সুন্নিবৌদ্ধ / প্রবীর মজুমদার।

সুন্নিবৌদ্ধ / প্রবীর মজুমদার
————————————————-

জনমেজয় কহিলেন, ‘হে মহর্ষে! আপনি কহিলেন যে, কলিযুগে সুন্নিবৌদ্ধ নামে এক প্রকার মনুষ্যেরা পৃথিবীতে আবির্ভূত হইবেন। তাঁহারা কি প্রকার মনুষ্য হইবেন এবং পৃথিবীতে জন্মগ্রহণ করিয়া কি কার্য্য করিবেন, তাহা শুনিতে বড় কৌতূহল জন্মিতেছে। আপনি অনুগ্রহ করিয়া সবিস্তারে বর্ণন করুন।’

বৈশম্পায়ন কহিলেন, হে নরবর! আমি সেই বিচিত্রবুদ্ধি; মোল্লাচাটুকার সুন্নিবৌদ্ধগণকে আখ্যাত করিব, আপনি শ্রবণ করুন। আমি সেই সত্যনিষ্ঠ, জ্ঞানপাপিষ্ঠ, কটুভাষী, অস্পৃশ্যতাপ্রিয় সুন্নিবৌদ্ধদিগের চরিত্র কীর্ত্তিত করিতেছি, আপনি শ্রবণ করুন। হে রাজন্, যাঁহারা গেরুয়াবসনে আতঙ্কিত, যুক্তিহীন ভক্তিসর্বস্ব, মহাপ্রাণ যোগেন মিণ্ডলে নিবেদিতপ্রাণ, এবং কুৎসাপ্রিয়, তাঁহারাই সুন্নিবৌদ্ধ। যাঁহারা যুক্তিহীনতায় অজেয়, জেহাদি-তোষণে পারদর্শী, হিন্দুত্ববিরোধী, তাঁহারাই সুন্নিবৌদ্ধ। যাঁহারা কু-তর্কে অজেয়, কটুভাষায়পারদর্শী, সংস্কৃতভাষাবিরোধী, তাঁহারাই সুন্নিবৌদ্ধ। মহারাজ! এমন অনেক মহাবুদ্ধিসম্পন্ন সুন্নিবৌদ্ধ জন্মিবেন যে, তাঁহারা মনুবাদের বিরোধিতা করিবার অছিলায় মহম্মদবাদের পৃষ্ঠপোষকতা করিবেন। যাঁহারা দুই-দিবস বসপার লোকাল অফিসে গমনাগমন করিয়া তৃতীয় দিবস হিন্দুদিগকে গো-শাবক বলিয়া গালি পাড়িবে তাঁহারাই সুন্নিবৌদ্ধ। যাঁহারা সুমন চ্যাটুজ্যেকে বহিরাগত আর্য বলিয়া ঘৃণা করিবে এবং কবির সুমনকে মূলনিবাসী বলিয়া খাতির করিবে তাঁহারাই সুন্নিবৌদ্ধ। লেলিনমূর্তির অপসারণে যাঁহারা গঙ্গাযমুনা একাকার করিয়া দিবে অথচ ধর্মনিরপেক্ষতার খাতিরে বামিয়ান বৌদ্ধমূর্তিধ্বংসে মৌনব্রত অবলম্বন করিবে তাহারাই সুন্নিবৌদ্ধ। যাঁহারা ভক্তির আতিশয্যে ফটোশপ নামক এক মহার্ঘ সফটওয়ারদ্বারা ভগবান বুদ্ধের ধড়ে হরিচাঁদ ঠাকুরমাহাশয়ের মস্তক প্রতিস্থাপনপপূর্বক এক কিম্ভুত চিত্র নির্মাণ করিয়া “হরিনামে মাতোয়ারা” হইবে তাহাদিগকেই সুন্নিবৌদ্ধ বলিয়া জানিবেন।

হে নরাধিপ! সুন্নিবৌদ্ধগণ যৌবনে মুক্তির হাতিয়ার মনে করিয়া হস্তে কাস্তে-হাতুড়ি তুলিয়া লইবেন। তাঁহারা মার্ক্সবাদ ও লেনিনবাদের কিছুই অধ্যয়ণ করিবেন না, কেবল জিন্দাবাদে অভ্যস্ত হইবেন। পরবর্তীকালে ভ্রম অনুধাবন করিয়া হস্তি হস্তগত করিবেন, অথচ কাস্তে-হাতুড়ি মার্কা পার্টি-ক্লাস হইতে আহরিত জ্ঞান ছাড়িতে পারিবেন না। ফলতঃ উহারা বিভ্রান্ত থাকিবেন। তাঁহারা আম্বেদকরের মতবাদ হইতে জাতীয়তাবাদ গ্রহণ করিবেন না, কেবল তাঁহার চিত্রখানি বামহস্তে ধারণ করিয়া মুষ্টিবদ্ধ দক্ষিন হস্ত অম্বরপাণে আন্দোলিত করিয়া কণ্ঠ্যের শিরা ফুলাইয়া “ভারত তেরি টুকড়ে হোঙ্গে” ধ্বনি তুলিয়া মিডিয়া জগতের TRPবৃদ্ধিতে মোক্ষ খুঁজিয়া পাইবেন। তাঁহারা RSS সম্পর্কে সম্যক অবগত না হইয়াই RSS-ভীতিতে অভ্যস্ত হইবেন ও বিরুদ্ধ মতাবলম্বীদিগকে RSS-এর দালাল কিংবা BJPর IT cell-এর কর্মী বলিয়া চিহ্নিত করিবেন। কলম যে স্বাধীন হইতে পারে, ইহা অনুধাবন করিবার ক্ষমতা তাঁহাদের থাকিবে না।

সুন্নিবৌদ্ধগণ নানারূপ হইবেন। কভু হস্তি, কভু চেতনা-মঞ্চ, কভু জামাতি হইবেন। সকল অবতারেই তাঁহারা নিজেদের মূলনিবাসী বলিয়া পরিচয় দান করিবেন। নিজেদের আম্বেদকরবাদী বলিলেও আম্বেদকরমহাশয় কতৃক বাতিলকৃত আর্য আক্রমাণের ম্যাক্সমুলারিয় তত্ত্ব ছাড়িতে পারিবেন না। রাজনৈতিক স্বার্থের খাতিরে তাঁহারা নব-আবিস্কৃত বৈজ্ঞানিক সত্যকে RSS-এর চক্রান্ত বলিয়া প্রচার করিতে দ্বিধা করিবেন না। তাঁহারা বৌদ্ধধম্মে আকৃষ্ট হইলেও দালাইলামাকে শত্রুজ্ঞান করিবেন। তাহাদের বৌদ্ধধম্মে দিক্ষিত হইবার প্রয়োজন হইবে না। তাহারা মোল্লামনরঞ্জনের নিমিত্ত মায়ানিমারমার্কা বৌদ্ধগণকে ঘৃণা করিবেন। হিন্দুউদ্বাস্তুগণের প্রতি সহমর্মিতা না থাকিলেও রোহিঙ্গাদিগকে ভারতে স্থান দিবার নিমিত্তে তাঁহারা ফেসবুকে তুফান তুলিবেন। তাঁহারা RSS-বিদ্বেষী হইলেও নিষিদ্ধ ইসলামিক সংগঠনের সহিত দহরমমহরম করিতে কুণ্ঠিত হইবেন না। তাঁহারা গুরুচাঁদ মহাশয়ের শিক্ষা আন্দোলন ও আম্বেদকর মহাশয়ের শিক্ষিত হইবার নির্দেশ লইয়া বৃহৎ-বৃহৎ ভাষণ দান করিলেও কার্যক্ষেত্রে হিরকরাজার অনুগামী হইবেন। হিরকরাজার “যে যত জানে, সে তত কাম মানে”–সযতনে তাহারা এই মন্ত্রের সাধণায় রত থাকিবেন। যাঁহারা পূর্বপাকিস্তান হইতে জেহাদিদ্বারা বিতাড়িত হইয়া ভারতের প্রবেশ করিবেন এবং অতীত-বিস্মৃত হইয়া ভারতীয় জেহাদিদিগের প্রধান সহযোগীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হইয়া স্বজাতিকে কলংকিত করিবেন তিনিই সুন্নি বৌদ্ধ। যাঁহারা ভারতকে বৌদ্ধদিগের সম্পত্তি বলিয়া ঘোষণা করিবেন ও হিন্দুদিগকে ভারত ছাড়িয়া নেপালে গমন করিতে আদেশ করিবেন তাঁহারাই সুন্নিবৌদ্ধ। প্রকৃতবৌদ্ধগণ হিন্দুগণের সহিত সুসম্পর্ক রাখিয়া চলিতে চাহিলেও সুন্নবৌদ্ধগণ সেই সম্পর্ককে তিক্ত করিবার প্রয়াসে সতত ব্যস্ত রহিবেন।

হে নরনাথ! সুন্নিবৌদ্ধগণ মুখপুস্তিকায় তর্কযুদ্ধে পরাস্ত হইয়া প্রতিপক্ষদিগকে ব্লক করিবেন। ব্লক করিয়া “গদাম দিলাম” বলিয়া আস্ফালন করিয়া  যারপরনাই উল্লাস প্রকাশ করিবেন।’

জন্মেজয় বলিলেন, ‘হে মুনিপুঙ্গব! এই প্রকার জীবেরা আপন সমাজের পক্ষে কলংক স্বরূপ। ইঁহারা নিজ কৃতকর্মের ফল স্বরূপ নিজ সমাজ কর্তৃক গদাম প্রদত্ত হইবেন বলিয়াই বিশ্বাস করি। আপনি অন্য প্রসঙ্গ আরম্ভ করুন।’

উপস্থিত চাড্ডি সকল বলিল, ‘সাধু সাধু।’
————————————————-
বি.দ্র:–সাহিত্য সম্রাট বঙ্কিমচন্দ্রের কাছে মার্জনার আবেদন রইল।