“আলেকজান্ডারের শেষ পরিনতি”– মালী রাজ এবং পুরুরাজের মিলিত শক্তির কাছে পরাজয় এবং গভীর ভাবে আহত হবার কাহিনী” (যা ইতিহাসে লেখা হয় না)
ডাঃ মৃনাল কান্তি দেবনাথ
***** (আমার লেখা হিন্দুরাজাদের স্বাধীনত রক্ষার সংগ্রাম” বইয়ের থেকে একটি অনুচ্ছেদ) *** শীঘ্রই প্রকাশ করা হবে*******
রাজা পুরু বন্ধী। আলেকজান্ডার তাকে তার বীরত্বের জন্য ধন্যবাদ দিয়ে তার প্রতিনিধি হিসাবে থাকতে প্রস্তাব দিলেন। এই প্রস্তাবের পিছনে সুপরিকল্পিত রাজনৈতিক চাল ছিলো। পুরুকে নিজের দলে ভেড়াতে পারলে (তক্ষশীলার রাজার মতো) তাহলে ভারতের বাকী অংশ দখল করা শুধূ সময়ের অপেক্ষা।
পুরু সেই প্রস্তাবে রাজী হয়ে রাজা হিসাবে ই রইলেন কিন্তু আলেকজান্ডারের কাছে পরাধীন। আলেকজান্ডার এর পর দক্ষিনে চললেন। ইচ্ছা ‘মালী রাজ্য’ দখল করা। পুরু গোপনে সেই সংবাদ দিলেন মালী রাজের কাছে। আলেকজান্ডার যখন মালী রাজ্য আক্রমন করেন তখন মালী সৈন্যরা পুরোপুরি তৈরী । সেই সময়, যুদ্ধের ঠিক আগে, রাজা পুরু আলেকজান্ডারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষনা করে মালী রাজের সংগে হাত মেলালেন। যে আলেকজান্ডার জীবনে কোনোদিন পরাজিত হন নি, তিনি প্রথম পরাজয়ের কি গ্লানি সেটা অনুভব করলেন জীবনের এই শেষ যুদ্ধে।
মালী রাজও ছিলেন পরাক্রমী । নিজের রাজ্য রক্ষা করার জন্য তিনি আগে ভাগেই তৈরী ছিলেন। দুর্গের চারিদিকে পরিখা খনন করে , উচু দেওয়াল তুলে তিনি অপেক্ষারত। আলেকজান্ডার তার বিশালাকার ক্যাটাপুল্ট ( বিশাল গুলতির মতো) থেকে পাথর ছুড়েও কিছু করতে পারলেন না।তার সৈণ্যরা বিশাল মই লাগিয়ে দিলো দেওয়ালে। আলেকজান্ডার এবং তার ৩ দেহরক্ষী আগেই দুর্গ প্রাকারে ঊঠে এসেছেন। কিন্তু এর পর অনেকে এক সংগে উঠতে গিয়ে ভেংগে গেলো সেই মই। আলেকজান্ডার বুঝলেন, তিনি মালী সৈন্যের তীরের মুখে দাড়ীয়ে আছেন, সংগে মাত্র ৩ জন দেহরক্ষী। ভিতরে স্বসৈন্যে মালী রাজ অপেক্ষা করছেন, রাজা পুরু তার সংগে। কিছু চিন্তা ভাবনা না করে উদ্ভ্রান্তের মতো আলেকজান্ডার (পরাজয় নিশ্চিত জেনে তার মাথা নিশ্চয় খারাপ হয়ে গিয়েছিলো) লাফিয়ে দুর্গের ভিতরে পড়লেন মালী রাজকে দ্বৈরথে আমন্ত্রন জানাতে। কিন্তু এক মালী সৈন্যের ছোড়া একটি তীর তার বর্ম ভেদ করে, বুকের মাংস ভেদ করে, কন্ঠার হাড়ের ওপরে এসে গেথে গেলো। ফুসফুস ভেদ করে যাওয়ায় শ্বাস প্রশ্বাসের শব্দ ও আসতে থাকলো। রক্তাক্ত, গভীর ভাবে আহত আলেকজান্ডার পড়ে রইলেন মাটীতে। ততক্ষনে দেহ রক্ষীরাও ঝাপিয়ে নীচে পড়েছে এবং আলেকজান্ডারের বিখ্যাত ঢাল ‘Sheild Of Achilies” দিয়ে তার দেহ আবৃত করে দাড়ালো। তীর ভেংগে বার করা হলো এবং ক্ষত সেলাই করে দেওয়া হলো। মালী রাজ এবং পুরু রাজ দুজনে মিলে আলেকজান্ডারের দেহরক্ষীদের বললেন, “তোমাদের রাজা এক মহান যোদ্ধা। উনি আহত । হিন্দুরা আহতকে আর আঘাত করে না। যাও ওকে নিয়ে যাও। শুশ্রুষা করো, আর বেঁচে থাকলে নিজের দেশে চলে যেতে বলো”।
এই ঘটনার পর আলেকজান্ডার তার সৈন্য সামন্ত নিয়ে প্রথমে নদীপথে,পরে মরুপথে বাগদাদ মতান্তরে ব্যাবিলনে ফিরে যান। মরুপথে তার অনেক সৈন্য সামন্ত মারা যায়, কারন ক্ষুধাতৃষ্ণা মেটাবার জন্য প্রয়োজনীয় রসদ ছিলো না। বেশ কিছুদিন অসুস্থ থাকার পর আলেকজান্ডার শুন্য হাতে মাত্র ৩২ বছর বয়ষে ব্যগদাদ/ ব্যাবিলনে মারা যান। তার কোনো উত্ত্রাধীকারী না থাকায়, জয় করা বিশাল সাম্রাজ্য তার সেনাপতিরা ভাগ করে নিয়ে নেয়। ভারতীয় অংশ নেন ‘সেলুকাস’। তার হাত থেকে সেই অংশ ছিনিয়ে নেন সম্রাট চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য্য। আমাদের হিন্দুরাজা চন্দ্রগুপ্ত এর আগেই সেলুকাসের সংগে মৈত্রতা স্থাপন করতে তার মেয়েকে বিয়ে করেন চানক্যর পরামর্শে।কিন্তু সেই আত্মীয়তা ছিলো সাময়িক।
পারস্য জয় করার আগেই আলেকজান্ডার নিজেকে “ঈশ্বর” বলে ভাবতে শুরু করেন। নিজেকে ঈশ্বর ভাবতে শুরু করার পর তিনি ক্ষমতা এবং ঐশ্বর্য্যের প্রাচুর্য্যে প্রায় মত্ত হয়ে পড়েন। বিশ্বাস করতেন যে ‘তিনি যেহেতু “God”, তাই তার পক্ষে আওসম্ভব বলে কিছু নেই”।
পারসীকরা (ইরানীরা) আজো তাকে “Alexander The accursed” (অভিশপ্ত ) বলে ঘৃনা করে, “মহান’ বলে পুজো করে না।
**** ( সোর্স- ‘Alexander The Great— Man or God’ , written by Ian Worthington, Published by “Pearson-Longman”
ইতিহাসে আরো একজন আছেন যিনি এক বিশাল সাম্রাজ্য স্থাপনের সুচনা করেছিলেন, সেই সাম্রাজ্য স্থাপন করার কৌশলকে ‘ঈশ্বরের আদেশ’ বলে তার শিষ্যদের কাছে বলে গেছেন। কি করে সেই সাম্রাজ্য কে সারা পৃথিবীময় ছড়িয়ে দেওয়া হবে বা ছড়িয়ে দেওয়া এক ‘ঐশ্বরিক কর্তব্য’ সেই আদেশ উপদেশ দিয়ে গেছেন। আজো অবধি তার দেওয়া এবং দেখানো “যুদ্ধপদ্ধতি’ যার অপর নাম ‘জেহাদ”, সেই ধ্বংসলীলা সমানে চলছে।