পশ্চিমবঙ্গের বসিরহাটের ভয়াবহ ধর্মীয় দাঙ্গার নিউজ কোলকাতার প্রগতিশীল কাগজগুলো ছাপেনি অন্যান্য বারের মতই। কিন্তু এবার মূখ্যমন্ত্রী বসিরহাট নিয়ে যখন কথা বলতে বাধ্য হলেন তখন সে নিউজ তারা না ছেপে কোথায় যাবে? পশ্চিমবঙ্গের সাধারণ জনগণকে হিন্দুত্ববাদীতে ঝুঁকতে কারা সুযোগ করে দিচ্ছে সেটা ফেইসবুকে মানুষের ক্ষোভ দেখে স্পষ্ট হয়। সেক্যুলারদের যখন ‘সেকুমেকু’ বলে উপহাস করা হয় সেটা কোন দেশের জন্য ভাল কথা নয়। সেক্যুলাররা অসাম্প্রদায়িক দেশ চান। কোন দেশে সেক্যুলারিজম আঘাত প্রাপ্ত হওয়া মানে তার সম্পূর্ণ ১৮০ ডিগ্রী বিপরীত মেরু সাম্প্রদায়িক শক্তি জয়। বরাবরই আমার মনে হয়েছে, কোলকাতার সেক্যুলার প্রগতিশীলরা ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের অধিকার, তাদের ধর্মীয় স্বাধীনতার সঙ্গে ফান্ডামেন্টালিস্টদের দাবী-দাওয়াকে গুলিয়ে ফেলেছেন…।
বসিরহাটের বাদুড়িয়ার রুদ্রপুরে ফেইসবুকে কোন হিন্দুত্ববাদী ছেলে কাবাঘর নিয়ে বাজে একটি ছবি এডিট করে পোস্ট করে। আর তাতেই রুদ্রপুরের সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিমরা রাস্তা অবরোধ করে, হিন্দুদের দোকানপাট ভাংচুর করে ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি করে। ছবি ও ভিডিও কমেন্টেসে দেয়া হলো। পুলিশ নাকি এ সময় দর্শকের ভূমিকা নিয়েছিল। এটা অবশ্য নতুন নয়। মততা ব্যানার্জি সরকারের পুলিশের বিপক্ষে রাজনৈতিক কারণে মুসলিম ফান্ডামেন্টালিস্টদের তোষণের অভিযোগ অনেক পুরোনো। এইসব মুসলিম মৌলবাদীদের বেশির ভাগ বাংলাদেশী জিহাদী দলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রাখে। তারা একটা সুদূর প্রসারী এজেন্ডা বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে কাজ করে যাচ্ছে। অতি সাধারণ মুসলিম জনগোষ্ঠি এই সুযোগে সাধারণ হিন্দুদের কাছে সন্ত্রাসী জেহাদী ছাড়া ভিন্ন কিছু বলে বিবেচিত হবে না। পশ্চিমবঙ্গে এই পরিস্থিতি চলতে থাকলে লাভ বিজেপির। এভাবে চলতে থাকলে মমতাকে ক্ষমতা ছাড়তে হবে। এতে মমতা ব্যানার্জির তেমন কিছু ক্ষতি না হলেও লক্ষ লক্ষ মুসলিম অধিবাসী চরম নিগৃহের শিকার হতে পারে উগ্রবাদীদের শাসনে। কার্যত তাই তৃনমূল কংগ্রেস মুসলিম মৌলবাদীদের তোষণা ও পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে সাধারণ মুসলিমদের ভবিষ্যত চরম অনিশ্চিত করে দিচ্ছে। মৌলবাদীদের খুশি করতে মাদ্রাসা শিক্ষায় টাকা ঢেলে মমতা ব্যানার্জি তার ভোট ব্যাংক নিশ্চিত করছেন ভেবে চরম ভুল করছেন। উপমহাদেশে এরকম ভূলের নজির পাকিস্তান বাংলাদেশে ভুরি ভুরি আছে। কিন্তু রাজনীতিবিদরা ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেন না…।
বসিরহাটের সর্বশেষ পরিস্থিতি আশাজাগনিয়া নয়। আবার যে কোন সময় লেগে যেতে পারে ধর্মীয় দাঙ্গা। হিন্দুত্ববাদীরা হুংকার দিচ্ছে, আরেকবার আসলে এবার আর বেঁচে যেতে দেয়া হবে না…। ফেইসবুকে কাবাঘরকে অবমাননা করতে দেখে কতজন সাধারণ গৃহস্ত মুসলমান রাস্তায় নেমেছিল- এটা একটা বিরাট প্রশ্ন। এ ধরণের দাঙ্গা হাঙ্গামার ঘটনারগুলো কোন প্লাটফর্ম আর নির্দিষ্ট পরিকল্পনা ছাড়া ঘটানো সম্ভব না। দুঃখের বিষয় পশ্চিমবঙ্গের মুসলিম মৌলবাদীদের এরকম প্লাটফর্ম গড়ে উঠতে রাজ্য সরকার বিশেষ রাজনৈতিক সুবিধা দিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশের জেএমবিদের দ্বিতীয় হোমগ্রাউন্ড হয়ে উঠেছে পশ্চিমবঙ্গের গ্রামগুলো। প্রতিবেশী সাধারণ হিন্দুদের চোখে সামনে এরকম কার্যক্রম সাধারণ মুসলিমদের প্রতি তাদের অবিশ্বাস তৈরিতে বিরাট ভূমিকা রাখবে। সব মিলিয়ে পশ্চিমবঙ্গের ভবিষ্যত খুব খারাপ। প্রগতিশীল সেক্যুলারদের এই পরিস্থিতিতে সবচেয়ে বড় ভূমিকা নিতে হবে। হিন্দুদের হিন্দুত্ববাদে ঝুঁকে পড়া থেকে যেমন তাদের রুখতে হবে, তেমনি ফেইসবুকে সামান্য ফটো এডিট করাকে কেন্দ্র করে মুসলিমদের ধর্ম রক্ষার মত ম্যাসাকারকেও প্রশ্রয় দেয়া যাবে না। সেক্যুলারদের বুঝতে হবে, মুসলিমদের জন্য শিক্ষা প্রয়োজন- কিন্তু সেটা মাদ্রাসা শিক্ষা নয়। কেউ স্বেচ্ছায় বিষ খেতে চাইলেই কি সেটা খেতে দিতে হবে? পশ্চিমবঙ্গের মুসলিমরা আধুনিক শিক্ষা ও মানুষিকতায় পিছিয়ে থাকলে তো সকলের বিপদ। তারা তো বিপদজনক হয়ে উঠবে হিন্দুদের জন্যই। কাজেই তিন তলাক, নবী দিবস, মাদ্রাসা শিক্ষা এসবকে সমর্থন জানানো মানে ভবিষ্যতে আপনার নিজের জন্যও বিপদ ডেকে আনা। তাদের আধুনিক হওয়া মানে আপনিও নিরাপদ। ঘৃণা কোন সমাধান নয়। দুই সম্প্রদায় কাছে এসে পরস্পরকে জানতে চেষ্টা করুক খোলা মন নিয়ে…।