অবিভক্ত বাংলার এক অভিশপ্ত নাম ……শ্রী যোগেন্দ্রনাথ মণ্ডল…….।। (পর্বঃ ১ ….. )

অবিভক্ত বাংলার এক অভিশপ্ত নাম ……শ্রী যোগেন্দ্রনাথ মণ্ডল…….।।
(পর্বঃ ১ ….. )

[বিষয়- বিরাট একটি চিঠিঃ যা আধুনিক প্রজন্মের প্রায় কেউই জানেন না। – কিন্তু এই না জানাটা অতীব ভয়ংকর, বিশেষ করে যারা দলিত-মুসলিম ঐক্যের কথা বলে সাধারন মানুষকে বিভ্রান্ত করে চলেছেন।]

যোগেন্দ্রনাথ মণ্ডলের পদত্যাগ পত্রটি পড়ে কি এর থেকে কোন শিক্ষা নেবে নমঃশুদ্র ও এদেশের অমুসলমান সংখ্যালঘু প্রতিনিধিরা?

যোগেন মণ্ডল ও তাঁর রাজনৈতিক ইতিবৃত্তঃ

যোগেন মণ্ডল বরিশালের মৈস্তারকান্দি গ্রামে নমঃ শূদ্র পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএ ও বিএল ডিগ্রি নিয়ে আইন পেশায় আত্মনিয়োগ করেন। ১৯৩৬ সালে তিনি বরিশাল সদর লোকাল বোর্ডেও সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৩৭ সালে সাধারণ নির্বাচনে নির্দলীয় প্রার্থী হিসেবে বাখরগঞ্জ উত্তর-পূর্ব আসন থেকে অশ্বিনী দত্তের ভাইপো সরল দত্তকে হারিয়ে এমএলএ নির্বাচিত হন।

সরল দত্ত জমিদার এবং উচ্চবর্ণেও মানুষ ছিলেন। তিনি কংগ্রেসের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে জিতেছেন। নির্দলীয় প্রার্থী হওয়ায় নমঃশূদ্র এবং মুসলমানদের ভোটও পেয়েছেন। কিন্তু নমঃশূদ্রের প্রার্থী ছিলেন না। তিনি যতখানি এই নির্বাচনে শূদ্রনেতার চেয়ে জননেতার ইমেজটাই মুখ্য হতে পারে। কিন্তু তাঁর এই অভূতপূর্ব সাফল্যকে ম্লান করা হয় শূদ্রনেতা হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেওয়ায়। ১৯৪০ সালে তিনি সুভাষচন্দ্র বসু ও শরৎ বসুর সহযোগিতায় কলকাতা সিটি করপোরেশনের ৩নং বটতলা ওয়ার্ড থেকে কমিশনার নির্বাচিত হন। ১৯৪৬ সালের নির্বাচনে তিনি তফশিলি ফেডারেশনের প্রার্থী হিসেবে পিরোজপুর-পটুয়াখালী কেন্দ্র থেকে নির্বাচিত হয়ে সোহরাওয়ার্দির মন্ত্রিসভায় বিচার, পূর্ত ও গৃহনির্মাণ মন্ত্রী হন। ৪৭-এর দেশভাগে তাঁর সায় ছিল না। তিনি দেশভাগের বিপক্ষে জনমত গড়ে তোলার চেষ্টা করেন। তবে দেশভাগের পাশাপাশি স্বাধীন সার্বভৌম বাংলা গঠনের যে উদ্যোগ নিয়েছিলেন সোহরাওয়ার্দি, আবুল হাশিম, শরৎ বসু প্রমুখ নেতা, সে উদ্যোগের সঙ্গেও ছিলেন যোগেন মণ্ডল। অন্যরা জাতীয় নেতার স্বীকৃতি পেলেও যোগেন মণ্ডল হয়ে পড়লেন সমালোচিত ও বিতর্কিত। তিনি তখন করাচি চলে যান। ১৯৪৭ সালের ১১ আগস্ট তিনি পাকিস্তান গণপরিষদের অস্থায়ী স্পিকার নির্বাচিত হন। ১৫ আগস্ট দেশভাগ গলে তিনি পাকিস্তানের প্রথম আইন ও শ্রমমন্ত্রী নিযুক্ত হন। ১৯৫০ সালে তৎকালীন পূর্বপাকিস্তানের ঢাকা-বরিশাল-খুলনা অঞ্চলে ভয়াবহ দাঙ্গায় সংখ্যালঘুদের পক্ষে সরকারের নীরবতার প্রতিবাদে তিনি মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করেন। এর পরের অবস্থা অত্যন্ত করুণ। এর পরে তিনি কলকাতা চলে যেতে বাধ্য হন। সেখানে তিনি রাজনীতিতে যুক্ত থাকলেও কোনো নির্বাচনেই বিজয়ী হতে পারেননি। এমনকি ১৯৬৭ সালের সাধারণ নির্বাচনে বামফ্রন্টের সমর্থন নিয়ে আরপিআই-এর প্রার্থী হিসেবেও বারাসাত লোকসভা কেন্দ্র থেকে পরাজিত হন। এভাবেই ১৯৩৭ সালের বিজয়ী নায়ক ৩০ বছরের রাজনৈতিক জীবন শেষে করুণ পরাজয়ের মধ্য থেকে মঞ্চ থেকে বিদায় নেন। আস্তে আস্তে তিনি হারিয়ে যান বাংলার ইতিহাস থেকেও।

ভারতে ব্রিটিশ শাসনবিরোধী অহিংস আন্দোলনের অন্যতম নেতা খান আবদুল গাফফার খান (সীমান্ত গান্ধী) ১৯৮৮ সালের ২০ জানুয়ারি পাকিস্তানের পেশোয়ারে ইন্তেকাল করেন। আধ্যাত্মিক নেতা হিসেবেও তার পরিচিতি ছিল। ফখরে আফগান বা বাদশাহ খান নামেও তিনি পরিচিত। মহাত্মা গান্ধীর অন্তরঙ্গ বন্ধু ছিলেন তিনি।

১৮৯০ সালে তত্কলীন ভারতবর্ষের উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশে (বর্তমানে পাকিস্তান) তার জন্ম। তার বাবা বৈরম খান ছিলেন একজন ভূস্বামী। ব্রিটিশ মিশনারি স্কুল এডওয়ার্ড মিশন স্কুলে তার পড়াশোনা।

পারিবারিক উত্সাহেই তিনি ব্রিটিশ ভারতের সেনাবাহিনীতে ভর্তি হয়েছিলেন। কিন্তু এক সতীর্থের প্রতি ব্রিটিশ কর্মকর্তার আচরণে ক্ষুব্ধ হয়ে তিনি চাকরি ছেড়ে দেন। মায়ের হস্তক্ষেপে এ সময় ইংল্যান্ডে পড়াশোনায়ও ইস্তফা দেন।

তিনি দেখলেন, ব্রিটিশ রাজের বিরুদ্ধে সামাজিক কর্মকাণ্ড এবং সংস্কারই হবে বেশি উপযোগী, যার অংশ হিসেবে পরবর্তীকালে গড়ে ওঠে খোদাই খিদমতগার আন্দোলন। এই আন্দোলনের পুরোভাগে ছিলেন তিনি। ’৪৭-এর দেশভাগের বিরোধী ছিলেন তিনি। দেশভাগের পর পাকিস্তান সরকার তাকে বেশ ক’বার গ্রেফতার করে।

১৯৮৫ সালে নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য মনোনীত হন তিনি। ১৯৮৭ সালে প্রথম অভারতীয় হিসেবে তিনি ভারতের শ্রেষ্ঠ পুরস্কার ভারতরত্নে ভূষিত হন।
অত্যন্ত ধর্মভীরু মুসলিম ছিলেন তিনি। আফগানিস্তানের জালালাবাদে তিনি সমাহিত।

২০ ডিসেম্বর ১৯৪৯। খুলনা জেলার বাগেরহাট মহাকুমার মোল্লার হাট থানার কালশিরা গ্রামের জয়দেব বর্মার বাড়িতে শেষ রাতে কয়েকজন কম্যুনিস্ট সন্দেহভাজনকে গ্রেফতারের জন্য ৪ পুলিশ কনেস্টবল অভিযান চালায়।কোন আসামীকে না পেয়ে,একজন পুলিশ কনেস্টবল জয়দেবের স্ত্রীকে ধর্ষণের চেষ্টা চালায়।গৃহবাসীদের তাৎক্ষণিক প্রতিরোধে হানাদারদের একজন নিহত হয়। হৈচৈ শুনে আশপাশের মানুষ এসে বাকি তিনজনকে উদ্ধার করে।পরের দিন পুলিশ সুপারের নেতৃত্বে পুলিশ ও আনসার বাহিনী এসে কালশিরা ও পার্শবর্তী হিন্দু গ্রামে বিভীষিকা সৃষ্টি করে।হত্যা, ধর্ষণ, লুট, অগ্নিসংযোগ ও ধর্মান্তরিতকরনের ঘটনা হয়। এক মাসের মধ্যে ৩০ হাজার হিন্দু নরনারী ভারতে চলে যায়।

১৯৫০ সালের ৫ জানুয়ারি পুলিশ বাহিনীর একজন কর্মকর্তার নেতৃত্বে একদল কনস্টেবল নাচোলের চণ্ডীপুর গ্রামে চাঁদা তুলতে আসে। গ্রামবাসী সংগঠিত হয়ে পুলিশ বাহিনীকে পাল্টা ঘেরাও করে বিক্ষোভ করতে থাকে। বিক্ষোভের এক পর্যায়ে উম্মত্ত গ্রামবাসী ওই পুলিশ কর্মকর্তা ও পাঁচ জন পুলিশ কনস্টেবলকে হত্যা করে। এই ঘটনার পর নাচোলের চারিদিকে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। ঘটনার দু’দিন পর ৭ জানুয়ারি শুরু হলো পুলিশের প্রতিশোধ। দুই হাজার সেনা কাছাকাছি রেলওয়ে স্টেশনের কাছে উপস্থিত হয়ে অভিযান শুরু করে। বারোটি গ্রাম ঘেরাও করে তছনছ করে, ঘরবাড়ি ধ্বংস করে, চারিদিকে গুলি চালিয়ে হত্যা করে অনেক গ্রামবাসীকে। নারীদের ওপর যৌন অত্যাচার এমনকি শিশুদের ওপরও নির্যাতন করে। এই আন্দোলনের নেত্রী ছিলেন ইলা মিত্র।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী,
পূর্ব বাংলার পিছিয়ে পড়া হিন্দু সমাজের অবস্থা উন্নয়নের জন্য আমার প্রচেষ্টার ব্যর্থতার পর চরম হতাশা এবং দুঃখভারাক্রান্ত হৃদয়ে আমি আপনার মন্ত্রীসভা থেকে পরদত্যাগ করছি। আমার মনে হয় আমার জানানো উচিত কেন ভারতীয় উপমহাদেশের এই ক্রান্তিকালে আমি এই সিদ্ধান্ত নিলাম।

১। আমার পদত্যাগের পিছনের কারণগুলো বলার আগে, আমার মনে হয় মুসলিম লীগের সাথে আমার সহযোগিতাকালে কি কি ঘটেছিল সেই গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাগুলো বলা উচিত। ১৯৪৩ এর ফেব্রুয়ারিতে লীগের কয়েকজন প্রভাবশালী নেতার সাথে কথা হয়। আমি তাদের সাথে বাংলার প্রাদেশিক পরিষদে কাজ করার বিষয়ে সম্মত হই। ১৯৪৩ সালের মার্চে ফজলুল হকের মন্ত্রীসভার পতনের পর ২১ জন নমঃশূদ্র সদস্যের প্রত্যক্ষ সম্মতিতে তদানীন্তন মুসলিম লীগের নেতা কাজা নাজিমুদ্দিন ১৯৪৩ এর এপ্রিলে আবার মন্ত্রীসভা গঠন করেন। আমাদের সমর্থনের পিছনে কিছু শর্ত ছিল। এর ভিতর ছিল মন্ত্রীসভায় তিনজন নমঃশূদ্র মন্ত্রীকে নিয়োগ, নমঃশূদ্রদের লেখাপড়ার উন্নয়নে ৫ লাখ টাকা সহায়তা প্রদান এবং সরকারী চাকুরিতে কোটা প্রচলন করা।

২। এসব শর্তের বাইরেও মুসলিম লীগকে সহায়তার পেছনে আমার কিছু প্রধান উদ্দেশ্য ছিল। প্রথমত, বাঙ্গালী মুসলিমদের সাথে নমঃশূদ্রদের অর্থনৈতিক স্বার্থের মিল রয়েছে। মুসলিমরা ছিল মূলত কৃষক-শ্রমিক, অস্পৃশ্যরাও তাই। মুসলিমদের একটি অংশের মত নমঃশূদ্রদের একটি অংশও ছিল জেলে। দ্বিতীয়ত, তারা উভয়েই ছিল লেখাপড়ার দিক দিয়ে পশ্চাৎপদ জনগোষ্ঠী। আমাকে বোঝানো হয়েছিল যে লীগ এবং এর মন্ত্রিসভার সাথে আমার সহযোগিতা বিশাল পরিসরে আইনগত এবং প্রশাসনিক পদক্ষেপ গ্রহণে সহায়তা করবে। এই পদক্ষেপসমূহ ব্যক্তিগত স্বার্থ ও সুবিধাকে আমলে না নিয়ে বাংলার এই বিশাল জনগোষ্ঠীর পারস্পারিক উন্নতিতে ভূমিকা রাখবে এবং সাম্প্রদায়িক শান্তি-সৌহার্দ্য আরো মজবুত হবে, এমনটিই বলা হয়েছিল। এখানে উল্লেখ করা যায় যে খাজা নাজিমুদ্দিন তার মন্ত্রীসভায় অস্পৃশ্য সম্প্রদায়ের ৩ জন সদস্যকে নিয়েছিলেন। তিনি আমার এই সম্প্রদায় থেকে ৩ জনকে সংসদ সচিব হিসেবেও নিয়োগ দিয়েছিলেন।

সোহরাওয়ার্দী মন্ত্রীসভাঃ

৩। মার্চ, ১৯৪৬ এর সাধারণ নির্বাচনের পর জনাব এইচ. এস. সোহরাওয়ার্দী সেই মাসেই লীগের সংসদ নেতার পদ পান এবং এপ্রিল, ১৯৪৬ এ লীগের মন্ত্রীসভা গঠন করেন। ফেডারেশনের টিকেটে কেবলমাত্র আমিই আমার সম্প্রদায়ের মধ্যে নির্বাচনে জয়লাভ করতে সক্ষম হই। আমি জনাব সোহরাওয়ার্দীর মন্ত্রীসভার অন্তর্ভূক্ত ছিলাম। সেই বছরের ১৬ আগস্ট কলকাতায় মুসলিম লীগ কর্তৃক ‘ডাইরেক্ট অ্যাকশন দিবস’ পালিত হয়। আপনার জানা আছে যে শেষ পর্যন্ত এটা এক হত্যাযজ্ঞে রূপ নেয়। হিন্দুরা লীগের মন্ত্রীসভা থেকে আমার পদত্যাগপত্র দাবী করে। আমি প্রতিদিন চিঠির মাধ্যমে হুমকি পেতে থাকি। আমার জীবন দুর্বিষহ হয়ে ওঠে। কিন্তু আমি আমার পথে অবিচল থাকি। তদুপরি, আমি আমার জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আমাদের পত্রিকা ‘জাগরণ’ এর মাধ্যমে নমঃশূদ্রদের কাছে আবেদন জানাই তারা যেন নিজেদের কংগ্রেস এবং মুসলিম লীগের এই রক্তাক্ত লড়াই থেকে দূরে রাখে। আমার অস্পৃশ্য সম্প্রদায়ভুক্ত প্রতিবেশীগণ যেভাবে আমাকে ক্রুদ্ধ হিন্দুদের হাত থেকে নিরাপত্তা দেন তা আমি কৃতজ্ঞতাভরে স্মরণ করি। কলকাতা হত্যাকাণ্ডের পর ১৯৪৬ এর অক্টোবরে শুরু হয় নোয়াখালীর দাঙ্গা। সেখানে শত শত হিন্দু সম্প্রদায়ভুক্ত মানুষকে(নমঃশূদ্র সহ) হত্যা করা হয় এবং জোরপূর্বক ইসলামে ধর্মান্তরিত করা হয়। হিন্দু মহিলারা অপহরণ এবং ধর্ষণের শিকার হন। আমার সম্প্রদায়ভুক্ত মানুষেরও জান-মালের ক্ষয়ক্ষতি ঘটে। তাৎক্ষণিকভাবে আমি ত্রিপুরা ও ফেনী যাই এবং কিছু দাঙ্গাপীড়িত এলাকা পরিদর্শন করি। হিন্দুদের দুর্দশা আমাকে গভীরভাবে ব্যথিত করে, কিন্তু আমি মুসলিম লীগের সাথে সহযোগিতা চালিয়ে যাই। কলকাতার বিশাল হত্যাযজ্ঞের পরপর সোহরাওয়ার্দী মন্ত্রীসভার বিরুদ্ধে পার্লামেন্টে এক ভোটাভুটি আয়োজিত হয়। শুধুমাত্র আমার চেষ্টা দ্বারাই কংগ্রেসের পক্ষের চারজন অ্যাংলো-ইন্ডিয়ান সদস্য এবং চারজন অস্পৃশ্য সদস্যের সমর্থন যোগাড় করা সম্ভব হয় যা ব্যতীত মন্ত্রীসভার পরাজয় ছিল অবশ্যম্ভাবী।

৪। ১৯৪৬ এর অক্টোবরে সম্পূর্ণ অননুমিতভাবেই জনাব সোহরাওয়ার্দীর মাধ্যমে আমার কাছে প্রস্তাব আসে ভারতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে একটি পজিশন গ্রহণ করার জন্য। এক ঘণ্টার মধ্যে আমাকে আমার সিদ্ধান্ত জানাতে বলা হয়। বেশকিছু সময় দোদুল্যমান থাকার পর আমি এই শর্তে রাজি হই যে আমার নেতা ড. বি. আর. আম্বেদকার যদি আমাকে ঐ জায়গায় না চান তবে আমাকে পদত্যাগের অনুমতি প্রদান করা হবে। ভাগ্যক্রমে, তিনি লন্ডন থেকে টেলিগ্রামের মাধ্যমে তাঁর অনুমতি প্রদান করেন। আইনসভার সদস্য হিসেবে যোগদানের লক্ষ্যে দিল্লীতে রওনা দেয়ার আগে আমি তৎকালীন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী জনাব সোহরাওয়ার্দীকে রাজি করাতে সক্ষম হই যে তিনি আমার স্থানে ২ জন মন্ত্রীকে মন্ত্রীসভায় জায়গা দিবেন। তিনি নমঃশূদ্রদের ফেডারেশন গ্রুপ থেকে ২ জনকে সংসদ সচিব হিসেবে নিয়োগ দিতেও সম্মত হন।

৫। আমি ১৯৪৬ সালের ১ নভেম্বর মধ্যবর্তী সরকারে যোগ দেই। এক মাস পর কলকাতাতে আমি যাই। তখন জনাব সোহরাওয়ার্দী আমাকে জানালেন পূর্ব বাংলার বিভিন্ন জায়গাতে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনার কথাঃ বিশেষ করে গোপালগঞ্জের কিছু জায়গাতে যেখানে নমঃশূদ্ররা সংখ্যাগরিষ্ঠ। তিনি আমাকে অনুরোধ করলেন সেই অঞ্চলগুলো পরিদর্শনে যেতে এবং মুসলিম ও নমঃশূদ্রদের মাঝে সমঝোতা করতে। সেইসব এলাকার নমঃশূদ্ররা মুসলিমদের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নিতে প্রস্তুতি নিচ্ছিল। আমি কয়েক ডজন সভা করে তাদেরকে সেই পথ থেকে দূরে ছড়িয়ে আনি। একটি সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা থেকে সে এলাকা মুক্তি পায়।

৬। কয়েকমাস পর ব্রিটিশ সরকার তাদের ৩ জুন ঘোষণা (১৯৪৭) প্রদান করে যাতে ভারত ভাগ বিষয়ে কিছু প্রস্তাবনার অবতারণা করা হয়। পুরো দেশ, বিশেষ করে সমগ্র অমুসলিম ভারত এতে হতবাক হয়ে যায়। সত্যি কথা বলতে আমাকে স্বীকার করতেই হবে যে মুসলিম লীগের পাকিস্তান দাবিকে আমি সবসময় শুধুমাত্র দামাদামির অংশ হিসেবেই দেখে এসেছি। যদিও আমি বিশ্বাস করি যে ভারতের সামগ্রিক পরিপ্রেক্ষিতে উঁচুবর্ণের হিন্দুদের অন্যায় প্রভাবের বিরুদ্ধে মুসলিমদের ক্ষোভ ন্যায়সঙ্গত, এ বিষয়ে আমার দৃষ্টিভঙ্গী পরিষ্কার যে পাকিস্তানের জন্ম সাম্প্রদায়িক সমস্যার সমাধান কখনোই করবে না। বরঞ্চ, এটা কেবলমাত্র সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ ও শত্রুতা বৃদ্ধিই করবে। পাশাপাশি আমি এই ধারণা পোষণ করতাম যে পাকিস্তানের সৃষ্টি মুসলিমদের অবস্থা উন্নয়ন করবে না। দেশভাগের অবশ্যম্ভাবী পরিণতি হিসেবে আসবে দরিদ্রতা, অশিক্ষা এবং উভয় দেশের জনগণের দুর্দশা যা অনির্দিষ্টকাল না হলেও বহুদিন ধরে চলতে থাকবে। আমার আশঙ্কা ছিল পাকিস্তান দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সবচেয়ে পশ্চাৎপদ এবং অনুন্নত দেশগুলোর একটিতে পরিণত হবে।

লাহোর ঘোষণাঃ

৭। আমি আগেই সন্দেহ করেছিলাম যে পাকিস্তানকে ইসলামী শরিয়ত এবং নিয়ম-নীতির উপর ভিত্তি করে একটি শতভাগ ‘ইসলামী’ রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তোলার প্রয়াস করা হবে, যা এখন করা হচ্ছে। আমার অনুমান ছিল মার্চ ২৩, ১৯৪০ এ মুসলিম লীগের গৃহীত ঘোষণা অনুসারে সকল গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে এর প্রয়োগ ঘটানো হবে। অন্যান্য জিনিসের মাঝে এই ঘোষণায় ছিলঃ ১- ভৌগলিকভাবে পাশাপাশি অবস্থিত স্থানসমূহ প্রয়োজনীয় ভূমির অদল-বদলের মাধ্যমে এমনভাবে ভাগ করা হবে যেন ভারতের উত্তর-পশ্চিম এবং পূর্বাঞ্চলের মত মুসলিম অধ্যুষিত অঞ্চলগুলোতে স্বাধীন-সার্বভৌম একাধিক রাষ্ট্র গঠন করা যায় এবং ২- এসব অঞ্চলের সংখ্যালঘুদের নিজস্ব ধর্ম, সংস্কৃতি, রাজনৈতিক, প্রশাসনিক এবং অন্যান্য স্বার্থ-অধিকার রক্ষার নিমিত্তে তাদের সাথে আলোচনার মাধ্যমে সংবিধানে যথেষ্ঠ, কার্যক্ষম ও আবশ্যিক নিরাপত্তা প্রদানের ধারা যুক্ত করা হবে। এই ঘোষণার মধ্যে অন্তর্নিহিত ছিল ক) উত্তর-পশ্চিম ও পূর্বের মুসলিম অঞ্চলগুলোতে ২টি স্বাধীন রাষ্ট্র গঠন করা হবে, খ) এই রাষ্ট্রগুলোর অংশসমূহ হবে স্বাধীন ও স্বায়ত্বশাসিত, গ) সংখ্যালঘুদের প্রদত্ত নিশ্চয়তা তাদের স্বার্থ ও অধিকার সংশ্লিষ্ট হবে এবং জীবনের প্রতি ক্ষেত্রে তা ভূমিকা রাখবে এবং ঘ) সংবিধানে সংখ্যালঘুদের এই সাংবিধানিক সুবিধাদি সংখ্যালঘুদের নিজেদের দ্বারাই নির্বাচিত হবে। গণপরিষদের সভাপতি হিসেবে কায়েদ-ঈ-আজম মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ এর ১১ আগস্ট ১৯৪৭ এ দেয়া ভাষণ এই ঘোষণা ও লীগের নেতৃবৃন্দের ব্যাপারে আমার বিশ্বাস আরো পোক্ত করে। এই ভাষণে তিনি হিন্দু ও মুসলিম উভয় পক্ষকেই সমানভাবে বিবেচনার দৃঢ় আশ্বাস প্রদান করেন এবং তাদের আহ্বান করেন এটা মনে রাখতে যে তারা সবাই পাকিস্তানী। ইসলামিক রাষ্ট্র ও তার মুসলিম নাগরিকদের সার্বক্ষণিক হেফাজতে সেখানে ধর্মের ভিত্তিতে পূর্ণাংঙ্গ মুসলিম এবং ‘জিমি’দের মধ্যে কোনোরূপ ভেদাভেদের প্রশ্নই ছিলনা। এটা প্রতীয়মান হয় যে আপনার জ্ঞাতসারে এবং সম্মতিক্রমে কায়েদ-ঈ-আজমের ইচ্ছা ও মূল্যবোধের সম্পূর্ণ পরিপন্থী হিসেবে এই সকল ওয়াদার বরখেলাপ করা হচ্ছে যা সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জন্য ক্ষতি ও অপমানের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

বাংলা ভাগ হলঃ
৮। এই প্রসঙ্গে এটা বলে রাখা ভালো যে বাংলা ভাগের সময় আমাকে প্রবল বিরোধের মুখে পড়তে হয়েছিল। এই ধরণের ক্যাম্পেইনের ফল আমি শুধু বিরোধিতার সম্মুখীন হই নাই, হয়েছি শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত, অপমানিত এবং অবজ্ঞার শিকার। হতাশার সাথে আমি সেই সব দিনের কথা চিন্তা করতে চাই যখন ভারতবর্ষের ৩২ কোটি হিন্দু আমাকে হিন্দু এবং হিন্দু ধর্মের শত্রু বানিয়ে ছিল।আমি ছিলাম পাকিস্তানের প্রতি একান্ত অনুগত এবং অবিচল আস্থা। আমি চিন্তা করতাম পাকিস্তানের ৭০ লক্ষ হিন্দু দলিতের কথা যারা ছিল আমার সাথে। তারাই আমাকে সর্বদা সাহস যুগিয়েছে এবং অনুপ্রেরণা যুগিয়েছে।

৯। ১৪ আগস্ট, ১৯৪৭এ পাকিস্তান প্রতিষ্ঠিত হবার পর আপনি পাকিস্তান মন্ত্রীসভা গঠন করেন। আমি এর একজন সদস্য ছিলাম। খাজা নাজিমুদ্দিন পূর্ব বাংলার জন্য একটি প্রাদেশিক মন্ত্রীসভা গঠন করেন। আগস্টের ১০ তারিখে আমি করাচীতে খাজা নাজিমুদ্দীনের সাথে কথা বলে পূর্ব বাংলার মন্ত্রীসভায় নমঃশূদ্রদের মধ্যে থেকে ২ জনকে নিয়োগ দেয়ার জন্য অনুরোধ করি। তিনি কিছুদিন পরেই তা করবার আশ্বাস দেন। পরবর্তীতে এ ব্যাপারে আপনার, খাজা নাজিমুদ্দীন এবং পূর্ব বাংলার বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নুরুল আমিনের সাথে আমার অপ্রীতিকর এবং হতাশাজনক আপসরাফা চলে। যখন আমি বুঝতে পারলাম যে খাজা নাজুমুদ্দীন এই-সেই অজুহাতে ব্যাপারটিকে এড়িয়ে চলছেন তখন আমি একইসাথে ক্রুদ্ধ এবং অধৈর্য হয়ে পড়লাম। আমি এই ব্যাপারে পাকিস্তান মুসলিম লীগে এবং এর পূর্ব বাংলা শাখার সভাপতিদ্বয়ের সাথেও আলোচনা করেছিলাম। শেষ পর্যন্ত আমি ঘটনাটি আপনার গোচরে আনি। আপনি সাগ্রহে আমার উপস্থিতিতে আপনার বাসায় খাজা নাজিমুদ্দীনের সাথে এই ব্যাপারে আলোচনা করেন। খাজা নাজিমুদ্দীন ঢাকায় ফিরে অস্পৃশ্য সম্প্রদায়ভুক্ত একজনকে মন্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করতে সম্মত হন। তার আশ্বাসের ব্যাপারে ইতোমধ্যেই সন্দেহবাতিকগ্রস্ত হয়ে ওঠায় আমি কাজটি সম্পাদনের নির্দিষ্ট সময়-সূচী জানতে চাই। আমি জোর দাবী জানাই এই ব্যাপারে এক মাসের মধ্যে পদক্ষেপ নেয়ার জন্য, অন্যথায় পদত্যাগের ব্যাপারে আমার সিধান্তে কেউ বাধা দিতে পারবে না। আপনারা দুজনেই এই প্রস্তাবে সম্মতি প্রদান করেন। কিন্তু হায়, সম্ভবত আপনার মুখের কথা আপনার মনের প্রতিচ্ছবি ছিল না। খাজা নাজিমুদ্দীন তার ওয়াদা পালন করেন নি। জনাব নুরুল আমিন পূর্ব বাংলার প্রধানমন্ত্রী হবার পর আমি তার কাছেও এই বিষয়টি নিয়ে যাই। তিনিও সেই পুরাতন এড়িয়ে চলার নীতি চালিয়ে যান। ১৯৪৯ এ আপনার ঢাকা আগমনের প্রাক্কালে যখন আমি ব্যাপারটি আবারো আপনার গোচরে আনি আপনি আমাকে আশ্বস্ত করেন যে পূর্ব বাংলায় সংখ্যালঘু মন্ত্রী অবশ্যই নিয়োগপ্রাপ্ত হবে। আপনি আমার কাছে বিবেচনার জন্য ২/৩ জনের নামও চান। আপনার চাওয়ার প্রতি সশ্রদ্ধ বাধ্যবাধকতা প্রদর্শন করে আমি আপনার কাছে পূর্ব বাংলা পরিষদের ফেডারেশন গ্রুপ এবং ৩ জনের নাম সুপারিশ পূর্বক চিঠি পাঠাই। আপনি ঢাকা থেকে ফেরার পর আমি বিষয়টি সম্পর্কে খোঁজ নিতে গেলে আপনি কঠিন মনোভাব প্রকাশ করেন এবং “নুরুল আমিনকে দিল্লী থেকে ফিরতে দাও” কেবলমাত্র এই মন্তব্যটুকু করেন। কিছুদিন পর আমি আবার বিষয়টি তুলে ধরি, কিন্তু আপনি তা এড়িয়ে যান। তখন আমি এই উপসংহারে আসতে বাধ্য হই যে আপনি বা নুরুল আমিন কেউই চান না যে পূর্ব বাংলা মন্ত্রীসভায় কোনো নমঃশূদ্র ব্যক্তি নিয়োগ পাক। এছাড়াও আমি দেখতে পারছিলাম যে জনাব নুরুল আমিন এবং পূর্ব বাংলা লীগের কিছু নেতৃবৃন্দ নমঃশূদ্রদের ফেডারেশন সদস্যদের মধ্যে বিভাজন তৈরির চেষ্টা করছিলেন। আমার কাছে প্রতীয়মান হয় যে আমার নেতৃত্ব এবং বিশাল জনপ্রিয়তাকে খারাপ চোখে দেখা হচ্ছে। পাকিস্তানের সংখ্যালঘুদের, বিশেষ করে নমঃশূদ্রদের স্বার্থ সংরক্ষণে আমার স্পষ্টবাদিতা, তদারকি এবং আন্তরিক কার্যকলাপ পূর্ব বাংলা সরকার এবং লীগের কিছু নেতার মনে বিরক্তির সৃষ্টি করে। কিন্তু এসব কিছুর পরোয়া না করে আমি পাকিস্তানের সংখ্যালঘুদের স্বার্থ সংরক্ষণে দৃঢ় ভূমিকা গ্রহণ করি।

হিন্দু বিদ্বেষী নীতিঃ

১০। বাংলা ভাগের প্রসঙ্গ উঠতেই নমঃশূদ্ররা এর বিপদজনক ফলাফলের কথা অনুমান করে শঙ্কিত হয়ে উঠেছিল। তৎকালীন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী জনাব সোহরাওয়ার্দীর কাছে তারা কিছু প্রতিনিধি পাঠালে তিনি সানন্দে একটি প্রেস রিলিজ ইস্যু করেন যাতে বলা ছিল নমঃশূদ্ররা ভোগ করছে এমন কোনো সুবিধা ও অধিকারই কর্তন করা হবেনা, বরং আরো বৃদ্ধি পাবে। জনাব সোহরাওয়ার্দী এই আশ্বাস কেবলমাত্র ব্যক্তিগত ভাবেই দেননি, লীগ মন্ত্রীসভার মুখ্যমন্ত্রী হিসেবেও দিয়েছেন।অত্যন্ত দুঃখের সাথে বলতে হচ্ছে যে ভারত ভাগের পরে, বিশেষ করে কায়েদ-ঈ-আজমের মৃত্যুর পর থেকে নমঃশূদ্ররা কোনো বিষয়েই তাদের প্রাপ্য বুঝে পায়নি। আপনার স্মরণে থাকবে যে আমি সময়ে সময়ে এই অস্পৃশ্য জাতিগোষ্ঠীর দুর্দশার চিত্র আপনার সামনে তুলে ধরেছি। বেশকিছু ক্ষেত্রে পূর্ব বাংলার অকার্যকর প্রশাসনের চিত্র আপনার কাছে ব্যাখ্যা করেছি। পুলিশ প্রশাসনের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ দাখিল করেছি। অসার ভিত্তির উপর নির্ভর করে পুলিশের বর্বর নৃশংসতার ঘটনাসমূহও আমি আপনার নজরে এনেছি। পূর্ব বাংলার সরকার বিশেষ করে পুলিশ প্রশাসন ও মুসলিম লীগের নেতৃবৃন্দের একাংশের হিন্দু বিদ্বেষী নীতির কথা আপনাকে জানাতেও আমি কুণ্ঠাবোধ করিনি।

কিছু ঘটনাঃ

১১। প্রথম যে ঘটনা আমাকে মর্মাহত করে তা ঘটেছিল গোপালগঞ্জের দিঘারকুল গ্রামে। সেখানে স্থানীয় নমঃশূদ্রদের বিরুদ্ধে মুসলিমরা মিথ্যা অভিযোগে গুজব রটিয়ে বর্বরতা চালায়। প্রকৃত ঘটনা হচ্ছে একজন মুসলিম জেলে মাছ ধরতে জাল ছুঁড়ে মারে। একজন নমঃশূদ্র একই উদ্দেশ্যে জাল ছুঁড়ে মারে। এই নিয়ে দুইজনের ভিতর কথা কাটাকাটি হয়। মুসলিম যুবক গ্রামে গিয়ে মিথ্যা গুজব রটায় যে তাকে এবং এক মহিলাকে নমঃশূদ্ররা আক্রমণ করেছে। গোপালগঞ্জের উপ জেলা প্রশাসক সে সময় নৌকায় করে সে জায়গা দিয়ে যাচ্ছিলেন। তার কাছে অভিযোগ করলে তিনি কোন তদন্ত ছাড়াই সশস্ত্র পুলিশ পাঠান নমঃশূদ্রদের দমন করতে। তাদের সাথে স্থানীয় মুসলিমরা যোগ দেয়। তারা নমঃশূদ্র হিন্দুদের উপর নির্মম অত্যাচার চালায়। তাদের হামলায় বাড়িঘর ধ্বংস হয়, প্রচুর নারী পুরুষ আহত হয়। শেষ সহায় সম্বলটুকু লুট করে নিয়ে যায় মুসলিমরা। এক হিন্দু মহিলা যিনি কিনা ছিলেন অন্তঃসত্ত্বা তাকে পিটিয়ে গর্ভপাত করে দেয় তারা। বিশাল এলাকা জুড়ে আতংক সৃষ্টি হয়।

১২। হিন্দুদের উপর পুলিশ দিয়ে রাষ্ট্রীয় নির্যাতনের পরের ঘটনা ঘটে ১৯৪৯ সালের শুরুতে। বরিশাল জেলার গৌরনদীর পুলিশ সুপারের অধীনে। পুলিশের একদল সোর্স তাদের প্রতিপক্ষকে কমিউনিস্ট বলে চালিয়ে দেয় পুলিশের কাছে। তারা এও বলে ঐ পক্ষ পুলিশ স্টেশন আক্রমণ করবে। গৌরনদী থানার ওসি এই শুনে কোনরকম সত্যতা যাচাই না করে হেডকোয়ার্টার থেকে পুলিশের রিসার্ভ ব্যাটালিয়ন নিয়ে আসেন। পুলিশ বাহিনী বিশাল এলাকা অবরুদ্ধ করে লুটপাট এবং অগ্নিসংযোগ চালায়। প্রচুর লোককে গ্রেপ্তার করা হয়। শিক্ষক এবং ছাত্রদের কমিউনিস্ট সন্দেহে আটক করা হয়। তাদের উপর নির্যাতন চালানো হয়। আমি ঘটনাটা জানতে পারি কারণ ঘটনাস্থল আমার গ্রামের বাড়ির কাছেই। আমি জেলা প্রশাসক এবং পুলিশ সুপারকে জানাই এবং নির্দেশ দেই ঘটনা তদন্তের জন্য। কিন্তু আমার চিঠিতে কোন কাজ হয় নাই। আমি তখন পাকিস্তানের সর্বোচ্চ মহল মানে আপনার কাছে ঘটনাটা জানাই। কিন্তু আপনি কোন ব্যবস্থা নেন নাই।

(……ক্রমশঃ……)
[চোখ রাখুন আমাদের পেজে Time Line’র দ্বিতীয় পর্বে]

https://en.wikisource.org/wiki/Resignation_letter_of_Jogendra_Nath_Mandal