নির্মম হিন্দু হত্যা।
মুসলিম লিগের চাপে জনগণনা শুরু হয়। মুসলিম জনসংখ্যা ৫৮% হল। বাংলা ভাগ আর ও তীব্র হল।
কিন্তু শ্যামাপ্রসাদ থামবার পাত্র ছিলেন না। তিনি বাংলার সকল জেলা ভিত্তিক পরিসংখ্যান তথ্য দেখিয়ে দাবি করলেন ” যদি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চল পাকিস্থানে যাবে তাহলে বাংলার হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চল পাকিস্থানে কেন যাবে?”
তিনি তীব্র বিরোধীতা শুরু করলেন, তাঁর যুক্তিকে ইংরেজ সরকারও অস্বীকার করতে পারে নি। তাই হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চল ভারতে থেকে যায়। নাম হয় পশ্চিমবঙ্গ।
ড.শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জী হলেন কংগ্রেসের জহরলাল নেহেরুর মন্ত্রীসভার স্বাধীন শিল্প ও সরবরাহ মন্ত্রী।
কিন্তু গান্ধী পরিবারের কংগ্রেস ঘরোনা রাজনীতি তাঁর পছন্দ হলো না। তিনি মনে করলেন কংগ্রেসের রাজনীতি দেশের হিন্দু সমাজ কে বিপদের দিকে ঠেলে দেবে। তাঁর কাছে মন্ত্রীর পদ চেয়ে দেশ বড়। তাই জহরলাল নেহেরুর মন্ত্রসভা থেকে পদত্যাগ করলেন।
তৈরী করলেন “জনসঙ্ঘ” নামে নতুন রাজনৈতিক দল।
১৯৫২ সালে নির্বচনে দক্ষিণ কোলকাতা থেকে জিতে তিনি সাংসদ হন। সেইবার শ্রীরমপুর আসনটিও জনসঙ্ঘ পায়। তিনি ছিলেন ভারতের জাতীয়তাবাদী অখন্ডতার প্রতীক, তাই তিনি কাশ্মীরের ৩৭০ ধারা (যে ধারায় কাশ্মীররা অধিক সুবিধা পেয়ে থাকে) সম্পর্কে বলেছিলেন “এক দেশে দুরকম সংবিধান, দুজন প্রধান মন্ত্রী, দুটো লক্ষ থাকতে পারে না ” তাই তিনি ১৯৫৩ সালে কাশ্মীরের উদ্দেশ্যে রওনা দেন।
কিন্তু ভারত থেকে কাশ্মীরে প্রবেশ করার আদেশ না থাকার অপরাধে তৎকালীন কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী আবদুল্লার নির্দেশে ড.শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জীকে ১১মে ১৯৫৩ সালে গেপ্তার করা হয়। পাঠানো হয় কারাগারে।
সেখানে তাঁর শারীরিক অসুস্থতার জন্য হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু সেখানে বারন করা সত্বেও তাঁকে ভুল ইঞ্জেকশন দেওয়া হয়েছিল।
রহস্যজনক ভাবে তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুর কারন আজও জানা যায় নি। তাঁর মৃত্যুতে সারা দেশে ব্যাপক সন্দেহ উত্থাপিত হয়। কারন এই রকম বীরের রহস্যজনক মৃত্যুতে প্রধান মন্ত্রী জহললাল নেহেরু কোনো নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটি গঠন করে নি।
প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারী বাজপেয়ী বলেছিলেন ” ডা.শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জীর মৃত্যু ছিল জহরলাল নেহেরুর ষড়যন্ত্র”। আজও বাঙালীর হৃদয় খুঁজে বেড়ায় ড.শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জীর মতো একজন মানুষ যিনি বলতেন “অন্যায়ের প্রতিবাদ করো, প্রতিরোধ করো, প্রয়োজনে নাও প্রতিশোধ।”
“শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জীর “জনসঙ্ঘ” পার্টি আজ “ভারতীয় জনতা পার্টি” (BJP ) যেটা ১৯৮০ সালে মাননীয় অটল বিহারী বাজপেয়ী ও লালকৃষ্ণ আদবানীর তৈরী।।