আকবরের নৃংশতা…………..!

COLLECTED POST
১৫৫৬ খৃষ্টাব্দে পানিপথের দ্বিতীয় যুদ্ধে ভাগ্যের পরিহাসে হিন্দু বীর বিক্রমাদিত্য হোমরাজ ওরফে হিমু বিজয়ের দোরগোড়ায় পৌছেও শেষ পর্যন্ত পরাজিত হলেন। অতিশয় রক্তক্ষরনের ম্ৃতপ্রায় সম্রাট হোমরাজকে বৈরাম খা হাত পা বাধা অবস্থায় আকবরের সামনে উপস্থিত করল। এই ঘটনা বর্ণনা করতে গিয়ে সমকালীন মুসলমান ঐতিহাসিক আহম্মদ ইয়াদ্গার তারিখ-ই-আফগানা গ্রন্থে লিখেছেন- সম্রাট হোমরাজকে ঐভাবে হাত পা বাধা অবস্থায় আকবরের সামনে উপস্থিত করে বৈরাম খা বলল- আজ প্রথম সাফল্যের এই শুভ মুহূর্তে আমাদের ইচ্ছা সম্রাটের মহান হস্ত তরবারির সাহায্যে এই বিধর্মী কাফেরের মস্তক ছিন্ন করুক। সেই অনুসারে সম্রাট তার মস্তক অপবিত্র দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন করলেন। [Elliot & J.Dowson, V,pp-65-66]

‘আকবর দি গ্রেট’ নামের মোঘল সম্রাট যে কতখানি নিষ্টুর ও নৃশংস ছিলেন, আর একটি ছোট্ট ঘটনার মধ্য দিয়ে তা আরো সুন্দর ভাবে ফুটে উঠে। – একদা আকবর বিকেলের নামাজ থেকে ফিরে চাকরদের ডাকাডাকি করতে লাগলেন। কিন্তু সাড়া দেবার মত কাছাকাছি কেউ ছিল না। আকবর খুব রেগে গেলেন। হঠাত তিনি দেখতে পেলেন যে, তার আসনের পাশে এক ছোকরা চাকর মেঝেতে শুয়ে অঘোরে ঘুমাচ্ছে। আকবর পেয়াদাদের ডেকে হুকুম দিলেন “এক্ষুনি একে মিনারের উপর থেকে নিচে ফেলে দাও।” পেয়াদারা তখনি তাকে আগ্রা দূর্গের উপর থেকে নিচে ফেলে দিল। এই ঘটনা বর্ননা করে মুসলমান ঐতিহাসিক আসাদ বেগ তার ‘বিকায়া’ গ্রন্থে লিখেছেন, সিংহাসন ও কৌচের কাছে গিয়ে তিনি (আকবর) দেখতে পেলেন যে, বাতি জ্বালাবার এক হতভাগ্য চাকর কৌচের কাছে মেঝেতে সাপের মত কুন্ডুলি পাকিয়ে মরার মত গুমাচ্ছে। ক্রুদ্ধ আকবর সেই চাকরটাকেও মিনারের উপর থেকে নিচে ফেলে দিতে আদেশ দিলেন। তদনুসারে তাকে ছুড়ে ফেলা হল এবং তার শরীর হাজার টুকরা হয়ে গেল।
[Elliot & J.Dowson, VI,p-164]
ইনিই মহামতি আকবর, ইংরেজীতে বলা হয় ‘Akbar The Great’

১৫৬৭ খৃষ্টাব্দে আকবর মেবারের রাণা উদয় সিংহের বিরুদ্ধে অভিযান করেন এবং চিতোর দূর্গে অবরোধ করে দূর্গের দেওয়ালের নিকট বারূদ জমা করে প্রবল বিষ্ফোরণ ঘটানো হল। এতে প্রচীরের অংশ বিশেষ ধ্বংস হয়ে গেল। দূর্গ রক্ষার আর কোন উপায় না দেখে সেদিনই রাজপুত নারীরা জহর ব্রত অনুষ্টান করলেন। প্রায় ৩০০ রাজপুত নারী জ্বলন্ত আগুনে আত্মাহুতি দিলেন। দূর্গের মধ্যে তখন মাত্র ৮০০০ রাজপুত সৈন্য অবশিষ্ট ছিল।  তারা প্রবল বিক্রমে যুদ্দ করে সকলেই প্রাণ দিলেন। সব মিটে গেলে পরদিন সকালে বিজয়ী আকবর হাতিতে চড়ে দূর্গে প্রবেশ করলেন। তখন দূর্গের মধ্যে ছিল ৪০ হাজার অসামরিক প্রজা। আশ্রয় নেওয়া ৪০ হাজার রাজপুত ক্ৃষক প্রজার ভাগ্যে কি ঘটলো ?
ঐতিহাসিক ভিনসেন্ট স্মিথ লিখেছেন—
‘দূর্গ অবরোধের সময় ঐ ৪০ হাজার (অসামরিক) ক্ৃষক প্রজা রাজপুত বাহিনীর ৮০০০ সৈন্যকে যথাসাধ্য সাহায্য করেছিলেন। সে কারনে সম্রাট তাদের হত্যার আদেশ দিলেন। ফলে সেদিন ৩০ হাজার লোককে হত্যা করা হয়েছিল।

ড. রমেশচন্দ্র মজুমদার লিখেছেন, সেদিন কত রাজপুত মারা পড়েছিল তার সঠিক সংখ্যা পাওয়া সম্ভব নয়। আবুল ফজল যে ৩০ হাজার সংখ্যা বলেছেন তা তো শোনা কথা, দেখা নয়, প্রক্ৃত সংখ্যা ৫০ হাজার, ৮০ হাজার, এক লাখ বা তারও বেশি হওয়া বিচিত্র নয়।
সব থেকে মজার ব্যপার হল, এই ঘটনার শেষাংশ আমাদের সকল ঐতিহাসিকই সযত্নে এড়িয়ে গেছেন। কত রাজপুত সেদিন মারা পড়েছিল তা জানতে সম্রাটের খুব ইচ্ছা হয়। কিন্তু অত মৃতদেহ গুনবে কে ? সেষে সম্রাটের আদেশে সব মৃত দেহের পৈতা খুলে আনা হল এবং দাড়িপাল্লায় ওজন কয়া হলে মোট ওজন দাড়ালো সাড়ে চুয়াত্তর মণ ।

ভিনসেন্ট স্মিথ লিখেছেন “The recorded amount was 74.50 mans of about eight ounce each. (V.A. Smith, ibid-91)”
কাজেই প্রতিটি পৈতার ওজন ৮ আউন্স হলে কত হাজার বা কত লক্ষ পৈতা জড়ো করলে সাড়ে চুয়াত্তর মণ হয় তা অনুমান করা কঠিন কাজ নয় । এর সঙ্গে যোগ করতে হবে মহিলা ও শিশু, যাদের পৈতা ছিল না।
পরবর্তী কালে সম্রাট আওরঙ্গজেব হুকুম জারী করেন যে, প্রত্যেক দিন এমন সংখ্যক হিন্দু হত্যা করতে হবে যাতে তাদের পৈতা জড়ো করলে সোয়া এক মন হয় এবং এই পরিমাণ পৈতা এনে রোজ তাকে দেখাতে হবে। উত্তর ভারতে প্রতিটি পৌতার ওজন তিন আউন্স। সে হিসেবে প্রতিদিন ২৪ হাজার হিন্দু হত্যা করা হত।

সম্রাট আকবরের ঔরসে ও তার হিন্দু স্ত্রীর গর্ভের সন্তানের নাম সেলিম। তিনি সম্রাট আকবরের পর ‘নুর উদ্দিন মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর বাদশাহ গাজী’ উপাধি ধারণ করে সিংহাসনে বসেন। তার স্ত্রীও ছিলেন হিন্দু, অথচ তিনি গাজী (কাফের হত্যাকারী) উপাধি ধারণ করে তার রাজ্যে মন্দির নির্মান নিষিদ্ধ করেছিলেন।
আমাদের কোন কোন লেখক আকবরের হিন্দু কন্য বিবাহ ও তার পুত্র এবং উজির-নাজির সহ কর্মচারীদের হিন্দু কন্যা বিবাহে পুলকিত হয়ে উচ্ছ্বসিত প্রসংসা করেছেন। কেউ কেউ আকবরকে ধর্মনিরপেক্ষতার অবতার বানিয়ে ছেড়েছেন। কিন্তু যে সব মেয়েকে মোঘল হারেমে যেতে হয়েছে, সেই সব হতভাগ্যদের জন্মদাতা পিতারাই জানেন আকবরের সঠিক অবস্থান কোথায় ছিল।

সম্রাট আকবর প্রতিটি অভিজাত হিন্দু পরিবার থেকে কন্য সংগ্রহ করেছেন। তার হারেমে ৫০০০ হিন্দু কন্যা ছিল। হিন্দু মেয়ে সংগ্রহ করে তিনি উদার হয়েছিলেন; কিন্তু কোন মুসলমান মেয়ে হিন্দু পরিবারে বিয়ে দিয়ে উদারতা দেখাননি। হিন্দু পরিবারের ভিত নষ্ট করে তাদের এআত্মগরিমা ধ্বংস করে তাদের ইসলামে টেনে আনাই ছিল তার উদ্দেশ্য। আর এ কারনেই সম্রাট আকবর তার সারা জীবনে যতগুলি অভিযান পরিচালনা করেছিলেন আর সবগুলিই ছিল হিন্দু রাজাদের বিরুদ্ধে। নবীজীই এই বিধান দিয়ে গেছেন।
আমাদের এক আহম্মক লেখক দীনেশচন্দ্র সেন হিন্দু কন্য মুসলমানদের ভোগে লাগায় উচ্ছ্বাসিত প্রশাংসা করে বলেছেন, এতে মুসলমান ও হিন্দর মধ্যে মেল বন্ধন দ্ৃঢ় হয় । কিন্তু মূর্খটা ইতিহাস পড়েনি; পড়লে জানতেন আকবরের ছেলে জাহাঙ্গীর হিন্দু মায়ের সন্তান হয়েও গুরু অর্জুনকে প্রাণদন্ডে দন্ডিত করেছিলেন। তার– “মনের বাসনা হয় যত হিন্দু পাই, সুন্নত দেওয়াই আর কলেমা পড়াই।”
(চৈতন্য ভাগবত, ২য় ভাগ, পৃ-১৮৮)