নিখিলেশ রায়চৌধুরী: প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সাম্প্রতিক ইজরায়েল সফরের একটি বড় সাফল্য হল, সাইবার-সন্ত্রাস আটকাতে দুই দেশের ইন্টেলিজেন্স একসঙ্গে কাজ করবে বলে ঠিক করেছে৷ ইজরায়েলের গোয়েন্দাবাহিনীর সঙ্গে ভারতের গোয়েন্দাবাহিনীর এই সমঝোতা আরও আগে হওয়া দরকার ছিল৷ আরব দুনিয়ায় সন্ত্রাসের যারা পাণ্ডা ও প্রশ্রয়দাতা তাদের নাড়িনক্ষত্র ইজরায়েলের গোয়েন্দাবাহিনীর জানা৷ উপরন্তু, তারা তথ্যপ্রযুক্তিতেও অসম্ভব দক্ষ৷ জাপান, ব্রিটেন-আমেরিকা, রাশিয়া, ফ্রান্স, জার্মানি, চীনের মতো সময়ের সঙ্গে তালে তাল মিলিয়ে তথ্যপ্রযুক্তিতে ইজরায়েলও অসম্ভব উন্নতি করেছে৷ আরও উল্লেখযোগ্য, সেই উন্নতির কথা তারা খুব বেশি পাঁচকান করে না৷ করে না তাদের নিরাপত্তার স্বার্থেই৷
ইজরায়েল যে সাইবার টেকনোলজিকে তাদের সামরিক স্বার্থে ও নিরাপত্তার খাতিরে পুরোদমে ব্যবহার করছে, তার প্রথম প্রমাণ মিলেছিল আজ থেকে বছর তেরো-চোদ্দো আগেই৷ যখন প্যালেস্তিনীয় জঙ্গিদের দুই বড় নেতাকে প্রিসিশন টার্গেট বম্বিংয়ের মাধ্যমে হত্যা করেছিল ইজরায়েলের গুপ্তচর বাহিনী মোসাদ৷ ওই ঘটনার অব্যবহিত আগে মোসাদের তদানীন্তন প্রধানের গাড়ি থেকে কে বা কারা তাঁর মোবাইল ফোনটি চুরি করে৷ আসলে, মোসাদ তা ইচ্ছা করেই ঘটতে দিয়েছিল৷ তারা জানত, মোবাইল ফোনটি গিয়ে ঠিক প্যালেস্তিনীয় জঙ্গিদের সব চাইতে বিপজ্জনক নেতৃত্বের হাতে পড়বে৷ ফোনটি চুরি হওয়ার পর থেকেই মোসাদ সেটির উপর সাইবার নজরদারি শুরু করে দেয় এবং ওই নেতাদের হাতে পড়ামাত্র একেবারে প্রিসিশন টার্গেট মিসাইল নিক্ষেপ করে দুজনকে পর পর হত্যা করে৷ আশ্চর্যভাবে তার পর থেকে ইজরায়েলিদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদী আক্রমণ দ্রুত কমেও যায়৷
অতদিন আগে যারা এই ধরনের অপারেশন করে গোটা দুনিয়ার বিভিন্ন দেশের গোয়েন্দাবাহিনীকে তাক লাগিয়ে দিয়েছিল, তারা যে সাইবার ক্রাইম এবং সাইবার টেররিজম ঠেকাতে এখন আরও দক্ষতা অর্জন করেছে, সে কথা আলাদা করে বলার দরকার পড়ে না৷ সুতরাং, ইজরায়েলের গোয়েন্দাবাহিনীর সহায়তা পেলে ভারতের গোয়েন্দারা যে সাইবার সন্ত্রাস দমনে আরও বেশি নৈপুণ্য অর্জন করবেন তাতে সন্দেহ নেই৷
ইজরায়েলের সঙ্গে এই সমঝোতার আর একটি বড় সুবিধা হল, রাষ্ট্র হিসাবে গঠিত হওয়ার পর থেকেই আপন নিরাপত্তার স্বার্থে ইজরায়েল অন্য কারও ধার ধারে না৷ আরব দুনিয়ার প্রায় সব মুসলিম রাষ্ট্র তাদের অস্তিত্বের ঘোরতর বিরোধী জেনে তারা আটের দশকেই নিজস্ব পরমাণু বোমা তৈরির প্রকল্প হাতে নেয়৷ এবং, আমেরিকা থেকে ব্লু-প্রিন্ট চুরি করে পরমাণু বোমা বানিয়েও ফেলে৷ ইজরায়েল যে এ রকম একটি কাজ করছে, সে কথা প্রথম ফাঁস করে দেন তাদের দেশেরই এক পরমাণু বিজ্ঞানী মরডেকাই ভানুনু৷ কিন্তু যখন তিনি তা ফাঁস করছিলেন, ততদিনে ইজরায়েল পরমাণু বোমা বানিয়ে ফেলেছে৷ জানাজানি হওয়ার পর মার্কিন প্রশাসন যখন এ ব্যাপারে ইজরায়েলকে চেপে ধরল তখন সেদেশের নেতৃবৃন্দ অম্লান বদনে বললেন, হ্যাঁ, বিশেষজ্ঞদের কাজে লাগিয়ে মোসাদ আমেরিকা থেকেই পরমাণু বোমার ব্লু-প্রিন্ট চুরি করে এনেছে৷ আর ইজরায়েলি বিজ্ঞানীরা সেইমতো পরমাণু বোমা বানিয়েও ফেলেছেন৷ শুনে আমেরিকার কর্তাদের বাক্যি হরে গিয়েছিল৷
ভারতকে ঘিরে এখন একটা ঘেরাও পর্ব শুরু হয়েছে৷ বলা বাহুল্য, এ ব্যাপারে তার পড়শিরাই প্রধান ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে৷ তাই আবার কোথাও পাকছে সাম্প্রদায়িক হাঙ্গামা, কোথাও বা ফুঁসে উঠছে বিচ্ছিন্নতাবাদ৷ ঠিক যেমন, বেশ কয়েক বছর ধরেই এ রাজ্যে ফের একটা ‘এপার বাংলা ওপার বাংলা’ কাঁদুনি শুরু হয়েছে৷ এক সময় দুই বাংলাকে এক করার আওয়াজকে ওসকাত মার্কিন গুপ্তচর সংস্থা সিআইএ৷ মূলত এ রাজ্যে সিপিএমের মতো দলকে সামনে রেখে৷ ৯/১১-এর ঘটনার পর থেকে সেই আওয়াজে তারা অন্তত আর সার-জল ঢালেনি৷ তাই ওই কেত্তনও বেশ কয়েক বছর বন্ধ ছিল৷ কিন্তু ২০০৭-০৮ সালের থেকে আবারও সেই ব্যান্ড তলে তলে বাজতে আরম্ভ করেছে৷ যে কোনও মুহূর্তে বিষধর সর্প যে দংশন করতে পারে, ভারতের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাবাহিনীর সেই সময়েই হুঁশিয়ার হওয়া উচিত ছিল৷ এখন সেই বিষের প্রতিক্রিয়া পশ্চিমবঙ্গের জায়গায় জায়গায় টের পাওয়া যাচ্ছে৷
এমন একটা অবস্থায় ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী হিসাবে নরেন্দ্র মোদী ইজরায়েল গেলেন এবং সাইবার-টেরর ঠেকাতে সে দেশের নেতৃত্বের সঙ্গে পাকা চুক্তি করলেন৷ এটা ভারতের পক্ষে সত্যিই একটা আশাপ্রদ ব্যাপার৷ না হলে রক্তবীজের মতো বুরহান ওয়ানিদের বংশবিস্তার ঠেকানো যেত না৷