"হিন্দুদের বড় বড় পদে বসানো" বনাম "নামাজকে বলো না আমার কাজ আছে"

“হিন্দুদের বড় বড় পদে বসানো” বনাম “নামাজকে বলো না আমার কাজ আছে”
……………………………………………..
এই করোনা ভাইরাসকালে যে তিনজন মানুষ বিরাট দুটি কাজ করেছেন যেমন কিট প্রস্তুত ও করোনা সিকোয়েন্স আবিস্কার- তাদের নামগুলো যথাক্রমে- ডা বিজন কুমার শীল, ড সমীর ও ড সেঁজুতি। ইসলামিক পেইজগুলোতে আহাজারী হচ্ছে, হিন্দুদের নাকি বেশি সুবিধা দিয়ে এইসব পদে বসানো হয়েছে…। 
বলাই বাহুল্য এই মানুষগুলির কোন পদই সরকারি নয়। ডা. জাফরুল্লাহর রাজনৈতিক বিশ্বাস তাকে হিন্দু প্রেমি ভাবার কোন কারণই নেই। কিন্তু তিনি তার গণস্বাস্থ্যে যোগ্যতম মানুষটিকে স্থান দিয়েছেন। তিনি বিজনকুমার শীল। আর বাকী দুইজন বাবা মেয়ে- ড সমীর ও ড সেঁজুতি তারা তাদের নিজেদের প্রতিষ্ঠানেই কর্মরত আছেন। কাজেই যারা “কাজকে বলে আমার নামাজ আছে”- তারা প্রতিযোগিতায় হেরে যে হিংসায় অন্ধ হয়ে সাম্প্রদায়িক ঘৃণা ছড়াবে এতে আর অবাক হওয়ার কি আছে?
মধ্যপাচ্যের দেশগুলিতে ভারতীয় হিন্দু, লংকান সিংহলীজ বৌদ্ধরা বড় বড় পদে বসে আছে। মুসলিম উম্মাহর বড় আব্বারা মুসলিম রেখে বিধর্মীদের মোটা বেতন দিয়ে রাখছে কেন? বাংলাদেশী পাকিস্তানীদের কেন রাখা হয় না? এই দুটি দেশের লেবার সাপ্লাই যতখানি মেধা ভিত্তিক পদে এদের খুঁজে পাওয়া যায় না। খোদ বাংলাদেশের শিল্প প্রতিষ্ঠানে বড় বড় পদে ইন্ডিয়ান শ্রীলঙ্কানদের কেন মোটা অংকের বেতন দিয়ে রাখা হয়? এই যে ৮ পার্সেন্টের ২৫ পার্সেন্ট চাকরি দখল করে রাখা সেটা যে তোমার নিজের ব্যর্থতা তা কি বুঝ? যারা কাজকে নামাজ আছে বলে ফাঁকি দেয় তাদের উন্নতি কখনো হয় না। 
দোকান কর্মচারী হিসেবে হিন্দুরা মালিকদের কাছে বেশ পছন্দনীয়। হিন্দুদের দুচোক্ষে দেখতে পারেন না এমন লোকও নিজের প্রতিষ্ঠানে হিন্দু কর্মচারী রাখে। কারণ হিন্দুরা নামাজে জন্য কাজ বন্ধ করবে না। ইজতেমার মুনাজাত ধরার বায়না করবে না। ঈদের সময় সবাই ছুটি কাটা‌নোর সময় দাদারা ডিউটি করবে। তাদের তো ঈদ না। পুজার ছুটির জনও বিরক্ত করবে না। আরে মিয়া পুজা তো রাত্রে ছুটি নিয়া কি করবেন? নিজে দোকান মালিক হলে একবার সত্যটা স্বীকার করুন- “হুজুর কর্মচারীর” চেয়ে হিন্দু কর্মচারী আপনার পছন্দের নয়? হিন্দু তো আর তারাবী পড়ার জন্য গাল ফুলিয়ে রাখবে না …
ভাবি দেশভাগের সময় যদি পূর্ববঙ্গে কোন দাঙ্গা না বাধত তাহলে হিন্দু জনসংখ্যার যে স্বাভাবিক উপস্থিতি পূর্ব পাকিস্তানে বিরাজ করত তাতে কি পরিস্থিতি বিরাজ করত? দেশভাগে কোথাও কিন্তু বলা হয়নি পূর্ববঙ্গের হিন্দুদের ভারতে চলে যেতে হবে। কিন্তু অঘোষিত এই শর্তটি পূরণ না হলে পূর্ববঙ্গের হিন্দু মধ্যবিত্ত ও ধনীরা থেকে গেলে মুসলমানদের জন্য ‘পাকিস্তান’ আসলে কোন ফল বয়ে আনবে না। পাকিস্তানে শুধু মুসলমানই থাকবে। শুধু চুল কাটার জন্য, জুতা সেলাই করার জন্য আর মিষ্টি বানানোর জন্য কিছু হিন্দু রেখে বাকীদের ভারতে খেদাতে হবে… এটাই ছিলো তখনকার মুসলিম লীগের অঘোষিত নীতি।
খুব দু:খ লাগে যখন এভাবে সাম্প্রদায়িক পরিচয় ধরে আলোচনা করতে হয়। আমরা নিরুপায় কারণ এভাবেই বাংলাদেশে হিন্দু বৌদ্ধদের বড় পদে দেখলে একটা শ্রেণীর চোখ টাটায়। তাই স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন আসে মাত্র ৮ শতাংশই যদি চাকরি আর মেধায় প্রতিযোগিতায় ফেলে দেয় তাহলে দেশভাগের আগের স্বাভাবিক হিন্দু নাগরিক যদি দাঙ্গায় বিতাড়িত না হয়ে থেকে যেতো তাহলে কি অবস্থা হত? হিন্দুদের না খেদিয়ে কেমন করে আহমদ ছফারা বাঙালী মুসলমানের নিজস্ব ভাষা সাহিত্য বিনির্মান করতেন?