আরো একবার প্রমাণ হলো বাংলার নিজস্ব্ যা তার সবই ‘হিন্দুয়ানী’! মার্জনা করবেন বন্ধুরা, আপনারা সবাই বুকে হাত দিয়ে বলুন ‘অনিক সরকার’ নাম শুনে আপনাদেরও প্রথমে কোন হিন্দুর নাম মনে হয়নি?
বাঙালীদের কিন্তু নাম শুনলেই বুঝা যায় সে বাঙালী। তার পদবী আর নাম শুনে বলা যায় মানুষটি কোন অঞ্চলের। কিন্তু মুসলমানদের কাছে সবটাই হিন্দুয়ানী। ভারতের জাতি কেন্দ্রিক যত রাজ্য আছে সবার ধর্ম হিন্দু হলেও তাদের নাম শুনেই বলা যায় লোকটি জাতিতে কি। বাঙালী, গুজরাটি, পাঠান, পাঞ্জাবী, মালোয়… এই জাতিগুলোর ধর্ম হিন্দু হওয়ার পরও জাতিতে ভিন্ন হওয়াতে তাদের নাম পদবী আলাদা হয়ে গেছে। তাই আমরা যাকে ‘হিন্দু নাম’, ‘হিন্দু পদবী’ ‘হিন্দু কালচার’ বলি সেটা আসলে আমাদের নিজস্ব তৈরি করা দুষিত এক সাম্প্রদায়িক ভেদ চিন্তা থেকে সৃষ্ট।
এক সময় বাঙালী মুসলমানদের নাম শুনেও বলা যেতো লোকটি জাতিতে বাঙালী। একটা প্রমাণ দেখাই, সাহিত্যিক মীর মোশাররফ হোসেন তার আত্মজীবনীতে বলছেন তার সময়কাল হতে মাত্র ৬০ বছর আগে, মানে এখন সেটা দুইশো বছর হবে, তখন বাঙালী মুসলমানদের নামগুলো রাখা হত বাংলাতে। তাদের জীবনের হাসিকান্না পোশাক পরিচ্ছেদ সবই ছিলো বাংলা ও বাঙালীর যেমন হয়ে থাকে। মোশাররফ হোসেন যেটাকে ‘হিন্দুয়ানী’ বলে ঘৃণা করেছেন। তিনি লিখেছেন, ‘আমি সেই সময়ের কথা বলিতেছি। পঠন পরিচ্ছেদ হিন্দুয়ানী, চালচলন হিন্দুয়ানী, রাগ ক্রোধ হিন্দুয়ানী, কান্নাকাটি হিন্দুয়ানী, মুসলমানদের নামও হিন্দুয়ানী। যথা- সামসুদ্দিন- সতীশ, নাজমুলহক- নাজু, বোরহান- বীরু, লতিফ- লতু, মশাররফ- মশা, দায়েম- ডাশ, মেহেদি- মাছি, ফজলুল করিম- ফড়িং এই প্রকার নামে ডাকা হয়।’ (মশাররফ রচনা সম্ভার পৃষ্ঠা-২৫০)।
বাঙালী মুসলমানদের নাম আরবিতে রাখা ও সমস্ত বাঙালীত্ব (যেটাকে হিন্দুয়ানী বলা হয়) মুছে ফেলতে তিতুমীর সামাজিক আন্দোলন শুরু করেন। সৌদি আরব থেকে হজ শেষে দেশে ফিরে তিতুমীর মুসলমানদের হিন্দুদের থেকে পৃথক হওয়ার জন্য কঠরভাবে নির্দেশ দেন। সেই ধারাতে মাত্র দুশো বছরের মধ্যে বাঙালী মুসলমান বাংলা ও বাঙালীর নিজস্ব সব কিছুকে আজ ‘হিন্দুয়ানী’ জুজু দেখছে। এই যে ‘অনিক সরকার’ নাম শুনেই খোদ একজন ব্রাহ্মণ থেকে নওমুসলিম হওয়া লোক তাকে হিন্দু বলে ঠাওরিয়েছে এটা তো তার দোষ না। এই যে বাংলা ভাষার জন্য জীবন দেয়ার জন্য একক কৃতিত্ব নেয়া বাঙালী মুসলমান তাদের নামটাই রাখে আরবীতে! কেন? ঐ হিন্দু আর হিন্দুয়ানী থেকে নিজেদের দূরে রাখা। গোলাম মুহাম্মদ সরওয়ার, তালুকদার, জাকির… এরকম নাম শুনলে লোকটি মুসলমান ছাড়া আর কোন হদিস পাওয়া যায় না। যারা বাংলাদেশকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের কেন্দ্র ও নিজেদের বাঙালী জাতির অস্তিত্ব বলে মনে করেন তারা নিজেরাই সন্তানের নাম রাখেন আরবীতে। তবু কেউ কেউ যখন সন্তানের নাম বাংলায় রাখেন তখন এরাই সেটাকে হিন্দু বলে অনুমান করে বসে থাকে!