হিন্দুদের দূর্গা :ছদ্মবেশী মুক্তমনা ছুপা ছাগুদের বিকৃতাচার
—————————————————————-
পাঠক, আগেই সাবধান করে রাখি । লেখাটা বড়, ধৈর্য থাকলে তবেই পড়বেন ।
হিন্দুদের দূর্গা ঠাকুর কোথা থেকে এলো ? কে দূর্গা ?
শাস্ত্র বলেছে :
“দৈত্যনাশার্থবচনো দকারঃ পরিকীর্তিতঃ।
উকারো বিঘ্ননাশস্য বাচকো বেদসম্মত।।
রেফো রোগঘ্নবচনো গশ্চ পাপঘ্নবাচকঃ।
ভয়শত্রুঘ্নবচনশ্চকারঃ পরিকীর্তিত।।”
মানে দাঁড়ালো : ‘দ’ অক্ষরটি দৈত্য বিনাশ করে, উ-কার বিঘ্ন নাশ করে, রেফ রোগ নাশ করে, ‘গ’ অক্ষরটি পাপ নাশ করে এবং আ-কার শত্রু নাশ করে, অর্থাৎ হিন্দুদের দৈত্য, বিঘ্ন, রোগ, পাপ ও শত্রুর হাত থেকে যিনি রক্ষা করেন, সেই দূর্গা । উঁহু ব্যাপারটা এতো সহজ নয় । আরেকটু তলিয়ে দেখি :
কয়েক হাজার বছরের সামাজিক বিবর্তনে গ্রিলিং হয়ে, নানান পরিবর্তন, মেলা সংস্কার, ধর্ম গুরুদের বাধা, লাল চোখ, অভিশাপের বাধা -ব্যাগড়া পেরিয়ে বর্তমান বিশ্বে পরিচিতি লাভ করেছে সনাতন থেকে হিন্দু ধর্ম নামক বৈদিক ধর্মটি । প্রায় ২২,০০০ বছর আগে ভারতে প্যালিওলিথিক জনগোষ্ঠী দেবী পূজা করতো, তার প্রমাণ পাওয়া যায় ইতিহাসে । সিন্ধু সভ্যতায় এসে এই দেবী পূজা আরো গ্রহণযোগ্য, ও আধুনিকভাবে বিস্তৃতি পায় । মাকে পরিবারের মাথায় রেখে দেবী বিশ্বাসে গড়ে উঠেছিল শাক্ত সম্প্রদায় । শাক্ত মত অনুসারে দেবী হলেন শক্তির রূপ, তিনি পরব্রহ্ম । হিন্দুদের শৈব সম্প্রদায়,শাক্তদের এই দেবী শক্তির একক নেতৃত্ত্ব মেনে নেয়নি আর তাই শিবের সাথে সম্পর্ক জুড়ে কেউ হয়েছে শিবের স্ত্রী, কেউ বা কন্যা, আবার কারো স্থান হয়েছে পুত্রবধূ রূপে ।
➤“সর্বং খল্বিদং ব্রহ্ম” অর্থাৎ, সকলের মধ্যেই ব্রহ্ম বিদ্যমান। রহ্ম যখন কোনো কিছু সৃষ্টি করে তখন তার নাম হয় ব্রহ্মা, আর যেকোনো কিছু সৃষ্টি করতেই লাগে জ্ঞান এবং প্রকৃতির নিয়ম হলো নারী ও পুরুষের মিলন ছাড়া কোনো কিছু সৃষ্টি হয় না । প্রকৃতির এই নিয়মকে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্যই ব্রহ্মার নারীশক্তি হলো সরস্বতী, যাকে আমরা স্থূল অর্থে ব্রহ্মার স্ত্রী বলে কল্পনা করে নিয়েছি, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে ব্রহ্মার স্ত্রী বলে কিছু নেই, এমন কি ব্রহ্মা বলেও আলাদা কোনো সত্ত্বা নেই ! ব্রহ্মের ধ্বংকারী রূপের নাম শিব, মহেশ্বর বা রুদ্র। সৃষ্টি বা পালন করতে যেমন লাগে নারী শক্তি, তেমনি ধ্বংস করতেও লাগে নারী শক্তি। গ্রীস ও ট্রয়ের মধ্যকার যুদ্ধের কারণও ছিলো এক নারী, নাম হেলেন। নারী শক্তি যেমন ধ্বংসের কারণ হতে পারে, তেমনি নারী নিজেও ধ্বংস করতে পারে। প্রকৃতির এই নিয়মকে স্বীকৃতি দিতেই ব্রহ্মের ধ্বংসকারী রূপ মহেশ্বর বা শিবের নারী শক্তি হলো দূর্গা ।
➤ পুরাণ রচয়িতারা নানা ঘটনার মাধ্যমে বিভিন্ন দেব-দেবীর জন্ম দিয়েছে, যে ঘটনাগুলো যুক্তি-তর্ক-প্রশ্নের বাইরে নয়। যেমন, সকল দেবতার শক্তি মিলে উৎপত্তি দেবী দুর্গা যদি অসুরদের হত্যা করতে পারে, তাহলে সকল দেবতা মিলে তা করতে পারলো না কেনো ? এই ঘটনায় প্রকৃতির নিয়মকে অস্বীকার করা হয়েছে; কারণ, প্রকৃতির নিয়মই হলো একের চেয়ে বহুর শক্তি বেশি, কিন্তু এখানে দেখানো হয়েছে বহুর চেয়ে একের শক্তি বেশি, যা সম্পূর্ণ অবাস্তব ।
➤ পুরাণ রচয়িতাদের দ্বারা দুর্গার আবির্ভাবের পর তাকে সুপারওম্যান করতে প্রথমে ৪ হাত, তারপর ৮ হাত, তারপর ১৬ হাত এবং সবশেষে ১৮ হাত পর্যন্ত দিয়েছিলো । প্রকৃতির নিয়ম হলো যত হাত তত শক্তি, তাই এই ১৬/১৮ হাত অবাস্তব বিবেচনা করে, শেষ পর্যন্ত বাস্তবের ১০ দিককে ঠেকানোর জন্য তারা ১০ হাত ফাইনাল করে এবং এখন পর্যন্ত সেটাই জনপ্রিয় এবং প্রতিষ্ঠিত ।
➤ যেসকল পুরাণ ও উপপুরাণে দূর্গা সংক্রান্ত আলোচনা রয়েছে সেগুলি হলো : মৎস্যপুরাণ, মার্কণ্ডেয় পুরাণ, দেবীপুরাণ, কালিকাপুরাণ ও দেবী-ভাগবত ।
➤ দেব-দেবীদের বাহন হিসেবে যাদের বলা হয়, তারা, বিজ্ঞানের বিবর্তন তত্ত্ব অনুযায়ী পৃথিবীতে সভ্য মানুষ সৃষ্টির অনেক আগে থেকেই আছে, তাই দেব-দেবীদের সাথের এক একটি প্রাণী, এক একটি প্রতীক মাত্র । পদ্মপুরান অনুযায়ী সিংহ হলো দূর্গার তেজ, ক্রোধ ও হিংস্রতার প্রতীক ।
➤ এবারে মহিষ ও মহিষাসুর । অসুরদেরকে হত্যা করার জন্য দুর্গার যুদ্ধ, সেই অসুরদের প্রধান, নানা রূপ ধারণ করতে পারতো, সম্ভবত তার একটি পছন্দের রূপ ছিলো মহিষ । একটি বাঘ বা সিংহের চেয়ে একটি মহিষের শক্তি অনেক বেশি, অসুরের এই রূপ পরিবর্তনের ক্ষমতাকে বোঝানোর জন্যই দুর্গার কাঠামোয় ব্যবহার করা হয় মহিষ এবং এই মহিষের নাম অনুসারেই ঐ অসুরের নাম মহিষাসুর ।
পাঠক, এবারে দেখি দূর্গাকে পূজা করার ইতিবৃত্তান্ত । ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণে আছে দূর্গা পূজার প্রথম প্রবর্তক কৃষ্ণ, দ্বিতীয় বার দূর্গা পূজা করেন স্বয়ং ব্রহ্মা আর তৃতীয়বার দূ্র্গা পূজার আয়োজন করেন মহাদেব । দেবী ভাগবত পুরান অনুসারে ব্রহ্মার মানস পুত্র মনু ক্ষীরোধ সাগরের তীরে দূর্গার আরাধনা করেছিল বর লাভ করবার জন্য ।(‘শব্দাঞ্জলিতে দুর্গাপূজা’ – হরিপদ ভৌমিক) । মূল বাল্মীকির রামায়ণে দূর্গা পূজার কোন অস্থিত্ব নেই । ঘটা করে দূর্গা পূজা কবে থেকে বাংলায় চালু হল তা নিয়ে পরিষ্কার বিশ্বাসযোগ্য ঐতিহাসিক প্রমান পাওয়া না গেলেও, এটা জানা যায় ১৫০০ খ্রীষ্টাব্দের শেষের দিকে দিনাজপুরের জমিদার প্রথম দূর্গা পূজা করেন, কারো মতে প্রথম দূর্গা পূজা আয়োজন করেন তাহেরপুরের রাজা কংস নারায়ন। অনেকে মনে করেন ১৬০৬ নদিয়ার ভবনানন্দ মজুমদার দূর্গা পূজার প্রবর্তক। দূর্গার ছেলে মেয়ে সহ সপরিবারে পূজা চালু করেন ১৬১০ সালে কলকাতার সাবর্ণ রায় চৌধুরী পরিবার । ১৭৯০ সালের দিকে এই পূজার আমেজে আকৃষ্ট হয়ে পশ্চিম বঙ্গের হুগলি জেলার গুপ্তি পাড়াতে বারো জন বন্ধু মিলে টাকা পয়সা (চাঁদা) তুলে প্রথম সার্বজনীন ভাবে আয়োজন করে বড় আকারে দূর্গা উৎসব। সাধারণ লোকের মুখে মুখে এটা এখন বারোয়ারি পূজা। কাসীম বাজারের রাজা হরিনাথ ১৮৩২ সালে, কলকাতায় বারোয়ারি পূজা করান। পরে তাদের দেখাদেখি আস্তে আস্তে তা জনপ্রিয় হয়ে ওঠে উচ্চ বর্নের হিন্দু বাঙ্গালী জমিদারদের কাছে ।
পাঠক, লেখা শেষ করবো এবারে আমাদের মাঝে মুক্তমনা সেজে থাকা ছুপা ছাগুদের, হিন্দুদের দূর্গা পুজো নিয়ে বহুল চর্চিত অপব্যাখ্যা দিয়ে :
➤ আগেই উল্লেখ করেছি দূর্গা পূজা জনপ্রিয় হয়ে ওঠেছিল উচ্চ বর্নের হিন্দু বাঙ্গালী জমিদারদের কাছে । এই একই প্রসঙ্গে তথাকথিত মুক্তমনা ছুপা ছাগুরা রবীন্দ্রনাথের পূর্ব পুরুষদের বেশ্যালয়ের বিজনেসের সূত্র টেনে আনে । কান টানলে মাথা আসে, তাই অনিবার্যভাবে রবীন্দ্রনাথের বেশ্যা গমন ও তার সিফিলিস রোগ হওয়া, হিন্দুদের সার্বজনীন দূর্গা পূজার সাথে জুড়ে দেয় এই সকল মুক্তমনা, থুড়ি মুত্রমনা ছুপা ছাগু মডারেটরা । হিন্দু শাক্তদের দেবী দূর্গা এবারে এদের কলমে পৌরাণিক বেশ্যা হিসেবে প্রকাশ পায় ! পাঠক, সত্যি কি ? আমারও ভারী জানার ইচ্ছে ছিল, আর তাই বিভিন্ন সোর্স ঘেঁটে ফেললাম ।
➤ মুক্ত-মনায় রাজেশ তালুকদার, সামু ব্লগে সুবল বর্মন এবং নেট সোর্স প্রায় সবকটাই একটা ব্যাপারে একমত : মাকে পরিবারের মাথায় রেখে দেবী বিশ্বাসে গড়ে উঠেছিল শাক্ত সম্প্রদায় । শাক্ত মত অনুসারে দেবী হলেন শক্তির রূপ, তিনি পরব্রহ্ম । মা দূর্গা মূলত হিন্দুদের শাক্ত সম্প্রদায়ের আরাধ্য । দেবীমাহাত্ম্যম ১১.৬ তে স্পস্ট ভাবে বলা হয়েছে মা দূর্গা সমস্ত নারী জাতীর প্রতিক : ‘সর্ব্ব বিদ্যা হয় দেবী , বিভিন্ন রূপ তোমারি /তব অংশ-ভূতা হয় ভবে নারী সবে /মাতৃ-রূপে ব্যাপ্ত একা, তুমি হও স্তব্য-শ্রেষ্ঠা /পরা উক্তি আছে কিবা , কি স্তুতি সম্ভবে ?’ দূর্গার পূজা পদ্ধতি যেহেতু শাক্তদর্শন ও শাক্ত সম্প্রদায়ের আধারে সৃষ্টি হয়েছে তাই শাক্ত সম্প্রদায়ে চিন্হিত নবকন্যার প্রতিক স্বরূপ তাদের দ্বারের মাটি নেওয়া হয় প্রতিমা গড়তে। এই নবকন্যারা হলো : (১)নর্তকী/অভিনেত্রী (২)কাপালিক (৩)পতিতা (৪)ধোপানী (৫)নাপিতনী (৬)ব্রাহ্মণী (৭)শুদ্রাণী (৮)গোয়ালিনী (৯)মালিনী। আমাদের মাঝে ছড়িয়ে থাকা মুক্তমনার ছদ্মবেশে ছুপা ছাগুদের এতটা চর্চা নেই যে তারা পড়ে জানবে যে, শুধু পতিতার দ্বারের মাটি নয় বাকি আরো অস্টমকন্যার দ্বারের মাটিও অপরিহার্য দূর্গার মূর্তি গড়তে । এই ‘মুত্রমনা’দের অধিকাংশের জন্ম ইসলাম মাননাকারী ঘরে আর তাই ইসলামের নবীর বিকৃত কামাচারের লেশ তাদের মধ্যে কিছুটা রয়েই যায় । যেহেতু দূর্গার মূর্তি গড়তে বেশ্যার দ্বারের মাটি লাগে, সেহেতু দূর্গা খুব সহজেই এই ছুপা ছাগু মুক্তমনাদের কলমে ‘পৌরাণিক বেশ্যা’ রূপে প্রকাশ পায় ।
পাঠক, আমাদের এই আপাত সভ্য সমাজে পতিতা বা বেশ্যারা ঘৃণ্য, যদিও আমরা নিজেদের মুক্তমনা, প্রগতিশীল, কেউ কেউ নারীবাদী বলে দাবি করি ! হিন্দুদের দূর্গা সমস্ত নারীশক্তির প্রতিক । দূর্গার মূর্তি গড়তে পতিতার উঠোনের মাটি ব্যবহার করার মাধ্যমে নারীত্বের প্রতিনিধিকারী একটি অংশের স্বীকৃতি দেওয়াকেই বোঝায়, মুক্তমনার ছদ্মবেশে ছুপা ছাগুরা যাই লিখুক না কেন……………………………
ref : https://en.wikipedia.org/wiki/Durga_Puja
সৌজন্য স্বীকার : রাজেশ তালুকদার; সুবল বর্মন ।