কিছুদিন আগেই পিনিক ভট্টচার্যী আসাদ নূর ধর্ম (পড়ুন ইসলাম) অবমাননার অভিযোগে গ্রেফতার হবার পর বলেছিলো ‘আসাদ নুর নামের এক উন্মাদকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। শুনছি তাকে ৫৭ ধারায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তার অপরাধ ৫৭ ধারার অপরাধ নয়। তার জন্য ব্লাসফেমি আইনের কথা বলছেন কেউ কেউ। এই ব্লাসফেমি আইন খ্রিস্টানদের আবিষ্কার। এই আসাদ নুরের অপরাধের জন্য ব্লাসফেমির দরকার নাই। তার অপরাধ মানবাধিকার লঙ্ঘনের অপরাধ। তাঁকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুন্যালেও বিচার করা যায়’। অর্থ্যাৎ আসাদ নূর বা অন্যান্য নাস্তিকরা যেহেতু ধর্মের সমালোচনা করে তাই তারা ধর্ম বিশ্বাসী বা বিশেষ বিশ্বাসের লোকজনের অনুভূতিতে আঘাত করে তাই এটি মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ। এর জন্য নাস্তিকদের ট্রাইব্যুনাল করে বিচার করতে হবে…।
এর কিছুদিন পরেই পিনিক ভটভটি দাবী করলেন কে বা কারা তাকে দৌড়ানি দিয়ে বিরাট ডর খাওয়াইছে আর তারপরই সে লিখল, ‘আমার লেখালেখি সকলে পছন্দ করবে না এটাই স্বাভাবিক। তাই যদি কারো অপছন্দ হয় তাহলে তারা লিখেই পাল্টা জবাব দেবে। আমার ভুল ধরিয়ে দিবে। দেশের সব মানুষ তো কখনই একই মতে বিশ্বাস করবে না। সামাজিক বিতর্কের মাধ্যমে সকল ভিন্নমত নানাভাবে সমাজে থিতু হবে। দেশে যখন রাজপথে রাজনৈতিক কর্মকান্ড প্রায় রুদ্ধ সেইসময় বিকল্প কণ্ঠস্বর হিসেবে ফেইসবুকে যারা লিখালিখি করে তাদের যদি এভাবে শারিরিক আক্রমনের হুমকি দেয়া হয় বা শারিরিক আক্রমণ করে স্তব্ধ করে দেয়ার চিন্তা করা হয় তাহলে দেশ কোথায় যাবে’? তার মানে নাস্তিকদের ধরে ধরে ট্রাইব্যুনালে বিচার করতে হবে আর পিনিক ভটভটির মত যারা ইসলামিস্টদের লেজুরবৃত্তি করবে, শরীয়ার শাসনের পক্ষে সাফাই গাইবে, মোল্লাতন্ত্রের পক্ষে কথা বলবে, মাদ্রাসা সন্ত্রাসের পক্ষে দাঁড়াবে, সেক্যুলারিজম ধ্বংসের সব রকম উশকানি দিবে তাদের সঙ্গে একমত না হলেও সেটা লেখার মাধ্যমেই ভদ্রভাবে জবাব দিতে হবে। বাহ! মত প্রকাশের স্বাধীনতার পক্ষে একি কথা আজ মথুরার মুখে…!
দিনের পর দিন এই লোকটি দেশের ইসলামি মৌলবাদীদের হয়ে ফেইসবুকে প্রচারণা চালিয়ে গেছে। ব্রাহ্মণবাড়ীয়াতে মাদ্রাসা ছাত্রদের তন্ডবের পক্ষে সাফাই গেয়েছে। যৌনবিকারগ্রস্ত আহমদ শফীর তেতুলতত্ত্বকে বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত বলে নারী মুক্তির বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে। অথচ তার মুসলিম স্ত্রী পুরুষের পাশাপাশিই কাজ করছে। সে দিনরাত সেক্যুলারদের বিরুদ্ধে ধর্মবাদীদের উশকে যাচ্ছে অথচ সে নিজে একজন মুসলিম নারীকে বিয়ে করেছে কোন ধর্ম পদ্ধতিতে এই বিষয়ে আজ পর্যন্ত খোলসা করে কিছু বলেনি। যদি সে নওমুসলিম না হয়ে থাকে তাহলে কিছুতে ইসলামী পদ্ধিতে তার বিয়ে হয়নি। ইসলামে আহলে কিতাবীদের বিয়ে করার অনুমতি দিলেও পিনিক ভটভটির মত পৌত্তলিককে বিয়ে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। যদি ধরে নেই পিনিক নওমুসলিম নন তবে তাদের বিয়েটি ইসলাম মতে অবৈধ এবং একজন মুসলিম নারীকে ইসলাম কোন কাফেরের সঙ্গে থাকতে দিবে না, এক্ষেত্রে বল প্রয়োগ করাই ইসলামী বিধান। এ ধরণের বিয়েকে নিরাপত্তা একমাত্র সভ্য সেক্যুলার সমাজই দিতে পারে। তবু তার দিনরাত সেক্যুলারদের মন্ডুপাত, তাদের বিরুদ্ধে বিষেদাগার তার নওমুসলিম পরিচয়টির বিষয়ে অনেকখানি নিশ্চিত করে আমাদের…।
বাংলাদেশে রাজ্জাক বিন ইউসুফ বা বাবু নাগরির মত মানুষজন কখনই নিরাপত্তাহীনতায় ভুগবে না। কারণ সেক্যুলার প্রগতিশীলরা কখনই যুক্তি চিন্তা ছাড়া গায়ের জোরে তাদের মত প্রকাশ করে না। ১৪ ডিসেম্বর এই প্রগতিশীলদের লিস্ট করেই হত্যা করেছিলো ইসলামপন্থিরা। কারণ ধর্ম ভিন্নমতকে দমন করতে হত্যা পর্যন্ত করতে নির্দেশ দেয়। এসব কারণেই ফরহাদ মজহার গুম হবার দাবী করলে প্রথমেই দাবী নিয়ে সন্দেহ জাগে। ফরহাদ মজহার এদেশের জিহাদ কতলবাদীদের বুদ্ধিজীবী। তাকে হামলা করার সাহস খোদ বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের নেই। থাকলে আহমদ শফীর মত মৌলবাদীর সামনে বাংলাদেশ সরকারের একজন প্রধানমন্ত্রী মাজা বাঁকা করে নতজানু হয়ে হাত কচলাতো না। প্রমাণ হয়েছে ফরহাদ মজহারের দাবী ভুয়া ছিলো। তাকে ফ্রড মজহার নামে ডাকার যৌক্তিকতাও এর মধ্য দিয়ে প্রমাণিত হয়েছে। পিনিক ফরহাদ মজহার গংয়ের একজন ক্ষুদ্র গেলমেন। তার মাফলার বাহিনীর দাবী কতখানি সত্য তা সরকারের গোয়েন্দাবাহিনী খোঁজ করলে বের করতে পারবে। আমার তো মনে হয় তার মাফলার বাহিনী একটি চিত্রনাট্যের প্রথম অঙ্ক। নাটকের সমাপ্তিতে হয়ত একজনের মাফলার টেনে খুলে ফেলে পিনিক ভটভটি কোন কুখ্যাত নাস্তিককে আবিস্কারের দাবী করে বসবে!…
যখন মৃত্যু ভয়ে নাস্তিকরা দেশের মধ্যে পালিয়ে বেড়াচ্ছে, মুসলমান রাষ্ট্রের ততধিক মুসলমান প্রধানমন্ত্রী চোখ রাঙাচ্ছে তখন এই পিনিক দাঁত কেলিয়ে হেসেছে। মুক্তমনা ব্লগের বিরুদ্ধে উঠে পড়ে লেগেছিলো। বিপদগ্রস্ত নাস্তিকদের পায়ের নিচে শেষ মাটিটুকু এই ইতর টেনে নিয়ে ইসলামী জল্লাদের হাতে তুলে দিতে ফেইসবুকে উশকানি দিয়েছে। এই বরাহ শাবকটি কতখানি ইতরের ভূমিকায় নেমেছিলো তা মৃত্যুর আগে ওয়াশিকুর বাবু তার ফেইসবুকে দুঃখভরে লিখেছিলো, ‘মোল্লা স্বাধীন, জঙ্গি স্বাধীন, ছাগু স্বাধীন, মুমিন স্বাধীন, দুর্নীতিবাজ স্বাধীন, রাজনৈতিক নেতা স্বাধীন, পাতি নেতা স্বাধীন, ধর্ষক স্বাধীন, সামরিক বাহিনী স্বাধীন, সুশীল সমাজ স্বাধীন, পিনাকী স্বাধীন, শফি হুজুর স্বাধীন, দলদাস স্বাধীন, গার্মেন্টস মালিক স্বাধীন, লঞ্চ মালিক স্বাধীন… স্বাধীন নয় কৃষক-শ্রমিক…’।
পিনিকের নামটি যাদের সঙ্গে বসেছে তাদের গেলমেন হয়ে তার মাফলার বাহিনীর গপ্প বিশ্বাস করাটা আমার জন্য একটু কঠিনই…।