কৃষ্ণা রাণী সরকার

বাংলাদেশে সাফ ফুটবলে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর কৃষ্ণা রাণী সরকার লিখেন, “হরে কৃষ্ণ, চ্যাম্পিয়ন।

কৃষ্ণা রাণী সরকার: সাফ ফুটবলে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর কৃষ্ণা রাণী সরকার নিজের ভেরিফাইড ফেসবুক পেইজে পোষ্টের শুরুতেই লিখেন, “হরে কৃষ্ণ, চ্যাম্পিয়ন। “পরমেশ্বরের প্রতি এই যে শ্রদ্ধা এবং  কৃতজ্ঞতাবোধ , ঈশ্বর ভগবান সৃষ্টিকর্তার উপর এই যে অগাধ ভক্তি এবং বিশ্বাস, এখনকার দিনের যেকোনো হিন্দু নারীর জন্য অবশ্যই এটা “আইকন”।

 

শুধু হিন্দু নারী কেন, হিন্দু নারী পুরুষ সকলের জন্য দৃষ্টান্তমূলক। হিন্দু নারী পুরুষদের মধ্যে যারা নিজেদের ধর্মীয়  বিশ্বাস প্রকাশে সংকোচ এবং কুণ্ঠাবোধ করেন আশা করি কৃষ্ণা রাণী সরকার তাদের জন্য আলোকবর্তিকা হয়ে থাকবেন। ছবিতে মায়ের সাথে কৃষ্ণা রাণী সরকার।। জয় মাতৃশক্তির জয়।

পুরুষ খেলোয়াড়দের লড়তে হয় শুধুমাত্র তাদের প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে, কিন্তু বাংলাদেশে নারী খেলোয়াড়দের লড়তে হয় পুরো সমাজের বিরুদ্ধে। এটা আবারো প্রমাণিত হলো।

 

অদম্য অনুপ্রেরণা, সংকল্প, দৃঢ়তার এক অনন্য উদাহরণ সৃষ্টি করলেন বাংলাদেশ নারী ফুটবল টিম। ৩-১ গোলে নেপালকে উড়িয়ে দিয়ে আসলেই প্রমাণ করলেন তাদের যোগ্যতা।

তারা কিন্তু খেলার মাঠে সেজদা দিয়ে বা ধর্মীয় বাণী প্রচার করে জনগণের সমর্থন আদায় করেন নি। তাদের জনগণের সমর্থন আদায় করতে হয়েছে যোগ্যতা দেখিয়ে।

তাও আবার সম্পূর্ণ প্রতিকূল অবস্থায়। সানজিদার পোস্টেই দেখুন সেই ইতিহাস স্পষ্ট করে তুলে ধরা আছে। আসলেই এই রকম শত প্রতিকূলতা পেরুতে হয়েছে তাদেরকে।

 

সানজিদার পোস্টেই
সানজিদার পোস্টেই

তারা কিন্তু প্রকৃতপক্ষেই রিপ্রেজেন্ট করে বাংলাদেশকে, কেননা হিন্দু মুসলিম আদিবাসী বাঙালি সবাই আছে এই দলে। কেউ কাউকে “হিন্দু কোটায় বা আদিবাসী কোটায় খেলে” বলে মনে করে না।

 

কেউ কারো ধর্ম নিয়ে তাচ্ছিল্য করে না। তবুও তারা কম বেতন পায় পুরুষ খেলোয়াড়দের চেয়ে। যোগ্যতার প্রমাণ দিলেও তাতে মন গলে না কারো।

নারী বলে তাদের খেলাধূলা বন্ধের পক্ষেও প্রকাশ্যে মিছিল মিটিং হয়। বহু মেয়েদের খেলাধূলা বন্ধ করে দেয়া হয় পরিবার থেকে নতুবা এলাকাবাসীদের বা স্কুলের চাপে। বহু ক্যারিয়ার অঙ্কুরেই বিনষ্ট হয়ে যায়।

 

সানজিদার পোস্ট
সানজিদার পোস্ট

এর আগেও বিজয়ী হয়ে ফেরার পথে কীভাবে নারী খেলোয়াড়দের যাতায়তের ব্যবস্থা করা হয়েছিল নিশ্চয়ই খবরে দেখেছিলেন?

আর অন্যদিকে দিনের পর দিন গুহারা হারলেও কেবলমাত্র ধর্মীয় অনুভূতির কারণেই পুরুষ খেলোয়াড়দের ছাড় দেয়া হয় জার্সি থেকে বাঘের লোগো বিকৃত করার পরেও।

এমনকি বছরে একটা খেলা জিতলেও তাদেরকে মুক্তিযোদ্ধার সাথে তুলনা করা হয়। একেকজন স্বর্ণের ব্যবসা করে, রেস্টুরেন্ট খোলে, বিদেশে বাড়ি গাড়ি কেনে, হুলস্থুল অবস্থা।

অথচ বাস্তবে যুদ্ধ করছে নারী খেলোয়াড়রা। একেকজন খেলোয়াড় একেকজন যোদ্ধা বটে। কারণ তাদেরকে যুদ্ধ করতে হয় পুরো সমাজের সাথে এমনকি ধর্মের সাথেও!

কৃষ্ণা রাণী সরকার
কৃষ্ণা রাণী সরকার

এই মেয়েগুলোকে দেখে অনুপ্রেরণা পাবে আরো হাজারো মেয়ে। দেখা যাক এবারে তাদের ব্যাপারে দৃষ্টিভঙ্গি কতোটা বদলায় সাধারণ মানুষের এবং নীতিনির্ধারকদের।

সবচাইতে বেশি জরুরী হচ্ছে বৈষম্য দূর করা, বেতন এবং সমস্ত সুযোগ সুবিধাদি তারা ঠিকমতো পান কিনা এখন সেটাই দেখার বিষয়।
অভিনন্দন বাংলাদেশ টিম।

 

  1. ইরানে হিজাব বিতর্ক বিশ্লেষণ: ইরানের হাজার হাজার নারী হিজাবের বিরুদ্ধে রাস্তায়।
  2. হুনজা উপজাতি : হুনজা উপত্যকা সম্পর্কে কিছু আকর্ষণীয় তথ্য কি?