বাংলাদেশের পররাষ্ট্র ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পূর্বনির্ধারিত ভারত সফর বাতিল করেছেন।স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এখন পর্যন্ত তার ভারত সফর বাতিলের কারণ ব্যক্ত না করলেও,পররাষ্ট্রমন্ত্রী তার এই সফর বাতিল করার জন্য অভ্যন্তরীন প্রয়োজনীয়তার কথা বলেছেন।বিদেশের একটি প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম ইঙ্গিত দিয়েছে যে,এই সফর বাতিলের পিছনে রয়েছে – ভারতের নাগরিকত্ব আইন সংশোধনের প্রতিক্রিয়া।
নাগরিকত্ব আইন সংশোধনের ফলে, পাকিস্তান,বাংলাদেশ ও আফগানিস্তান থেকে উচ্ছেদ হয়ে ভারতে আসা রাষ্ট্রহীন হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান-শিখ-জৈন-পার্সি ধর্মাবলম্বীরা ভারতের বৈধ নাগরিকত্ব পাবে।মুসলিম লীগ সহ ভারতের কিছু সংখ্যালঘু রাজনৈতিক দল,সদ্য পাশকৃত এই নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করার ঘোষণা দিয়েছে।ভারত রাষ্ট্রের ধর্মনিরপেক্ষতা পৃথিবীর সবচেয়ে আশ্চর্যজনক একটি কৌতুক।ভারতে যদি সংখ্যালঘুরা ধর্মের নামে রাজনৈতিক দল গঠন করে, তাহলে সেটাকে বলা হয় – ধর্মনিরপেক্ষতার প্রকৃষ্ট রূপ; পক্ষান্তরে সংখ্যাগরিষ্ঠরা যদি রাজনৈতিক দল গঠন করে,তাহলে সেটাকে বলা হয় – সাম্প্রদায়িকতার নিকৃষ্টতম রূপ।ধর্মনিরপেক্ষতার নামে কংগ্রেস, তৃণমূল, স পা প্রভৃতি রাজনৈতিক দল, ভারতের সংখ্যাগরিষ্ঠ সম্প্রদায়ের উপর বৈষম্য ও নির্যাতনের বুলডোজার চালিয়ে যাচ্ছে। ঐ অনাচারকে সিদ্ধ করতে,সো কলড সেক্যুলার রাষ্ট্র নিয়ন্তারা, হিন্দুদের মধ্যকার জাতিভেদ – ভাষা বিদ্বেষ প্রভৃতি ইস্যু উস্কে দিয়ে,ঘোলা জলে মাছ শিকার করে যাচ্ছে।সম্প্রতি আধুনিক শিক্ষা বিস্তারের ফলে, ভারতের সংখ্যাগরিষ্ঠের মানসে ব্যাপক পরিবর্তন সাধিত হয়েছে।তাদের অধিকার সচেতনতা বেড়েছে।তারা এখন উপলব্ধি করতে পারছে যে, ধর্মনিরপেক্ষতার নামে তাদের কি জঘন্য ও নিষ্ঠুর ভাবে প্রতারিত করা হচ্ছে।তারা পরিবর্তন চায়।সঙ্গত কারণেই প্রতিপক্ষ সংখ্যাগরিষ্ঠ সম্প্রদায়ের এই আত্মসচেতনতা-কে ভালো দৃষ্টিতে দেখছে না।প্রশ্ন হচ্ছে,প্রতিবেশী দেশগুলো থেকে ভারতে আসা হিন্দু শরনার্থীরা কি ভারতের সংখ্যালঘু নেতাদের পাকা ধানে মই দিয়েছে ? নাকি তারা ভারতীয় সংখ্যালঘুদের বিষয়-সম্পত্তি দখল করবে ? মোটেও না।সেই ক্ষমতা শরনার্থী হিন্দুদের নেই।এমনকি ভারতীয় হিন্দুরা যে অঞ্চলে সংখ্যালঘু, সেখানে তারা বিধর্মীদের হাতে বেধড়ক মার খাচ্ছে।তাহলে ভারতীয় সংখ্যালঘু দলগুলোর কেন,হিন্দু শরনার্থীদের উপর এতো আক্রোশ ? ঐ দলগুলো, হিন্দু শরনার্থীদের অধিকার প্রাপ্তির বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে – কেন সাম্প্রদায়িক বিভাজন ও বিদ্বেষ উস্কে দিচ্ছে ? বিষয়টি অত্যন্ত উদ্বেগের।ধর্মের ভিত্তিতে দেশভাগ হয়েছে।দেশভাগের এমন কোন শর্ত ছিল না যে ― ভারত চিরকাল ধর্মনিরপেক্ষ থেকে, হিন্দুদের মানবিক অধিকার থেকে বঞ্চিত রাখবে।ধর্মনিরপেক্ষতা ভারতীয় পরিবারতন্ত্রের বাটপাড়ি।পরিবারতন্ত্রের চাঁইগুলো মহাধুরন্ধর।এরা বিদেশি-বিধর্মীদের দেহদান করছে।নিজেদের চারিত্রিক অধঃপতনকে আড়াল করতে,ধর্মনিরপেক্ষতার অপপ্রয়োগ ও অপব্যবহার করে – সমগ্র হিন্দু জাতির চরিত্রহনন করার চেষ্টা করেছে।মক্ষীরানিরা আর বেশিদিন পাপের ফসলকে ভাইপো বলে চালিয়ে দিতে পারবে না।সত্যের সূর্যকে মিথ্যার মেঘ বেশিদিন ঢেকে রাখতে পারে না।
ভারতে আসা শরনার্থীদের বেশিরভাগই এসেছে বাংলাদেশ থেকে।যে কারণে বাংলাদেশের নামটি অধিক উচ্চারিত হচ্ছে।সঙ্গত কারণেই বাংলাদেশ ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার এতে অখুশি হয়েছে এবং হওয়াটাই স্বাভাবিক।এখানে একটি বিষয় পরিস্কার করা দরকার যে, আওয়ামী লীগ সরকার কখনো হিন্দুদের উপর অত্যাচার করেনি।সুতরাং তাদের কারণে একটি হিন্দুরও ভারতে যাওয়ার অভিযোগ উত্থাপিত হতে পারে না।হিন্দুরা বাংলাদেশ ছেড়ে ভারতে গেছে, মূলত আওয়ামী লীগের প্রতিপক্ষ পাকিস্তানপন্থী রাজনৈতিক ও সামাজিক শক্তি সমূহের অত্যাচারে।আমি দায়িত্ব নিয়ে বলছি,শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে বাংলাদেশের সংখ্যালঘু হিন্দুরা যতটা সুখে-শান্তিতে বসবাস করেছে ; পশ্চিম বঙ্গের সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দুদের ততটাই অশান্তিতে রেখেছে- মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৃণমূল কংগ্রেস।ষড়যন্ত্রকারীরা বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করতে,না না ধরনের গুজব রটিয়ে অপ্রীতিকর ঘটনা যে ঘটায় নি – তা নয়।কিন্তু বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার, যথাযথ আইনী পদক্ষেপ গ্রহণ করে – দ্রুত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনেছে।পশ্চিম বঙ্গে যে অঞ্চলে হিন্দুরা সংখ্যালঘু,সেখানেও না না ধরনের অপকৌশল অবলম্বন করে হিন্দুদের পিটিয়ে-কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে, তাদের বাড়ি ঘর – দোকানপাট লুটতরাজ করে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে,হিন্দু নারীদের ধর্ষণ করে মেরে ফেলা হয়েছে।হিন্দুরা রাজ্য সরকারের কাছ থেকে কোন সহায়তা পায় নি।মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পুলিশ এসে উল্টো হিন্দুদের জেলে ঢুকিয়েছে।
বাংলাদেশের ‘আওয়ামী লীগ’ মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী রাজনৈতিক দল।প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বর্তমান বিশ্বের অন্যতম দক্ষ ও সফল রাষ্ট্রনায়ক।তিনি বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির যে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন,তা অন্যান্য মুসলিম রাষ্ট্রে অচিন্তনীয়।বাংলাদেশে পাকিস্তানপন্থীরা রাষ্ট্রক্ষমতার অপব্যবহার করে – দীর্ঘকালব্যাপী হিন্দুদের যে মেরে-কেটে দেশছাড়া করেছে, সেই দায় আওয়ামী লীগ সরকারের ঘাড়ে চাপানোর চেষ্টা – চরম অন্যায়।বিষয়টি ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের মাথায় রাখতে হবে এবং বাংলাদেশ সম্পর্কে আরো সতর্ক হয়ে কথাবার্তা বলতে হবে।বাংলাদেশে যদি আবার পাকিস্তানপন্থীরা ক্ষমতায় ফিরে আসে, তাহলে সংখ্যালঘু হিন্দুদের জীবনে পুনরায় নরকের অন্ধকার নেমে আসবে।সেই সঙ্গে আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, বাংলাদেশ – ভারত সুসম্পর্ক ― দক্ষিণ এশিয়ার স্থিতিশীলতা ও অগ্রগতির অন্যতম নিয়ামক।
ভারত যদি বাংলাদেশ ও পাকিস্তানকে একই দৃষ্টিতে দেখে, সেটা হবে বিরাট ভুল।পাকিস্তান হচ্ছে ভারতের সবচেয়ে বড় শত্রু ও অনিষ্টকারী রাষ্ট্র ; পক্ষান্তরে বাংলাদেশ হচ্ছে ভারতের গুরুত্বপূর্ণ মিত্র ও উপকারী রাষ্ট্র।