চীনের ৫০০০ সৈন্য হংকংয়ে থাকে তাতে হংকংয়ের সর্বভৌমত্ব ক্ষুণ্ন হয় না। হংকংয়ের প্রশাসকরা হংকংবাসীর কাছে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ নয়, কাঠামোগতভাবে তাদের চীনের কাছে দায়বদ্ধ থাকতে হয়। কাশ্মিরে এতদিন তো এরকম কোন অবস্থা ছিলো না। তাদের আলাদা আইন সংবিধান ছিলো। তারপরও কবি দাউদ হায়দারের কাছে বিশ পঁচিশ বছর আগে সেখানকার মুসলিম অধ্যাপক বুদ্ধিজীবীরা কেন আক্ষেপ করে পরাধীনতার গল্প বলতেন? কারণ দ্বিজাতি তত্ত্ব আকাশ ফুড়ে বেরয়নি, এই তত্ত্ব্ মুসলমানদের ধর্মে আছে। এই তত্ত্ব সব মুসলমানের মনস্তত্বে আছে। হংকং, তিব্বত, বেলুচদের মত উপনিবেশ শাসন কাশ্মিরীদের ভোগ করতে হয়নি। এখন ৩৭০ উঠে যাবার পর তারা ভারতের পাঞ্জাবি, বাঙালি, তামিল, তেলুগু, মারাঠিসহ আরো শ’খানেক জাতি সম্প্রদায়ের মত একই সংবিধান আইনে ভারতবাসী হয়ে বাস করবে। ‘বাংলাদেশী’ ‘পাকিস্তানী’ বলতে যদি কিছু না থেকেও বিনি সুতার মালায় নানা জাতি সম্প্রদায় এক রাষ্ট্রে বাস করতে পারে- তাহলে ভারতে সমস্যা কোথায়?
মুখোশ খোলা অব্যাহত থাকুক ।
কাশ্মিরের অপর একটি অংশ পাকিস্তান দখল করে রেখেছে। সেখানে স্বাধীনতার প্রশ্ন আসে না। সুলিমুল্লাহ খান কিংবা বাংলাদেশী কবি দাউদ হায়দারের কিন্তু সেই কাশ্মির নিয়ে কোন ব্যথাবেদনা নেই। চীনের হাতে দখলকৃত কাশ্মির, তিব্বত, উইঘুর নিয়ে কারোর কোন মাথাব্যথা নেই। হংকংয়ে এতদিন ধরে চীনের দখলদারীর বিরুদ্ধে আন্দোলন চলছে অরুন্ধতীর তাতে কোন সমস্যা নেই।
সমস্যাটা মনে। হিংসায় আর ঘৃণায় এই উপমহাদেশের মুসলমানরা ভারতকে অভিশাপ দেয়। ৪৭ সালের দেশভাগ থেকে রেষারেষি কারণ প্রতিযোগীতায় টিকতে না পারা। পাকিস্তান ভারতের সঙ্গে এ যাবতকালের সবগুলো যুদ্ধে পরাজিত হয়েছে। সলিমুল্লাহ খানদের মত ছদ্মবেশী মুসলিম জাতীয়তাবাদী বুদ্ধিজীবীরা পাকিস্তানের এই পরাজয়ে ক্ষুব্ধ। আন্তর্জাতিকভাবে ভারতের প্রভাবে তারা সাম্রাজ্যবাদ দেখতে পেলেও চীনের ব্যাপারে কবি দাউদ হায়দার নিরব! এই নিরবতার মানে অন্য রকম। যেমন দুনিয়ার এত স্বাধীনতাকামী জাতি থাকতে আহমদ ছফা ৯৬ সালে এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, পশ্চিমবঙ্গের উচিত স্বাধীনতা যুদ্ধ করা ভারতের বিরুদ্ধে আর এরকম কিছু হলে বাংলাদেশের উচিত তাদের সাহায্য করা। একজন ভারতীয় বাঙালী কেন ভারতে নিজেকে পরাধীন মনে করবে? আহমদ ছফারা কি পূর্ব পাকিস্তানে পরাধীন ছিলেন? তাদের এই রকম ইতিহাস রচনা মিথ্যা অসম্পূর্ণ। পূর্ব পাকিস্তানীরা পরাধীন ছিলো না। পাকিস্তানে বাঙালীদের প্রতি চরম বৈষম্য চালানো হত। তাদের প্রকৃত মুসলমান মনে করা হতো না। তাদের হাফ হিন্দু মনে করা হত। বাঙালীরা ৪৭ সালে ঘোষণা দিয়ে মুসলমান হতে চাইল কিন্তু সেখানেও তাদের অপমান করা হলো। এই অপমানই তাদের সম্ভবত বাঙালী সংস্কৃতিতে সাময়িক সময়ের জন্য ফিরিয়ে নিয়ে গিয়েছিলো। নইলে বড় শখ করে, ভালোবেসে, রক্ত দিয়ে তারা ‘মুসলমানের নিজস্ব দেশ পাকিস্তান’ গড়েছিলো। ‘পরাধীন পাকিস্তান’ বলাটা তাই এখানে অন্যের উপর দোষ চাপানো। পাকিস্তানী সেনাবাহিনীকে ‘হানাদার বাহিনী’ বলাটাও যৌক্তিক নয় কারণ তারা বাইরে থেকে এসে আঘাত করেনি। পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তান একই দেশ ছিলো।
যাই হোক, এটা জেনে ভালো লাগছে আস্তে আস্তে প্রগতিশীলতার ছাল খু্লে শেয়ালগুলো হুক্কাহুয়া ডেকে উঠছে। তারা এখন দৃঢ়ভাবে বলছে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার লড়াই হয়েছিলো ‘অখন্ড ভারত’ করার ষড়যন্ত্র রুখতে। সম্ভবত আনিসুজ্জামান, হায়াৎ মামুদরাই হচ্ছেন বাংলাদেশী সেক্যুলার প্রগতিশীল বুদ্ধিজীবীদের শেষ প্রতিনিধি। বাকী যারা এখন দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন তারা সকলেই তাদের চিন্তা ও লেখায় ‘মুসলিম জাতীয়তাবাদ’ প্রতিষ্ঠায় অবিরাম চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ হবার পর আহমদ ছফা, আবদুর রাজ্জাকদের চেষ্টা এখন ফরহাদ মজহার. সলিমুল্লাহ, রাইসু, সাজ্জাদ শরীফদের হাতে প্রপাগন্ডা পাচ্ছে। কারণ তাদের হাতে মিডিয়া আছে, কাগজ আছে। তাদের বক্তব্য প্রচার পায়। আর আমাদের হাতে কেবল ফেইসবুক। তাতেই মুখোশ খোলা অব্যাহত থাকুক…।