■■■মুলাদি গণহত্যা■■■
.
# বাংলাদেশের নদী বেষ্টিত জেলা বরিশাল। বরিশালের নদী বন্দর মুলাদিতে ৬দিন ধরে চলে হিন্দুদের উপর নির্মম গণহত্যা।
১৯৫০ সালের ফেব্রুয়ারি। মুসলিমরা গুজব ছড়ায় যে, “একে ফজলুল হককে কোলকাতায় হত্যা করা হয়েছে!” সাথে সাথে ঢাকায় গণহত্যা শুরু হয়। মুলাদি বসবাসরত হিন্দু ও খৃস্টানদের মাঝে তীব্র উত্কন্ঠা শুরু হয়। ১৪ ফেব্রুয়ারি ‘জিন্নাহ ক্লাবে’ এক সভায় মুসলিম নেতৃবৃন্দ হিন্দু ও খৃস্টানদের সুরক্ষার ব্যাপারে আশ্বস্ত করে। কিন্তু পরদিন কাজিরচর ও খাসের হাটে হানা দেয় মুসলিমরা।
.
১৬ ফেব্রুয়ারিঃ রাতে সাতানি গ্রামে হানা দিয়ে পুরো গ্রাম জ্বালিয়ে দেয় মুসলিম দাঙ্গাবাজ। ৪হিন্দুকে হত্যা করা হয়। নিরীহ হিন্দুরা মুলাদি পুলিশ স্টেশনে অভিযোগ দেয়। ওসি তাদের শবদাহ করতে বলে। ওসি নিহতদের পরিবারকে জানায় তারা রোগের কারণে মরেছে। পুলিশের নির্বিকার ও অবিবেচক মনোভাবের কারণে হিন্দুদের মনে ভীতির সঞ্চার ঘটে।
.
১৭ ফেব্রুয়ারিঃ রাতে ‘আল্লাহু আকবর ও কাফিরদের হত্যা কর’ এরকম শ্লোগান অনেক দূর থেকে শোনা যাচ্ছিল। ভোরে হিন্দু ও খৃস্টানরা মুলাদি পুলিশ স্টেশনে পালিয়ে যান। কিন্তু ওসি তাদের কোন প্রকার আশ্রয় দেয় নি।
বিকাল ৩টায় ৩-৪হাজার মুসলিম দাঙ্গাবাজ মুলাদি বন্দরের গুদামে হানা দিয়ে ব্যাপক লুন্ঠন চালায়। মুসলিমরা প্রকাশ্যে নির্বিচারে হিন্দু পুরুষদের হত্যা ও নারী নির্যাতন করছিল। তাদের পৈশাচিক হত্যা, নারী নির্যাতন ও অপহরণ, লুন্ঠন ও অগ্নিসংযোগ সন্ধ্যা পর্যন্ত চলতে থাকে। খৃস্টান চার্চ ভাঙচুর ও লুট করা হয়। রাস্তা, নদী ও নদীর ঘাট সর্বত্র মৃতদেহে পূর্ণ হয়ে গেছিল। শুধুমাত্র এক হিন্দুর সুপারি বাগানেই ৩০০ মৃতদেহ পাওয়া যায়।
.
১৮ ফেব্রুয়ারিঃ শনিবার। ভোরে বেঁচে যাওয়া হিন্দু খৃস্টান নিজ গৃহে ফিরে যায়। গৃহ আর নেই। লুটপাট করে ধ্বংস করে দিয়েছে দাঙ্গাবাজ মুসলিম। বিকালে হিন্দু ও খৃস্টানরা মুলাদি পুলিশ স্টেশনে যায়। এইবার, অর্থ ও স্বর্ণালঙ্কারের বিনিময়ে তাদের আশ্রয় দেয় পুলিশ। ইতোমধ্যে আধাসামরিক আনসার বাহিনী লাউড স্পিকারের মাধ্যমে হিন্দুদের থানায় জড়ো হতে বলে। এরপর মুসলিম গুন্ডারা পুলিশের সামনে শতাধিক হতভাগ্য অমুসলিম পুরুষদের হত্যা করে।
ওসি নিজেই হিন্দু নারীদের সিঁদুর মুছে দেয়। এবং শাঁখা চুড়ি ভেঙে দিয়ে জোরপূর্বক কলেমা পড়তে বাধ্য করে। পরে নারীদের গুন্ডা নেতাদের কাছে ভাগ করে দেয়া হয়।
.
২০ ফেব্রুয়ারিঃ মুলাদি ও আশপাশের গ্রামের বেঁচে যাওয়া হিন্দুরা খোলা আকাশে, বনে ও পোড়া বাড়িতে রাত কাটায়। ২০তারিখ ভোরে ওসি ঘোষণা করে যে বন্দরের কাছে রিলিফ ক্যাম্প খোলা হয়েছে। হিন্দুরা পুলিশ থানায় জড়ো হয়। পুলিশ তাদের কাছ থেকে অর্থ ও স্বর্ণালঙ্কার কেড়ে নিয়ে বন্দরের দিকে পাঠিয়ে দেয়। হিন্দুদের তিন ভাগে ভাগ করে গুদামে পাঠানো হয়। দুপুর ১২টায় ওসির সঙ্কেত পেয়ে ৩হাজার দাঙ্গাবাজ হিন্দুদের উপর হানা দেয়। ৭০০ পুরুষ ও বয়স্ক নারী হত্যা করে নদীতে লাশ নিক্ষেপ করে মুসলিমরা। অবশিষ্ট মেয়েদের কলেমা পড়িয়ে মুসলিম বানানো হয়। প্রায় ৫০ জন মেয়েকে মুসলিম নেতাদের মাঝে ভাগ করা হয়।
বিকালে লঞ্চে করে রিজিওনাল কন্ট্রোলার সিরাজুল হক সশস্ত্র পুলিশ নিয়ে মুলাদি আসেন। বেঁচে যাওয়া হিন্দুদের নিয়ে বরিশাল চলে যান সিরাজুল হক।
.
বিশ্লেষণঃ মুসলিম দাঙ্গাবাজ সহ আনসার, পুলিশ পর্যন্ত সরাসরি গণহত্যায় অংশ নিয়েছে। তলোয়ার ও চাপাতি দিয়ে কমপক্ষে ৩হাজার হিন্দুকে হত্যা করা হয়। কত নারী নির্যাতিত ও ধর্মান্তরিত হয়েছে তার কোন হিসেব নেই।
ইসলাম নির্বিচার অমুসলিম হত্যা সমর্থন করে। কারণ ৬দিন গণ হত্যা চলেছে। কিন্তু কোন মসজিদের ইমাম বাধা দেয় নি।
.
নিহতদের সংক্ষিপ্ত তালিকাঃ
1. Pranballabh Ghosh
2. Ganga Charan Sarkar (62)
3. Nityananda Pal (65)
4. Makhanlal Kundu
5. Sukhamay Kundu
6. Radhashyam Kundu
7. Bipin Kundu
8. Nagen Kundu
9. Haren Kundu
10. Mahendranath Gayen
11. Dr. Prafulla Gayen
12. Parambrata Gayen
13. Barada Kanta Pal
14. Gopal Pal
15. Sukhada Sundari Pal
16. Dhiren Pal
17. Kabiraj D. N. Ray
18. Madan Pal
19. Gopal Kundu
20. Kayek Kundu
21. Mahesh Chandra Pal (117)
22. Madan Nandi
23. Lalu Nandi
24. Narayan Bhaduri
25. Jashoda Lal Kundu
26. Dr. Kumud Bihari Banerjee
Sources (উৎস) :—-
1) Sinha, Dinesh Chandra, ed. (2012). ১৯৫০: রক্তরঞ্জিত ঢাকা বরিশাল ,
2) See wiki link :->
https://en.wikipedia.org/wiki/Muladi_massacre