বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম সমাজ ধর্মকে মুড়ি-মুড়কির মতো চিবিয়ে খেতে শুরু করেছে।

বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম সমাজ ধর্মকে মুড়ি-মুড়কির মতো চিবিয়ে খেতে শুরু করেছে। আমি বুঝলাম না আমাদের কি হলো! ধর্ম বিশ্বাসের বিষয় কিংবা ধার্মিকেরা কিছু নিদৃষ্ট আচার পালনও করেন, কিন্তু বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম সমাজ ধর্মকে  মুড়ি-মুড়কির  মতো চিবিয়ে খেতে শুরু করেছে দেখা যায়! জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে যেখানে বিষয়টা একেবারেই অনাবশ্যক, সেখানেও এরা এদের ধর্ম ইসলামকে টেনে এনে দাঁড় করিয়ে দেয়! 

 

এই করতে যেয়ে নিজেদের স্বাভাবিক জীবন-যাপন তো এরা বরবাদ করছেই এমনকি পুরো সামাজিক ব্যবস্থাও প্রায় ধ্বংস করে দেয়ার পর্যায়ে নিয়ে এসেছে।

আরেকটি বিষয় হলো পৃথিবীর আর অন্য যে কোন ধর্মের কিছু নির্দিষ্ট ব্যক্তি থাকেন যারা ঐ ধর্ম সম্পর্কে বিশদ জ্ঞান লাভ করেছেন, তারাই মূলত ধর্মের আচার-অনুষ্ঠান থেকে শুরু করে সবকিছুই করে থাকেন, এবং অন্য যে মানুষরা রয়েছে তারা বছরে দু’একবার কালেভদ্রে সেই সমস্ত সামাজিক অনুষ্ঠানে যোগদান করেন। মোটাদাগে বিষয়টা এরকম। তাছাড়া ঐ সমস্ত ধর্মালম্বী বলে পরিচয় দেয়া মূল জনসমষ্টি সারাদিন ওই ধর্মের পালনীয় কি আর কি পালন করা যাবেনা তাই নিয়ে পড়ে থাকে না। অন্তত পক্ষে তারা তাদের ধর্মকে অন্যদের উপর যে কোন প্রকারে চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টাটা নিদেনপক্ষে করে না।
কিন্তু বাংলাদেশের মুসলিম সমাজের হয়েছে ঠিক তার উল্টোটা, এখানে প্রতিটা মানুষই ইসলামী বিশারদে পরিণত হয়েছে! সারাদিন এই ধর্মকে তারা চিবিয়ে খাচ্ছে গলধঃকরণ করছে এবং তাই নিয়ে সারাদিন নাড়াচাড়া করছে! হালাল-হারাম করতে করতে পুরো সমাজের প্রায় দেউলিয়া হয়ে যাওয়ার পর্যায়ে এসে ঠেকেছে।
কথায় কথায় জায়েজ নাজায়েজের প্রশ্ন এখানে দন্ডায়মান। এসমস্ত কিছু ইসলামী বিশারদ কিংবা আলেমরা যে শুধু করছে তাই না, এসমস্ত করছে এদেশের সাধারণ মানুষ। তারা প্রত্যেকে যেন আলেম, প্রত্যেকে যেন ইসলামী চিন্তাবিদ!
আর এ দেশের শিল্প  সাংস্কৃতিক সেক্টর নাটক সিনেমা গান এমনিতেই প্রায় নেই হয়ে গেছে, আর যতটুকুই বা আজও আছে ভবিষ্যতে তা আর দেখা যাবে বলে মনে হয় না।কিন্তু এর জন্য সবথেকে বেশি দায়ী এই সেক্টরে কর্মরত মানুষগুলোই। এই মাধ্যমে ভর করে যারা মস্ত বড় শিল্পী হয়েছে, জীবনকে সাজিয়েছে, অর্থ কামিয়েছে এবং নিজের পরিচয়কে ছড়িয়েছে দেশব্যাপী, তারা অনেকেই একটা নির্দিষ্ট সময়ে এসে অধিকাংশ সময় প্রয়োজন মিটে গেলে বলতে হয়, এই সেক্টরের সাথে এই শিল্পের সাথে – যে কাজ আজকে তাকে এত ভালো অবস্থানে নিয়ে এসেছে সে কাজের সাথে তারা বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। সেই কাজকে তারা ছোট করেছে, সেই পেশাকে তারা নাপাক নাজায়েজ বলে নিজেরাই আখ্যায়িত করে ঘোমটা মাথায় দিয়ে নিজেরা ফেরেশতা সাজার চেষ্টা করেছে! এর থেকে দ্বিচারিতা আর অকৃতজ্ঞ কাজ আর কি হতে পারে!!!
এটাই আপনি দেখবেন, কিছুদিন পরপর এই ঘটনাই ঘটে, কেউ-না-কেউ নাটক সিনেমায় কাজ করা ব্যক্তি মিডিয়ার সামনে এসে বলছে যে আমার বোধোদয় হয়েছে এবং আমি ইসলামের পথে চলে এসেছি!
আপনি কখনোই দেখবেন না অন্য কোন ধর্মালম্বী কোন ব্যক্তি মিডিয়ার সামনে এসে বলছে আমি নাটক-সিনেমা গান করা ছাড়লাম, কেননা আমি পাপ বোধ করছি, এবং আমার ধর্ম এগুলো করতে আমাকে অনুমতি দেয় না।
এসমস্ত করে একমাত্র মুসলিম পরিবার থেকে আসা কেউ। তাহলে প্রশ্ন হল এরা মিডিয়াতে যায় কেন? তখন কি এদের পাপ পুণ্যের হিসাব থাকে না? পর পুরুষের দেখা প্রতিটা চুল সাপ হয়ে নিজের বুকে ছোবল বসাবে, এই ধরনের যে সমস্ত উদ্ভট কথা এদের ধর্ম গ্রন্থে লেখা রয়েছে সেইসব কি তখন এদের মনে থাকেনা! 
আসলে অর্থপ্রাপ্তির সম্ভাবনা নিজেকে পরিচিত করার প্রলোভন এবং নিজের ভবিষ্যৎ গড়ার ইচ্ছা থেকে তখন বোধহয় এরা পারেনা বের হতে।  তারপর যখন ভবিষ্যৎ দাঁড়িয়ে যায় কিংবা ভালো একটা বিয়ের সম্বন্ধ হয় কিংবা রাজনীতি করার ইচ্ছা জাগে অথবা চূড়ান্তভাবে পেশায় ফ্লপ হয়ে পড়ে কিংবা বিভিন্ন ধরনের সম্পর্কে জড়িয়ে উল্টাপাল্টা অভ্যাস করে অল্পদিনেই নিজের জীবনকে অতিষ্ঠ করে তোলে – এরাই বোধকরি একটা সময় মাথায় ঘোমটা বা টুপি পড়ে হাজির হয়ে এসে বলে, আমি আজ থেকে এ হারাম পেশা ছেড়ে দিলাম।  কি আশ্চর্য মানুষ এরা !!!