ষড়দর্শন বেদভিত্তিক ছয়টি ভারতীয় দর্শন। ভারতবর্ষে উদ্ভূত দর্শনসমূহকে প্রধানত দুটি ভাগে ভাগ করা হয় আস্তিক ও নাস্তিক। যে দর্শন বেদকে প্রামাণ্য গ্রন্থ হিসেবে স্বীকার করে তা আস্তিক। সাংখ্য, যোগ, ন্যায়, বৈশেষিক, মীমাংসা ও বেদান্ত এই ছয়টি আস্তিক দর্শন এবং এগুলিকেই একত্রে বলা হয় ষড়দর্শন।
পরিচিত। উলেখ্য যে, আস্তিক-নাস্তিকের ক্ষেত্রে ঈশ্বরে বিশ্বাস-অবিশ্বাস কোনো কারণ নয়, যেমন ষড়দর্শনের মধ্যে সাংখ্য ও মীমাংসা জগতের স্রষ্টারূপে ঈশ্বরের অস্তিত্বে বিশ্বাস করে না, অথচ উভয়ই বেদের প্রামাণ্য স্বীকার করে। বৈশেষিক দর্শনেও সরাসরি ঈশ্বরের কথা নেই।
ফলে দেখা যায় যে, একই উৎস থেকে জন্ম হলেও আস্তিক দর্শনগুলির মধ্যে কোনো কোনো বিষয়ে অমিল রয়েছে এবং জগৎ ও জীবন সম্পর্কে সেগুলি ভিন্ন ভিন্ন মতামত পোষণ করে।
নাস্তিক দর্শনগুলি ঈশ্বরে বিশ্বাস করে না; সেগুলি অনাত্মবাদী ও জড়বাদী। চার্বাকদের মতে প্রত্যক্ষই জ্ঞানলাভের একমাত্র উপায় এবং যেহেতু ঈশ্বর প্রত্যক্ষযোগ্য নন, সেহেতু তাঁর কোনো অস্তিত্ব নেই। বৌদ্ধদর্শনের আলোচ্য বিষয় মানবজীবন; মানুষের দুঃখমোচনই এ দর্শনের একমাত্র লক্ষ্য।
যার বিস্তৃতি ও কায় (দেহ) আছে তা অস্তিকায়, যথা জীব ও অজীব (জড়) এবং যার বিস্তৃতি ও কায় নেই তা নাস্তিকায়, যথা কাল (time)। বঙ্গদেশে উপরিউক্ত দর্শনসমূহের প্রত্যেকটিরই কম-বেশি চর্চা হয়েছে এবং এখনও গুরুপরম্পরা ও প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে হচ্ছে; তবে ন্যায়, বিশেষত নব্যন্যায়ের চর্চার জন্য এক সময় এদেশ সমগ্র ভারতে বিখ্যাত ছিল।
সাংখ্য দর্শনের প্রবর্তক কপিল মুনি। ভারতীয় দর্শনসূহের মধ্যে একে প্রাচীনতম মনে করা হয়। এ দর্শনের উদ্ভবকাল গৌতম বুদ্ধের পূর্বে খ্রি.পূ অষ্টম শতক বলে মোটামুটিভাবে স্বীকৃত। মহাভারত, পুরাণ, চরকসংহিতা, মনুসংহিতা, ভগবদ্গীতা ইত্যাদি গ্রন্থে এর বিশেষ উলেখ থেকে অনুমিত হয়, এক সময় ভারতীয় সমাজে এর যথেষ্ট প্রভাব ছিল। তবে কালক্রমে তা হ্রাস পায়।
সাংখ্য দর্শনের নামকরণ নিয়ে মতভেদ আছে। কারও মতে এ দর্শনে সংখ্যা (২৫) নির্দেশপূর্বক তত্ত্বগুলি বলা হয়েছে বলে এর নাম হয়েছে সাংখ্য। মতান্তরে সংখ্যা শব্দের অর্থ সম্যক জ্ঞান। প্রকৃতি-পুরুষের ভেদজ্ঞানই সম্যক জ্ঞান। এই জ্ঞান অর্জিত হলে জগৎ থেকে মুক্তিলাভ ঘটে এরূপ মতবাদ প্রচার করার জন্যই এর নাম হয়েছে সাংখ্য।
সাংখ্যের গ্রন্থাবলি ও আচার্য-পরম্পরা সম্পর্কে সামান্যই জানা যায়। কপিলের প্রথম শিষ্য আসুরি, তাঁর শিষ্য পঞ্চশিখ। তিনি সাংখ্যদর্শনকে বহু বিস্তৃত করেন। বর্তমানে এর সুলভ প্রামাণিক গ্রন্থ ঈশ্বরকৃষ্ণের (৪র্থ/৫ম খ্রি.) সাংখ্যকারিকা বা সাংখ্যসপ্ততি। এটি প্রাচীনকালেই চীনদেশে প্রচারিত হয়।
সাংখ্যমতে মূল তত্ত্ব দুটি চেতন পুরুষ ও জড় প্রকৃতি বা অব্যক্ত। প্রকৃতি (যার পরিণাম এই জগৎ) ত্রিগুণাত্মক (সত্ত্ব, রজঃ ও তমঃ)। প্রকৃতি ও পুরুষের সংযোগে ত্রিগুণের সাম্যাবস্থা বিনষ্ট হলে নির্দিষ্টক্রমে সৃষ্টি শুরু হয়।
প্রকৃতি থেকে উদ্ভূত হয় মহৎ বা বুদ্ধিতত্ত্ব, মহৎ থেকে অহঙ্কার, অহঙ্কার থেকে মন, পঞ্চ কর্মেন্দ্রিয় (বাক্, পাণি, পাদ, পায়ু, উপস্থ), পঞ্চ জ্ঞানেন্দ্রিয় (চক্ষু, কর্ণ, নাসিকা, জিহবা, ত্বক্) এবং পঞ্চ তন্মাত্র (রূপ, রস, গন্ধ, স্পর্শ, শব্দ)। অতি সূক্ষ্ম তন্মাত্র থেকে উদ্ভূত হয় পঞ্চ মহাভূত (ক্ষিতি, অপ্, তেজ, মরুৎ, ব্যোম)।
সাংখ্যমতে দুঃখ ত্রিবিধ আধ্যাত্মিক (শরীরগত রোগাদি), আধিভৌতিক (পশু, পাখি ইত্যাদি দ্বারা উৎপন্ন) এবং আধিদৈবিক (যক্ষ, রাক্ষস ইত্যাদি দ্বারা সৃষ্ট)। দুঃখ থেকে চিরতরে পরিত্রাণই মুক্তি। এই মুক্তির কারণ যে বিবেকজ্ঞান তা লাভ হয় একমাত্র শাস্ত্রপাঠের দ্বারা। অজ্ঞানবশত মানুষ আত্মা (পুরুষ) ও অনাত্মাকে (প্রকৃতি) অভিন্ন বলে মনে করে। আত্মা সুখদুঃখের অনাশ্রয়, চৈতন্যস্বরূপ, অপরিণামী, অকর্তা এবং নির্লিপ্ত।
যোগের আটটি অঙ্গ যম, নিয়ম, আসন, প্রাণায়াম, প্রত্যাহার, ধারণা, ধ্যান ও সমাধি। অহিংসা, ব্রহ্মচর্য ইত্যাদিকে বলা হয় যম। শৌচ, সন্তোষ ইত্যাদিকে বলা হয় নিয়ম। দেহকে স্থির ও সুখকর রাখার উপায় হচ্ছে আসন। শ্বাস-প্রশ্বাসের গতিরোধ করাকে বলা হয় প্রাণায়াম।
চক্ষু প্রভৃতি ইন্দ্রিয়কে জাগতিক সকল বস্ত্ত থেকে মুক্ত করে কেবল পরমাত্মায় লীনপ্রাপ্ত চিত্তের অভিমুখী করে তোলাই হলো প্রত্যাহার। কোনো কিছুর প্রতি চিত্তের স্থিরতা হচ্ছে ধারণা। ধ্যেয় বিষয়ে জ্ঞানকে নিরন্তর প্রবাহিত করাকে বলে ধ্যান, আর চিত্তের সকল বৃত্তির নিরোধকে বলা হয় সমাধি।
যোগের এই দার্শনিক দিকের চেয়ে বর্তমানে এর লৌকিক অর্থাৎ অষ্টাঙ্গের তৃতীয় অঙ্গ আসনের চর্চা গুরুত্ব পাচ্ছে। শরীরকে সুস্থ রাখার জন্য যোগব্যায়াম চর্চা ক্রমশ বিস্তার লাভ করছে। বিভিন্ন সংস্থা যোগব্যায়াম চর্চার সময় ও নিয়ম-নীতি ছবিসহ উল্লেখ করে একাধিক গ্রন্থ প্রকাশ করেছে।
বাংলাদেশেও ব্যক্তিগত উদ্যোগে কেউ কেউ যোগব্যায়াম চর্চা করেন। এভাবে যোগব্যায়ামকে এখন একটি কার্যকর চিকিৎসাপদ্ধতিতে পরিণত করার চেষ্টা চলছে।
ন্যায় দর্শনের প্রবর্তক মহর্ষি গৌতম। তাঁর ন্যায়সূত্রের (খ্রি.পূ ৩য় শতক) ওপর এ দর্শন প্রতিষ্ঠিত। জীবের মোক্ষলাভের হেতু তত্ত্বজ্ঞান অর্জনের তিনটি প্রক্রিয়া হলো শ্রবণ, মনন ও নিদিধ্যাসন; এর মধ্যে মননের সাধনই হলো ন্যায়দর্শন। আত্মতত্ত্ব শ্রবণের পর যুক্তির দ্বারা তার স্বরূপ আলোচনা করার প্রধান উপায় ন্যায়।
বৈশেষিক দর্শনের প্রবর্তক কণাদ বা উলূক। এর নামকরণ সম্পর্কে মতভেদ আছে। সর্বাধিক প্রচলিত মত হলো: এই দর্শনে ‘বিশেষ’ নামে একটি অতিরিক্ত পদার্থ স্বীকৃত, তাই এর নাম হয়েছে ‘বৈশেষিক’। আরেকটি মত হলো: ভারতীয় দর্শনসমূহের মধ্যে চীনদেশে সর্বপ্রথম প্রচারিত হয়েছিল সাংখ্য,
পরে বৈশেষিক এবং চীনাদের নিকট এই দর্শন সাংখ্য থেকে বিশিষ্ট ও উৎকৃষ্ট প্রতীয়মান হওয়ায় এর নাম হয় বৈশেষিক। নামকরণ সম্পর্কে এছাড়া আরও মতবাদ প্রচলিত আছে। বৈশেষিক দর্শনের উদ্ভবকাল খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতক বলে মনে করা হয়।
বৈশেষিক দর্শনকে এক সময় সকল শাস্ত্রের উপকারক মনে করা হতো (কাণাদং পাণিনীয়ং চ সর্বশাস্ত্রোপকারকম্)। এর আদিগ্রন্থ কণাদ রচিত বৈশেষিকসূত্র, তাই এর নামান্তর কাণাদ বা ঔলূক্য দর্শন। বৈশেষিকসূত্রের রচনাকাল গৌতমের ন্যায়সূত্রের কিছু পূর্বে।
বৈশেষিক দর্শনের মূল সূত্রগুলির সঠিক পাঠ, পৌর্বাপর্য, সংখ্যা এবং তাৎপর্য সম্পর্কে নিশ্চিত সিদ্ধান্ত গ্রহণ দুরূহ। বৈশেষিকসূত্রের ভাষ্যগ্রন্থসমূহের মধ্যে সবচেয়ে মান্যগ্রন্থ প্রশস্তপাদভাষ্য বা পদার্থধর্মসংগ্রহ (৬ষ্ঠ খ্রি.)।
বৈশেষিক দর্শনে সাতটি পদার্থ স্বীকৃত দ্রব্য, গুণ, কর্ম, সামান্য, বিশেষ, সমবায় ও অভাব। জগতের সব কিছুই এই সপ্ত পদার্থের অন্তর্ভুক্ত। সাধর্ম্য ও বৈধর্ম্যের জ্ঞানের মাধ্যমে পদার্থের তত্ত্বজ্ঞান হলে নিঃশ্রেয়স লাভ হয়। বৈশেষিকরা পরমাণুকারণবাদী বলে সমধিক প্রসিদ্ধ।
মীমাংসা দর্শন মহর্ষি জৈমিনি (খ্রি.পূ ৪র্থ শতকের পূর্বে/খ্রি.পূ ২য় শতক) প্রবর্তিত এবং তাঁর মীমাংসাসূত্র এ বিষয়ক প্রথম গ্রন্থ। এ দর্শন সম্পূর্ণই বেদনির্ভর এবং আকারে সর্ববৃহৎ। এটি ‘পূর্বমীমাংসা’ নামেও পরিচিত, কারণ এর বিষয়বস্ত্ত বেদের কর্মকান্ডভিত্তিক।
মীমাংসা দর্শন বস্ত্তবাদী ও বহুত্ববাদী। প্রত্যক্ষজ্ঞানে যার অস্তিত্ব অনুভূত হয়, মীমাংসামতে তা সত্য; তবে প্রত্যক্ষ বিষয় ব্যতীত আত্মা, দেবতা, স্বর্গ, নরক ইত্যাদিও সত্য; জগতের উপাদানসমূহ নিত্য এবং জগতের সৃষ্টি ও পরিচালনা কর্মদ্বারা নিয়ন্ত্রিত। বৌদ্ধধর্মএর শূন্যবাদ ও বেদান্তের মায়াবাদ এতে স্বীকৃত নয়। এতে জ্ঞানলাভের উপায় হিসেবে প্রত্যক্ষ, অনুমান, শব্দ, উপমান, অর্থাপত্তি ও অনুপলব্ধি এই ছয়টি প্রমাণ স্বীকৃত।
মীমাংসা দর্শনের প্রধান ভাষ্যকার শবর স্বামী (খ্রি.পূ ৫৭ অব্দ)। এছাড়া উল্লেখযোগ্য আরও কয়েকজন হলেন: কুমারিল ভট্ট (খ্রি. ৭ম শতক, বার্ত্তিক)), তাঁর শিষ্য মন্ডনমিশ্র (বিধিবিবেক ও মীমাংসানুক্রমণি) ও প্রভাকর (বৃহতী), পার্থসারথি মিশ্র (খ্রি. ৯ম শতক, শাস্ত্রদীপিকা, তন্ত্ররত্ন ও ন্যায়রত্নাকর), আপদেব (খ্রি. ১৭শ শতক, মীমাংসান্যায়প্রকাশ),
খন্ডদেব (খ্রি. ১৭শ শতক, ভাট্টদীপিকা ও মীমাংসাকৌস্ত্তভ) প্রমুখ।
বেদান্ত দর্শনও সম্পূর্ণ বেদনির্ভর। ‘বেদান্ত’ শব্দের আক্ষরিক অর্থ বেদের অন্ত বা শেষভাগ। কিন্তু প্রচলিত বিশ্বাসমতে অপৌরুষেয় নিত্য বেদের আদি-অন্ত নেই। তাই বেদান্ত বলতে প্রকৃতপক্ষে বেদের শ্রেষ্ঠভাগকেই বোঝায় এবং তা হলো ব্রহ্মতত্ত্ব। বেদে এই তত্ত্বসম্পর্কিত আলোচনাংশকে বলা হয় জ্ঞানকান্ড, যার পরিপূর্ণ বিকাশ ঘটেছে উপনিষদে।
সূত্র) ব্রহ্মতত্ত্ব প্রতিপাদিত হয়েছে বলে একে ব্রহ্মসূত্র বলে; আবার জীবের স্বরূপ বর্ণিত হওয়ায় একে শারীরকসূত্রও বলা হয়।
অণুভাষ্য, মাধ্বের পূর্ণপ্রজ্ঞাভাষ্য, নিম্বার্কের বেদান্তপারিজাতসৌরভ, ভাস্করের ব্রহ্মসূত্রভাষ্য এবং বলদেবের গোবিন্দভাষ্য। এই সাতটি ভাষ্যে যথাক্রমে অদ্বৈত, বিশিষ্টাদ্বৈত, শুদ্ধাদ্বৈত, দ্বৈত, দ্বৈতাদ্বৈত, ভেদাভেদ ও অচিন্ত্যভেদাভেদ এই সাত প্রকার মতবাদ প্রতিপাদিত হয়েছে।
অদ্বৈতমতে ব্রহ্মই একমাত্র সত্যবস্ত্ত; জাগতিক বস্ত্তর কোনো তাত্ত্বিক সত্তা নেই। সত্তা তিন প্রকার পারমার্থিক, ব্যবহারিক ও প্রাতিভাসিক। প্রাতিভাসিক বস্ত্ত ব্যবহারিক জ্ঞানের দ্বারা এবং ব্যবহারিক বস্ত্ত পারমার্থিক জ্ঞানের দ্বারা মিথ্যা প্রমাণিত হয়। ব্রহ্ম পারমার্থিক সত্য বস্ত্ত,
যাঁর কোনো স্থানকাল ভেদ নেই। নাম-রূপাত্মক জাগতিক বস্ত্ত মিথ্যা, যেহেতু সেগুলি দৃশ্য, বাধ্য এবং বিশেষ কালে ও বিশেষ স্থানে অবস্থান করে। মিথ্যা বস্ত্ত সৎ, অসৎ বা সদসৎ কোনোটিই নয়, তা অনির্বাচ্য, কেবল প্রতীতিকালেই থাকে; মিথ্যা বস্ত্ত কেবল নিজস্তরে সত্য, কিন্তু উচ্চতর সত্তায় মিথ্যা।
দৃশ্য জগৎ ব্রহ্মের বিবর্ত ও অজ্ঞানের পরিণাম। তাত্ত্বিক অবস্থান্তরকে ‘পরিণাম’ ও অতাত্ত্বিক অবস্থান্তরকে ‘বিবর্ত’ বলে। অজ্ঞানী জীব এক ব্রহ্মকে বহু বলে ভুল করে। বিষমসত্তাবিশিষ্ট বস্ত্তদ্বয়ের সমসত্তাবিশিষ্টরূপে প্রতীতিকে অধ্যাস বলে। অজ্ঞান অধ্যাসের পরিণামী উপাদান কারণ। শ্রবণ, মনন ও নিদিধ্যাসনের ফলে ব্রহ্মাকার অন্তঃকরণবৃত্তি উদিত হলে অজ্ঞান দূরীভূত হয়। এই অজ্ঞাননিবৃত্তিই হচ্ছে ‘মুক্তি’। মিথ্যা বস্ত্ত ব্রহ্ম থেকে উৎপন্ন হয়, ব্রহ্মে অবস্থান করে এবং ব্রহ্মেই বিলীন হয়।
বেদান্তমতে জ্ঞানই মুক্তির একমাত্র উপায় এবং এ ক্ষেত্রে কর্মের কোনো উপযোগিতা নেই। তবে চিত্তশুদ্ধির জন্য শাস্ত্রবিহিত নিত্যকর্ম, নৈমিত্তিককর্ম ও প্রায়শ্চিত্তকর্ম অনুষ্ঠান করতে হয়। শঙ্করের মতে প্রমাণ তিন প্রকার প্রত্যক্ষ, অনুমান ও শব্দ; পরবর্তীকালে উপমান, অর্থাপত্তি ও অনুপলব্ধি এই তিনটি যুক্ত হয়েছে। তবে শ্রুতিবাক্যই সর্বাপেক্ষা বড়
প্রমাণ। জ্ঞানের অন্য কোনো উৎস শ্রুতির অবিরোধী হলে তাও প্রমাণরূপে গণ্য হয়।
অদ্বৈতবেদান্ত সম্পর্কে নানা টীকা, ভাষ্য ও প্রকরণ গ্রন্থ রচিত হয়েছে। সেগুলির মধ্যে প্রকাশাত্মার পঞ্চপাদিকাবিবরণ, বাচস্পতির ভামতী, শ্রীহর্ষের খন্ডনখন্ডখাদ্য, চিৎসুখাচার্যের প্রত্যক্তত্ত্বপ্রদীপিকা, বিদ্যারণ্যের পঞ্চদশী এবং মধুসূদন সরস্বতীর অদ্বৈতসিদ্ধি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। [মৃণালকান্তি গঙ্গোপাধ্যায়; নির্মাল্যনারায়ণ চক্রবর্তী এবং অমরনাথ ভট্টাচার্য]
গ্রন্থপঞ্জি শ্রীতারকচন্দ্র রায়, ভারতীয় দর্শনের ইতিহাস, কলকাতা, ১৯৬০; প্রজ্ঞানানন্দ সরস্বতী, বেদান্তদর্শনের ইতিহাস (রাজেন্দ্রনাথ ঘোষ সম্পা.), কলকাতা, ১৯৬৭; শ্রী প্রমোদবন্ধু সেনগুপ্ত ও অন্যান্য, ভারতীয় দর্শন (চতুর্দশ সংস্করণ), কলকাতা, ১৯৯৬।