মোদী কীভাবে বিশ্বজুড়ে ভারতের মর্যাদা বাড়িয়েছিলেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির প্রথম ব্যক্তিগত বৈঠক হয়েছে। হোয়াইট হাউসের ওভাল অফিসে এই বৈঠকটি পূর্ব নির্ধারিত ছিল এবং এর জন্য এক ঘণ্টা সময় নির্ধারণ করা হয়েছিল। কিন্তু যখন দুই নেতার সাক্ষাৎ হয়, বৈঠকটি ৯০ মিনিটেরও বেশি সময় ধরে চলে।
১৩৫ কোটি ভারতীয়দের নেতা হিসেবে, হোয়াইট হাউসে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী মোদির বৈঠক বিশ্বব্যাপী বড় শক্তির দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। বাইডেন এবং মোদীর আলিঙ্গন করার অভিপ্রায় নিয়ে একে অপরের কাছে আসা ছবি এবং ভিডিও স্পষ্টভাবে মার্কিন নীতিনির্ধারকদের মধ্যে ভারতের ক্রমবর্ধমান উচ্চতা এবং মর্যাদার সাক্ষ্য দেয়। ওয়াশিংটনে অন্যান্য প্রাক্তন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর সফরের সময় পর্যন্ত এটি দেখা যায়নি।
মোদী সাথে এর আগে ২০১৪ এবং ২০১৬ সালে দুইবার বাইডেনের দেখা হয়েছে। বাইডেন সে সময় যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিলেন। দুই নেতার মধ্যে সম্পর্ক বরাবরই সৌহার্দ্যপূর্ণ। বারাক ওবামা যখন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ছিলেন, মোদি ৪ বার আমেরিকা গিয়েছিলেন। প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে মোদির খুব ভালো সম্পর্ক রয়েছে। মোদী নিজেই ২০১৯ সালে আমার শো ‘সালাম ইন্ডিয়া’ -তে উল্লেখ করেছিলেন যে কিভাবে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তাকে আমেরিকার ইতিহাসের বিখ্যাত মুহুর্তের এক ঝলক দেখানোর জন্য তাকে পুরো হোয়াইট হাউসে সম্মান জানান।
শুক্রবার, বিডেন ভারত-মার্কিন সম্পর্কের একটি নতুন অধ্যায় শুরু করেন এবং কোভিড মহামারী এবং আগ্রাসী বিশ্বশক্তি হিসেবে চীনের উত্থানের হুমকিসহ দুই দেশের মুখোমুখি কিছু কঠিন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করেন। সম্পর্ককে আরও উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন উভয় নেতা অন্য কোনো দেশের কথা উল্লেখ করা এড়িয়ে যান, কিন্তু তাদের মনোযোগ পরিষ্কার ছিল। বিডেন ভারতে পূর্বপুরুষদের সম্পর্কে একটি পুরনো গল্পের পুনরাবৃত্তি করে বলেন, তিনি শুনেছেন যে মুম্বাইয়ে ৫ জন বিডেন থাকতেন। তিনি বলেন, “কৌতুক বাদ দিয়ে কথা বলার জন্য, ভারত ও আমেরিকার সম্পর্ককে শক্তিশালী এবং ঘনিষ্ঠ হতে হবে।”
মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে মোদির দ্বিপাক্ষিক আলোচনা, এবং চতুর্ভুজের মধ্যে সবচেয়ে প্রাচীন নেতা হিসেবে তাঁর অংশগ্রহণ একটি বিষয়কে তুলে ধরে: যে ভারত উপমহাদেশের ভূরাজনীতিতে আধিপত্য বিস্তার করে এবং যুক্তরাষ্ট্র ভারতের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে উচ্চ পর্যায়ে নিয়ে যায়। ।
পাকিস্তান, যা আফগানিস্তানে তালেবান দখল করার পর বিশ্বের কাছে তার প্রভাব ছড়িয়েছিল, এখন একটি কঠিন বাছাইয়ের মুখোমুখি: এটি কোন দিকে যাবে – আমেরিকা বা চীন? আফগানিস্তানে দুই দশক ধরে মার্কিন সামরিক বাহিনীর ‘মিত্র’ হিসেবে সাহায্য করার পর, সত্য এখন সামনে এসেছে। পাকিস্তান পুরো তালেবান নেতৃত্বকে আশ্রয় দিয়েছিল, তালিবান যোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ দিয়েছিল এবং মার্কিন বাহিনী প্রত্যাহারের পর আফগানিস্তানে ক্ষমতা গ্রহণের সময় তালেবানকে সমর্থন ও প্রচার করেছিল।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এখন স্বীকৃতি দিয়েছে যে, বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল গণতন্ত্র হিসাবে ভারত একটি গণনাযোগ্য শক্তি। ভারতকে বিশ্ব ভূ -রাজনীতির কেন্দ্রে আনার কৃতিত্ব প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর তাঁর গত ৭ বছরের শাসনামলে অক্লান্ত প্রচেষ্টায় যায়।
আমেরিকা বুঝতে পেরেছে যে ভারতের জ্ঞানশক্তির বিশাল ভাণ্ডার রয়েছে, যা আমেরিকান শিল্পের প্রয়োজন। ভারত বিশ্বের সবচেয়ে বড় ভ্যাকসিন প্রস্তুতকারী এবং ভারতীয় কোম্পানিগুলি তাদের উপস্থিতি বিশ্বজুড়ে অনুভব করছে। ভারতকে আর উপেক্ষা করা কঠিন। উপরন্তু, ভারতের এক বিলিয়নেরও বেশি ভোক্তা রয়েছে, যা আমেরিকান বিনিয়োগের সুযোগ করে দিয়েছে।
আমার মনে আছে যে মোদি যখন প্রধানমন্ত্রী ছিলেন না, তখন তার পররাষ্ট্রনীতি ক্ষমতা সম্পর্কে বেশিরভাগ প্রশ্নই উঠেছিল। কেউ বলেছিল কিভাবে একজন ‘চাওয়ালা’ অন্য দেশের রাষ্ট্রপ্রধানদের সঙ্গে কথা বলবে, কেউ বলেছিল যে তিনি যদি গুজরাট ছাড়া অন্য কিছু না জানেন তাহলে তিনি কিভাবে পররাষ্ট্রনীতি পরিচালনা করবেন। কেউ কেউ প্রশ্ন করেছিলেন ওবামা তাকে যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার জন্য ভিসা দেবে কিনা। গত ৭ বছরে, মোদী এই সমস্ত বিরোধীদের পূর্ণ আস্থার সাথে উপযুক্ত জবাব দিয়েছেন।
টানা তিন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা, ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং জো বাইডেনহোয়াইট হাউসে মোদীকে যেভাবে স্বাগত জানানো হয়েছিল, প্রত্যেক ভারতীয়ের মাথা গর্বের সাথে উঁচুতে ছিল। মোদী তার ব্যবহারিক রাজনীতি এবং ব্যক্তিগত রসায়ন দিয়ে বিশ্ব নেতাদের স্তম্ভিত করেছেন। এটা দেখে ভাল লাগছে যে বিদেশে বসবাসরত ভারতীয়রা মোদির এত প্রশংসা করেন কারণ তিনি ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর মর্যাদা উঁচু করে রেখেছেন।
মোদির ঘন ঘন বিদেশ সফর সেই দেশের মানুষের চোখে বিদেশে বসবাসরত ভারতীয়দের সম্মান এনে দিয়েছে। মোদী আজ বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় রাজনীতিবিদ। তিনি বারবার বলছেন যে তিনি এই মর্যাদা পেয়েছেন কারণ ভারতের 135 কোটি মানুষ তার পিছনে রয়েছে।
পশ্চিমা বিশ্বে আগের চেয়ে অনেক বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে ভারত। ভারতের কর্তাব্যক্তিরাও এখন বিশ্বব্যাপী পরাশক্তি হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার বিষয়ে সম্পূর্ণ আশাবাদি হয়ে উঠেছেন। দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম ও সবচেয়ে প্রভাবশালী দেশ ভারত।
বৈশ্বিক পর্যায়ে নিজেকে এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে দেখতে পাচ্ছে নয়াদিল্লি। চীনকে মোকাবেলার তাগিদে নয়াদিল্লিকে কাছে টেনে নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। জাপান ও ইউরোপের বিভিন্ন পরাশক্তির সঙ্গেও এখন অনেক বেশি ঘনিষ্ঠতা ভারতের। কভিডের বর্তমান প্রবাহ শুরুর আগেও আঞ্চলিক নিরাপত্তাসহ বিভিন্ন ইস্যুতে দেশগুলোর মধ্যে অনেক বেশি সখ্যতা দেখা দিয়েছে।
সীমান্ত সেনা হত্যায় প্রাথমিকভাবে চীনকে বিজয়ী মনে করা হলেও। চীনের এ সাময়িক বিজয়ের আড়ালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী বিশ্ব রাজনীতিনে নতুন এক পরশক্তি হিসেবে আবির্ভুত হচ্ছেন বলে মনে করছেন বিশ্লেষক। বিশ্বের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ মানুষের বসবাস করা দেশ দুটি বিশ্ব রাজনীতিতে নিজেদের অবস্থান তুলে ধরতে প্রতিযোগিতা করছে।
চীন গত ৫০ বছরের ইতিহাসে সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং সময় অতিক্রম করছে। কেননা, ইতোমধ্যে করোনা ছড়ানোর অভিযোগে দেশটির বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, ফ্রান্সসহ বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশ অবস্থান নিয়েছে। অন্যদিকে হংকংয়ে নতুন করে বিক্ষোভ ছড়াচ্ছে। চীনের মোবাইল কোম্পানি হাওয়াইয়ের ওপর নিষেধাজ্ঞার ফলে চীনা টেক কোম্পানিগুলো চাপে আছে। সে সুযোগে বাজার দখলে নিচ্ছে কোরিয়া-জাপানের কোম্পানিগুলো যার কারনে ভারত তার বাজার নতুন করে বিশ্বের কাছে তুলে ধরতে সক্ষম হয়েছে।
এতো সব সীমাবদ্ধতার মধ্যেও ভারত তার সীমান্ত সংকটকে বিশ্ব দরবারে একটি বিশাল ইস্যু হিসেবে দাঁড় করাতে সক্ষম হয়েছেন। ফলে বর্তমান উত্তেজনার মধ্যে চীনের বিপক্ষে লড়ার জন্যে বেশ কিছু শক্ত প্রতিপক্ষ নিয়ে মাঠে নেমেছেন মোদী। ভিয়েতনাম ও কম্বোডিয়াকে নিজেদের বলয়ে টানছে ভারত। যুক্তরাষ্ট্র ও দক্ষিণ কোরিয়ে থেকে বড় অস্ত্রের চালান এনেছে ভারত। ফলে তাদের সাথেও সুসম্পর্ক রয়েছে ভারতের। অন্যদিকে জাপান ও অস্টেলিয়া চীনের মোকাবেলায় এ অঞ্চলের একটি শক্তিশালী মিত্রের সন্ধান করছে অনেকদিন যাবত। যুক্তরাষ্ট্রও এ সুযোগে ভারতকে নিয়ে মাঠে নেয়ে পড়েছে।
সবদিক বিবেচনায় মোদী ভারতের জন্য জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য পদ পেতে মুখিয়ে রয়েছে। ফলে এ স্বপ্ন বাস্তবায়নে চীন বাদে অন্যান পরাশক্তি দেশ ভারতের শক্তি হিসেবে কাজ করবে। ফলে সব মিলিয়ে চীনের পক্ষ থেকে যে কোন পদক্ষেপ ভারতে দীর্ষ সময়ের জন্যে বিশ্ব রাজনীতিতে সামনে নিয়ে আসবে বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা। আর সে স্থানে নয়ক থাকবে মোদিই।
আর পড়ুন….
- কন্যাদান : হিন্দুমিসিক হিজাবি বলিউড-কর্পোরেটদের দ্বারা কন্যাদানের বিরুদ্ধে অপপ্রচার প্রচার।
- আর্য আক্রমণ তত্ত্ব মিথ্যা এবং আর্য সভ্যতার প্রমাণ সিন্ধু সভ্যতা।-দুর্মর
- আজ ভারতীয় হিন্দু সমাজ প্রায় নিশ্চিন্ন মাত্র একটি শব্দের প্রভাবে ।-ডাঃ মৃনাল কান্তি
- ২৬/১১-র মুম্বই হামলার ধাঁচেই নাশকতার ছক: দিল্লি, মুম্বাই, ইউপি তে সিরিয়াল বিস্ফোরণের ঘৃণ্য চক্রান্ত ব্যর্থ করল প্রশাসন!
- আশ্রয় দেওয়া দেশগুলোতে জিহাদ একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে ওঠছে।