তিতুমীর

গাজওয়াতুল হিন্দ: একজন ভারতীয় মুসলমানকে তার ধর্ম নিজ দেশের বিরোধী হতে অনুপ্রাণিত করছে!

গাজওয়াতুল হিন্দ একজন ভারতীয় মুসলমানকে তার ধর্ম নিজ দেশের বিরোধী হতে অনুপ্রাণিত করছে! সহি হাদিসে আছে, মুসলমানরা ভারত দখল করে হিন্দু রাজাদের শেকলে বন্দি করে সিরিয়ার দিকে যাবে… (সুনানে নাসায়ী, খণ্ড ৬)। এই যুদ্ধের নাম দিয়েছে ‘গাজওয়াতুল’ হিন্দ’। এই মুহূর্তে যত জিহাদী অনলাইন সাইট রয়েছে সেখানে ভারতে জিহাদ কায়েমের নবী মুহাম্মদের নির্দেশকে মনে করিযে দেয়ার জন্য মুসলিমদের তাগিদ দেয়া হচ্ছে।

গাজওয়াতুল হিন্দ: হলো ইসলামের সর্বশেষ নবি হযরত মুহাম্মদ (সা) এর একটি ভবিষ্যদ্বাণী। যেখানে উল্লেখ আছে, মুসলিম এবং অমুসলিমদের মধ্যে ভারতীয় উপমহাদেশ এ একটি যুদ্ধ হবে, যাতে মুসলমানদের বিজয় ঘটবে।

 

ভারতের দেওবন্ধ মাদ্রাসা থেকে প্রতি বছর শত শত মুসলমান তাদের হাদিসের পাঠ্যসূচী থেকে এই শিক্ষা লাভ করে যে, একদিন মুসলমানরা ভারতের ক্ষমতা কেড়ে নিবে এবং হিন্দুদের শেকল দিয়ে বন্দি করবে…। এই হাদিস একজন ভারতীয় মুসলিমকে কি নিজ দেশবাসীকে শত্রুজ্ঞান করতে শেখাবে না?

এইসব হাদিস বানানো হয়েছিলো খিলাফত চলাকালীন সময় ভারতে হামলা চালানোর উদ্দেশ্যে। আব্বাসীয় কিংবা উমাইয়া খিলাফতকালীন হাজার হাজার হাদিস বানানো হয়েছিলো যা সহি তকমা পেয়ে যায়।

কিন্তু একজন ধর্মভীরু মুসলমাননের কাছে ‘সহি হাদিসের’ উপর বিশ্বাস স্থাপন করা ঈমানের অংশ। একজন ধার্মীক এতথানি সাইকো হতে পারে যে, ঈশ্বর নির্দেশ দিলে কাউকে হত্যা করতে সে দ্বিধা করবে না। বাইবেল খ্রিস্টানদের ইহুদীদেরকে ঘৃণা করতে বলে- একজন খ্রিস্টান ধার্মীক হলে সেটাই করবে।

 

মুসলিমরা ইহুদীদের ঘৃণা করে কারণ কুরআন তেমন শিক্ষাই দেয়। সহি হাদিস যদি বলে ‘গাজওয়াতুল হিন্দের যুদ্ধ’ হবে আর সে যুদ্ধের অবশ্যই মুসলমানদের অংশ নিতে হবে- তখন বিপদটা কতখানি বুঝতে পারছেন? একজন ভারতীয় মুসলমানকে তার ধর্ম নিজ দেশের বিরোধী হতে অনুপ্রাণিত করছে!

যদি মনে করেন এরকম মুসলিমদের সংখ্যা অতি কম, বেশির ভাগই দেশপ্রেমিক,  তবু সেই অতি কম সংখ্যাক মুসলিমকে ভারত বিরোধী করে তুলতে যদি কোন ধর্ম ভূমিকা রাখে সেটি তো চিন্তার বিষয়…।

মনে করেন, এই যে আইএস ভারতে তাদের খিলাফত প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দিয়েছে। তারা ‘গাজওয়াতুল হিন্দের’ হাদিস উদ্বৃতি করে বলেছে, রসূলের নির্দেশ উপেক্ষা করলে পরকালে তার জবাব দিতে হবে।

 

সুনানে নাসায়ীর সেই হাদিসে বলা আছে, ‘আবু হুরায়রা (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের থেকে হিন্দুস্থানের সঙ্গে যুদ্ধ করার প্রতিশ্রুতি নিয়েছেন। কাজেই আমি যদি সেই যুদ্ধের নাগাল পেয়ে যাই, তাহলে আমি তাতে আমার জীবন ও সমস্ত সম্পদ ব্যয় করে ফেলব।

গাজওয়াত-উল-হিন্দু প্রধান
গাজওয়াত-উল-হিন্দু প্রধান

যদি নিহত হই, তাহলে আমি শ্রেষ্ঠ শহীদদের অন্তর্ভুক্ত হব। আর যদি ফিরে আসি, তাহলে আমি জাহান্নাম থেকে মুক্তিপ্রাপ্ত আবু হুরায়রা হয়ে যাব (সুনানে নাসায়ী, খণ্ড ৬, পৃষ্ঠা ৪২)।

ইসলামের অন্যতম দলিল হচ্ছে হাদিস। এই হাদিসে এত পরস্পর বিরোধী বক্তব্য আছে যে একেকজন একেক হাদিস ধরে সহি ইসলামের চর্চা করতে গিয়ে পরস্পরকে বিদাতী শিরকী জাহান্নামী বলে অবিহত করে। জাল ও সহি নির্ণেয় করার কৌশলও অতি হাস্যকর।

 

সব মিলিয়ে মুসলিমদের ধর্মকর্ম হাদিস নামের গাজাখুরি এক কথামালার সংকলন নির্ভর। অবশ্য এই হাদিসকে বাদ দিলে মুসলিমরা নামাজ রোজাসহ প্রত্যহ ধর্মীয় কতব্য পালনই করতে পারবে না। কুরআনে নানা রকম রূপকথার গল্পা বলা ছাড়া বিশদ কোন বিবরণ নেই। বিপদটা এখানেই। ইসলামে ধর্ম ও সম্প্রদায়ের নাম ধরে ধরে আক্রমণ, হিংসা, ঘৃণা করতে নির্দেশ করা হয়েছে।

কয়েক লক্ষ মাদ্রাসায় উচ্চতর ক্লাসে ‘গাজওয়াতুল হিন্দের’ চ্যাপ্টার পড়ানো হচ্ছে। এই ক্লাশ পাস করেই ছাত্ররা পরবর্তীকালে ওয়াজ মাহফিল, ইসলামিক জলসার বক্তা হয়। বাংলাদেশের ওয়াজের শত শত ভিডিও ইউটিউবে পাওয়া যায় যেখানে ভারতে হিন্দুদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে মুসলমানদের রেডি হতে বলা হচ্ছে।

মিথ্যে কিছু তারা বানিয়ে বলছে না। তারা ইসলামের দলিল হিসেবে স্বীকৃত সহি হাদিস থেকেই মসুলমানদের নির্দেশ দিচ্ছেন। তারপরও ব্যক্তিকে দোষ দিয়ে ধর্মকে আড়াল করাটা হবে আগুনকে ছাইচাপা দিয়ে রাখার মত অভিসন্ধি।

 

মোল্লাদের মনগড়া কথা, ধর্মের অপব্যাখ্যা ইত্যাদি বলে ইসলামের পরিস্কার নির্দেশনাবলীকে আড়াল করা যায় না। আমরা যদি মাদ্রাসা শিক্ষা বাতিল না করে, হাদিস প্রকাশনা ও চর্চাকে অর্থনৈতিকভাবে পঙ্গু না করি তাহলে মুসলিমরা নিজ দেশে পরবাসী হয়ে থাকবে।

কারণ পাকিস্তান বাংলাদেশের মত সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশের মুসলিমদের হিন্দুরা অবিশ্বাস সন্দেহ করবে কারণ এই ইন্টারনেটের যুগে তারা এসব হাদিস কষ্ট করা ছাড়াই পড়তে পারছে। ইসলামিক শিক্ষাকে অর্থনৈতিকভাবে পঙ্গু করা ছাড়া কোন পথ নেই। রাষ্ট্রীয়ভাবে ধর্মীয় শিক্ষায় অর্থ প্রদান বন্ধ করে দিতে হবে।

গাজওয়াতুল হিন্দ
গাজওয়াতুল হিন্দ

সরকারীভাবে মসজিদের ইমামদের বেতন-ভাতা বাতিল করে দিতে হবে। বিদেশ থেকে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের জন্য অর্থ দান নিষিদ্ধ করতে হবে। মানুষের পেটে ভাত না থাকলে ধর্মের কথা মিঠা লাগবে না। যদি না খেয়ে মরতে হয় তবে কেউ মসজিদের মোল্লা, মন্দিরের পুরোহিত হতে চাইবে না।

 

ওয়াজ, জলসা এগুলো আয়োজনের উপর কড়াকড়ি আরোপ করলে এই পেশায় লোক আসতে চাইবে না। ফলত সাধারণ মুসলিমরা হাদিস ও কুরআনের কুশিক্ষা থেকে দূরে থাকবে। কারণ সাধারণ মুসলিমরা হাদিসের মোটা মোটা বই খুঁজে হাদিস বের করে পড়বে না। তাছাড়া প্রকাশনার উপর কঠরতা আরোপ করলে সেসব বইও বেশ দুষ্কর হয়ে উঠবে।

কথাগুলো যদিও খুব সহজে বলে ফেললাম কিন্তু এগুলো বাস্তবায়ন অনেক কঠিন। আছে ভোটের হিসাব। রাজনীতিবিদরা গদির জন্য পৃথিবীকে পারমানবিক বোমার মুখোমুখি এনে ফেলবে তবু গদির দাবী ছাড়বে না।

বাংলাদেশে গদির লোভে সরকারীভাবে মসজিদ মাদ্রাসা তৈরির মচ্ছব লাগিয়ে দিচ্ছে সরকার। দেশের তরুণ প্রজন্মকে জঙ্গি মানসিকতায় তৈরি হতে ইসলামিক ভাবধারার প্রতি পক্ষপাতিত্ব তাদের ‘জঙ্গিবাদের প্রতি জিরো টলারেন্সকে’ প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলছে।

 

তবে কে কি করছে, কতখানি করা সম্ভব- সেই বিতর্ক রেখে এটুকু বলতে পারি, সমাধান এটাই। আপনারা সেটা করতে পারবেন কিনা সেটা আপনাদের ব্যাপার…।

লেখক- এম এ খান,যুক্তরাজ্য।

আরো পড়ুন….