সবাই মিলে দীপ্তরুপের সাম্প্রদায়িক ভুলগুলো চিহ্নিত করুন তো……………।।।

সবাই মিলে দীপ্তরুপের সাম্প্রদায়িক ভুলগুলো চিহ্নিত করুন তো……………
*****************************
~দীপ্তরূপদার লেখা~
আনন্দবাজারের প্রশ্ন: সাম্প্রদায়িকতা তো বামপন্থী আদর্শের অন্যতম প্রধান শত্রু, কারণ শ্রমজীবী মানুষের মধ্যে সে কেবল ভেদাভেদ সৃষ্টি করে না, অত্যন্ত কুৎসিত, নিষ্ঠুর এবং হিংস্র ভেদাভেদ সৃষ্টি করে।

উ: এখানে বাংলাদেশের কথাটা খুব প্রাসঙ্গিক বলে মনে করি। সেখানে সাম্প্রদায়িক শক্তির বিরুদ্ধে বিরাট লড়াই চলছে। যাঁরা সেই লড়াই করছেন, তাঁরা প্রচণ্ড সমস্যা এবং আক্রমণের শিকার হয়েও মাথা নত করেননি। সেখানকার মানুষ যে এই লড়াইটা করতে পারছেন, তার কতকগুলো কারণ আছে। এক, দেশভাগের সময় একটা ব্যাপার হয়েছিল। বেশির ভাগ জমিদার হিন্দু ছিলেন, তাঁরা পালিয়ে গেলেন, ফলে বিনা যুদ্ধে একটা ভূমি সংস্কার হয়ে গেল, যেটা আর্থিক ভেদাভেদ অনেকটা কমিয়ে দিল এবং তার ফলে সমবেত আন্দোলন গড়ে তোলা তুলনায় সহজ হল। দুই, বাংলা ভাষা নিয়ে আন্দোলনে সমাজের নানা দিক থেকে বহু মানুষ একসঙ্গে যোগ দিলেন, এর ফলে পরবর্তী কালে শিক্ষা বা স্বাস্থ্যের মতো নানা ক্ষেত্রে সামাজিক অগ্রগতি সহজ হল। বিশেষ করে মেয়েদের ভূমিকা অনেক জোরদার হতে পারল। বিভিন্ন সামাজিক মাপকাঠিতে বাংলাদেশ এখন ভারতের চেয়ে এগিয়ে, এর পিছনে অনেকে মিলে কাজ করার এই ধারাটি খুব বড় ভূমিকা নিয়েছে। এবং এটাই আবার বিভিন্ন স্তরের মানুষকে সাম্প্রদায়িক শক্তির বিরুদ্ধে একজোট হতে সাহায্য করেছে। এ থেকে আমাদের অবশ্যই শিক্ষা নেওয়া জরুরি।

১৮ জুলাই, ২০১৭

******

প্রসঙ্গ: ১৮ ই জুলাইতে আনন্দবাজারকে অমর্ত‍্য সেনের দেওয়া বাণী

গোটা সাক্ষাৎকারে “হিন্দুত্ববাদীদের” শ্রাদ্ধ করার পর, শেষ প্রশ্নের উত্তরে মহান বামপন্থী তাত্ত্বিক অমর্ত্য সেন বললেন, বাংলাদেশে নাকি “সাম্প্রদায়িক শক্তির” বিরুদ্ধে বিরাট লড়াই চলছে।
হে পাঠক লক্ষ্য করুন, গোটা সাক্ষাৎকারে মহান সেন, সাম্প্রদায়িক শক্তি বলতে “হিন্দুত্ববাদী” এই নাম ধরেই নির্দিষ্ট করেছেন। কিন্তু বাংলাদেশের ক্ষেত্রে শুধুমাত্র “সাম্প্রদায়িক শক্তি”। কেন?? একটু ভাবা শুরু করুন।
তারপর ভেবে দেখুন, বাংলাদেশে “সাম্প্রদায়িক শক্তির বিরুদ্ধে বিরাট লড়াই” কিভাবে চলছে।
১. বাংলাদেশের সংবিধান শুরু হয় “বিসমিল্লাহিরহমানুররহিম” দিয়ে। এটা “সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে বিরাট লড়াই।”
তবে ভারতে যদি সংবিধানের শুরুতে “জয় শ্রী রাম”এর দাবী ওঠে তা হবে “সাম্প্রদায়িক হিন্দুত্ববাদ।”

২. ওদেশে ধর্মবিরোধীতা করলে সাতান্ন না ছাপ্পান্ন কি একটা ধারায় আন্ডা থেরাপী থেকে বাঁচতে জার্মানী টার্মানীতে পালাতে হয়। এটা হচ্ছে “সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে বিরাট লড়াই।”
আর এদেশে একজন নমাজী ধর্মপ্রাণ মুসলিম, মকবুল ফিদা হুসেইন, নিজের আঁকা অশ্লীল ছবির নীচে হিন্দু দেবীর নাম লিখে প্রতিবাদের মুখোমুখি হলে তা হয় “সাম্প্রদায়িক হিন্দুত্ববাদ।”

৩. বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হেফাজতের দাবী মেনে নিতে পারেন, খোলা জনসভায় দেশকে “মদিনা সনদ” অনুযায়ী চালানোর ঘোষণা দিতে পারেন। এ হল “সাম্প্রদায়িক শক্তির বিরুদ্ধে বিরাট লড়াই”। কিন্তু এদেশে যদি “রামরাজত্ব”র কথা ওঠে তা হবে “সাম্প্রদায়িক হিন্দুত্ববাদ”


তিনটে পয়েন্ট দেখালাম পাঠক। ক্রসচেক করে দেখে নিন “বিসমিল্লাহির রহমানুর রহিম” একটি নির্দিষ্ট ধর্মের কিনা, “ব্লাসফেমী আইন” বাংলাদেশে আছে কিনা, “মদিনা সনদ”এ বিধর্মীদের কতটুকু ‘সমানাধিকার ছিল’, এবং এগুলো সব‌ই ইসলামী নিয়মনীতি কি না।
অর্থাৎ মহান সেন বাংলাদেশে “সাম্প্রদায়িক শক্তির বিরুদ্ধে বিরাট লড়াই” বলতে হিন্দুত্ববাদের বিরুদ্ধে ইসলামী দ্বীন স্থাপনার কথাই কি বোঝালেন?
পাঠক মন দিয়ে দেখুন, মহান সেন কিন্তু তার পিতৃভুমি বাংলাদেশে, সাম্প্রদায়িক শক্তি কারা তার নামোল্লেখ করেননি।
আপনি কি জানেন পাঠক, বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক শক্তি কারা??
না আপনি জানেন না।
শুনুন, দেশভাগের পর ওখানে বিপ্লব হয়েছিল। অমর্ত্য সেনের ভাষায় “একটা ব্যাপার” হয়েছিল। যার জন্য “হিন্দু জমিদাররা” পালিয়ে আসেন। ফলে ভুমিসংস্কার হয়ে ভেদাভেদ কমে আজ বাংলাদেশ গোটা সৌরজগতে অদ্বিতীয় একটি নাম।
ওকে ঠিক আছে।
১. যোগেন মন্ডল। যিনি দলিত-মুসলিম ঐক্য করে দেশভাগের পর ওপারে গেছিলেন। তারপরেরটা ইতিহাস। তাকে পালিয়ে এপারে এসে উঠতে হয়। হে পাঠক মহান সেনকে জিজ্ঞাসা করুন মহাপ্রাণ যোগেন মন্ডল কোন এলাকার “হিন্দু জমিদার” ছিলেন।

২. নোয়াখালি রায়ট। বর্ণনা পাবেন ইন্টারনেটেই। নমশূদ্র এলাকা। চারদিক দিয়ে ঘিরে শেষ করে দিয়েছিল। কেন করেছিল? হে পাঠক, ওরা কি “হিন্দু জমিদার” ছিল?

৩. 1951 র সেনসাসে, লক্ষ্য করুন পাঠক, দেশভাগের চার বছর পর‌ও, পুর্বপাকিস্তানে হিন্দুর পরিমান 22.05%… বর্তমানে সেই বাংলাদেশে হিন্দু জনসংখ‍্যা ঐ 8% এর মতো।
ভাবুন পাঠক, একটা দেশের 14% লোক জমিদার ছিল!!! অর্থাৎ জমিদার প্রতি মোটামুটি ছ’খানা করে প্রজা!!! হাসবেন না পাঠক, মহান “ওয়েলফেয়ার অর্থনীতিবিদ” ওপার থেকে পালিয়ে এপারে এসে এইসব অঙ্ক‌ই দেখাচ্ছেন। শিখুন বরং!! ওনাকে অঙ্কের ফিল্ডস মেডেলটাও দেবার ব্যবস্থা করা যায় কিনা সেটাও ভাবতে পারেন।
হে পাঠক, মহান সেনের ‘ওয়েলফেয়ার ইকোনমি’ মতে, হিন্দু কমিউনিটির এথনিক ক্লিনজিং হ‌ওয়া মানে “বিনা যুদ্ধে” উন্নয়ন!!!
আজ যদি “মাইনরিটির বিরুদ্ধে” এক‌ইরকম বিষাক্ত দাবী ভারতেও ওঠে, তবে তা “সাম্প্রদায়িক হিন্দুত্ববাদ” হবে? নাকি “একটা ব‍্যাপার” হবে যাতে বিনা যুদ্ধে ভুমিসংস্কার হয়??!!


পুরোটা পড়ে ভেবে দেখুন পাঠক। বাংলাদেশ থেকে মার খেয়ে, আত্মীয় পরিজনকে খুন, ধর্ষণ হতে দেখে, জমি দখল হয়ে যেতে দেখে, কপর্দকশূন‍্য হয়ে রাতের অন্ধকারে এসে উদ্বাস্তু কলোনীতে যারা উঠলেন, সাম‍্যবাদী সরকারের গুলিতে যারা মরিচঝাঁপিতে রাতারাতি লাশ হয়ে কুমীরের পেটে গেলেন, তারা সবাই… সবাই “হিন্দু জমিদার” ছিলেন এ আপনি বিশ্বাস করেন তো?
হ‍্যাঁ তারা হিন্দু নামক একটি সম্প্রদায়ের ছিলেন বটে। কিন্তু একটি লোক, কতবড় নির্লজ্জ হতে পারলে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎমাপের একটি এথনিক ক্লিনজিংএর হয়ে প্রকাশ্যে মেনস্ট্রিম মিডিয়ায় “অ্যাপোলোজিয়া” হাজির করতে পারেন এটা ভেবে দেখবেন কি একবার?

যদি না দেখেন, তবে মনে রাখবেন, আজ নয় কাল এধরণের নির্লজ্জ দালালীর বিষক্রিয়া শুরু হবেই। যারা পাকিস্তান থেকে, বাংলাদেশ থেকে কপর্দকশূন‍্য হয়ে এসেছে, একদিন তারাও ভাবতে পারে, নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ নির্দেশিত পথে বিনাযুদ্ধে ভুমিসংস্কারপদ্ধতির কথা। তখন তা সুখকর হবে আদৌ? এই বুদ্ধিজীবীর মোড়কে বিদেশে বসবাসকারী এজেন্টগুলির সাথে সাথে আপনিও কিন্তু সেইদিন দায়ী থাকবেন।
এদের কিন্তু বিদেশে বাড়ি, গাড়ি, জরু, গরু সব আছে। আপনি কি করবেন, ভেবে রেখেছেন তো??
Diptarup Samyadarshi