ফেসবুকে ধর্ম নিয়ে কটুক্তির মিথ্যা অজুহাতে সংখ্যালঘুদের বিশেষ করে হিন্দুদের আর কত নির্যাতন করা হবে?

ফেসবুকে ধর্ম নিয়ে কটুক্তির মিথ্যা অজুহাতে সংখ্যালঘুদের বিশেষ করে  হিন্দুদের আর কত নির্যাতন করা হবে?

পাবনার সাথিয়া, রামু, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর এভাবে আর কত ধংসের মিছিলে আমাদের হিন্দুদের যোগদান করতে হবে?

এই সেদিন ১৫ দিন আগেও লালমনিরহাটের কালীগঞ্জে আপ্রাণ চেষ্টা করা হলো ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরের ঘটনার পুনরাবৃত্তি করার। কিন্তু হিন্দুদের ঐক্যবদ্ধতার কারণে তা নিষ্ফল হয়। একই রকমের ঘটনায় সাম্প্রদায়িক আক্রমন আছড়ে পরে এই মাসের ২ তারিখ ফরিদপুরে। একটি বাড়ি ধংস হয়। ইউনোর দায়িত্বে  একজন হিন্দু মহিলা থাকার জন্যে হয়তো শেষ পর্যন্ত বড় ধরনের কিছুই হয়নি।

কিন্তু গতকাল রংপুরে যা ঘটলো, তা ভাষায় প্রকাশের অযোগ্য, সকল অসভ্যতার একটা লিমিট থাকা প্রয়োজন। এভাবে একই স্টাইলে একই রকমের অসভ্যতা আর কত কাল? সরকার রাষ্ট্রযন্ত্র কোথায়? সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের ভোটের ৯০% এর উপরে বর্তমান সরকারে যারা আছে তাদের ঝুলিতে পরে তবে তারাই কেন অসহায় সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা দিতে আজ ব্যার্থ?  তবে কি শর্ষের মধ্যেই ভুত লুকিয়ে আছে?
হয়তো তাই নইলে যাদের মুখে অসাম্প্রদায়িক ঝর্ণাধারার বন্যা  বয়ে যায়, তাদের আমলেই কেন এভাবেই হিন্দু নির্যাতন হবে! এই সরকার আসার পরে সেই সাতক্ষীরা থেকে কালকের রংপুর সকল ঘটনাই একই রকমের পুনরাবৃত্তি।

আইসিটি আইনের ৫৭ ধারাটির যেন জন্মই হয়েছে হিন্দুদের নির্যাতনের জন্যে। এর অসংখ্য শতশত উদাহরণ দেয়া যায়, যে কিভাবে হিন্দুদের এই আইনের মাধ্যমে অসাম্প্রদায়িকতার মুখোশ পরে নির্যাতন করা হচ্ছে।

কোন মন্দির বা হিন্দুদের বসতবাড়ি ধংস করে পালিয়ে গেলে সে হয় অজ্ঞাত সন্ত্রাসী দুর্বৃত্তকারী আর কালে ভদ্রে যদি ধরে পরে যায়, তবে পুলিশের ভাষায় মুখস্থ করা শব্দই হলো মানসিক ভারসাম্যহীন ব্যক্তি । সারা বাংলাদেশে যত মন্দির, প্রতিমা ধংসকারী ধরা পরে তারা সকলেই মানসিক ভারসাম্যহীন।  হাসি পায় পুলিশের এই মুখস্থ করা কথায়। পুলিশের এই ভাষাই প্রমান করে আমরা সংখ্যালঘুরা এ দেশে কতটা অসহায়!

গতবছর এই নবেম্বর মাসেই ফেসবুকে হিন্দুধর্ম নিয়ে কটূক্তি করে পোস্ট দেওয়ার অভিযোগে  হাতেনাতে ধরা পরে  আটক হয় পাবনার মির্জাপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. জাহুরুল ইসলাম বুলবুল।

এই ববুলবুলই সম্ভবত হিন্দুধর্ম নিয়ে কটুক্তি করে পুলিশের হাতে ধরা পরা প্রথম ব্যক্তি। সেই বুলবুলকে শাস্তির হাত থেকে বাঁচাতে পাবনার চাটমোহর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইকরামুল হকের বক্তব্য দেখুন তবেই বুঝে যাবেন বাংলাদের হিন্দুরা আমরা কতটা অসহায়। ওসি ইকরামুল হক সিলেটটুডে টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বুলবুল জানিয়েছেন তার ফেসবুক একাউন্ট হ্যাক করে অন্য কেউ পোস্টটি দিয়েছে। হ্যাক হওয়ার বিষয়টি জানিয়ে ও ক্ষমা প্রার্থনা করে তিনি পরে ফেসবুকে আরেকটি পোস্ট দিয়েছেন।
প্রাথমিক তদন্তে বুলবুলের বক্তব্যের সত্যতা পাওয়া গেছে। তাই তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। তবে এ ব্যাপারে অধিকতর তদন্ত চলছে। তদন্তে বুলবুলের সম্পৃক্ততা পাওয়া গেলে আবার তাকে আটক করা হবে।
বুলবুলের ফেসবুক থেকে হিন্দু ধর্ম ও হিন্দু ধর্মের দেবদেবীকে নিয়ে গালাগালি করে একটি পোস্ট দেওয়া হয়। এ জন্য জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বুধবার রাতে তাকে থানায় নিয়ে আসা হয়।”

অথচ এর সপ্তাহ আগেই ফেসবুকে ইসলাম ধর্ম নিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার  গ্রেফতার হয় গরিব জেলে পরিবারের সন্তান  রসরাজ দাস।  তার বিরুদ্ধে তথ্য প্রযুক্তি আইনে একটি মিথ্যা মামলা হয় এবং পুলিশ  তাকে ৫ দিনের রিমান্ডেও  নেয়া শুধু নয় তাকে মাসের পর মাস জেলও খাটতে হয় ।  রসরাজ দাসের ওই পোস্টকে কেন্দ্র করে  ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর ও হবিগঞ্জের মাধবপুরে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের অসংখ্য  মন্দির ভাঙচুর ও
বাড়িঘরে নৃশংসভাবে  হামলার ঘটনা ঘটে।

মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানে রসরাজ এবং বুলবুলের ঘটনা ঘটনা। বুলবুল শিক্ষিত এবং সে যে নিজেই হিন্দু ধর্ম নিয়ে অসভ্যতা করেছে এটা প্রমানিত। আর রসরাজের বেলায় সে ফেসবুকই চালাতে পারে না। এবং সে যে এটা করিনি এটা গণমাধ্যমেই প্রমানিত, এর পরেও  রসরাজকে জেলের সাথেসাথে মামলার ঘানি আজও  টেনে বেড়াতে হচ্ছে।

আর কি লিখবো,কিছুই লিখতে ইচ্ছে করছে না;
কারন এই হচ্ছে আমার অসাম্প্রদায়িক সোনার বাংলার আসলচিত্র!