রংপুর ট্র্যাজেডি, শুধু একটা ট্র্যাজেডি না। এটা অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্নের পরাজয়।
বিভিন্ন টি.ভি. পর্দায় বার বার ভেসে উঠেছে – টিটু রায়ের চারদিনের পুলিশ রিমান্ড হইছে।রংপুরের বার কাউন্সিলের মৌখিক নিষেধেই কোন আইনজীবী টিটুরপক্ষে কথা বলে নাই , যেমনটি রসরাজের ক্ষেত্রে হয়েছিল।ব্যাপারটা আমার কাছে বেশ হতাশাজনক হলেও মর্মাহত হইনি যতটা হয়েছে সরকারী ভাবে কোন উকিল না দেওয়াতে।
“আইন সবার জন্য সমান” সংবিধানে থাকলেও কথাটা বিশ্বাস করতে কষ্ট হয় । তবে আমি স্বাভাবিকতাকে অস্বীকার করছিনা । গত কয়েক বছরে বেশ কয়েকটি ঘটনায় এটা আমি বুঝতে পেরেছি যে, সংখ্যালঘুদের বেলায় এটাই স্বাভাবিক ।
রংপুর ট্র্যাজেডি। কল্পিত বাংলাস্তানের কাছে আরো একবার দেখতে হলো অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্নের পরাজয়। মাত্র একটি বছরের ব্যবধানে শুধু কুশীলব আর স্থানের বদল করে রাজনীতির রঙ্গমঞ্চে হলো একই নাটকের পুনঃ মঞ্চায়ন। রসরাজের জায়গায় টিটু রায় আর নাসিরনগরের জায়গায় রংপুরের সদরের পাগলাপীর ঠাকুরপাড়া গ্রাম ছাড়া বদল হলোনা আর কিছুই। অবশ্য দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে প্রতিনিয়তই মঞ্চায়িত হচ্ছে এগুলো অনেকটা ওপেন সিক্রেটের মতোই। অপেক্ষাকৃত নীরব সন্ত্রাসের রুপে ঘটে যাওয়া সে ঘটনাগুলোর খবর রাখেননা তেমন কেউই। রাখার তেমন প্রয়োজনও বোধ করেননা অনেকেই। শুধু হঠাৎ হঠাৎ কোন গ্রাম, পাড়া বা মহল্লা থেকে এক একটি পরিবার বিদায় নেয় অনেকটা চুপিসারেই রাতের অন্ধকারে।
টিটু রায় এলাকা ছাড়া বহুদিন। মানবাধিকার কর্মী যারা রংপুর সফর করেছেন, তারা জানাচ্ছেন, টিটু রায়ের ২মেয়ে শিউলি, ১৮ ও সুচিত্রা, ১৩। সুচিত্রাকে ২০১৫ সালে জোরপূর্বক উঠিয়ে নিয়ে ধর্মান্তরিত ও বিয়ে করেছে স্থানীয় প্রভাবশালী। তার গৃহত্যাগের কারণ হচ্ছে, তিনি ঐ প্রভাবশালীর কাছে কিছু টাকা ধার নিয়েছিলেন, কিন্তু আর পরিশোধ করতে পারেননি। ফলে মেয়ে গেছে? এবার তার বাড়ীঘর পুড়লো। রিমান্ডে জুটবে পুলিশের ‘মাইর’। সবশেষে দেশান্তর।
সেই ৪৭ থেকে শুরু হওয়া সেই বেদনার মিছিলের আজও হয়নি পরিসমাপ্তি। বরং যতই দিন যাচ্ছে ক্রমেই বেড়ে চলেছে তার পরিসর। ক’টার খবরই বা রাখা যায় বলুন। কিন্তু তারই মাঝে সাথীয়া, রামু, নাসিরনগর বা রংপুরের মতো বড় আকারের সহিংস ঘটনাগুলোই আচমকা এসে ধাক্কা দেয় আটপৌরে যাপিত জীবনের ভাঁজে সুপ্ত থাকা মানবিক মূল্যবোধে। হতচকিত হয়ে বিস্মিত নেত্রে তখন চেয়ে চেয়ে দেখি পিছল পথে যাত্রার অনাকাঙ্খিত ঘটনাপ্রবাহ। লাল সবুজের বিদীর্ণ বক্ষ চিরে যেন উঁকি মারে বাংলাস্তানের কুটিল কালো ছায়া। যে ছায়ার প্রতিবিম্বের দর্শন পেলাম আজ আমি আর এক্টিভিস্ট শওকত খান রংপুর সদরের পাগলাপীর ঠাকুরপাড়া গ্রামে। সেই হৃদয়বিদারক ক্ষতচিহ্নের যৎসামান্য বর্ণণার প্রচেস্টা থেকেই আবারো এক বছরের ব্যবধানে নিতান্ত অনিচ্ছাস্বত্বেও চাপ বাড়াতে হলো কীবোর্ডে।
কি খোজ পুড়াঘরে ছায়ে? শেষ হয়ে যাওয়া অনুভূতি??
লেখক,
জয় ব্যানাজী