গোলাপি এখন বিলাতে।। শফি হুজুর দিল্লিতে।।

গোলাপি এখন বিলাতে।। শফি হুজুর দিল্লিতে
http://www.bhorerkagoj.net/print-edition/2017/07/25/157932.php
শ্রী রামনাথ কবিন্দ ভারতের ১৪তম রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হয়েছেন। তাকে অভিনন্দন। দলিত সম্প্রদায় থেকে নির্বাচিত এই রাষ্ট্রপতি মঙ্গলবার ২৫শে জুলাই  শপথ নেবেন। এর সাথে সাথে যবনিকা ঘটবে শ্রী প্রণব মুখার্জীর বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবন। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা ভারতের নব-নির্বাচিত রাষ্ট্রপতিকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। ভারতের উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচন শনিবার ৫ই আগষ্ট, প্রতিদ্ধন্ধী দু’জন: বিজেপি নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক জোটের ভেঙ্কাইয়া নাইডু এবং কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউনাইটেড প্রোগ্রেসিভ জোটের গোপাল কৃষ্ণ গান্ধী। কে জিতবেন? সম্ভবত: বিজেপি সমর্থিত প্রার্থী, কিন্তু কংগ্রেস প্রার্থী গান্ধীজির নাতি ভালো ফাইট দেবেন। বর্তমান উপরাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ হামিদ আনসারীর মেয়াদ শেষ হবে ১৯শে আগস্ট ২০১৭। ভারতের রাষ্ট্রপতি বা উপরাষ্ট্রপতি পদটি অনেকটা ‘ঠুঁটো জগন্নাথ’ এর মত, অর্থাৎ গুরুত্বহীন, তারপরও নির্বাচনটি কতটা চমৎকার এবং গ্রহণযোগ্য? এর থেকে বাংলাদেশে আমরা কি কিছু শিখলাম? নাকি শুধু অন্যদেশে সুন্দর নির্বাচনের প্রশংসা করেই আমাদের দিন কাটবে?

এমনিতে ভারত বিরোধিতা আমাদের মজ্জাগত। সেটা ১৯৪৭-এ শুরু, চলছে অদ্যাবধি। এর কি কোন শেষ নেই? যেমন আমাদের শফি হুজুররা প্রচন্ডভাবে ভারত বিরোধী, কিন্তু উনি চিকিৎসার জন্যে ভারত গেছেন। দিল্লীর এপোলো হাসপাতালে নাকি তার চিকিৎসা হবে। এই হুজুরের শ্লোগান ছিলো, ‘দড়ি ধরে মার্ টান, মুর্ক্তি যাবে হিন্দুস্থান’। মুর্ক্তি তো হাইকোর্টের সামনে থেকে পেছনে গেছেন, আর হুজুর গেলেন হিন্দুস্থান? এবং সেটা স্বেচ্ছায়। ফেইসবুকে একজন সাধারণ ভারতীয় তাকে ভারতে স্বাগত জানিয়েছেন। তবে একজন বাংলাদেশী আশংকা প্রকাশ করেছেন যে, হুজুর যদি ভারতে মারা যান, তাহলে ভারতের দোষ হবেনা তো? একজন প্রশ্ন করলেন, এই অসুখটা কি রাজনৈতিক? রিপোর্টে প্রকাশ, ভারতে যত বিদেশী চিকিৎসার জন্যে যান তাদের মধ্যে বাংলাদেশের স্থান শীর্ষে এবং এ থেকে ভারতের রোজগার দুই বিলিয়ন ডলারের বেশি। শিক্ষাক্ষেত্রেও কি একই অবস্থা? যে দেশটিকে আমরা দু’চোখের কোনায় দেখতে পারিনা, বা সহ্য করতে পারিনা, সেখানে যাবার এত আগ্রহ কেন?

ইউএনও তারিক সালমান হটাৎ জিরো থেকে হিরো হয়ে গেলেন এবং আওয়ামী লীগ নেতা ওয়াবায়দুল্লাহ সাজু হিরো থেকে জিরো? ঘটনা সবার জানা। এক চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায় দুই শিশু-কিশোরের দুটি ছবি প্রথম ও দ্বিতীয় হয়, প্রথম হয় মুক্তিযুদ্ধের একটি ছবি এবং দ্বিতীয় বঙ্গবন্ধুর ছবি। আগেই ঘোষণা ছিলো প্রথম ও দ্বিতীয় ছবি দিয়ে ইউএনও এবারকার স্বাধীনতা দিবসের নিমন্ত্রণ কার্ড বানাবেন এবং তিনি তা করেন। আমন্ত্রণ পত্রের প্রথম প্রচ্ছদ হয় প্রথম স্থান প্রাপ্ত মুক্তিযুদ্ধের ছবি, শেষ প্রচ্ছদ হয় বঙ্গবন্ধুর ছবিটি। সমস্যা সেখানেই, এতে করে নাকি জাতির জনককে অপমান করা হয়েছে।  বঙ্গবন্ধুর বাবা মারা যাবার পর একটি দৃশ্য অনেকের মনে থাকার কথা। আমরা তখন ঢাকা ভার্সিটির ছাত্র। টিভিতে আমরা বঙ্গবন্ধুকে কাঁদতে দেখেছি, যা পুত্রের পক্ষে ছিলো স্বাভাবিক। কিন্তু তখন বঙ্গবন্ধুর চেয়ে ঢের বেশি কেঁদেছিলেন খন্দকার মোশতাক!

বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর পর তাকে বিক্রী করে আঁখের গোছানোর কাহিনীর কোন শেষ নেই, সাঁজু এর সর্বশেষ সংযোজন। এখন শোনা যাচ্ছে আওয়ামী লীগ নেতা এডভোকেট সাঁজু বেশিদিন হয়নি আওয়ামী লীগে এসেছেন। মিডিয়া জানাচ্ছে, তিনি সড়ক ও জনপদের জায়গা দখল করে মার্কেট বানিয়েছেন। জানা যায়, ইউএনও-র সাথে আগেই তার সমস্যা ছিলো, এবার সুযোগ বুঝে তিনি প্রতিশোধ নিলেন? প্রশ্ন হলো, এই সাঁজুর ক্ষমতার উৎস কি বা কারা? এডভোকেট সাঁজু মামলা করেছেন, মামলা তো যেকেউ করতে পারে, কাদের ইশারায় পুলিশ মামলাটি নিয়েছে? নাকি বঙ্গবন্ধুর ছবি বিকৃতি, মামলা না নিয়ে উপায় আছে? ওপরের নির্দেশ ছাড়া পুলিশের কি ক্ষমতা আছে একজন ইউএনও-কে গ্রেফতার করে? ঘটনা মার্চ মাসের, গত চার মাস ইউএনও-র ওপর দিয়ে তো কম ঝড় যায়নি? তাকে হয়রানিমূলক বদলি করা হয়েছে এবং সেটি করেছে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়? বড়বড় নেতারা কিছুই জানতেন না? প্রধানমন্ত্রী মুখ খোলার আগে প্রশাসন বা আওয়ামী লীগ সবাই তো ইউএনও-র বিপক্ষেই ছিলেন?

ওবায়দুল্লাহ সাঁজু নিজে এডভোকেট, তিনি অন্যদের সাথে পরামর্শ করে যে ধারায় মামলাটি করেছেন, তাতে বিবাদীকে গ্রেফতার হতেই হতো? তারিক সালমানের ভাগ্য সেদিক থেকে ভালো যে, তিনি মাত্র দুই ঘন্টা হাজতে ছিলেন? অন্যকেউ হলে ‘খবর আছিলো’? যেমন সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী ইমতিয়াজ মাহমুদ ৫৭ ধারায় গ্রেফতার হয়েছেন। লংগদু ঘটনায় পাহাড়ীদের পক্ষে ফেইসবুকে লিখে নাকি তিনি সাম্প্রদায়িক উস্কানি দিয়েছেন? মনে হয়, এই ঘটনার পর আর কেউ পাহাড়িদের পক্ষে ফেইসবুকেও লিখতে সাহস পাবেনা? ইমতিয়াজ মাহমুদ কি লিখেছেন তার স্ক্রীনশট সোশ্যাল মিডিয়ায় সহজলভ্য, ওটা পড়ে যে কারো মনে হতে পারে, আমরা কোথায় যাচ্ছি? যিনি মামলাটি করেছেন, মামলার বয়ানে তিনি লিখেছেন, শত শত বছর ধরে বাঙালীরা নাকি পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাস করে আসছে, এবং ইমতিয়াজ মাহমুদরা নাকি সেই পাহাড়ী-বাঙ্গালী শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানে ঘাপলা পাকাচ্ছেন, ইত্যাদি? বেচারা ইমতিয়াজ, ‘কেন আপনি ইউএনও হইলেন না’? 

ইউএনও তারিক সালমান কি বঙ্গবন্ধুর নাম ব্যবহার করে ওপরে উঠতে চেয়েছিলেন? যে কার্ডটি তিনি ছাপিয়েছেন তাতে কি বঙ্গবন্ধুর ছবি ব্যবহারের আইনটি লংঘিত হয়নি? যারা বঙ্গবন্ধুর ছবি সংক্রান্ত আইনটি করেছেন, তারা কি একশ’ ভাগ সঠিক? এডভোকেট সাঁজু হাইব্রীড, তা এখন সবার জানা, তিনি সাময়িকভাবে দল থেকে বহিস্কার হয়েছেন, কিন্তু যতক্ষন না প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মুখ খুলেছেন, তার আগে অনেক আওয়ামী লীগ নেতাই তাদের ফেইসবুকে সাঁজুর পক্ষে পোস্টিং দিয়েছেন। দল হিসাবে স্থানীয় আওয়ামী লীগ বা কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ কি করেছেন? এই ঘটনার পর শিশুরা কি আর বঙ্গবন্ধুর ছবি আঁকতে চাইবে? তাদের পিতামাতা কি তাদের উৎসাহিত করবেন? যারা এই ধরণের প্রতিযোগিতা আয়োজন করেন, তারা কি আর সাহসী হবেন? বঙ্গবন্ধু কি কারো একার সম্পত্তি? বঙ্গবন্ধুর নামে সকল পক্ষ বাড়াবাড়ি করছেন। বঙ্গবন্ধুর জীবদ্দশায় তার চামড়া দিয়ে যারা ডুগডুগি বাজাতে চেয়েছেন বা তাকে যতভাবে সম্ভব নাজেহাল করেছেন, তারা কিন্তু বহাল তবিয়তে আছেন, প্রশ্ন হলো, বঙ্গবন্ধুর যে রাজনৈতিক সহনশীলতা তা আজকের নেতাদের মধ্যে কোথায়?

ইমরান সরকার মার্ খাওয়ার কারণটা কি? অধিকারের সেক্রেটারি ও সুপ্রিম কোর্টের এডভোকেট আদিলুর রহমান খানের মালয়েশিয়ায় ডিটেনশন ও পরে পত্রপাঠ দেশে ফেরৎ পাঠানোর ঘটনার রহস্য কি অজানাই থেকে যাবে? তথ্যমন্ত্রী ইনুর বিদায় কি আসন্ন? সদ্য ইনু বলেছেন, শেখ মুজিবকে মেরেছেন মুশতাক অর্থাৎ আওয়ামী লীগ আর দোষ দেয়া হচ্ছে আমাদের, মানে জাসদকে। ইনু গেলে মেনন-নূর কি থাকবেন? আর যদি মন্ত্রীপরিষদে রদবদল হয়, তাহলে ওনারা যেতে না চাইলেও যেতে হবে বটে? জাসদ নেতা ইনুর জন্যে মানুষের চিন্তার শেষ নেই, কারণ অনেকের রাগ আছে তার ওপর? লন্ডনে তারেক রহমানের লেক্সাস গাড়ির প্লেট নাম্বার হচ্ছে, ‘ভি৪ বিএনপি’ অর্থাৎ ভি ফর বিএনপি বা ভিক্টরি ফর বিএনপি (৪ বা ইংরেজি ফোরকে এখানে আক্ষরিক অর্থে ‘ফর’ ধরা হয়)। ইউরোপ-আমেরিকায় গ্রাহক ইচ্ছে করলে সামান্য পয়সার বিনিময়ে তার পছন্দের প্লেট নাম্বার নিতে পারেন। বাংলাদেশে এমত ব্যবস্থা নেই, তাই শেখ হাসিনাকে অনুরোধ করেই ‘৫২-৭১-২৬-১৬’ফোন নাম্বারটি চেয়ে নিতে হয়েছিলো।   

শেষ করবো লন্ডন দিয়ে: আমাদের দেশের গোলাপী এখন বিলাতে। সবাই মিলে বলছেন, গোলাপী আর ফিরবে না? আসলে? এ সময়ে লন্ডনে বাংলাদেশ বিষয়ক একটি সেমিনার নিয়ে কিছু কথাবার্তা হচ্ছে। লর্ড হাউজে ‘বাংলাদেশে সন্ত্রাস এবং আইনের শাসন’ শীর্ষক এই সেমিনারে অংশ নেয়ার সুবাদে বিএনপি’র ক’জনা নেতা এখন লন্ডনে। আওয়ামী লীগের তিনজন নেতা লন্ডনে গিয়েছিলেন, কিন্তু জামাত থাকায় তারা সেমিনারে যোগ দেননি। এর আয়োজক ছিলেন লর্ড আলেক্সজান্ডার চার্লস কারলিলি। এটি বৃটিশ সরকারি অনুষ্ঠান ছিলোনা। এ সেমিনার বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন সরকারের বিপক্ষে ছিলো। সাধারণত: এ ধরণের সেমিনারের পেছনে কোন না কোন লবি কাজ করে। এবারো এক বা একাধিক বাংলাদেশী সক্রিয় ছিলেন। এদের মধ্যে একজন ২০০১-এর পর বিএনপির বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছেন। কিন্তু কিছু না পাওয়ার বেদনায় তিনি এখন বিএনপি-জামাত ঘরানার লোক, তারেকের সাথে দহরম-মহরম। তাকে নাকি কথা দেয়া হয়েছে, বিএনপি ক্ষমতায় গেলে তিনি ‘হাইকমিশনার’ হবেন? ‘চাচায় কৈছে দিবো’- এই আনন্দে তিনি এখন খুশিতে নাচছেন!

শিতাংশু গুহ, কলাম লেখক।
২২শে জুলাই ২০১৭। নিউইয়র্ক।