“খিস্তি খেউড়ের প্রতিযোগিতা”
ডাঃ মৃনাল কান্তি দেবনাথ
ছোট বেলায় পড়েছিলাম একটি আপ্ত বাক্য- “ তুমি অধম তাই বলিয়া আমি উত্তম হইবো না কেনো”। মানুষ তার অন্তর্নিহিত চৈতন্য শক্তির (দিব্য চেতনা) প্রভাবে নিজেকে উন্নতস্তরে নিয়ে যাবার প্রয়াস করবে সেটাই স্বাভাবিক প্রাকৃতিক নিয়ম। এর বৈপরীত্য নিজেকে অধোগতির দিকে নিয়ে যাওয়া। মানুষ থেকে মনুষ্ব্যতর স্তরে যাওয়ার কথা আমাদের শাস্ত্রে মুনি ঋষিরাই বলে গেছেন।
নিজে ঠিকমতো কাজ কর্ম করতে পারি না, সমাজ , দেশের দশের জন্য সুষ্ঠ পরিষেবা দেবার মুরোদ নেই অথচ প্রশাসক হয়ে বসে গিয়েছি। সুতরাং “অন্যের ঘাড়ে, (বিশেষ করে পুর্বতন প্রশাসক) দোষ চাপানো নিজের অক্ষমতা ঢাকার এক অতি প্রচলিত ‘মানসিক ব্যাধি’। মনোবিদ ফ্রয়েড এই ব্যাধির নাম দিয়েছেন “ Projection”—“আমি সব বুঝি, সব করতে পারি কিন্তু ওই যে লোকগুলো আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে, এরা বিগত এতো বছর ধরে যা সব করে গিয়েছে তার জন্যই তো আমি কিছু করতে পারছি না”— এই হচ্ছে এই সব কর্ম বীরের এক মাত্র বাধা বুলি।
“আরে বাবা, ওরা পারেনি, ওরা দেশের এবং দশের সর্বনাশ করেছে বলেই তো মানুষ ওদের ছুড়ে ফেলে দিয়েছে, আর তোমাকে দ্বায়িত্ব দিয়েছে।তাই করে দেখাও না !” না তা নয়, নিজের অপদার্থতা ঢাকতে অন্যের ওপরে দোষ দেওয়া, অন্যত্র যে ভালো কাজ করছে তার নামে আকথা কুকথা বলা, গালি গালাজ করা, তার বিরুদ্ধে মিথ্যার ঝুড়ি বলে বেড়িয়ে দেশের অল্প বুদ্ধির মানুষগুলোকে ছলনা করা, বিপথে চালনা করার কি দরকার ????
সাধারন মানুষ কি কিছুই বোঝে না ? অনেকে অশিক্ষিত হলেও নিজের ভালো বোঝে। কিন্তু নানা প্রলোভন, দু টাকার আধপচা চাল খাইয়ে তাদের সুস্থ চিন্তা শক্তি বন্ধ করে দিয়ে দেশের বা সমাজের কি ভালো হয় ?? বেশী বেশী খেয়ে, ভোগের সামগ্রীতে ডুবে থেকে আর যাই হোক সুস্থ চিন্তা করা যায় না, ভালো থাকা যায় না ।
অমুক খারাপ ছিলো বা আছে, তা বেশ কথা। নিজে ওর থেকে ভালো হয়ে দেখাও না। দেখি একবার। অনেক হয়েছে এই সব বস্তা পচা বুলি । এবার একটু সত্যিকারের দেশের এবং এই দেশ টার মানুষগুলোর সার্বিক উন্নতি করে দেখাও না। সে মুরোদ তো নেই।
তোমার দেখা দেখি, তোমার সাংগ পাংগ রা সবাই তো ওই একই পথে চলছে। বিনা কারনে বা প্ররোচনায়, ‘যে মানুষ টা দেশ স্বাধীন হবার সাত দশক পর একটু একটু করে দেশের মানুষ গুলোর সার্বিক উন্নতির চেষ্টা করছে’, তাকেও গালি গালাজ করছে। তার কোমরে দড়ি পরাচ্ছে, হরিদাস পাল, দাঙ্গাবাজ বলে বেড়াচ্ছে। মানুষ কার কথা শুনবে ? দেশটাতো প্রায় বিক্রি হয়ে যাবার যোগাড়। সন্ত্রাসীরা ১০০০ বছর পর আবার মাথা তুলে এগিয়ে আসছে । এদের আশ্রয় প্রশ্রয় দেওয়া আর কতোদিন চলবে ????
অশালীন, অভব্য কথা বলা, খিস্তি খেউড় করা সকলের শোভা পায় না। ৩৪ বছর ধরে কোনো একটি দলের কিছু মানুষ খিস্তি খেঊড় করেছে বলে কি আজো সেই প্রথা চালু থাকবে ? অধঃপতনের আর কোন স্তরে সমাজকে এবং সমাজ বিরোধীদের নিয়ে যাওয়া হবে ? এর পর তো, সমাজে যা কিছু (১০%) ঝড়তি পড়তি সুস্থ স্বাভাবিকতা সম্পন্ন মানুষ আছেন, তারা আর বাস করতে পারবেন না। যারা একটু বয়ষ্ক,তারা তো মরে গিয়ে বেচে যাবেন (আমিও মরলেই বাচি)। কিন্তু যারা কম বয়ষী, সবে বিয়ে থা করে ঘর সংসার করছে এদের কি ভবিষ্যত ??
দেখো না, তোমার পুর্ব সুরীরা যে খিস্তি খেউড়ের সুচনা করে গিয়েছিলো, যে অপশাসনের ধাক্কায় এই পশ্চিমবংগ প্রায় মধ্য যুগে চলে গেছে, সেই অপশাসন, অপসংষ্কৃতির প্রচলন কিন্তু থামেনি বরং দিন দিন বেড়ে চলেছে। মানুষ অধম থেকে অধমতর হচ্ছে।
তোমাদের দেখা দেখি, তোমাদের কাজ, অন্যায়, অত্যাচার ইত্যাদির প্রতিবাদে অন্য একটি দলের নায়ক কি সব কথা বলা শুরু করেছে। “চুলের মুঠি ধরে টেনে আনবো”, মেরে পিঠের চামড়া ছাড়িয়ে নুন ছিটাবো, ৬ ফুট মাটির নীচে ঢুকিয়ে দেবো”। আহাঃ, কি সব মুধুর বানী, ‘একেবারে অমৃত সমান’—আমরা কিছু মানুষ সেই গুলো ‘শুনে পুন্যবান হচ্ছি’।
কিন্তু কথাটা কি জানো ? যারা এই দেশটা চালিয়েছো, চালাচ্ছো এবং চালাবার স্বপ্ন দেখছো, তাদের সবার এই সব ‘অমৃত কথা শুনে আমাদের কোনো পুন্য হচ্ছে না’। আমরা উত্তম ছিলাম। অধম হয়ে গেছি আর এখন সবাই মিলে ‘অধমতর হচ্ছি’। আমরা আর মানুষ থাকছি না।
“তুমি অধম তাই বলিয়া আমি উত্তম হইবো না কেনো”?—এই কথা যিনি বলে গেছেন তিনি আজ বেচে থাকলে হয় পাগোল হয়ে যেতেন, না হয় গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করতেন।
********************