নীচের এই কমেন্টটি করেছিলাম এক বন্ধুর থ্রেডে, একবছর আগে। তখন ‘পশ্চিম’ ঘুচব-ঘুচব করছে, কিন্তু নামটি ‘বাংলা’ হবে না ‘বঙ্গ’ হবে সেটা ঠিক হয়নি। বিতর্ক চলছে। তখন যা লিখেছিলাম, এখনও সেই একই কথা বলি, তা সেটা ঠাট্টার ছলে হোক বা গম্ভীর ধরনে।
অন আ সিরিয়াস নোট
১. আমি নামবদলের বিরুদ্ধে। পশ্চিমবঙ্গ নামটির মধ্যে অনেক রক্ত অনেক অশ্রু অনেক দহন অনেক দুঃখের স্মৃতি আছে। অনেক ভিটেমাটি ছাড়ার যন্ত্রণা, অনেক গণহত্যা গণধর্ষণাদি অত্যাচারের ইতিহাস আছে, সেসব ভুলে যাওয়া আত্মবিস্মৃতির নামান্তর। দেশছাড়া পূর্বপুরুষদের জীবনসংগ্রামের প্রতি চরম অবজ্ঞাও বটে। পশ্চিম নামের মধ্যেই পূর্ব বেঁচে আছে।
২. অনেকে বলবে, ওরা তো পূর্ব কথাটা রাখেনি। তা ওরা কি আমাদের আদর্শ? দ্বিতীয়ত, দেশভাগের যন্ত্রণা কতটুকু সয়েছে ওরা? কতজন মুসলমান পশ্চিমবঙ্গ থেকে পূর্ব পাকিস্তানে গেছে? মুষ্টিমেয় যে-কজন গেছে, স্বেচ্ছায় গেছে, অত্যাচারিত হয়ে যায়নি। ডেমোগ্রাফি দেখলে সেটা বোঝা যায়। সুতরাং পশ্চিম নিয়ে ওদের নস্টালজিআ না-থাকারই কথা, পূর্ব নিয়ে আমাদের যতটা আছে। পশ্চিম না থাকলে পূর্বও ভুলব, তিন প্রজন্ম পরে অনেকে হয়তো জানবেও না অখণ্ড বাংলা বলে একটা জিনিস ছিল।
৩. বঙ্গ বঙ্গ রব যাঁরা তুলেছেন, যুক্তিস্বরূপ মধুসূদনের ‘হে বঙ্গ, ভাণ্ডারে তব’, রবীন্দ্রনাথের ‘দ্রাবিড়-উৎকল-বঙ্গ’ ও দ্বিজেন্দ্রলালের ‘বঙ্গ আমার, জননী আমার’ কবিতা/গানগুলির উদাহরণ দিচ্ছেন, তাঁদের জিজ্ঞেস করি, এই বঙ্গ কি আজকের খণ্ডিত বঙ্গ? না, মধু-রবি-দ্বিজেন্দ্র অখণ্ড বঙ্গের কথা ভেবেই ওই কবিতা/গানগুলি লিখেছিলেন? আজ তাঁদের দোহাই পেড়ে খণ্ডকে পূর্ণতা দিতে গেলে তাঁদের প্রতি শ্রদ্ধা দেখানো হবে, না অশ্রদ্ধা?
৪. আর বাংলা তো চলতেই পারে না, আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে অর্থবিভ্রাট ঘটবে। তার সঙ্গে খণ্ডকে পূর্ণতা দেওয়ার ভ্রম তো থাকছেই।
৫. পশ্চিম শব্দটা দেশভাগের বিরুদ্ধে আমাদের আত্মার প্রতিবাদ, পশ্চিম শব্দটা ইতিহাসের একটা রক্তস্নাত স্বাক্ষর, এই কালবেলায় কেবল বর্ণানুক্রমে এগিয়ে যাবার জন্য তাকে উপড়ে ফেলব?