পশু বলি,ভাবনা রবীন্দ্রনাথ।

সকাল থেকেই সেই বুড়োর কথা ভাবছিলাম। কোন বুড়ো ? আপনার আমার সবার প্রিয় সেই দাড়িওয়ালা বুড়ো। প্রাণসখা,প্রাণাধিক। যাকে মনের মণিকোঠায় স্থান দিয়েছি। ধর্মমত নির্বিশেষে। জীবনের এমন কোনো দিক নেই যা তাঁর লেখনী এড়িয়ে গেছে ! হ্যাঁ, এমনই তো বলা হয় ! বিশ্বাসও করি আমরা সবাই। তাই ভাবতে বসলুম ধর্মের নামে প্রাণিহত্যা নিয়ে উনি নিশ্চয় কিছু বলে থাকবেন। এমন একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কিছুতেই মনে পড়ছিল না। তবু মাথা চুলকেই চললাম। হাজার হোক, বয়স তো হয়েছে। পাঁকাল মাছের মত পিছল স্মৃতিশক্তিও। কিন্তু হাল ছাড়িনি। আচমকাই ইউরেকা বলে ইয়া বড়া এক লাফ। এমন একটা গুরুতর বিষয় ওঁর চোখ এড়িয়ে যাবে হয় নাকি। বিসর্জন নামের সেই মর্মস্পর্শী নাটক। আহা ! সে কি ভোলা যায় ! ওই শুনুন রাজা গোবিন্দমাণিক্য কি বলছেন ! হ্যাঁ রঘুপতি, নক্ষত্র রায় এঁরাও আছেন। মন্দিরে নাকি পশু বলি বন্ধ !   

“গোবিন্দমাণিক্য।    মন্দিরেতে জীববলি এ বৎসর হতে
                হইল নিষেধ।
নয়নরায়।    বলি নিষেধ!
মন্ত্রী।       নিষেধ!
নক্ষত্ররায়।    তাই তো! বলি নিষেধ!
রঘুপতি।       এ কি স্বপ্নে শুনি?

গোবিন্দমাণিক্য।    স্বপ্ন নহে প্রভু! এতদিন স্বপ্নে ছিনু,
                আজ জাগরণ। বালিকার মূর্তি ধ’রে
                স্বয়ং জননী মোরে বলে গিয়েছেন,
                জীবরক্ত সহে না তাঁহার।
রঘুপতি।    এতদিন
                সহিল কী করে? সহস্র বৎসর ধ’রে
                রক্ত করেছেন পান, আজি এ অরুচি!

গোবিন্দমাণিক্য।    করেন নি পান। মুখ ফিরাতেন দেবী
               করিতে শোণিতপাত তোমরা যখন।
রঘুপতি।    মহারাজ, কী করিছ ভালো করে ভেবে
                দেখো। শাস্ত্রবিধি তোমার অধীন নহে।
গোবিন্দমাণিক্য।     সকল শাস্ত্রের বড়ো দেবীর আদেশ।
রঘুপতি।    একে ভ্রান্তি, তাহে অহংকার! অজ্ঞ নর,
                তুমি শুধু শুনিয়াছ দেবীর আদেশ,
                আমি শুনি নাই?
নক্ষত্ররায়।   তাই তো, কী বলো মন্ত্রী,–
                এ বড়ো আশ্চর্য! ঠাকুর শোনেন নাই?
গোবিন্দমাণিক্য।    দেবী-আজ্ঞা নিত্যকাল ধ্বনিছে জগতে।
                সেই তো বধিরতম যেজন সে বাণী
                শুনেও শুনে না।
রঘুপতি।      পাষণ্ড, নাস্তিক তুমি!
গোবিন্দমাণিক্য।    ঠাকুর, সময় নষ্ট হয়। যাও এবে
                মন্দিরের কাজে। প্রচার করিয়া দিয়ো
                পথে যেতে যেতে, আমার ত্রিপুররাজ্যে
                যে করিবে জীবহত্যা জীবজননীর
                পূজাচ্ছলে, তারে দিব নির্বাসন-দণ্ড।
রঘুপতি।    এই কি হইল স্থির?
গোবিন্দমাণিক্য।    স্থির এই।”

আহা এই না হলে রাজা ! কি মানবিক ! কি মধুর !
স্যার এটা কি হল ? ভারি অন্যায় !
[চোখ তুলেই দেখি ভোলা !]
কেন বাবা ভোলানাথ, কি করলাম !
এই যে উল্টোপাল্টা পোস্ট লিখছেন।
কেন ভোলা ! আজ কোরবানি। তাই পশুবলি নিয়ে রবি ঠাকুর যা ভেবেছেন, রাজাকে দিয়ে বলিয়েছেন, সেটাই লিখছি।
কিন্তু সে তো মন্দিরের ব্যাপার। গোবিন্দমাণিক্য তো হিন্দু ছিলেন। কালীপূজার দিন এটা দেওয়া উচিত ছিল।

বড় ভুল হয়ে গেছে বাবা ভোলা ! কিন্তু কালীপূজাতে তো বলি প্রায় উঠেই গেছে। কতিপয় মন্দিরে হয়। আজকাল তো কুমড়ো বলিই বেশি হয়।

তাতে কি ? একটা হলেও তো হয় ! এটা কালীপূজাতেই দেবেন।
[এই বলে ভোলা গুনগুন করা শুরু করল]
কি রে ভোলা কি গান গাইছিস !

সবার হৃদয়ে রবীন্দ্রনাথ, সবার হৃদয়ে রবীন্দ্রনাথ, সবার হৃদয়ে রবীন্দ্রনাথ, সবার হৃদয়ে রবীন্দ্রনাথ,  
সবার হৃদয়ে রবীন্দ্রনাথ, সবার হৃদয়ে রবীন্দ্রনাথ, সবার হৃদয়ে রবীন্দ্রনাথ, সবার হৃদয়ে রবীন্দ্রনাথ,  
সবার হৃদয়ে রবীন্দ্রনাথ, সবার হৃদয়ে রবীন্দ্রনাথ, সবার হৃদয়ে রবীন্দ্রনাথ, সবার হৃদয়ে রবীন্দ্রনাথ,  
সবার হৃদয়ে রবীন্দ্রনাথ, সবার হৃদয়ে রবীন্দ্রনাথ, সবার হৃদয়ে রবীন্দ্রনাথ, সবার হৃদয়ে রবীন্দ্রনাথ,
সবার হৃদয়ে রবীন্দ্রনাথ, সবার হৃদয়ে রবীন্দ্রনাথ, সবার হৃদয়ে রবীন্দ্রনাথ, সবার হৃদয়ে রবীন্দ্রনাথ,  
সবার হৃদয়ে রবীন্দ্রনাথ, সবার হৃদয়ে রবীন্দ্রনাথ, সবার হৃদয়ে রবীন্দ্রনাথ, সবার হৃদয়ে রবীন্দ্রনাথ,  
সবার হৃদয়ে রবীন্দ্রনাথ, সবার হৃদয়ে রবীন্দ্রনাথ, সবার হৃদয়ে রবীন্দ্রনাথ, সবার হৃদয়ে রবীন্দ্রনাথ,  
সবার হৃদয়ে রবীন্দ্রনাথ, সবার হৃদয়ে রবীন্দ্রনাথ, সবার হৃদয়ে রবীন্দ্রনাথ, সবার হৃদয়ে রবীন্দ্রনাথ——
লেখক, দেবাসিস লাহা।