সোমনাথের বাণ স্তম্ভ

⚛️সোমনাথের বাণ স্তম্ভ⚛️
সোমনাথ!এই মন্দিরটির নাম আমরা কমবেশী সবাই শুনেছি।
আক্রমণ! আজ্ঞে হ্যাঁ সেটাও শুনেছি। 
না, আজ আর আক্রমণ নয় আজ ফিরে তাকানো যাক নিজেদের পূর্বজদের জ্ঞানের কিছুটা পরিধি নিয়ে যা বিশ্বব্যাপী সমাদৃত।

আজ সোমনাথ মন্দির প্রাঙ্গনের একটি স্তম্ভের কথা শোনাবো।

➡️দ্বাদশ জ‍্যোর্তিলিঙ্গের মধ্যে অন্যতম হল এই সোমনাথ, এক বৈভবশালী অপূর্ব লিঙ্গ। এটি এতটাই বৈভবশালী ছিল যে উত্তর পশ্চিম দিক থেকে আগত আক্রমণাত্মক অতিথিদের নজর এটি থেকে সরতই না। প্রতিবার সোনা, রুপা, হীরা, মাণিক, মুক্ত ইত্যাদি লুঠ এবং বারংবার আক্রমণের পরও এক অদ্ভুত ব্যাপ্তি নিয়ে সোমনাথ নিজের পুরোনো বৈভব নিয়েই দাড়িয়ে থাকতো। 
➡️শুধুমাত্র এই বৈভবশালী হওয়ার জন্য সোমনাথ বিখ্যাত ছিলনা। সোমনাথ ছিল অদ্ভুত  জ্ঞানের মায়াজাল। ভারতবর্ষের পশ্চিমপ্রান্তে সমুদ্রপাড়ে এই পবিত্র লিঙ্গের অবস্থান।
এই মন্দিরের প্রাঙ্গনে একটি স্তম্ভ আছে যা বাণস্তম্ভ নামে পরিচিত। এটি ঠিক কত বছরের তা ঠিক বলা যায়না, তবে ইতিহাসে ষষ্ঠ শতকে এটির উল্লেখ পাওয়া যায়। এর মানে এটা নয় যে এটা ষষ্ঠ শতকেই তৈরী হয়েছিল, কথিত আছে এর বহু পূর্বেই এটি নির্মিত হয়েছিল।
➡️এটি একটি দিশা প্রদর্শক হিসাবেই কাজ করে। এই বাণস্তম্ভে লেখা আছে –
‘आसमुद्रांत दक्षिण ध्रुव पर्यंत अबाधित ज्योतिरमार्ग’
এটির মানে করলে দাড়ায়, এই বিন্দু থেকে দক্ষিণে সরলরেখা বরাবর বিন্দুর মাঝামাঝি কোনো ভুখন্ড নেই। 
সংস্কৃত শ্লোকের আরও সরল অর্থ করলে বোঝা যায় সোমনাথের এই বিন্দু হতে দক্ষিণে এন্টার্কটিক পর্যন্ত একটি সরলরেখা টানলে মাঝে একটিও ভূখন্ড পাওয়া যাবেনা। 
কি অবাক হলেন?
ভাবছেন এত বছর পূর্বে এই ধারণা কি ভাবে সম্ভব!
➡️আচ্ছা চলুন কথার খাতিরে না হয় ধরেই নিলাম যে এই বাণস্তম্ভটি ষষ্ঠ শতকেই তৈরী হয়েছে, তবুও সেই সময় তো স্থান নির্ণয়ের কোনো প্রযুক্তিই ছিলোনা। তার চেয়েও বড় কথা সেসময় দক্ষিণ মেরু সম্পর্কেও সেরকম কোনো তথ্যই মানুষের গোচরে ছিল না।
আচ্ছা চলুন এটাও না হয় ধরেই নিন দক্ষিণ মেরু সম্পর্কে জ্ঞান ছিল। কিন্তু তখন এই ম্যাপিং কে করলো?
কি সব হিসেব গুলিয়ে যাচ্ছে!
সাল তারিখ পাকিয়ে যাচ্ছে!
ধৈর্য্য ধরুন…
➡️সব কিছুর অর্থ করলে বোঝা যায় ভারতীয় পূর্বজদের পৃথিবীর আকৃতি যে গোলাকার সে সম্পর্কে যথেচ্ছ জ্ঞান ছিল।
এবং উত্তর ও দক্ষিণ গোলর্ধ সে সম্পর্কেও জ্ঞান ছিল।
কি করে সম্ভব!
এর জন্য তো পৃথিবীর এরিয়াল ভিউ দরকার ছিল। সত্যিই আশ্চর্যের বিষয় তাইনা?
➡️ফ্রেঞ্চ শব্দ কার্টিওগ্রাফি র অর্থ হলো মানচিত্রবিদ্যা। কিন্তু পৃথিবীর প্রথম মানচিত্র কে বানিয়েছিল সে সম্পর্কেও সবাই একমত নয়। তাও গ্রিক বৈজ্ঞানিক অ্যান‍্যাক্সিম‍্যান্ডার এর নামটিই বহুল প্রচলিত। তবে তার তৈরি মানচিত্রও সম্পূর্ণ ছিল না। কারণ তিনি শুধুমাত্র সেই স্থান গুলি মানচিত্রতে একেছিলেন যেখানে শুধুমাত্র মানুষ বসবাস করত। তাই উত্তর এবং দক্ষিণ গোলর্ধের ধারণা কার্যত অসম্ভব ছিল।
সবথেকে কম যদি ধরে চলেন যা বর্তমান বাস্তবিক পৃথিবীর মানচিত্র তাও কমপক্ষে ১৪৯০ এর আশেপাশের সময়কাল ধরা যায়। যেটা হেনরিক্স মারটেলস একেছিলেন। বলা হয় কলম্বাস এবং ভাস্কদাগামা এই মানচিত্র ব্যবহার করেছিলেন।
➡️২০০৮ সালে বিখ্যাত জার্মান ইতিহাসবিদ জোসেফ শার্টসবার্গ বলেছিলেন ভারতবর্ষে দুই থেকে আড়াই হাজার বছর আগেও নকশাতত্ব তথা মানচিত্রবিদ্যা বেশ বিকশিত ছিল।
সনাতন ভারতের মন্দিরগুলি শুধু স্থাপত্যশৈলী নয়, জ্ঞানের পীঠস্থান ও বটে 🚩