-Susupto Pathok
সম্প্রতি ইংলেন্ড ক্রিকেট টিম ভারতের বিরুদ্ধে টেস্ট সিরিজ জেতার পর তাদের ক্রিকেট ঐতিহ্য হিসেবে শেম্পেইন ছিটিয়ে উৎযাপন করলে দলের দুই মুসলিম সদস্য আদিল রশীদ ও মঈন আলী তাতে যোগ না দিয়ে প্রত্যাখান করে দূরে সরে থাকে। মদ ইসলাম ধর্মে হারাম বিধায় এরকম উৎযাপনে তাদের আপত্তি। দক্ষিণ আফ্রিকার হাশিম আমলা তার জার্সিতে বীয়ার কোম্পানির ইস্টিকার লাগাতে দেয় না। বীয়ার তাকে খেতে বলা হয়নি, কোম্পানি থেকে ক্রিকেট টিম বিপুল পরিমাণ অর্থ পেয়েছে ছোট্ট একটা ইস্টিকার লাগানোর বিনিময়ে। সেই ইস্টিকার হাশিম আমলা পরবে না। আপাত দৃষ্টিতে এটি একজন ব্যক্তি মানুষের ধর্মীয় বিধি নিষেধ বা বড়জোর ধর্মীয় গোড়ামী বলে হালকা করে দেখা গেলেও বিষয়টা কিন্তু অতখানি লঘু নয়। হাশিম আমলারা যখন দক্ষিণ আফ্রিকায় সংখ্যাগরিষ্ঠ হয়ে যাবে, যখন দেশের ক্ষমতা হাতে চলে আসবে সংখ্যার জোড়ে তখন তো এরকম বীয়ার কোম্পানি ক্রিকেট টিমে ভিড়তেই পারবে না! বীয়ার কোম্পানির লাইসেন্সও উঠে যেতে পারে। এমন কি বীয়ার মদ খাওয়া কঠিন করে তুলতে পারে…। আদিল রশীদ আর মঈন আলীর টিমকে বর্জন ব্যক্তিগত ধর্মীয় স্বাধীনতা নয়, এটা অপরের উৎসবকে বর্জন করা। অন্যের ঐতিহ্যকে ‘নিষিদ্ধ’ তালিকায় ফেলা। ইংলেন্ড দ্রুত মুসলিম প্রজনন প্রজেক্টের আওতায় মুসলিম মেজোরিটি হয়ে যাবার পর এই রশীদ আর মঈনরা ক্রিকেট টিমে শ্যাম্পেইন উৎসব চালিয়ে যেতে দিবে? গোটা ইউরোপ জুড়ে অভিবাসী বিরোধী গণজোয়ার, মুসলিম অভিবাসী বিরুদ্ধে জনরোষ ইউরোপীয়নাদের ভবিষ্য নিয়ে এরকম শংকা থেকেই জেগে উঠেছে। হ্যাঁ মানছি যে অভিবাসী বিরোধী আন্দোলনের এটাই কারণ নয়, তবে এটিও অন্যতম কারণ নিশ্চিয়। দ্রুত মুসলিম প্রজনন প্রজেক্টে মুসলিমরা গন্ডায় গন্ডায় বাচ্চা পয়দা করে ইউরোপীয়ান সংস্কৃতিতে এভাবে হারাম হালালে প্রকট করে তুলবে- এটা এখন ইউরোপীয়ানরা সিরিয়াসভাবে মাথায় নিচ্ছে। ইউরোপীয়ানদের মাঝে ডানপন্থিদের জনপ্রিয়তা বেড়ে যাওয়ার মানে দাঁড় করাতে কেউ কেউ কৌশলে ভারতীয় উপমহাদেশের ধর্মীয় উন্মাদনার সঙ্গে এক করে দেখাতে চান। অথচ ইউরোপীয়ানরা কি কেউ মৌলবাদে আকৃষ্ট হচ্ছে তার কোন প্রমাণ পাওয়া গেছে?
বাংলাদেশে আটকে পড়া বিহারী পট্টিতে পাকিস্তানী পতাকা উড়লে আমরা সহ্য করতে পারি না। বাংলাদেশেরটা খেয়েপরে পাকিস্তানের নিশান উড়ানোকে নিমোখারামী বলি। পাছায় লাত্থি মেরে পাকিস্তানে পাঠিয়ে দেয়া উচিত… ইত্যাদি। এবার চিন্তা করে দেখেন তো, ইউরোপে অভিবাসী ভারতীয় পাকিস্তানী বাংলাদেশীদের তাহলে কি করা উচিত? ইংলেন্ডের লর্ডস বা ওভালে খেলা শেষে চিত্রটা কেমন একবার মনে করে দেখুন। একদল বৃটিশ পাসপোর্টধারী ইংলেন্ডের পতাকার বদলে অন্য একটি দেশের পতাকা নিয়ে আনন্দ উল্লাস করছে। ইংলেন্ডে ম্যাচ হেরে যাওয়ায় বৃট্রিশদের কানের সামনেই ‘বাংলাদেশ বাংলাদেশ’ কিংবা ‘জিতেগা ভাই জিতেগা ইন্ডিয়া জিতে গা’ ‘জিতেগা ভাই জিতেগা পাকিস্তান জিতেগা’ শ্লোগান দিতে দিতে বাড়ি ফিরে। এরা সবাই বৃট্রিশ পাসপোর্টধারী। এদের মধ্য থেকেই কেউ বৃট্রিশ এমপি রোশনা আলী, টিউলিপ সিদ্দিকী হয়। ইউরোপীয়ানরা কেন এইসব অভিবাসীদের হাতে তাদের দেশ শাসনের ভার তুলে দিবে? তৃতীয় প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা যারা ইউরোপের মূল সমাজের অংশ হতে পারল না তাদেরকে কেন সাদা চামড়ার ইউরোপীয়ানরা তাদের অংশ মনে করবে?
ইউরোপে ডানপন্থিরা জনগণের সমর্থন দ্রুত লাভ করছে। সেই ডানপন্থিরা কি আমাদের দেশের জামাত ইসলামী, চরমোনাই, হেফাজত ইসলাম? কিংবা আরএসএস শিবসেনা? ইউরোপীয়নাদের ডানপন্থায় ঝুঁকে পরা কি লিবারাল ইউরোপ থেকে সরে আসা? মোটেই না, ইউরোপীয়নারা নিজেদের জন্য গণতন্ত্র সেক্যুলারিজম ব্যক্তি স্বাধীনতা জারি রাখবে। তাদের সমস্যা অভিবাসী। অলরেডি মুসলিমদের আশ্রয় না দেয়ার উপর জনমত গড়ে উঠছে। মুসলমানরা ভারতীয় উপমাহাদেশেই নিজেদের শেকড় গাড়তে পারেনি। মনসামঙ্গল আর বিষাদ সিন্ধু এক্ষেত্রে উদাহরণ হতে পারে। মধ্যযুগের বিজয় গুপ্ত মনসামঙ্গল লিখেছেন, অপরদিকে মীর মোশাররফ হোসেন কারবালার কাহিনী নিয়ে লিখেছেন বিষাদ সিন্ধু। ভারতীয় উপমহাদেশের মুসলিমরা এই ভূখন্ডের উত্তরাধিকারকে কখনই স্বীকার করেনি। বর্তমান পাকিস্তানে মহেঞ্জোদারো সভ্যতা নিদের্শন হলে্ও কোন পাকিস্তানী এটিকে তাদের পূর্ব পুরুষের সভ্যতার নির্দশন বলে মনে করে না। আরবের মরুভূমিতে ডাকাতি করে বেড়ানো বেদুইনদেরই গর্বিত উত্তরাধীকার ভেবে তারা আত্মপ্রসাদ লাভ করে। একই রকমভাবে বাংলাদেশের মুসলমানরা যেমন তাদের হাজার বছর আগের সমস্ত ইতিহাস ঐতিহ্যকে ‘হিন্দুয়ানী’ চিহিৃত করে প্রত্যাখান করে চলে…।
ইউরোপ জুড়ে ডানপন্থার উত্থানের জন্য দায়ী অভিবাসীদের মানসিকতা। তাদের ঠিক করতে হবে তারা কি ইউরোপীয়ান সমাজের মূলের সঙ্গে মিশে যাবে নাকি বিরোধ জিইয়ে রাখবে।