একটি নির্ণায়ক ইতিহাস " কিভাবে শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জী কে হত্যা করা হয়েছিল "____

একটি নির্ণায়ক ইতিহাস ” কিভাবে শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জী কে হত্যা  করা হয়েছিল “____

A selected history ” how Dr Shyamaprasad Mookherje was killed by ____

(১ ম পর্ব) –  ” বাজপেয়ী তুমি ফিরে যাও – গিয়ে সকলকে  বলো – আমি বিনা পারমিটেই জম্মু কাশ্মীরে প্রবেশ করেছি ”
———————————————————————————————–
১৯৫৩ এর ৯ ই মে শ্রদ্ধেয় ডঃ শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জী পাঞ্জাবের আম্বালার মাঠে এক বিরাট জনসভায় পন্ডিত জহরলাল নেহেরুর কাশ্মীর নীতির তুলোধোনা  করলেন। কেন আলাদা সংবিধান /  কেন আলাদা  নিশান / কেন আলাদা উজিরি আজম / কেন আলাদা সুপ্রীম কোর্ট  তার  ব্যাখা চাইলেন  নেহেরুর কাছে।

ওই দিনই জলন্ধরের ১৫ কিমি দূরে ফাগোয়ারাতে আর একটি জনসভায় শেখ আবদুল্লার এটিটিউড নিয়ে প্রশ্ন তুললেন। তিনি বললেন,” শেখ আবদুল্লা আমাকে কাশ্মীরে প্রবেশ করতে নিশেধ করেছেন কিন্তু আমি বিনা পারমিটেই কাশ্মীরে ঢুকব ” ।পরের দিন তিনি পাঞ্জাবেই রইলেন ।

১১ ই মে ১৯৫৩   বিকাল ৪.০০ টায় ডঃ মুখার্জীর  জিপ কাশ্মীর – পাঞ্জাব সীমান্তের দিকে রওনা হলো। সঙ্গে ডঃ মুখার্জীর প্রাইভেট সেক্রেটারী টেকচাঁদ ঠাকুর – জনসঙ্ঘ নেতা শ্রী গুরু দত্ত বৈদ এবং ডঃ মুখার্জীর বিশেষ প্রতিনিধি  অতি বিশ্বস্ত যুবক  শ্রী  অটল বিহারী বাজপেয়ী।

ঠিক বিকেল ৪.৪৫ মিনিটে  মাধোপুর চেকপোস্ট পার হয়ে জম্মু সীমান্তের ভিতরে  রাভী নদীর সেতু অর্ধেক পার হওয়ার পরেই সেতুর উপরে জম্মুর কাঠুয়া থানার পুলিশ অফিসার ডঃ মুখার্জীকে  থামিয়ে দিলেন। ডঃ মুখার্জীর হাতে একটা নির্দেশ নামা ধরিয়ে দিলেন  যাতে  লেখা আছে  – ডঃ মুখার্জীর জম্মু কাশ্মীরে প্রবেশের কোনো অনুমতি নেই।

তখন ডঃ মুখার্জী তার একান্ত বিশ্বস্ত অনুগামী যুবক অটল বিহারী বাজপেয়ীকে বললেন  , ” বাজেপেয়ী  তুমি ফিরে যাও  – গিয়ে দেশবাসীকে বলো  – আমি বিনা পারমিটেই জম্মু কাশ্মীরে প্রবেশ করেছি ”

এর পরে সেই  রাতে তাদেরকে শ্রীনগরে নিয়ে যাওয়া হলো। শ্রীনগর শহর থেকে ৭  মাইল দূরে জঙ্গল ঘেরা সাপ প্যাঁচায় পরিপূর্ন  অত্যন্ত স্যাঁতসেঁতে মনুষ্য বসবাসের অনুপযুক্ত  কুঠুরিতে  ডঃ মুখার্জী ও  তার  সহযোগী দের বন্দী  করে রাখা  হলো।
———————————————————————————-
( ২ য় পর্ব ) ডঃ মুখা্র্জী হিমাঙ্কের নিচে  চলে যাওয়া তাপমাত্রায় বারে বারে একটা গরম পোষাক ভিক্ষে  চাইলেন –   অসহায় বাগানের মালী ফ্যাল ফ্যাল করে উনার দিকে তাকিয়ে থাকলো –
———————————————————————————-
১১ ই মে সন্ধ্যায় ডঃ মুখার্জী আর তাঁর সহযোদ্ধাদের গ্রেপ্তার করে শ্রীনগর শহরের  ৭ মাইল দূরে  ডাল লেকের  পাশে একটি প্রাইভেট কটেজে নিয়ে যাওয়া হলো। সাপ আর প্যাঁচায় পরিপূর্ন এক জঙ্গল ঘেরা জায়গা। চারিপাশে  পাহাড়  – জঙ্গল যেন   এক অন্য গ্রহ। তাপমাত্রা হিমাঙ্কের নিচে চলে যাওয়ায় ডঃ মুখার্জী  অসুস্থ বোধ করতে লাগলেন।

মনুষ্য বসবাসের অনুপযুক্ত ঐ কটেজের মেঝেতে শুধুমাত্র একটা তাকিয়া পাতা ছিল। ঐ  রাতে ভারতের  অন্যতম  চিরশ্রেষ্ঠ  সন্তান  বাংলার  বাঘ স্যার আশুতোষ মুখার্জীর  বীর পুত্র শ্রদ্ধেয় ডঃ শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জী  কাশ্মীরের ঠান্ডা সইতে না পেরে  –   বারে বারে একটা গরম পোষাক ভিক্ষে চাইলেন  শেখ আব্দুল্লার  কর্চারীদের কাছে  –  অসহায়  বাগানের মালী ফ্যাল  ফ্যাল করে উনার দিকে তাকিয়ে থাকল  –  কারন  তাঁর কিছু করার ছিলনা  উপরতলা থেকে  সেই রকমি নির্দেশ দেওয়া ছিল ।

পরে  রাত গভীর হলে কাশ্মীর সরকারের  উর্ধতন কর্মচারী বক্সি গুলাম মহম্মদ একটা  ওভারকোট  আর  ব্ল্যাঙ্কেট পাঠালেন  ডঃ মুখার্জীর জন্য। টিম টিম করা আলোয় ডঃ মুখার্জী  আর তাঁর সহযোগীরা ঐ জঙ্গলে  হিমাঙ্কের  নিচে চলে যাওয়া তাপমাত্রায় মেঝেতে পরে রইলেন  —–   ঐ সময়   জহরলাল  নেহেরু  তাঁর দিল্লীর বাসভবনে এসি চালিয়ে   এবং  শেখ আবদুল্লা তাঁর শ্রীনগরের  বাসভবনে  লেপের  তলায়  আরাম করতে লাগলেন। 

এদিকে  দিল্লীতে ঠিক তার পরেরদিন অর্থাৎ – ১২ ই মে  ১৯৫৩ তারিখে  হিন্দুমহাসভার  প্রেসিডেন্ট নির্মল চন্দ্র চাট্যার্জী ( এন সি চাট্যার্জী – সিপিএম নেতা সোমনাথ চ্যাটার্জীর পিতাশ্রী) –  হিন্দু মহাসভার সেক্রেটারী ভি জি দেশপান্ডে সংসদ সদস্য  শ্রী নন্দলাল শর্মা  – ডঃ প্রকাশ বীর শাস্ত্রী সংসদের দেওয়ান হলে ডঃ মুখার্জীর গ্রেপ্তারের  প্রতিবাদে  জহরলাল নেহেরু  আর  শেখ আব্দুল্লার  বিরুদ্ধে  রাগে ক্ষোভে ফেটে পরলেন  – 

১৫ই  মে  ১৯৫৩  –  জহরলাল নেহেরুর নির্দেশে   তাঁদের সকলকেই  দিল্লীতে  P.D.A  অর্থাৎ  প্রিভেনশন ডিটেনশন এক্ট এ গ্রেপ্তার করা হলো।
——————————————————————————–
(৩ য় পর্ব ) ঢিল ছোঁড়া দূরত্বে  পন্ডিত নেহেরু তিন দিন ধরে মৌজ মস্তিতে মেতে রইলেন  কিন্তু একটি  বারের জন্যও   ডঃ মুখার্জীর খোঁজ নিলেন না
——————————————————————————–
১১  ই মে ১৯৫৩  এর সন্ধ্যা থেকে ডাল লেকের ধারে  অত্যন্ত্য স্যাঁতসেতে ঠান্ডায় একটি কটেজের মেঝেতে  পরে রইলেন ভারতের অন্যতম চির শ্রেষ্ঠ সন্তান ডঃ শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জী।

২৩ শে মে ১৯৫৩ , শিনিবার ভোরে জহরলাল নেহেরু তাঁর বোন বিজয়লক্ষ্মী পন্ডিতকে নিয়ে তিন দিনের সফরে কাশ্মীরে এলেন  সঙ্গে নিয়ে এলেন  তৎকালীন স্বরাস্ট্র ও রাজ্য বিষয়ক মন্ত্রী কে. এন. কাটজুকে।

শ্রীনগর এয়ারপোর্টে তাদেরকে হাসি হাসি মুখে  রিসিভ করলেন শেখ আবদুল্লা  , করন সিংহ , কাশ্মীরের মন্ত্রী পারিষদেরা, ইন্ডিয়ান আর্মীর টপ অফিসিয়ালরা। সেদিন সন্ধ্যায় ডাল লেকের ধারে পন্ডিত নেহেরু  হাসি হাসি মুখে  এক বিরাট জনতার সামনে আলো জ্বালিয়ে এক পার্কের উদ্বোধন করলেন।

২৪ শে মে ১৯৫৩ অর্থাৎ পরের দিন রবিবার  সকালে পন্ডিত নেহেরু, হোম মিনিস্টার কে. এন. কাটজু, কাশ্মীরের প্রধান শেখ আবদুল্লা , ন্যাশানাল কনফারেন্সের  অন্যান্য নেতৃবৃন্দ এক গোপন মিটিঙে  মিলিত হলেন। বস্তুত  ঐ  মিটিং এই  শ্রদ্ধেয় ডঃ শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জীকে  কি ভাবে  স্লো পয়জন করে  ধীরে ধীরে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেওয়া হবে  সেটা  ঠিক করা হলো।

পন্ডিত নেহেরু  সকল রকম ব্লু প্রিন্ট তৈরী করে দিয়ে  ২৪ শে মে সারা দিন ডাল লেকের  সৌন্দর্য উপভোগ করে   নিজের বোন  বিজয়লক্ষ্মী পন্ডিত কে নিয়ে  পরের দিন  ২৫  শে মে ১৯৫৩   দিল্লী ফিরে এলেন।

২৬ / ০৫/১৯৫৩ তারিখের Hindustan Standard  পত্রিকায় লেখা হলো , ” ডঃ শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জী   আর  তাঁর সহযোগী বন্দীদের  কোর্টে এপিয়ার করার অনুমতি দেওয়া হলো না   তাঁদের কে  বিনা পরমিটে কাশ্মীরে প্রবেশের দায়ে   দুই মাস  কারাবন্দী করে রাখা হলো। ”
———————————————-
( ৪ র্থ পর্ব )   –   শ্রদ্ধেয় ডঃ শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জীর গ্রেপ্তারীর পরেও   বাংলার মুখ্যমন্ত্রী  বিধান চন্দ্র রায়ের মধ্যে   কোনো  হেল দোল বা  প্রতিবাদ দেখা গেলো না।
——————————————————————————
নেহেরুর পরিকল্পনা অনুযায়ী  কাশ্মীরে    অসহনীয় পরিস্থিতিতে পরে রইলেন  ভারত মাতার অন্যতম বীর সন্তান শ্রদ্ধেয় ডঃ শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জী।

সুপ্রীম কোর্টের সিনিয়ার এডভোকেট ইউ. এম. ত্রিবেদী  ১৩  ই জুন ১৯৫৩ তে  দেখা করলেন  ডঃ মুখার্জীর  সাথে লিগ্যাল এডভাইস দেওয়ার জন্য। কিন্তু ঠিক  তার পরের দিনই ১৪ জুন ১৯৫৩ তে এডভোকেট ত্রিবেদী দিল্লী এসে  প্রেস কনফারেন্স করে জানালেন –

” আমি কোনো রকম লিগ্যাল এডভাইস দিতে না পেরে  বাধ্য হয়ে দিল্লী চলে এসেছি কারন – 
ভারত সরকার   আর কাশ্মীর সরকারের সুস্পষ্ট নির্দেশ ছিল কাশ্মীরের ডেপুটি কমিশনার অফ পুলিশ আমাদের  আলোচনার সময়  সব সময় উপস্থিত থাকবেন  এটাই নাকি উনাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

দিল্লীতে  প্রেস কনফারেন্স করে  ঐ বর্ষীয়ান উকিল আরও বললেন , ” I could not agree to it because under the law talk between the lawyer and his client is confidential ” .

ডঃ মুখার্জীর সহযোগী মাধক বলরাজের  লিখিত বই  i bid – পৃষ্ঠা নং ২৭৮  এ পরিষ্কার উল্লেখ আছে  এই  সব কথা। মিঃ ত্রিবেদী  যখন কাশ্মীর থেকে ফিরে  আসছিলেন দিল্লীর দিকে  তখন  হোটেলের  এক  সিনিয়ার কাশ্মীরী নাগরিক  উনাকে বললেন ,—

”  আপনি এখনই দিল্লি যাবেন না  ডঃ মুখার্জীকে  ছাড়িয়ে নিয়ে যান নতুবা উনাকে  মেরে ফেলা হবে এখানে। ”
——————————————————————————–
সেই একই  প্রবীন কাশ্মীরী  ব্যক্তি ২৩ শে জুন শ্রদ্ধেয় ডঃ শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জীর মৃত্যুর পরে  ———- ২৪ শে জুন সকাল বেলা এডভোকেট ইউ এম ত্রিবেদীকে মনে করিয়ে দিলেন  সেই   দশ দিন আগে বলা কথাটা । 
——————————————————————————–
( ৫ ম পর্ব )    –  ” যদিও আমাদের মধ্যে রাজনৈতিক মত পার্থক্য ছিল ” –     

হ্যাঁ নেহেরু জী –  আপনাদের মধ্যে রাজনৈতিক মত পার্থক্য ছিল – কিন্তু তাই বলে  এই ভাবে প্রতিশোধ নিলেন !!!!!!!!!!!!!!!!
—————————————————————————————-
মে মাসে সকল রকম ব্লুপ্রিন্ট তৈরী করে পন্ডিত নেহেরু  ১৯৫৩  সালের জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে ইউরোপের লন্ডন , জেনিভার দিকে দীর্ঘ ভ্রমনে বের হলেন – তাঁর নির্দেশ মতন ছক অনুসারে সমস্ত কিছু চলতে লাগল ।

এক দম ছক কষে ২৩ শে জুন ১৯৫৩  এর দিন ডঃ মুখার্জীর ক্যালকুলেটেড মার্ডারের ঠিক এক সপ্তাহ পরে  অর্থাৎ ৩০ শে জুন পন্ডিত নেহেরুর বিদেশ সফর শেষ করে  ভারতে ফিরে আসার দিন ঠিক করা হলো।

ঠিক সেই দিনই জহরলাল নেহেরু দিল্লী ফিরে এসে তাঁর প্রধানমন্ত্রীর প্যাডে শ্রদ্ধেয় ডঃ শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জীর মাতাশ্রী যোগমায়া দেবীকে ( যার নামে কলকাতায় একটি কলেজ আছে ) চিঠি লিখলেন –

Letter No. — 499  – P.M
New Delhi , June 30, 1953

My Dear Mrs. Mukharjee,
                     It was with deep grief that I learnt a few days ago, as I was leaving Geneva for Cairo, that your son Dr, Shyamaprasad Mukharjee had died. The news came as shock to me for  — though we may have differed in politics ………….   এই এখানেই আমার  খটকা  !!!!

………  When I went to Kashmir about five weeks ago, I inquired as to where he was kept and about his health …………

I suppose It was beyond human power to do anything and we have to bow to circumstances beyond control. ………

        If I can be of any service to you  —  you will please not hesitate to inform me . 
 
                                                                      Yours faithfully
                                                             S/D  Jawharlal Neheru
—————————————————————————————
এই এখানেই আমার খটকা – ” Though we may have differed in politics ” !

আচ্ছা কারোও সঙ্গে যদি রাজনৈতিক মত পার্থক্য থেকেও থাকে তাহলে কি তাকে এইভাবে ক্যালকুলেটেড মার্ডার করিয়ে দিতে হবে ??  

” I suppose it was beyond human power to do anything ” –  ” আমি মনে করি এটা ছিল মনুষ্য শক্তির  উর্ধে   তাতে কিছু করার ছিল না ”
———
(৬  পর্ব ) — ডঃ শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জীর বারন সত্বেও শ্রীনগর সাব জেলের ডাক্তার ২০ শে জুন ১৯৫৩ , দুপুর ২.৩০ মিনিটে জোর করে স্ট্রেপটোমাইসিন ইঞ্জেকশন দিলেন  ….
————-
জহরলাল নেহেরু  মে মাসের শেষ সপ্তাহে  সকল রকম ব্লুপ্রিন্ট তৈরী করে দিয়ে  দীর্ঘ  পাঁচ সপ্তাহের জন্য  ইউরোপ ভ্রমনে বের হলেন। এর পরে  জহরলাল নেহেরু  আর শেখ আবদুল্লার নির্দেশ মতন ডঃ মুখার্জী এবং তার    সহকারী বন্দীদের  অর্থাৎ  ডঃ মুখার্জীর প্রাইভেট সেক্রেটারী টেকচাঁদ ঠাকুর  জনসঙ্ঘের লিডার গুরু দত্ত বৈদ কে শ্রীনগর সাব জেলে স্থানান্তরিত করা হলো।

বিনা শীত বস্ত্রে বিনা চিকিৎসায় ডঃ মুখার্জী আরও অসুস্থ হয়ে পরলেন । ১৯ শে জুন এবং ২০ শে জুন ১৯৫৩  এর মাঝের রাতটা ভয়ংকর গেল। ডঃ মুখার্জীর পিঠে অসহ্য ব্যথা হতে লাগল  প্রচন্ড জ্বর এলো। ২০ শে জুন সকাল ১১.৩০ মিনিটে জেলের ডাক্তার আলী মহম্মদ ডঃ মুখার্জীকে দেখে বললেন —  ডঃ মুখার্জীর ড্রাই প্লুরিসি হয়েছে  তাই উনাকে  স্ট্রেপটোমাইসিন ইঞ্জেকশন দিতে হবে  এবং কিছু পাউডার জাতীয় ঔষধ খাওয়াতে হবে।

ডঃ মুখার্জী বললেন –  ”  আমাদের পারিবারিক ডাক্তার  মিঃ বোস বলে দিয়েছেন  স্টেপটোমাইসিন  আমার শরীরে  কিছুতেই দেওয়া যাবে না।”

এই কথা শোনার পরেও ২০ শে জুন ১৯৫৩  দুপুর ২.৩০ মিনিটে এক গ্রাম স্ট্রেপটোমাইসিন ইঞ্জেকশন  ডঃ মুখার্জীর হাতে  পুশ করা হলো  এবং ২১ শে জুন ১৯৫৩  সকাল ১০ টায়  আরও এক গ্রাম  ঐ একই ইঞ্জেকশন  ডঃ মুখার্জীকে পুশ করা হলো।

২১ শে জুন ১৯৫৩ বিকেল ৪.০০ থেকে ডঃ শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জীর বুকে পিঠেব্যথা অসহ্য ভাবে বেড়ে গেল  –  জ্বর  ১০৫ ডিগ্রী ছাড়িয়ে গেল।

বিনা চিকিৎসায় মাত্র দুই জন সহযোগী বন্দীর সঙ্গে  সেই রাতে  পরে রইলেন  ভারতমাতার  বীর সন্তান  পশ্চিম বাংলা  সৃষ্টির জনক  শ্রদ্ধেয় ডঃ  শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জী।
( ৭ ম পর্ব )   –  ২২ শে জুন ১৯৫৩,  ঠিক দুপুর ১২ টায় ভয়ংকর অসুস্থ  শ্রদ্ধেয় ডঃ শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জীকে হাঁটিয়ে হাঁটিয়ে নিয়ে পুলিশ ভ্যানে তোলা হলো –

শুধু জামা পরিয়ে  কাশ্মীরের ঐ প্রচন্ড ঠান্ডায়  কোনো শীত বস্ত্র ছাড়াই —
——————————————————————————-
২২ শে জুন ডঃ মুখার্জীর প্রচন্ড বুকে ব্যাথা ও শ্বাস কস্ট হতে লাগল  ভোর ৪.০০ টেতে ঘুম ভেঙ্গে গেল – ভোর ৪.৪৫ মিনিট পর্যন্ত তিনি পরে রইলেন  ঐ ভাবে  প্রায় অজ্ঞান  ভাবে – শ্বাস প্রশ্বাসের  গতিবেগ ধীরে ধীরে  নিস্তেজ হয়ে যেতে লাগলো। –

উপায়ন্তর না দেখে  তাঁর সহযোগী বন্দী গুরু দত্ত বৈদ  এবং টেকচাঁদ ঠাকুর একটু গরম জল করে তাতে একটু দারুচিনি আর লবঙ্গ মিশিয়ে  ডঃ মুখার্জীকে পান করালেন। ভোর ৫.০০ টায় তিনি সামান্য সুস্থ বোধ করতে লাগলেন।

২২ শে জুন ১৯৫৩ , সকাল  ৭.৩০ মিনিটে  শেখ  আব্দুল্লার ঠিক করা ডাক্তার আলী মহম্মদ তাঁকে পরীক্ষা নিরীক্ষা করে ডঃ মুখার্জী  বাম হাতে  ২ সি.সি  কোরামিন ইঞ্জেকশন দিলেন।

এর পরেই  ডঃ মুখার্জীকে  বলা হলো –  ” উপর মহলের নির্দেশ আছে আপনাকে হসপিটালে ভর্তি করাতে  হবে  তাই  এখান থেকে রিমুভ করা হচ্ছে ”

এর পরে  ২২ শে জুন ১৯৫৩,  ঠিক দুপুর ১২ টায় ভয়ংকর অসুস্থ   বাংলার  বাঘ  ডঃ আশুতোষ মুখার্জীর বীর পুত্র  শ্রদ্ধেয়   ডঃ শ্যামাপ্রসাদ  মুখার্জী  অসহায়ের মতন –  শুধু মাত্র  একটা  জামা পরে  কোনো রকম শীত বস্ত্র  না পরে  – 

ফ্যাল ফ্যাল  করে  শূন্য দৃষ্টিতে তাকাতে তাকাতে    শেখ আব্দুল্লার  পুলিশ আধিকারিকদের সঙ্গে পায়ে  হেঁটে হেঁটে গাড়ি নং –  কে – ১৫৯   এ  গিয়ে উঠলেন  সাধারন  ক্রিমিনালদের মতন।
——————————————————————————
এই লেখা চলবে  – এখনকার ছেলে মেয়েরাও জানুক  সব কিছু  কি কি তাদের কাছে  এতদিন গোপন করে রাখাছিল  –   সব কিছু জানুক তারা – অল্প অল্প করে হলেও  এইভাবেই জানুক তারা    তাই এই লেখা চলবে।