লাভ জেহাদ : জান্নাতুল ফেরদৌসের হাতছানি।

লাভ জেহাদ : জান্নাতুল ফেরদৌসের হাতছানি
————————————————–
সাম্প্রতিক অতীত থেকে নিয়ে আজ পর্যন্ত ভারতীয় উপমহাদেশ একজোড়া শব্দ নিয়ে উত্তাল । ‘লাভ জেহাদ’ । সংবাদপত্র, ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া, এমনকি সোশ্যাল মিডিয়ায় লাভ জেহাদ নিয়ে চলছে টানাপোড়েন, সম্প্রদায়ভিত্তিক দোষারোপের পালা । পাঠক, লাভ জেহাদ কি ? গায়ে মাখে না মাথায় দেয় ? না না, গায়েও মাখেনা আর মাথাতেও দেয়না । রাখঢাক না করেই বলছি,লাভ জেহাদ হলো এই উপমহাদেশে ইসলামের বিস্তারের এক বহুল প্রচলিত প্রকারের নয়া নামকরণ । পাঠক যদি এম. এ খানের ‘জিহাদ’ বইটি পড়ে থাকেন বা মুক্তমনা ব্লগে আবুল কাশেমের ইসলাম ও ক্রীতদাসপ্রথা নিয়ে ধারাবাহিক লেখাটি পড়ে থাকেন তাহলে ওনাদের দেওয়া রেফারেন্স সহ জানতে পারবেন, এই ভারতীয় উপমহাদেশে ইসলামের প্রসারে নারী এক ‘গনিমতের মাল’ এর অনেকটাই ভূমিকা ছিল । জিহাদী মুসলমানরা এক হাতে তলোয়ার, আরেক হাতে কোরান নিয়ে অমুসলিমদের নির্দেশ দিত, হয় ইসলাম গ্রহণ কর, নয়তো মৃত্যু । পুরুষেরা ইসলাম গ্রহণ করলে বাঁচতো, অন্যথায় মরতো । নারীরা হত গনিমতের মাল, কেউ বা ঠাঁই পেত হারেমে, কেউ যথেচ্ছা ভোগের পর বিক্রি হতো মিনা বাজারে, আবার বরাত জোরে কোনো কোনো সুশীলা, সুষমারা সালমা বেগম হয়ে বাকি জীবন কাটাতো ।

দিন পাল্টেছে, সময়ের বদল হয়েছে, আর তাই ইসলামও দিন-সময়ের সাথে খাপ খাইয়ে তার বিস্তারের প্রকারেও বদল এনেছে । ভারতীয় উপমহাদেশের সাপেক্ষে দেখা যায়, অতীতে রাজ্যহারা পরাধীন হিন্দু অস্তিত্ব, সম্ভ্রম ও জীবন রক্ষার্থে ইসলাম গ্রহণ করতে বাধ্য হতো অথবা নির্যাতন, ধর্ষণ, লুণ্ঠন, দেশান্তর বা মৃত্যুকে স্বীকার করে নিত, কিন্তু ধর্মান্তরিত হতো না । সাম্প্রতিক অতীতে কিন্তু উল্টোপূরাণ অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে । ইসলাম সম্পর্কে সুস্পষ্ট না জেনেই অনেকেই স্বেচ্ছায় ধর্মান্তরিত হচ্ছে । ধর্ম ব্যাপারটাই মানুষ সৃষ্ট একটা ভাওঁতা, তার উপর ধর্মান্তরিত হওয়াটা আরও বড় একটা ভাওঁতা । পাঠক, আশপাশে একটু চোখকান খোলা রাখলে কিছু মডারেট চুতিয়া প্রগতিশীল পাবেন যারা তাচ্ছিল্যের সুরে গেয়ে থাকেন : ‘ওসব কোনো ফ্যাক্টর না ‘ !  সেই সকল চুতিয়া প্রগ্রতিশীলদের জিজ্ঞেসা করুন : ‘ফ্যাক্টর কোনটা ?’ — উত্তর দিতে পারবেনা । এই ‘লাভ জেহাদ’ হলো ‘ফ্যাক্টরলেস’ প্রগতিশীল প্রেমের অভিনয়ের আড়ালে একটি সুপরিকল্পিত তাকিয়া, ভারতীয় উপমহাদেশে ইসলামের বিস্তারের ।  প্রেমের মাধ্যমে অমুসলিম নারীকে ইসলামে ধর্মান্তরিত করার যে নীরব আন্দোলন বিশ্বজুড়ে পরিচালিত হচ্ছে এরই নাম ‘লাভ জিহাদ’। একটু ভেতরে ঢুকে দেখলে জানা যাবে যে প্রায় প্রতিটা ক্ষেত্রেই মেয়েটি ধর্মান্তরিত হয়ে বিয়ে করলো, মা-বাবা-আত্মীয়-স্বজন সবাইকে চিরদিনের জন্য ত্যাগ করে ইসলাম গ্রহণ করলো, স্বাধীন নারী থেকে পর্দাবন্দী মুসলিম যৌনদাসীতে রূপান্তরিত হলো এবং খাদ্যাভাসটাও পারিপার্শ্বিক চাপে পরে ত্যাগ করে গোমাংস ভক্ষণকারী প্রগতিশীলা হয়ে গেল । না না, পাঠক, ভুল বুঝবেন না । গোমাংস খাওয়া বা শুকরের মাংস খাওয়াটা এখানে মুখ্য নয়, মুখ্য হলো কেন একজনকে পারিপার্শ্বিক চাপে তার খাদ্যাভ্যাস বদলাতে হবে ? কোন সেই বাধ্য বাধকতা ? তাহলে প্রেম অপেক্ষা ধর্মান্তর  মুখ্য হলো না কি এখানে ? অন্য ধর্মালম্বী সেজেও অনেক মুসলিম যুবককে ভিন্ন ধর্মের মেয়ের সাথে প্রেমের  প্রতারণা করতে দেখা গেছে । প্রাইভেট শিক্ষক যদি মুসলিম যুবক হয় তবে তো পোয়া বারো, একদম শিয়ালের কাছে মুরগিকে পড়তে দেওয়া !  কাজের বেলায় কাজী আর কাজ ফুরোলে পাজী । শুরুতে, কলেজে ক্লাসনোট সরবরাহ, ক্লাসে সিট ধরে রাখা, শপিঙে সাথে যাওয়া, ফেসবুকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কথা বলা, মানসিক সাপোর্ট দেওয়া, হিন্দুধর্মের প্রতি শ্রদ্ধা দেখানো, দুচ্ছাই করার পরও হিন্দু মেয়ের পেছনে লেগেই থাকা—এসবই হলো মেয়েকে মানসিকভাবে দুর্বল করে প্রেমের ফাঁদে ফেলার কৌশল। এর ফলে মুসলিম যুবকের ওপর মানসিক ও বাহ্যিকভাবে নির্ভরশীল হয়ে পরে হিন্দু মেয়েটি । পাঠক, এখানে বিশেষ করে হিন্দু ধর্ম লিখলাম, কেননা ভারতীয় উপমহাদেশের আজ পর্যন্ত ইসলামের সহিংসতার বলি সবথেকে বেশি হয়েছে হিন্দুরা । ধর্ম সমন্ধে ইগ্নোরেন্ট অধিকাংশ হিন্দু মেয়ে বেশিরভাগ সময়ে তার প্রেমিকের হিন্দু ধর্ম সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেনা । এই সুযোগে ইসলামের সরলতা ও মহত্ত্ব বিষয়ে বলা শুরু করে তার মুসলিম প্রেমিক । এমনকি ধর্মের বোন অথবা মা ডেকেও গোপন অভিসারে ভিন্নধর্মী নারীকে নিয়ে চম্পট দেওয়ার রেকর্ড আছে সাচ্চা মুসলমানের ! হিন্দু মেয়েটি মুসলমানকে বিয়ে করার শাস্তি- মা বাবা আত্মীয়স্বজন তাকে ত্যাগ করলো, আর উল্টোদিকে একটু নজর রাখলেই জানতে পারবেন হিন্দু যুবকটি, মুসলমান মেয়েকে বিয়ে করার হেতু জবাই হলো ! কি পাঠক, অতিরঞ্জিত বা মিথ্যা কিছু বললাম ? জাগ্রত সোশ্যাল মিডিয়ার খবরগুলো কি বলে ? ভিন্নধর্মী মেয়েকে ধর্মান্তর করতে পারলে মুসলিম যুবকটির আজীবনের সব পাপ মাফ হয়ে যাবে, জান্নাতুল ফেরদৌস নামক কাল্পনিক বেহেশ্‌ত নিশ্চিত হয়ে যাবে । অতএব, প্রেমের মাধ্যমে যদি বেহেশ্‌ত পাওয়া যায়, সেইসাথে সতী, রূপবতী, গুণবতী যুবতীও পাওয়া যায়, তবে এজন্য তারা মরিয়া তো হবেই । এই লাভ জিহাদে যারা সহযোগিতা করবে তারাও ছোয়াবের অংশীদার হবে । তাই সকল সাচ্চা মুসলমানই একজন লাভ জিহাদীকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করে !

পাঠক, শেষ করার আগে ‘লাভ জিহাদ’ এর এক উৎকৃষ্ট উদাহরণ তথা পরিণতি আপনাদের জানাই । শ্রাবস্তী দত্ত তিন্নি প্রেম করে ধর্মান্তরিত হয়ে বিয়ে করেন আদনান ফারুক হিল্লোলকে । বাংলাদেশ সরকারের এক সচিব উজ্জ্বলবিকাশ দত্তের কন্যা তিন্নি মিডিয়াকে বলেছিলেন “আমার দাদু বলতেন, ‘মানুষ আপন টাকা পর, যত পারিস মানুষ ধর’ (ঠাকুর অনুকূলচন্দ্রের বাণী)। তাই আমি টাকা নয়, মানুষকে ভালবেসেছি সব সময়।” ইসলামে যেহেতু যখন খুশি স্ত্রীকে তালাক দিয়ে আরেকটা বিয়ে করার সুযোগ আছে, তাই হিল্লোল নিজের বেহেশত নিশ্চিত করার পর তিন্নিকে কন্যাসহ তালাক দিয়ে আরেক মডেল নওশীনের পিছু নেয়। কিন্তু এত কিছুর পরও তিন্নির বোধোদয় হয়নি, মা-বাবার আশ্রয়ে থাকার পরও তিন্নি আবারও আদনান হুদা সাদ-কে গোপনে বিয়ে করে !

পাঠক: ‘লাভ জিহাদ’-কুকুরের লেজ যেমন সোজা হয়না এটা ঠিক, তেমনি কুকুরের জন্য মাঝে মাঝে মুগুর লাগে এটাও ঠিক !