কৃষ্ণ

কৃষ্ণ সম্পর্কে নিকৃষ্ট মানুষ গুলোর চিন্তা হলো–কৃষ্ণ লোকটা মহা নচ্ছার!

কৃষ্ণ সম্পর্কে নিকৃষ্ট মানুষ গুলোর চিন্তা হলো–কৃষ্ণ লোকটা মহা নচ্ছার! হিন্দুদের কোনও ধর্মগ্রন্থ নেই। কিছু ধর্ম সাহিত্য রয়েছে। সময়ে সময়ে সেগুলো থেকে উপসাহিত্যের সৃষ্টি করেছেন যে যার মতো। “কৃষ্ণ” সম্পর্কে মুসলমানের চিন্তা হলো–কৃষ্ণ লোকটা মহা নচ্ছার! হবে নাই বা কেন স্যার? লোকটার এলেম দেখেছেন?

সব রাজাদের পরপর হারানোর ক্ষমতা রেখেও পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মহাপুরুষ নবী মুহাম্মদের মতো  কোথাও কোন ধনরত্ন লুঠ করেননি, মন্দির জ্বালাননি, বিধর্মী নারীদের লুঠ করেননি এবং গনিমতের মাল বলে সাহাবিদের নিয়ে “বিসমিল্লাহ” বলে ধর্ষণ করেননি। এসব না করলে তাকে আর যায় হোক ভালো নবী বলা যায় না।

নিদেনপক্ষে “অতঃপর নিষিদ্ধ মাস অতিক্রান্ত হলে কাফেরদের যেখানে পাও সেখানে কল্লা নামাও…!” কিংবা “কাফেরদের কাটো জোড়ায় জোড়ায়!” সুলভ কোন একটা ফতোয়া? তাও বললেন না! উল্টে মালাউন কাফেরদের মতো কী বললেন?

ন জায়তে ম্রিয়তে বা কদাচি-
ন্নায়ং ভূত্বা ভবিতা বা ন ভূয়ঃ৷
অজো নিত্যঃ শাশ্বতোহয়ং পুরাণো
ন হন্যতে হন্যমানে শরীরে৷৷
(গীতা অধ্যায় -২, সাংখ্য যোগ, শ্লোক-২০)

অর্থ: আত্মার কখনো জন্ম হয় না বা মৃত্যু হয় না। অথবা পুনঃ পুনঃ তার উৎপত্তি বা বৃদ্ধি হয় না, তিনি জন্ম রহিত শাশ্বত, নিত্য এবং নবীন। শরীর নষ্ট হলেও আত্মা কখনো বিনষ্ট হয় না।

বাসাংসি জীর্ণানি যথা বিহায়
নবানি গৃহণাতি নরোহপরাণি৷
তথা শরীরাণি বিহায় জীর্ণা-
ন্যন্যানি সংযাতি নবানি দেহী৷৷
(গীতা-অধ্যায়-২, সাংখ্য যোগ, শ্লোক-২২)

অর্থ: মানুষ যেমন জীর্ণ বস্ত্র পরিত্যাগ করে নতুন বস্ত্র পরিধান করে আত্মাও তেমনই জীর্ণ শরীর ত্যাগ করে নতুন দেহ ধারণ করে।

তো এই সব বলা একটা মালাউন লোককে আর যাই হোক নবী মুহম্মদের উপরে শ্রেষ্ঠত্বের মর্যাদা দেওয়া যায় না কারণ আপনি জানেন, এবং মানেন আত্মা নয়, স্বয়ং আল্লা বলেছেন, নবী মুহম্মদ শ্রেষ্ঠ মানব, সবার জন্য রোল মডেল। 🙂

এই কৃষ্ণ নামের মালাউন লোকটা নিজের সময়ে দাঁড়িয়ে সনাতন ধর্মের লৌকিক ভ্রান্ত আচারকে একের পর এক চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছেন। দ্রৌপদীর পাঁচ স্বামী হওয়া নিয়ে যখন বিতর্ক তৈরি হয়েছে তখন এই ভদ্রলোক বুক ঠুঁকে দ্রৌপদীর পক্ষ নিয়েছেন। নারী স্বাধীনতার চুড়ান্ত পক্ষ নিয়েছেন। বস্ত্রহরণের সময়ও তাই। অথচ দেখুন নবী মুহম্মদ স্পষ্ট বলে গেছেন, “নারী হলো পুরুষদের জন্য শশ্যক্ষেত্র মাত্র।”

যেখানে আজ পর্যন্ত মুসলমান দাদাদের একটি কাজ হয়, বোনের প্রেমে কাঠি করা কিংবা বোনের প্রেমিককে ক্যালানো, সেখানেও এই ভদ্রলোকটি উল্টো সুরে গান গেয়েছেন! নিজের বোনের প্রেমের সমর্থনে দাঁড়িয়েছেন। বোনের প্রেমিকের পাশে থেকেছেন। যাদব বংশে জন্মে ব্রাহ্মণদের কাছ থেকে পূজা নিয়ে জাতিভেদকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়েছেন।

জরাসন্ধের প্রতি মুসলমানদের ভালোবাসার কারণটা ঐতিহাসিক। হিন্দুধর্মে বর্ণিত অসুরদের সঙ্গেই কেবলমাত্র বাস্তবের আরবীয় সংস্কৃতির মুসলমানদের মিল পাওয়া যায়। সেই একই রকম নবী মুহাম্মদের স্টাইলে লুঠ, হত্যা, মেয়েদের উপর অত্যাচার, প্রজাদের বিধর্মী হিসাবে বন্দীরাখা এবং ফাইনালি অতঃপর নিষিদ্ধ মাস অতিক্রান্ত হলে “আল্লা আকবর” বলে কল্লা ফাঁক করে দেওয়া!

কৃষ্ণ হিন্দুদের দেবতা নন। কোন মাটির পুতুলও নন। কৃষ্ণ যুগ যুগ ধরে চলে আসা সনাতন ভারতীয় সংস্কৃতির  Chivalry and Gallantry এর আদর্শ। যে আদর্শ মেয়েদের সম্ভ্রম নষ্ট হতে দেখলে প্রতিটি ভারতীয়ের ভেতর আপনা হতে জেগে উঠে, রুখে দাঁড়ায়। কৃষ্ণ আসলে প্রতিটি ভারতীয়ের মধ্যে জেগে থাকা অখন্ড ভারতের সেই সত্ত্বা যেটাকে মামুদ থেকে চেঙ্গিজ খান, জিন্না থেকে নওয়াজ শরিফ বারবার ভাঙ্গতে চেয়েও ব্যর্থ হয়েছে।

উনি নিজেই বলে গেছেন যখনই ভারতে অর্ধম বাড়বে “কৃষ্ণের সত্তা” ঠিক কোনও না কোনও ভারতবাসীর মধ্যে জন্ম নিয়ে তাকে দিয়ে কুরুক্ষেত্র করিয়ে নেবেন।। কখনও তিনি স্বামীজী রূপে আসবেন, কখনও নেতাজী। কখনও চন্দ্র শেখর আজাদ, কখনও এ পি জে আবদুল কালামের মধ্যে জাগ্রত হবেন। তবে তিনি তাঁরা কথা মত আসবেন ঠিক।।

সুতরাং “তিনি রাষ্ট্র, তিনিই মহাভারত।”

যদা যদা হি ধর্মস্য গ্লানির্ভবতি ভারত৷
অভ্যুত্থানমধর্মস্য তদাত্মানং সৃজাম্যহম্৷৷৭
পরিত্রাণায় সাধুনাং বিনাশায় চ দুষ্কৃতাম্৷
ধর্মসংস্থাপনার্থায় সম্ভাবামি যুগে যুগে৷৷৮

(গীতা অধ্যায়-৪, জ্ঞানযোগ, শ্লোক-৭, ৮)

পুনশ্চঃ মাই ডিয়ার বাসুদেব কৃষ্ণ যাদব, আপনার মতো বিপ্লবীর জন্মদিনে সাদামাটা জন্মদিনের শুভেচ্ছা একদম ভালো লাগছিল না। একটু বিতর্ক, যুক্তি, না হলে আপনার জন্মদিন মানায়? বিলেটেড শুভ জন্মাষ্টমীর শুভেচ্ছা!  🙂

রেজাউল মানিক এর কৃতজ্ঞতাঃ শেখর ভারতীয়ের প্রতি।

আর পড়ুন….