আদিবাসী পাহাড়িরা যাবে কোথায়? পার্বত্যবাসীর সমস্যা দীর্ঘদিনের একটি রাজনৈতিক সমস্যা। এই ভূখণ্ডে বসবাসকারী জনগোষ্ঠীর মধ্যে কায়েমি স্বার্থে যে ব্যবধান কয়েক দশক ধরে তৈরি করা হয়েছে তারই মাশুল জাতিকে আজ দিতে হচ্ছে এবং এই সমস্যা জাতির উন্নয়ন ও অগ্রগতির পথে এক বিরাট বাধাস্বরূপ।
ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শক্তির বিরুদ্ধে সর্বস্তরের মানুষের স্বাধীনতাসংগ্রামে আদিবাসীরা অংশ নিয়েছিল এই আশায় যে, স্বাধীনতার মধ্য দিয়ে তাদের ওপরও নির্যাতন, নিপীড়ন ও শোষণের অবসান হবে। কিন্তু দেখা গেল, ব্রিটিশ শাসনের অবসান হলেও নতুন রাষ্ট্র পাকিস্তানে সর্বস্তরের জনগণের মতই আদিবাসী পাহাড়িদেরও মুক্তি আসেনি।
এ অঞ্চলের বাঙালি জনগোষ্ঠীর পাশাপাশি আদিবাসীরাও শোষিত ও নিপীড়িত হয়। দেখা গেছে, ব্রিটিশ আমলে পার্বত্যবাসীদের জন্য যে সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হয়েছিল, নতুন রাষ্ট্র পাকিস্তান তা কেড়ে ভুমিগ্রাস ও নিজ বাসভূমিতে আদিবাসীদের পরবাসী করার প্রক্রিয়া শুরু হয় পঞ্চাশের দশকে।
যা ‘৬০ এর দশকে এসে এক ভয়াবহ রূপ লাভ করে। দেশের এই অংশের দিকে তাকালে দেখা যায়,১৯৫৩ সালে পার্বত্য চট্রগ্রামের বিশেষ মর্যাদা হরণ করার পর পাহাড়িদের ওপর ব্যাপক অত্যাচার শুরু হয়ে যায় এবং বহিরাগতদের পরিকল্পিতভাবে পার্বত্য চট্রগ্রামে পুনর্বাসন সংঘাত ও দাঙ্গার সৃষ্টি করা হয়।
১৯৬০ সালে কাপ্তাই বাঁধ নির্মানের ফলে প্রায় ৪০ ভাগ আবাদি জমি ও ঘরবাড়ি জলমগ্ন হয়েছিল। উৎখাত হয়ে যাওয়া আদিবাসী জনগণের পুনর্বাসনের কোনো ব্যবস্থাই নেওয়া হয়নি।
১৯০০ সালে তৎকালীন ব্রিটিশ সরকার পার্বত্য চট্রগ্রাম অধ্যাদেশের মাধ্যমে স্বশাসনের পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিল। ১৯৬৩ সালের পর ব্যাপক বহিরাগত প্রবেশের ফলে পরিস্থিতির অবনতি ঘটে এবং অত্যাচারের মুখে বিপুলসংখ্যক আদিবাসী ভারত ও বার্মায় (মিয়ানমার) আশ্রয় গ্রহণ করে।
১৯৬৩ সালে পার্বত্য চট্রগ্রামের জুম্ম জনগণের বাস্তুভিটা ত্যাগ করে ভারত ও মিয়ানমারে আশ্রয় গ্রহণের ঘটনা এ জাতির ইতিহাসে বড় বিষাদময় স্মৃতি হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আছে। ১৯৬৪ সালে ৪০ হাজার চাকমা মিজোরাম সীমান্ত দিয়ে ভারতে প্রবেশ করে। এদের বেশীরভাগেরই বাস ছিল বাঘাইছড়ি, লংগদু ও বরকল থানায়। ওই সময় প্রায় ২০ হাজার মারমাও মিয়ানমারে আশ্রয় গ্রহণ করে।
(তথ্য সহায়তা- ড. নিমচন্দ্র ভৌমিক, বাসুদেব ধর, প্রদীপ মালাকারের লেখা গ্রন্থ ও নিউইয়র্ক ভিত্তিক গ্রাম বাংলা মাসিক পত্রিকা ও সাপ্তাহিক বাঙালি)।
আর পড়ুন…….