লিখেছেন: চিত্রগুপ্ত — সোম, 08/07/2017 – 15:44
ধর্মীয় সংখ্যালঘু হবার কারণে বাংলাদেশের প্রতিটি হিন্দু ছেলে মেয়ে বিচিত্র সব অভিজ্ঞতা নিয়ে বড় হয় এবং অভিজ্ঞতার নিয়েই কেহ বুড়ো বয়সে আক্ষেপ নিয়ে একদিন মারা যায়, আবার কেহবা ভবিষ্যত প্রজন্মকে মুক্ত করার উদ্দেশ্যে দেশান্তরী হতে বাধ্য হয়।
আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকেই বলি – মহান একাত্তর হতে অর্থাৎ সেই শিশুকাল হতে আজ অবধি বহু মুসলিম বন্ধু আছেন – যারা আমাকে বুকে আগলে রাখতে পছন্দ করে, আছে প্রতিবেশী অনেক মুসলিম ছোট ভাই – যারা আমায় বড্ড শ্রদ্ধা করে। অন্য দিকে সেই শিশুকাল থেকে আজ অবধি দেখে আসছি প্রতিদিনই কেহ না কেহ অকারণে নানা অজুহাতে ক্ষত বিক্ষত করছে পুরো পরিবারটিকে শুধু হিন্দু/মালাউন হবার কারণে, যেসব কথা অধিকাংশ ক্ষেত্রে সচরাচর কারো সাথেই ভাগাভাগি করা সম্ভব হয় না। যদিবা সহ্যের সীমা অতিক্রান্ত হবার কারণে কখনো কারো সাথে অসচেতন ভাবে শেয়ার করা হয়, তখন উপদেশ উত্তর পাওয়া যায় – “ছোট খাট সমস্যা তো থাকবেই, এগুলোকে পাত্তা দিতে নেই” কিংবা “হিন্দুগুলোর মনটা নাকি খুবই ছোট, সব কিছুতে সাম্প্রদায়িকতা দেখে” ইত্যাদি ইত্যাদি।
সেই ছোট্ট বেলা থেকে দেখে এসেছি পরিবারের নিজেদের শারিরীক পরিশ্রম মাধ্যমে উপার্জিত অর্থ দিয়ে সংসারিক দিনাতিপাত করতে হয়, যৎ সামান্য অর্থ যদিবা হাতে থেকে থাকে তা দিয়ে ধর্মবর্ণ নির্বিশেষে যদ্দূর সম্ভব সমজের কল্যাণ মূলক কাজে খরচ করা হয়। সেই একাত্তর থেকে আজ অবধি দেখে এসেছি নিজেদের ভূ সম্পতিতে ভালমত ফসল ফলানো সম্ভব হয়নি, উৎপাদিত ফসল নিরংকুশভাবে ভোগ করার। এককালে অনেক জমি খালি রাখতে হতো, সেসব জমিগুলি নানা কারণে বিক্রি করতে বাধ্য করা হয়েছে প্রতিবেশী উঠতি টাকাওয়ালাদের কাছে। যেটুকু জমি এখনো অবশিষ্ট আছে তা ব্যবহার করে কোন ফলস উৎপাদন করা সম্ভব হয়ে উঠে না। এককালে দুই দুটো পুকুরের মালিকানা থাকা সত্বেও ঐ পুকুরগুলোতে কখনো মাছের চাষ করা, সেই মাছ বিক্রয়তো দূরের কথা – ঐ পুকুর গুলোর পুটি ধরে মাছ খাওয়াও সম্ভব উঠে নাই। শাঁক সবজী চাষ করলে সেটা কিংবা ফলবতী গাছের ফল পাঁকার আাগেই রাতের অন্ধকারে কে বা করা নষ্ট করে, রাতের অন্ধকারে পুকুরের বিষ প্রয়োগ করে মাছ মেরে ফেলা হতো। নিজের বাড়ীটা মনের মতো করে সাজানো যায় না। জমির সীমানা না মেনে গাছ কাটা – ইত্যাদি এরকম বহু অত্যাচার চলতে তো চলছে। সমাজের কথিত গন্যমান্য কিংবা সুহৃদের সাথে বিষয় গুলি নিয়ে আলাপ করলে – উত্তর পাওয়া যায় “একটু আধটু সহ্যতো করতেই হয়”। হ্যাঁ এসকল যন্ত্রণা একটু আধটু! এধরনের একটু আঁধটু ব্যাপার গুলি বঙ্গীয় হিন্দুদের নিত্যকার ব্যাপার – যা দাদা সহ্য করে সশ্মানে, বাবাও সহ্য করেছে সশ্মানে গেছেন, এখন তার সন্তানরা সহ্য করে যাচ্ছে এবং নাতিরা এসব একটু আঁধটু দেখে দেখে বড় হচ্ছে। এসব একটু, আঁধটু যে সব হিন্দুদের কাছে চরম অসহনীয় হয়ে উঠে– ওরাই তাদের চৌদ্দপূরুষের ভিটি ছেড়ে ভারত পালায় ভবিষ্যত প্রজন্মকে “একটু আঁধটু” যন্ত্রণা হতে মুক্ত করার প্রয়াশে।
বাংলাদেশের হিন্দুদের অবস্হাটি একটা সচিত্র উদাহরন দিয়ে বুঝানো যায়। চিতাবাঘের দল একট জ্যান্ত নিরীহ হরিণকে যেমন তিন দিক থেকে কামড়ে ধরে রাখে, আর আটকে পড়া নিরীহ হরিণটি যে ঠাঁয় দাঁড়িয়ে থাকে মরার পূর্ব মুহুর্ত পর্যন্ত – হিন্দুদের ঠিক সেই অবস্হায় দিনাতিপাত করতে হয় ভিটিতে উচ্চেদ হবার আগ পর্যন্ত। এভাবে চলছে প্রজন্মের পর প্রজন্ম। যতক্ষণ পর্যণ্ত উচ্ছেদ না হবে কিংবা পালিয়ে না যাবে ততক্ষন অবধি চলতে থাকবে। …(চিত্রগুপ্ত, ৮ অগাষ্ট ২০১৭)